মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০১৫

পাচফুল রাণী (দ্বিতীয় খন্ড)


লোকটা চলে যাবার পরে মিস্ত্রী ভাবতে বসল, কি করে একজোড়া খড়মের জন্য সে দশটা সোনার মোহর পেতে পারে। এমনিতে তো সে এক এক জোড়া খড়মের জন্য দু তিন টাকার বেশি দাম কোনোদিন পায়না। অন্য খড়মগুলো দেখে আর ভাবে ওটা এত সুন্দর হল কি করে। ভাবতে ভাবতে মেয়েকেও জিজ্ঞেস করলে, মেয়ে বলে, “তবে ঐ খড়মজোড়া নিশ্চয়ই রাজকুমারের বানানো। এই বলে সে তার বাবাকে রাতে খাবার তৈরী করার সময়ে খড়ম জ্বালিয়ে রান্না করার কথা বললে।

মিস্ত্রী মনে মনে ভাবে যে এই রাজকুমার তো তাহলে খুব কাজের লোক। একে অন্য কোথাও কেন যেতে দিই। এই বলে সে রাজকুমারকে বলে, “তুমি কি আমার মেয়েকে বিয়ে করবে”? রাজকুমার ভাবে মিস্ত্রীর মেয়ে তো দেখতে খুব সুন্দরী আর ভাল করে রান্নাবান্নাও জানে। তাই সে আর আপত্তি করল না। বলে দিল, হ্যাঁ করব। যথা নিয়মে বিয়ে হয়েও গেল।

রাজকুমার তো গিয়ে আশ্রয়য় নিল এক খেলনা বানানোর মিস্ত্রীর ঘরে। আর সেখানে একজোড়া খড়ম বানাওয়ে দিল যেটা অনেক চামে রাজার জন্য কিনে নিয়ে গেল। মিস্ত্রী তাঁকে তাঁর সহকারী হিসাবে ঘরে থাকতে দিল।
এদিকে রাজকুমার রোজই কিছু খড়ম বানায় বাজারে বিক্রী করা জন্য। সেগুলো বানাতে তার অল্পই সময় লাগে। আর তার পরে বসে বসে খেলনাপাতি তৈরী করে। কি খেলনা, না টিয়া পাখী বানায়। তার দুটো ডানা, দুটো পা, দুটো চোখ, ধারাল ঠোঁট, ঠিক যেন আসল টিয়া। তার পরে সেগুলোকে রঙ করে বাইরে রোদে শুখোনর জন্য রেখে দিত। একবার রাজকুমার তার তৈরী ঐ পাখিগুলো দিনের শেষেও সুখোয়নি বলে রাতেও বাইরে রেখে দিয়েছিল।
সেই রাতে মহাদেব আর পার্বতী বেড়িয়েছেন, সারা পৃথিবীর কোথায় কি হচ্ছে তাই দেখবার জন্যে। আর ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌছেছেন সেই শহরে, যেখানে আমাদের রাজকুমার আর তার মিস্ত্রী শ্বশুরমশাই থাকেন। মহাদেব আর পার্বতী দেখলেন বাইরে অনেক কাঠের তৈরী টিয়াপাখী পড়ে আছে। সবগুলো একেবারে যেন জীবন্ত পাখী, কিন্তু তাঁদের প্রান নেই, তারা কাঠের তৈরী।

পার্বতী মহাদেবকে বললেন, “দেখ কি মজা হবে যদি ঐ সব পাখীগুলোকে প্রাণ দিয়ে দেওয়া যায়। কাঠের পাখী হাওয়ায় উড়ে বেড়াবে। মহাদেব বললেন, “ভাল মোটেই হয় না, কেননা সেটা যে সাধারণত হয় না। কিন্তু সত্যিই কি তুমি কাঠের টিয়াতে প্রান দেওয়া পছন্দ করবে। পার্বতী বললেন, “ আমি তো স্রেফ মজা দেখার জন্য বলছিলাম। মহাদেব বললেন, “তথাস্তু”, আর তার পরে ওখানে যে হাজারের মত কাঠের টিয়া ছিল, তাঁদের সবগুলোকে প্রাণ দিয়ে দিলেন। আর তার পরে উড়ে চলে গেলেন অন্য কোথাও।

চলবে--

1 টি মন্তব্য: