শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৫

বাঘ, শেয়াল আর পণ্ডিত


(ভারতবর্ষের উপকথা)

কোন এক সময়ে একটা বাঘ খাঁচায় ধরা পড়েছিল। খুব লাফালাফি করেও সে কিন্তু তার ঐ খাঁচা থেকে বার হতে পারছিল না। রাগ হচ্ছিল তার খুব, কিন্তু তা দিয়ে তো আর খাঁচা থেকে বার হওয়া যায় না। কি করে ভাবছে। এমন সময় দেখে এক পণ্ডিত মশাই ওদিক দিয়ে আসছেন।

বাঘ একটা পেন্নাম ঠুকে বলে, এই যে পণ্ডিত মশাই, এদিকে একবার এসে আমাকে খাঁচার বাইরে বার করে দিন না। আমি আটকা পড়ে গেছি। পণ্ডিত মশাই বলেন, না রে ভায়া, আমি যদি খাঁচা খুলে তোমাকে বার করে দিই তবে তো তুমি আমাকেই প্রথমে খেয়ে নেবে

বাঘ বলে, তা কি হয়। আপনি আমায় মুক্তি দেবেন আর আমি আপনাকে খেয়ে ফেলব, বরঞ্চ আমি সারা জীবন আপনার দাসানুদাস হয়ে থাকব। এদিকে এই কথার সাথে বাঘের কান্না কাটি দেখে পণ্ডিত মশাইয়ের মনে একটু করুণা হল। আর তাছাড়া বাঘ তো বলছে যে সে খাবে না, তাই পণ্ডিত মশাই আসতে করে এগিয়ে এসে খাঁচার দরজাটা খুলে দিলেন।

আর যায় কোথা, বাঘ তো বাইরে এসে গেল, আর এসেই বলে, আমার তো ভীষন ক্ষিদে পেয়েছে। এতক্ষণ আমি আটকা পড়েছিলেম। তাই তোমাকে খেতে আমার তো কোন বাধা নেই। তোমাকেই খাব। পণ্ডিত বলে সেটা কি করে হয়, তুমি আমাকে বললে খাবে না তাই তো আমি খাচার দরজা খুলে দিলাম। এখন বলছ যে আমাকে খেয়ে নেবে। এটা কি রকম কথা

দুজনে খুব তর্কাতর্কী হতে লাগল। তার পরে ঠিক হল আর একজন কাউকে জিজ্ঞেস করা যাক । সে যদি বলে বাঘ পন্ডিতমশাইকে খাবে তবে বাঘ খেয়ে নেবে, আর যদি বলে খাবে না তবে বাঘ না খেয়ে চলে যাবে।
প্রথমে জিজ্ঞেস করা হল এক পিপুল গাছকে। গাছ বলে দিল এতে জিজ্ঞেস করার কি আছে। আমি তোমাদের ছায়া দিই, যাতে গরমে তোমরা বসে বিশ্রাম নিতে পার, আর তোমরা আমার ডাল পাতা ভেঙ্গে নিয়ে ছাগলকে খেতে দাও। কাজেই উপকার করলে তার প্রতিদান হচ্ছে শাস্তি। বাঘ তো ঠিক কথা বলছে

পন্ডিতের মনে উত্তরটা ভাল লাগল না। সে এবার জিজ্ঞেস করল একটা মোষকে। কাছেই মোষটা ঘানি টানছিল, তাঁকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলে, তা বাঘ আর কি খারাপ বলেছে। আমি যতদিন দুধ দিয়েছি ততদিন তো আমাকে তোমরা ভাল মন্দ খেতে দিয়েছ আর যখন আমার দুধ নেই তখন খাবারও নেই

এবার পন্ডিত জিজ্ঞেস করে রাস্তাকে। কিন্তু সেও ঐ একই ধরনের কথা বলে। বলে যে আমার উপরদিয়ে তোমারা যাতায়াত কর কিন্তু আমাকে কি দাও তার বদলে, ধল ময়লা ছাড়া কিছু না।

এমন সময় পন্ডিত দেখে একটা শেয়াল কাছ দিয়ে যাচ্ছে। শেয়াল জিজ্ঞেস করে, কি ব্যপার পন্ডিত মশাই। 
আপনাকে তো দেখছি খুব মুশড়ে পরে আছেন।  পন্ডিত মশাই তাঁকে সব কথা খুলে বলেন। কিন্তু শেয়াল বলে, ঠিক বুঝতে পারছি না। আমরা বরঞ্চ সে জায়গাতে ঘটনা ঘটেছে সেখানেই যাই, তাহলে ব্যপারটা বুঝতে সুবিধা হবে। চলল তারা ঐ খাঁচাটা যেখানে ছিল। বাঘও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। শেয়ালকে আবার যখন পন্ডিতমশাই সব বোঝাতে যায়, তখন শেয়াল বলে,  আমি দেখতে চাই যে বাঘটা কি ভাবে খাঁচাতে আটকা পড়ে ছিল। আর কি ভাবে আপনি খাচার দরজা খুলে দিয়েছিলেন

এদিকে বাঘ রেগে বলে আমার কিন্তু ক্ষিধে খুব জোরে পেয়েছে আমি এখনই পন্ডিতকে খাব। পন্ডিতমশাই বলে এই শেয়াল ভায়া একবার দেখতে চান যে আমি কি ভাবে আপনাকে খাঁচার বাইতে বার করে দিয়েছি।  আবার পণ্ডিত মশাই সব কথা বলতে যায়। শেয়াল বলে, পন্ডিত মশাই আপনি খাঁচার ভেতরে ছিলেন, আর বাঘটা বাইরে দিয়ে যাচ্ছিল, তার পরে আপনি খাঁচার বাইরে এসেছিলেন


এইবার বাঘ গেল রেগে, শেয়ালকে বলে, বুদ্ধু কোথাকার, বলছিনা আমি খাচার ভেতরে ছিলাম। দেখ ঠিক এই ভাবে খাচার ভেতরে ছিলাম। এই বলে বাঘ খাচার ভেতরে ঢুকে গিয়ে দেখাতে লাগল। শেয়াল তখন পণ্ডিত নশাইকে বলে তাহলে আর দেরি কেন। এবার খাচাটা বন্ধ করে দিন। বাঘ ভায়া ভেতরেই থাকুক।