শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ব্যাঙ বন্ধু দুজনের গল্প


অনেক দিন আগের কথা। জাপানের ওসাকা শহরের এক নালার মধ্যে থাকত এক ব্যাঙ। আর আর এক ব্যাঙ থাকতো কিয়োটো শহরের পাশ দিয়ে যে ছোট্ট জলের ধারা বয়ে যায় তারই পাশে এক মাঠের মধ্যে।। কেউ কাউকে চেনেও না, কেননা তারা তো আর বাইরের শহরে যায় নি। কিন্তু মজার ব্যপার হল এই যে দুজনের মনেই একই সাথে কি এক অদ্ভুত চিন্তা এল, যে পৃথিবীর অন্য জায়গাগুলো একবার না হয় ঘুরেই দেখা যাক। কিয়োটোর ব্যাঙ ভাবল ওসাকা গেলে কি রকম হয়, আর ঠিক সেই সময়েই ওসাকার ব্যাঙ্গের ইচ্ছে হল যে কিয়োটো গিয়ে মিকাডোর প্রাসাদের চেহারাটা একবার দেখেই না হয় আসা যাক।

আর এক শুভ সকালে তারা নানান দিক বিচার করে দিল রওয়ানা, দুজনে দেশের দুই প্রান্ত থেকে। সেই রাস্তা ধরে যেটা ওসাকা থেকে কিয়োটো পর্যন্ত টানা চলে গেছে। অনেক দূরত্ব কিন্তু দুটো শহরের মধ্যে।  আর ব্যাঙ্গের ব্যপারতো। ছোট ছোট লাফ মেরে তারা আর একবারে কতইবা দূরে যেতে পারবে। শুধু তাই নয়। তাদের একটা পাহাড়ও পেরোতে হবে যে।

কিন্তু সব ভাল যার শেষ ভাল। এক সময়ে তারা সেই রাস্তা ধরে চলতে চলতে সেই পাহাড়ের মাথায় গিয়ে পৌছাল। আরও অবাক হল তারা যখন দেখতে পেল সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারই মতন আর একজন ব্যাঙ। একজন অন্য জনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কোন কথা নেই।

তার পরে দুজনেই একসাথে বলে ঊঠল, আমি দূরের শহরটাকে দেখতে বেড়িয়েছি। আর এই উচু পাহাড়টা চড়তে গিয়ে বেশ হাফিয়েও গেছি। একটু বিশ্রাম নেওয়া যাক।

বসে গেল দুজনে একটু গড়িয়ে নিতে। আমাদের মতন বিছানা নেই তাই ঘাসের উপারেই। একথা ওকথা হতে হতে দুজনের মনের কথাটা বেড়িয়েই পড়ল। “হায়রে যদি আমরা এর একটু বড় হতাম, একটু মাথায় উচু হতাম, তবে এখান থেকেই সামনের শহর দুটোকে দেখতে পেতাম। আর তাহলে আমরা বুঝতে পারতাম যে কষ্ট করে যাবার কোন দরকার আছে কিনা।

কিয়োটোর ব্যাঙ বলে খুব সোজা আমরা একজন পেছনে পায়ে ভর দিয়ে দাডাই আর আরেকজন তাঁর ঘাড়ের উপরে পেছনএর পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াক। তাহলে আমরা অনেক লম্বা হয়ে যাব আর দেখতে পাব।
বুদ্ধি টা ওসাকার ব্যাঙ্গের মাথায় চড়াং করে খেলল, খুব ভাল আইডিয়া তো। অতএব তাই তারা করল, ওসাকার ব্যাঙ কিয়োটোর দিকে মুখ করে আর কিয়োটোর ব্যাঙ ওসাকার দিকে মুখ করে খাড়া হয়ে গেল। আর তখুনি তারা দূরে একটা শহর দেখতে পেল।

মজার ব্যাপার হল ব্যাঙ্গের চোখ তো পিঠের দিকে থাকে, তাই ওসাকার ব্যাঙ কিয়োটোর দিকে মুখ করলেও দেখল তার ওসাকা আর সেই রকম কিয়োটোর ব্যাঙ দেখল কিয়োটো।

দুজনেই তারা সমস্বরে বলে উঠল আরে বাস। ওসাকা তো দেখতে একেবারে কিয়োটো আর অন্য জনে বলে উঠল আরে কিয়োটো তো দেখতে একেবার ওসাকা।


দুজনেই ভাবল, তাহলে আর গিয়ে কি লাভ। এত দূরের শহর যদি আমার শহরের মতই হয় তবে আর কষ্ট করে লাভ কি। দুজনে একে অন্যের সাথে গলা মিলিয়ে আবার নিজের শহরের দিকে ফেরত রওয়ানা দিল। মনে মনে বলতে লাগল বেকার এত কষ্ট করলাম। একেবারে এক রকমেরই দেখতে ঐ শহরটা। আমার শহরেই আমি ভাল আছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন