পরের দিন সকালে রাজকুমার দরজা খুলে দেখতে গেছেন যে
আগের দিন যে পাখীগুলোকে রঙ করেছিলেন সেগুলো শুখিয়েছে কিনা। আর দরজা খোলার সাথে
সাথে ঐ হাজারটা টিয়া পাখী ক্যাঁচর ম্যাঁচর করতে করতে ঘরের ভেতরে ঢুকে এল। সে এক
ভীষন হৈ হট্টগোলের ব্যপার,আর চেঁচামেচী শুনে রাজকুমারের বউ,শ্বশুর মশাই আর শ্বাশুড়ী ঠাকরুন জেগে উঠে কান্ড দেখে হতভম্ব।
শ্বাশুড়ী ঠাকরুন বলেন, “দেখ বাবা, তোমার ঐ হাজার
টিয়াকে খেতে দেবার মত সামর্থ, আমার বা তোমার শ্বশুর মশাইয়ের
কাছে নেই। ওরা তো রাক্ষসের মত খায়। তা তুমি যদি ওদের রাখতে চাও তাহলে তোমাকে
কিন্তু আলাদা কোথাও থাকতে হবে যে”।
রাজকুমার বলেন, “ঠিক আছে তাই হবে”। এই বলে রাজকুমার আর তার বৌ, মানে সেই
মিস্ত্রীর মেয়ে, গিয়ে উঠলেন এক নতুন ঠিকানায়। আর সাথে রইল
সেই হাজার টিয়া। অবশ্যই শ্বাশুড়ী ঠাকরুন তাদের প্রথম ক’দিন চালানর জন্য কিছু না কিছু আনাজপত্র সাথে দিয়ে দিয়েছিলেন।
এদিকে রাজকুমার কয়েকদিনের মধ্যে বুঝতে
পারল যে ঐ টিয়াপাখীর দল তো তার খাবারে ভাগ বসাচ্ছে না। তারা সকাল বেলায় উড়ে চলে
যায় নিজেদের খাবারের জোগাড় করতে, আর সন্ধ্যে বেলায় ফেরার সময় ঠোঁটে করে একটা ধানের শিষ বা গমের গুচ্ছ,
কি অন্য কিছু ফল বা আনাজ নিয়ে আসে রাজকুমারের জন্য।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাজকুমারের
অনেক পয়সা হয়ে গেল আর সে হয়ে গেল শহরের এক বিরাট ধনী কাঠের মিস্ত্রী। আর এভাবে
কিছু দিন চলার পরে এক রাত্রে রাজকুমার এক স্বপ্ন দেখল। কি সেই স্বপ্ন।
রাজকুমার দেখে, অনেক অনেক দূরে লোহিত সাগর পার হবার
পরেও আরও সাতটা সমুদ্রের ওপারে এক রাজ্য আছে। আর সেখানকার রাজার যে মেয়ে, তাঁকে সবাই পাঁচফুল রাণি বলে ডাকে। আর সেই কারণেই তাঁদের রাজ্যের নামও হয়ে
গেছে পাঁচফুল রাণীর দেশ।
ঐ যে পাঁচফুল রাণী, সে থাকে রাজ্যের একদম মধ্যিখানে এক
প্রাসাদে, যেখানে যেতে গেলে সাতটা চওড়া খাল পার হয়ে তার পরে
সাতটা উঁচু উচু বেড়াও পার হতে হবে। পাঁচফুল রাণীকে যদি কেউ দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে,
তবে তার ওজন পাঁচটা পদ্মফুলের চেয়ে বেশি হবে না। আর সেই পাঁচফুল
রাণী প্রতিজ্ঞা করেছে যে, তাঁকে বিয়ে করার জন্য সেই যোগ্য
পাত্র হবে, যে লাফ দিয়ে ঐ সাত সমূদ্র পার হয়ে সাত খাল আর সাত
বেড়া পার হয়ে তার কাছে আসতে পারবে।
রাজকুমারের ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে চিন্তা
করতে শুরু করে দিল, যে সে যা দেখেছে তা
সত্যি কিনা। কেননা এই রকম রাজ্যের নাম তো কেউই শোনে নি। এর মধ্যে তার বৌ উঠে দেখে,
রাজকুমার বসে বসে কি সব ভাবছে। জিজ্ঞেস করাতে রাজকুমার তাঁকে সব কথা
বললে। আরও বললে যে, “এই রকম রাজ্য
যে কোথায়, সেটা কিন্তু কেউ জানে
বলে মনে হয় না”। বৌ বলে,
“আমি হলে এই টিয়াদের জিজ্ঞেস করতাম, যে তারা এই সম্বন্ধে কিছু জানে কিনা”।
রাজকুমার ভাবে কথাটা সত্যি বলেছে তার
বউ। আর তাই সে ঠিক করল, হাজার টিয়ার মধ্যে যে
সব চেয়ে বুড়ো তাঁকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেবে। সন্ধ্যে বেলায় টিয়ারা যখন ঘরে ফিরল,
তখন রাজকুমারের জিজ্ঞাসা করলে, বুড়ো টিয়ে বলে
হ্যাঁ, তুমি যা দেখেছ তা সত্যি। লোহিত সাগর পেরিয়ে আরও সাতটা
সমুদ্র পার হবার পরে সাতটা খাল আর সাতটা বেড়া পার হয়ে তবে তাঁকে পাওয়া যাবে,
কিন্তু অনেক বড় বড় লোকেরা চেষ্টা করেও পারেনি, তাই ঐ পাঁচফুল রাণীর এখনও বিয়ে হয়নি।
টিয়া আরও বলে, “মেয়েটা তার
বাপ মার খুব প্রিয় বলে, তারা রোজ গিয়ে তার
ওজন দেখে আর রোজই পায়, যে পাল্লার একদিকে পাঁচটা পদ্মফুল আর
অন্য দিকে পাঁচফুল রাণীকে বসালে তাদের সমানই পাওয়া যাবে। রাজকুমার বলে, “তাতে কি হয়েছে, আমিও একবার যাব। কিন্তু কি ভাবে ঐ সাতটা সাগর পার হওয়া যাবে”?
টিয়া বলে, “তার জন্য
চিন্তা নেই। আমরা দুজনে পাশাপাশি একসাথে ডানা নেড়ে উড়ে গেলে, তুমি আমাদের ডানার উপরে বসে থাকতে
পারবে। আমরা তো খালি বাইরের দিকের ডানা দুটোই নেড়ে যেতে পারব। খালি রোজ সন্ধ্যে
বেলায় আমাদের কোন গাছের মাথায় বসতে হবে।, তা তুমি রাতের
বেলায় গাছে থেকে যেতে পারবে তো”?
রাজকুমার তার
বউকে যখন বললে যে সে টিয়ার কাছ থেকে রাস্তা জেনে নিয়েছে আর ঐ পাঁচফুল রাণির দেশে
যাবে, তখন তার বউ বলে, “যাবে তো যাও, আর গিয়ে ঐ পাঁচফুল রাণিকে বিয়ে করে নিয়ে আসতেও পার। কিন্তু রাস্তাঘাটে
মারা পড়ো না। আর বেশি দেরী করবে না”। এই সব বলে বউ তাঁর হাতের সোনা রূপোর চুড়িগুলো খুলে একটা
গরম কাপড়ের পোঁটলার সাথে বেঁধে দিল। ভাবল এগুলো রাস্তায় যদি কোন টাকা পয়সার দরকার
পরে তবে রাজকুমারের কাজে আসবে।
চলবে--