শিলাপ্পটিকরণ
একটি
পায়জোড়ের কাহিনী
(দ্বিতীয় খন্ড)
কিন্তু
আর পুহারে থাকা নয়। কেননা আবার তো সব নতুন করে শুরু করতে হবে, কোভালন ঠিক করল যে
এবার তাহলে পান্ডিয়ানদের রাজ্যের মাদুরাইতে যাওয়া যাক। সেখানে একটা নতুন কিছু শুরু
করা যাবে। চোলা আর পান্ডিয়ান রাজ্যের মাঝে ছিল ঘন জঙ্গল আর পাহাড়। সে সব পেড়িয়ে
যেতে হবে কিশোরী কান্নাগী আর তাঁর স্বামী কোভালনকে। পথে কত রকমের বিপদ আসতে পারে।
কিন্তু এখানে দেখা হল তাঁদের এক মুনির সাথে, নাম তাঁর কাভুন্নী।
এই
কাভুন্নী বললেন সাথে তিনি আসবেন আর রাস্তায় যদি কিছু দরকার পড়ে তবে সাহায্যও করতে
পারবেন। এগোতে থাকে তারা, এবার দেখা হল এক ব্রাহ্মনের সাথে, সে পরিচয় দিল যে তাঁর
নিবাস হচ্ছে কুটাকু পাহাড়ের মানকাটু গ্রামে। এখানে সে এসেছে পান্ডিয়ান রাজাদের
শাস্ত্রে অধিকার দেখে। মাদুরাই যাবার রাস্তা জানতে চাইলে সে বলে তোমার সামনে তিনটা
পথ আছে একেবারে শিবের ত্রিশূলের ফলার মতন। কিন্তু সব গুলোতেই আগে চলে তুমি অনেক
বিপদের সামনে পড়বে। একটাতে তোমাকে কোন পরী আটকে রাখার চেষ্টা করবে, অন্যটাতে তুমি
এই গরমে রোদে চলতে পারবে না রাতের অন্ধকারেই প্রকৃতি ঠান্ডা হলে যেতে পারবে। আর ঐ রাতেই
এক জঙ্গল পার হয়ে তোমাকে পাহাড়ে চড়তে হবে আর তাঁর পরেই পাবে মাদুরাই নগরী। কোভালন
বাঁদিকের রাস্তা ধরে আগে এগোলে দেখে এক পরী এসে তাঁকে বলছে যে মাধবী তাঁকে বলে
গেছে যে সে কিন্তু এখনো কোভালনের জন্য অপেক্ষা করছে। কোভালন এখানে বসুক, মাধবী
তাঁর কাছেই আসছে। কিন্তু কোভালন বোঝে যে এসব তাঁকে লক্ষভ্রষ্ঠ করানোর জন্য। সে এক
মন্ত্রোচ্চারণ করতেই সেই অপরূপা সুন্দরী পরী কোথায় মিলিয়ে গেল। অবশেষে সে গিয়ে
পৌছাল এক শিকারীদের দলের সামনে। তারা তখন এক মন্দিরের সামনে নেচে গেয়ে পূজো
দিচ্ছে, যাতে ভাল করে শিকার পায়। কান্নাগীকে দেখে তাঁদের মনে হল যেন তাঁদের
আরাধ্যা দেবী এসে সামনে দাঁড়িয়েছে। এই রূপেই তো তারা তাঁদের দেবীকে পুজা করে। তারা
সসম্মনে নিজেদের ঘরে কান্নাগী আর কোভালনের থাকার বন্দোবস্ত করে দিল।
সকাল
হতেই কোভালনের ইচ্ছে যে মাদুরাই এর উপকন্ঠে যখন সে এসে পৌঁছে গেছে তখন শহরে গিয়ে ঐ
পায়জোড়টাকে বিক্রী করে আসে। কান্নাগীর কাছ থেকে পায়জোড়ের এক পাটি নিয়ে সে চলে গেল
নগরে এক স্বর্ণকারের কাছে।
এই
সেই স্বর্ণকার যে আগে কোন সময়ে ভাঞ্জি নগরে এক শ্রেষ্ঠ স্বর্ণকারের অধীনে কাজ
শিখত। সেই সময়ে তাঁর মনে আছে যে তাঁর গুরু এক অপূর্ব পায়জোড় বানিয়েছিলেন। সেটা ছিল
মণিমুক্তো বসান, আর তাঁর ভেতরে ছিল চুনী পাথর ভরা। চলতে গেলেই পাথরে ঠোকা লেগে এক
মধুর আওয়াজ করত। জিনিষটা তাঁকে মুগ্ধ করেছিল এতই, যে শেষ পর্যন্ত গুরুদেব তাঁকে
বলেছিলেন যে তোমার নিজেকে বশ রাখার ব্যপার শিখতে হবে। হায়, সেই পায়জোড় কোন এক
মহিলা এসে কিনে নিয়ে গেছিল।
পান্ডিয়ান
রাজা নেদুঞ্চেরিয়ান গানবাজনার প্রতি বেশ আকৃষ্ট ছিলেন। প্রায়ই তাঁর সভাতে
নৃত্যগীতের আসর বসত। আর নর্তকীরা ভাল ভাল উপহার পেয়ে সম্রাটের জয়গান করতে করতে চলে
যেত। কিন্তু নেদুঞ্চেরিয়ান আসলে ঐ নর্তকীদের থেকে কাউকে খুঁজতেন। আর হল তাই, তিনি
তাঁর স্ত্রী মহারানী কোপারুনদেবীর জায়গাতে একনর্তকীকে ভালো বাসতে শুরু করে দিলেন।
মহারানী এই কথা জানার পরে, তাঁদের দুজনের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কটা একটু খারাপ
হয়ে যাচ্ছিল।। সম্রাট নেদুঞ্চেরিয়ান এক
স্বর্ণকারকে ডেকে একজোড়া পায়জোড় বানিয়ে দেবার আদেশ দিলেন। এই সেই স্বর্ণকার যে আগে
ভাঞ্জিতে কাজ শিখেছিল আর এখন এসে মাদুরাইতে রাণী কোপারুনদেবীর গয়ণা বানানোর কাজ
করতেন।
এখন
যে সময় সম্রাট তাঁর রাণীকে ঘুষ হিসাবে ঠিক করে নিয়েছিলেন যে একজোড়া ভাল দেখে
পায়জোড় উপহার দিয়ে মানভঞ্জন করাবেন, ঠিক সেই সময়ে ঐ স্বর্ণকারের মাথায় সেই আগের
দেখা পায়জোড়ের কারুকার্যের চেহারাটা ঘুরছিল, তাই সে ঠিকই করে নিল (নিজের অজান্তে)
যে এখন যে পায়জোড়টা তৈরী করা হবে সেটাও সেই আগের দিনের পায়জোড়ের হবহু নকল হবে। আর
তাতে সে বসাবে মুক্তোর দানা। বানিয়ে ফেলা হল, আর রাজা মশাইয়ের কাছে সেটাকে নিয়ে
গিয়ে দেখান হল। রাজামশাই খুসী। বললেন রাণীমার পায়ে ঠিক মত হচ্ছে কিনা দেখে নেওয়া
হোক। তাই হল অপূর্ব দেখতে লাগল। আর স্বর্ণকারের মাথায় আবার সেই পুরনো ভূতটা চেপে
গেল। এত সুন্দর জিনিষ সে বানাচ্ছে কিন্তু সেটা তাঁর নিজের জন্য নয়। তাহলে এইটাকে
স্বর্ণকারকে চুরি করতেই হবে। সুযোগ পেতেও অসুবিধা ছিল না, কেননা রাণী কোপারুনদেবীর
গয়নার সমস্ত কাজ সেই করত। কাজেই কোন এক সময়ে সেটা চুরী করেও নিতে পারল।
রাজপ্রাসাদে
হুলস্থুল কান্ড। রাণীমার গয়ণা চুরি। রাজা মশাই তো খুব রাগ করলেন। আর রাণীমা তো
রাজাকে গালি দিতে লাগলেন কেননা তাঁর ধারণা ছিল ঐ স্বর্ণকারই চুরি করেছে, কিন্তু
রাজামশাই সেটা মানতে চাইছিলেন না। শেষে সব লোকজনদের লাগিয়ে দেওয়া হল যে যদি কেউ
চোরের খবর দিতে পারে তবে তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
এদিকে
কোভালন যখন তাঁর পায়জোড়টাকে নিয়ে স্বর্ণকারের কাছে গেছে, তখন সে গয়ণাটাকে দেখে
অবাক। এই সুযোগ। এটা দেখে সহজে কেউ বুঝবেই না যে এটা রাণীর পায়জোড় নয়। এটা সেই
তাঁর গুরুর বানানো পায়জোড়ের একটা পাটী।
কথায়
কথায় কোভালনকে সে অপেক্ষা করতে বলে সোজা চলে গেল রাজা মশাইয়ের কাছে।
ক্রমশঃ
উত্তরমুছুনবাংলায় ভালো ভালো হাঁসির গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় ভূতের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় প্রেমের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন