"কুল আছে। কুল নেবেন কি ?"
'কোন কুল দিচ্ছ গো ? ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল না কুলকুলিয়ে ঘামের কুল ।'
"না , ওসব নয় ।"
'তবে নদীর এ কুল, ও কুল, না গন্ধগোকুলের কুল ?'
"আজ্ঞে না। ওগুলো নয়।"
'তবে নিশ্চয় টোপা কুল কিম্বা নারকেলে কুল ।'
"এবারেও পারলেন না ।"
'তবে এইবার ধরতে পেরেছি। নিশ্চয় রাধার কুল মানে সেই কুল-শীলের কুল । কিন্তু তোমার কাছে সে কুল এল কি করে ? ওটা তো আয়ান ঘোষের সম্পত্তি। তুমি কি ওনার উত্তরাধিকারী ?'
"আজ্ঞে, উত্তরাধিকারী কি দক্ষিনাধিকারী সেটা আমি জানিনা। ঘরে পুরনো ট্রাঙ্কের মধ্যে আবর্জনার সাথে রাখা ছিল। কাবাড়িওয়ালার কাছে দেবার আগে নিজে একবার ফিরি করে দেখি কিছু দাম পাওয়া যায় কিনা। কাবাড়িওয়ালা ঠিক মতন দাম তো দেয় না।"
'তা বটে, তা বটে। আজকের মডার্ণ যুগে কে আর কুলের প্রাধান্য দেয়? আজকাল টাকা পয়সারই খালি প্রাধান্য। তার জন্য পয়সা খরচ করে হিসাব রাখার লোক রাখতে হয় গো। এক কাজ কর। তুমি জমিদার বাড়ীতে যাও, ওদের অনেক পয়সা। কুল কিনলেও কিনতে পারে।'
"আজ্ঞে গেছিলাম। নিতে ইচ্ছে আছে, কিন্তু এই কুলের বাপ দাদা চোদ্দ পুরুষের হিসাব চায়। বলে কোথাও ভেজাল ঢুকেছে কিনা দেখতে হবে তো। সেটা এখন আর কোথায় পাই।"
' না ভাই, আমার ও কুলের দরকার নেই। মাত্র দু পুরুষ আগে এই কুলের মধ্যে ইন করে ঠাকুর্দা কূলীন হয়ে ছটা বিয়ে করেছিলেন। ছোট ঠাকুমার বয়স তখন ১৫ কি ১৬ আর ঠাকুর্দার প্রায় ৭৫। নাকি শেষ বিয়ে করার আগে বলেছিলেন, "তোরা যখন বলছিস তখন করেই নিই। যাহা বাহান্ন তা তিপ্পান্নর মতন, যাহা পাচ তাহাই ছয়। ভাগ্যিস তখন বহুবিবাহ আইন লাগু হয় নি।'
" আজ্ঞে আপনি তো দেখছি মহাপুরুষের বাঁশ ধরে রেখেছে মানে বংশধর। দিন একটু পায়ের ধুলো দিন। যদি কোন খদ্দেরের খবর পান তবে একটু খবর করবেন। আমার নাম শ্যাম, গোকুলে থাকি। কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বাড়িটা দেখিয়ে দেবে। এখন আসি তবে। নমস্কার।"
আমি লোকটা চলে যাবার পরে ভাবতে লাগলাম, এ কোন শ্যাম, যশোদার ছেলে কি? কিন্তু তার কাছে রাধার কুল এল কি করে? না এসব ভেবে কোন লাভ নেই শুধু শুধু মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। তাও যদি লোকটা ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল ফিরি করত, একটু শ্যাম্পল নিয়ে মাথায় লাগালে ঠান্ডা হত।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন