সে অনেকদিন আগের কথা।
গঙ্গার তীরে এক রাজ্য ছিল নাম ছিল তার মগধ। ভারতে তখন আর্যেরা এসে তাদের পত্তন ভাল
ভাবে শুরু করেনি। এই রাজ্যের রাজার নাম ছিল বৃহদ্রথ। তিনি কাশী রাজের দুই জমজ কন্যাকে
বিয়ে করেন। সাধারণত; যেখানে দুটি কন্যার এক জনের সাথে বিয়ে হয় সেখানে যে কোন এক
স্ত্রী তার স্বামীর প্রিয়পাত্র হন আর সেটাকে এড়ানোর জন্য তাই বৃহদ্রথ প্রতিজ্ঞা করেন যে দুই স্ত্রীর
মধ্যে কোন তফাৎ তিনি রাখবেন না।
কথাটা বলা খুব সোজা,
কিন্তু কাজের বেলায় সেটাকে পালন করা যে কি অসুবিধার সেটা আজকে অনেক ভুক্তভোগীরাই
বোধ করেছেন এবং সেটা বিবাহ পূর্ব প্রেমিকাদের ক্ষেত্রেও। তখনকার দিনে প্রাক বিবাহ
প্রেমের এবং দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে কোন বাধা নিষেধ ছিল না কাজেই এই রকম নিক্তি
মেপে প্রেম বেশ কষ্টকর ছিল।
বৃহদ্রথ যদিও তার
প্রতিজ্ঞার প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছিলেন কিন্তু এর ফলে তার শরীর ও মনের
উপর অত্যধিক চাপ পড়ছিল। একসাথে দুই স্ত্রীর মনোরঞ্জন করা খুব সহজ কাজ বলে মনে
করবেন না। আর তাও যদি তারা যমজ হয়। এমনিতেই তো তাদের চেহারা দেখে আলাদা করা বিশেষ
দুরূহ ব্যপার।
দিন যায়। রাজার মনে
প্রচন্ড দুঃখ তার কোন পুত্র হয়না। তার মৃত্যুর পরে এই বিশাল সাম্রাজ্যের কে রাজা
হবে। এদিকে তার তিন অক্ষৌহিণি সেনা নিয়ে আশপাশের
রাজা, সামন্ত দের মনে একটা ভীতি জাগিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও রাজার মনে কিন্তু যমের
সম্বন্ধে একটা ভীতি ছিল। কবে কোন দিন মরে যাব আর রাজ্যের কি হবে।
শেষকালে যখন দেখা গেল
তার আর যৌবনের অতি অল্পই অবশিষ্ট রয়েছে তখন তিনি গেলেন এক সন্ন্যাসীর কাছে। মুনি
সন্ন্যাসীর নাম চন্ডকৌশিক। তিনি নানান রকম মন্ত্র পরে একটা আম বৃহদ্রথকে দিয়ে
বললেন এটা তোমার স্ত্রীকে খাইয়ে দিলে তার এক পুত্র হবে। রাজা ড্যাং ড্যাং করে
নাচতে নাচতে প্রাসাদে ফিরেই পড়লেন বিপদে। আম পেলেন একটা আর স্ত্রী আছে দুটো। কাকে
খাওয়াবেন। পার্সোনাল ব্যপার হবার
জন্য মন্ত্রীদের কাছ থেকে কোন রকম শলা
পরামর্শ নিতে পারা যাবে না।
অনেকক্ষণ ভাবার পরে ডাক
দিলেন “লে আও চাকু”। মানে তিনি ছুরী দিয়ে আমটিকে
লম্বালম্বি দুটুকরো করে দুই রাণীকে খেতে
দিলেন। নো পার্শিয়ালিটি বাবা। রানীরা তো
আমের টুকরো খেলেন। যথা নিয়মে তারা মা হলেন। দুজনেই একসাথে ছেলের মা হলেন। কিন্তু
কি বিপদ। রাজা মশাই আমটাকে দুটুকরো করে আধখানা করে খাইয়েছিলেন তাই ছেলেও আধখানা
করে হল। আধখানা মাথা, আদ্ধেক শরীর, একটা পা, একটা হাত। রাণিরা হাহুতাশ করছেন আর
ধাইএরা ঐ আদ্ধেক শরীর দুটো প্রাসাদের
বাইরে নিয়ে গিয়ে দূরে ফেলে দিল। ছেলের আদ্ধেক হলে কি নামে ডাকা হবে, ছে না লে না
অন্য কিছু, তা ঠিক করতে পারলাম না তাই আমি টুকরোই বললাম। টুকরো দুটোতে প্রাণ ছিল কিন্তু।
রাজার প্রাসাদে এক
রাক্ষসী থাকত (এখানে রাক্ষসী মানে কোন
বৈদ্য বা সার্জন মেনে নিতে হবে)। নাম ছিল তার জরা। সংস্কৃতে জরা শব্দের মানে হছে
বৃদ্ধাবস্থা। এই রাক্ষসীও অনেক জ্ঞানের ভারে বৃদ্ধা হয়েছিলেন। তিনি সন্ধ্যার আধেক
আঁধারে একটু সান্ধ্যভ্রমণে বেড়িয়ে দেখেন দুটি আদ্ধেক শরীর পড়ে আছে। বুড়ি হলেও নিজের
হাতের উপর অনেক আস্থা ছিল তাই ঠিক করলেন একবার নিজের কারিকুরী প্রয়োগ করে চেষ্টা
করে দেখবেন যে দুটোকে জুড়ে দিলে চেহারাটা কি রকম হয়। যা ভাবা তা কাজে শুরু।
কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে দুটো টুকরো একসাথে হল। এক্কেবারে আলিবাবা আর চল্লিশ চোরের
গল্পের বাবা মুস্তাফার জুড়ে দেবার মতন। কোন দাগ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না যে কোথায়
জোড় লাগানো হয়েছে। এক সুপুরুষ বাচ্চা ছেলে। জরা তাঁকে কোলে তুলতে গিয়ে দেখে বেজায়
ভারী।
জরা যখন বাচ্চাটাকে
তোলবার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ভাবছে কি করবে, ছেলেটা তার মধ্যেই নিজের হাতের মুঠি
মুখে পুরে চিৎকার করে কান্না সুরু করে দিল। সে কি ভীষণ আওয়াজ। যেন মেঘ ডাকছে আর
বাজ পড়ছে। লোকে ভয়ে পেয়ে গেল। কিন্তু রাণি দুজন তাদের বাচ্চার গলা ঠিক চিনতে
পেরেছিল। বৃহদ্রথ তার দুই স্ত্রীদের নিয়ে বাইরে এসে জরার কাছ থেকে বাচ্চাকে কোলে
নিল আর তার দেখাশুনো শুরু করেদিল। প্রথমে একটু মুশকিল দেখা দিলেও দুই রাণি প্রায়
চ্যাংদোলা করে বাদ্দাটাকে তুলে নিয়ে খাওয়াতে শুরু করে দিল।
জরা বাচ্চাটাকে জুড়ে
দিয়েছিল বলে তার নাম রাখা হল জরা + সন্ধ ( সন্ধি থেকে) বা জরাসন্ধ।
জরাসন্ধের যৌবন
প্রাপ্তির পরে পিতা বৃহদ্রথ তখনকার প্রথা অনুযায়ী তার দুই স্ত্রীকে নিয়ে বনবাসে
গেলেন। আর যাবার আগে জরাসন্ধ কে সিংহাসনে বসিয়ে গেলেন। শক্তিশালী জরাসন্ধ তার শক্তি আরও বৃদ্ধি করতে
লাগল। একে একে নরকাসুর, পুন্ড্র বাসুদেব,
ছেদি রাজা শিশুপাল, শুভা রাজা শল্ব আর
বিশ্বমক তার সাথী হলেন। এই সময় বনাসুরের
পরামর্শ অনুযায়ী জরাসন্ধ তার দুই মেয়ে অস্তি আর প্রাপ্তি কে মথুরার নরপতি কংসের সাথে
বিয়ে দিয়ে দিলেন।
ওদিকে কংসের সাথে
কৃষ্ণের ভীষণ ঝগড়া। মথুরার রাজা কংসের সাথে কৃষ্ণের যুদ্ধে, কৃষ্ণের হাতে কংসের মৃত্যু হলে পরে জরাসন্ধ
প্রচন্ড রেগে গিয়ে তার গদাটা ৯৯ বার ঘুরিয়ে মথুরাতে কৃষ্ণের উদ্দেশে ছুঁড়ে মারেন। তার
এমন শক্তি যে সেই গদা ঘুরপাক খেতে খেতে মথুরার কাছের এক জায়গাতে গিয়ে পড়ে। যেখানে
পড়েছিল সেখানে কৃষ্ণ ছিলেন না বলে বেঁচে যান। এই জায়গার নাম হয়ে যায় গদাবসান। দেখা গেছে যে এই গদাবসানের থেকে জরাসন্ধের
রাজধানী গিরিব্রজ ঐ ৯৯ যোজন দূরে।
এই সময় বলরামের সাথে
যুদ্ধে কংসের সহযোগী রাজা হংসের মৃত্য হলে মনের দুঃখে তার সহযোগী অন্য রাজা ডিম্বক
জলসমাধি নিয়ে প্রাণত্যাগ করেন।কংসের মৃত্যুতে তার স্ত্রী অস্তি জরাসন্ধের কাছে গিয়ে তার
স্বামীহন্তা কৃষ্ণকে মেরে ফেলার জন্য আবেদন করেন। জরাসন্ধ যাদবকুল কে বার বার আক্রমণ করতে থাকেন। বিপদ দেখে কৃষ্ণ মথুরা
ছেড়ে দ্বারকাতে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। দ্বারকা দ্বীপের মধ্যে হবার জন্য সেখানে
আক্রমনের সম্ভাবনা কম। মানে যাদবকুল অর্থাৎ কৃষ্ণ এবং বলরাম তাদের পুরো পরিবার
নিয়ে জরাসন্ধের ভয়ে মথুরা ছেড়ে পালিয়ে গেলেন।
এদিকে যুধিষ্ঠির মনে
মনে ঠিক করেছেন এক রাজসুয় যজ্ঞ করা যাক। কিন্তু কৃষ্ণ এসে বললেন, যতদিন জরাসন্ধ
জীবিত আছে ততদিন আপনার পক্ষে রাজসূয় যজ্ঞ করা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা বর্তমানে সমস্ত
রাজারাই জরাসন্ধের পক্ষে আছেন। নেহাত আপনার মামা পুরুজিত আপনার পক্ষে আছেন, আর
জরাসন্ধের বিরোধ করে এই রাজসূয় যজ্ঞ করা সম্ভব হবে না।
যুধিষ্ঠির ভাবলেন
তাহলে সব কাজ বৃথাই যাবে কেননা রাজসূয় যজ্ঞ না করলে তিনি রাজাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ
হতে পারছেন না। কি করবেন ভাবছেন, তখন কৃষ্ণই আবার বললেন তাতে চিন্তার কি আছে।
জরাসন্ধ কে আক্রমণ করে মেরে ফেললেই হয়। অবশ্যি মহাদেবের বরে জরাসন্ধ ছিয়াশী জন
রাজাকে বন্দী করে তার রাজধানীতে আটকে রেখেছে। আর চোদ্দজন রাজাকে পেলেই এই একশো
রাজাকে বলি দিয়ে সে মহাপরাক্রমশালী হয়ে যাবে। কাজেই যদি জরাসন্ধকে হারাতে হয় তবে
এই রাজাদের মুক্তি দিলে তারাও আপনার হয়ে লড়বেন এবং জরাসন্ধ কে আপনি সহজেই হারাতে
পারবেন।
যুধিষ্ঠির পরলেন
দ্বিধায়। একদিকে রাজসূয় যজ্ঞের ইচ্ছে আর অন্য দিকে ভাই ভীম আর অর্জুনকে হারানোর ভয়। অর্জুন এবং ভীম তো মনে
মনে খুসী এইবার চান্স পাওয়া গেছে কিছু একটা করে দেখানোর। বলে দাদা চিন্তার কি আছে।
এই যাব, মারব আর ফিরে আসব। আর যদি ভয় পেয়ে থাক তবে রাজ্য ছেড়ে বনে গিয়ে থাকলেই হয়।
রাজা হয়ে থাকতে গেলে যুদ্ধ ইত্যাদি করতেই হবে।
কৃষ্ণ বলেন যে
জরাসন্ধ তার শক্তি সম্বন্ধে খুব গর্বিত। তাঁকে সন্মুখ যুদ্ধে হারানো অসম্ভব। তাই
কৌশল করতে হবে। আমরা তার প্রাসাদে ছদ্মবেশে গিয়ে আর সুযোগ বুঝে তাঁকে মল্লযুদ্ধে
হারিয়ে দিতে পারি। তার শক্তি তাঁকে গর্বিত করেছে তাই সে আমাদের মধ্যে ভীমকেই বেছে
নেবে লড়াই করবার জন্য। আর ভীম স্বচ্ছন্দে তাঁকে বধ করতে পারবে।
তাই হল। কৃষ্ণ কে নিয়ে অর্জুন
আর ভীম সাধারণ বেশে বেড়িয়ে পরল জরাসন্ধের প্রাসাদে যাবার জন্য। হস্তিনাপুর থেকে মগধ
কি একটু খানি রাস্তা। তার উপর নিজের রথ নিয়েও বেরোয়নি। ছদ্মবেশে তাই ট্রান্সপোর্ট বলে যা পাওয়া যায় তাই ব্যবহার করতে হবে। তখনকার দিনে পাব্লিক ইউটিলিটী বলে বিশেষ
কিছু ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস ছিল না তাই লোকেদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ব্রাহ্মণের
বেশ ধরে যাত্রা শুরু হল।
বেশ কয়েক দিন বাদে তারা গিরিব্রজ শহরে এসে উপস্থিত হলেন। এই গিরিব্রজ শহরেই
হচ্ছে জরাসন্ধের রাজধানী। পাশেই চৈত্যক পাহাড়, যেখানে জয়দ্রথ এক ষন্ডবেশী রাক্ষসকে
মেরে তার দেহাবশেষ দিয়ে তিনটি ভেরী বানিয়ে
টানিয়ে রেখেছিলেন। অর্জুন আর ভীম তাদের আগমন জানানোর জন্য চৈত্যক পাহাড়ের একটা শৃঙ্গ ভেঙ্গে দিলেন সাথে ঐ
তিনটি ভেরীও ভেঙ্গে দেওয়া হল।
তার পর রাস্তায় এক মালাকারের দোকান থেকে মালা জবরদস্তি নিয়ে গলাতে ঝুলিয়ে রাজার
দরবারে এসে উপস্থিত। জরাসন্ধ তখন পুজাতে বের হচ্ছিলেন। ব্রাহ্মণ বেশে এই তিনজনকে
দেখে তাদের সাধারন ব্রাহ্মণ ভেবে বলেন- আসুন বসুন এই নিন কিছু ফলমূল। আর বলুন
আপনারা কে বা কেন এসেছেন।
জরাসন্ধের খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল। এরা যে তিনজন ছদ্মবেশী তা বুঝে ফেলে বললেন - মহাশয়েরা আপনারা
তো ব্রাহ্মণ নন, কারণ আপনাদের দেহে যদিও ব্রাহ্মণদের মত মালা চন্দন ইত্যদি লেপন
করা হয়েছে, তবুও আপনাদের দেহের ক্ষতের দাগ বলে দিচ্ছে যে আপনারা ব্রাহ্মণ হতে
পারেন না।
তখম কৃষ্ণ বলেন, জরাসন্ধ তুমি ঠিক ধরেছ, আমরা ব্রাহ্মন নই, আমি যাদবকূলের
কৃষ্ণ আর ইনি গান্ডীবধারী অর্জুন, আর ওপাশে আছেন বৃকোদর ভীম। তুমি বিভিন্ন রাজাদের
আটক করে মহাদেবের সামনে বলি দেবে বলে মনস্থ করেছ তাই তোমাকে আমরা শাস্তি দেবার
জন্য এসেছি। ভাল চাও তো ঐ রাজাদের সসন্মানে মুক্তি দাও আর তাদের রাজত্বও ফেরত
দাও,।
জরাসন্ধ বলে,- ইম্পসিবল। আমি তাদের ধরে এনেছি রুদ্রদেবতার সামনে বলি দেব
বলে, তারা বলি প্রদত্ত হবার জন্য মানত করা, এদের ছেড়ে দিলে আমি দেব কোপে পড়ব। কৃষ্ণ
বলেন, তাহলে তোমাকে আমরা যুদ্ধে আহ্বান করছি। জরাসন্ধ বলে তাই হবে। কিন্তু আপনারা
যুদ্ধ কি ভাবে করতে চান। কৃষ্ণ বলে তোমার যা ইচ্ছে। আমাদের তিনজনের একত্রে, বা প্রত্যেকে একা বা তোমার
পছন্দ মত কারুর সাথে। সব তুমি যে ভাবে চাও, কেননা তোমাকে তো আমরা মেরেই ফিরব।
জরাসন্ধের রাগ মাথায় উঠল। সে বলে দিল ঐ মোটাটার সাথেই আমি মল্লযুদ্ধ করব।
তোরা তো সব ফড়িঙের মত। ভীম ক্ষেপে বলে -চলে আয়। ঠিক হল যে পরের দিন সকালে লড়াই
শুরু হবে। কোন টাইম লিমিট নেই।
পরের দিন সকাল বেলায় মল্লভূমিতে রাজধানীর লোকেরা হাজির। সবাই ভাবছে মরল
এবার কটা ব্রাহ্মণ, রাজামশাইর সাথে লড়াই। আইন মোতাবিক ডাক্তার বদ্যি ওষুধপত্র নিয়ে
হাজির। কিন্তু যুচ্ছ চলতে চলতেই যা একটু উপচার সম্ভব তাই করতে হবে, যুদ্ধ থামবে
না।
ঘন্টা বাজিয়ে স্তোত্র উচ্চারণ করে কার্তিক মাসের পয়লা তারিখে সকালে মল্লযুদ্ধ
শুরু হল। কৃষ্ণ আর অর্জুন মাঠের ধারে বসে দেখছেন। রাত হল, আবার দিন, আবার রাত,
লড়াই চলছে তো চলছেই। দেখতে দেখতে চোদ্দ দিন পেরিয়ে যাবার পরে জরাসন্ধ একটু ক্লান্ত
দেখাচ্ছে দেখে কৃষ্ণ বললেন- হে বৃকোদর, ক্লান্ত শত্রুকে বিশেষ জোরে আঘাত
করতে নেই, তুমি জরাসন্ধের দুপা ধরে ঘুরিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দাও। কিন্তু দেখালেন দু হাতে
দুটো আলাদা পা ধরে একটু ফাঁক করে।
ভীম ইঙ্গিত বুঝলেন আর জরাসন্ধের দুটো পা ধরে টেনে তাঁকে দু আধখানা করে ছুড়ে
ফেলে দিলেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার, আবার সেই দুটি টুকরো একসাথে হয়ে এসে লড়াই
করতে লাগলো। এবার কৃষ্ণ একটা কাঠিকে লম্বালম্বী দু টুকরো করে ডান দিকের টুকরোটাকে
বা দিকে আর বা হাতেরটাকে ডান দিকে ছুড়ে ফেললেন। সেই অনুযায়ী ভীম জরাসন্ধের
সন্ধিবিচ্ছেদ করে দুটা টুকরো দুই আলাদা দিকে দুরে ফেলে দিলেন। আর বিচ্ছেদের পরে টুকরোরা
তাদের নিজস্ব জায়গা না পেয়ে জোড়া লাগতে পারল না। জরাসন্ধ মারা গেল।
রাতেই গিয়ে অর্জুনের পার্টী ঐ
ছিয়াশিজন রাজাকে মুক্তি দিয়ে দিল। কিন্তু মগধে রাজা কে হবে, জরাসন্ধের ছেলে সহদেবকে
সিংহাসনে বসিয়ে অর্জুন আর ভীম কৃষ্ণের সাথে যুধিষ্ঠিরের কাছে ফেরত এলেন। আর রাজসূয়
যজ্ঞ করতে কোন বাধা রইল না। বাকী রয়ে গেল
শিশুপাল, জরাসন্ধের সেনাপতি। তার কথা পরে হবে।
.