মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৪

বোস বাবুর দৌড়


 
বোস বাড়ীর বুড়ো বাবু দৌড়ে হলেন ক্লান্ত
তার যে ছিল হার্টের ব্যারাম কেউ কখনো জানত?

ভেবেছিলেন বুড়োর রেসে হবেন তিনি ফার্ষ্ট
কেঁদে ককিয়ে হাফিয়ে ঘেমে হলেন দেখি লাস্ট।

পৌঁছে গিয়ে সবাই তখন জল শরবৎ খাচ্ছে
ফার্ষ্ট সেকেন্ড হয়েছে যারা তাদের মেডেল দিচ্ছে।

সবাই বলে দাদুকে তখন, স্ট্যামিনাটা তো বেশ
যা করেই হোক না কেন, করলে রেসটা শেষ।

লেগে থাক দাদু তুমি প্র্যাকটিস করে যাও
এই নাও এখন একটা লেবেঞ্চুষ খাও।


আমার অবস্থা ঠিক এই রকমই হয়েছে। তবুও দৌড় ছাড়ব না।

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৪

ছাপা হবে না মানে?

আমার আগের পোষ্টে কবির সম্পাদেকের কাছে চিঠি লেখাঁ হয়েছিল। কিন্তু কোন উত্তর পাওয়া যায় নি।

কবিতার কবচ
আচ্ছা পন্ডিতমশাই, দেখলাম শহরময়
পোষ্টার পড়েছে  দশমূখী কবচে সব কিছু হয়
আমার লেখাগুলো, পত্রিকার সম্পাদক মশাই
কিছুতেই ছাপছেন না, এলাম আমি তাই।
প্রথমে লিখেছিলাম মিনতি ভরা চিঠি
হলনাক কাজ, লিখলাম রেগে মেগে আরএকটি
কোনটারই জবাব নেই, আছে কি কোন উপায়
কিছু একটা করা, যাতে লেখাগুলো ছাপা হয়।
গ্রহ শান্তি, পুজাপাঠ, কবচ ধারণ
তন্ত্রমন্ত্র, ভষ্মারতি, মারণ উচাটন,
যা হোক একটা কিছু করে লেখা ছাপান চাই
নইলে যে বেঁটে দাশুর কাছে হেরে যাব ভাই
প্রত্যেক মাসে ওর কবিতা ম্যাগাজিনে থাকে
কবি সম্মেলনে ওকে আকচার ডাকে
কিছু একটা করুন না পন্ডিতমশাই
আমার লেখাগুলো ছাপানো যে চাই।।

এইবার কবি প্রবর সত্যি হতাশ হয়ে গেছেন। কোন কিছুতেই তার লেখা ছাপানো হচ্ছে না। তাই

ছাপা হয়েছে রে
ধুত্তোর, লিখবনা আর, ঢের হয়েছে লেখা
পায়ে ধরা, চোখ রাঙানো সবই গেল ফাঁকা
পুজাপাঠের চক্করেতে পুজু হল শেষ
পড়ে আছে দেখনা ভাই একটি মাত্র ড্রেস।
এত করেও সম্পাদক মশাই দিচ্ছে না যে উত্তর
দেখি বেল্টা কে বাজায়, খুলছি আমি দোর।
ধিংচা ধিনা, বলেছিলাম না হবই আমি কবি
ম্যাগাজিনের প্রথম পাতায় ছাপা হবে ছবি।
এই দেখনা আমার ছবি, নীচে লেখা আছে
রবার্ট ব্রুসের অধ্যাবসায় হেরেছে এনার কাছে।
বাধ্য হয়েই এর লেখাতা ছেপে দিলাম এবার
মার্জনা চাই পাঠকদের কাছে বারংবার।
সম্পাদকমশাই হাসপাতালে, স্ট্রোক হেয়েছে তার
সহ্য করতে পারেন নিক কবিতার ভার।।

এবার আপনারাই বলুন কি করা যাবে এই কবিকে নিয়ে।



বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৪

উঠতি কবির বক্তব্য

এক উঠতি কবি কবিতা লিখে সম্পাদক কে পাঠিয়ছিলেন কিন্তু সেটা ছাপা হয়নি। দুঃখে তিনি সম্পাদক মশাইকে যে চিঠি দিলেন সেটা  নীচে দিলাম।
সম্পাদক সমীপেষু

ছন্দ, মিল,অনুপ্রাস, যতি
লেখাতে ঠিক না থাকলে কি এমন ক্ষতি
সুর করে পড়লেই যদি বলেন তাকে গান
অর্থটা বোধগম্য হতে যখন ঘুচে যায় প্রাণ
আমার লেখাটা তাহলে কি এমন খারাপ?
ছোটখাট ভুলচুক কি যায়না করা মাপ?
ব্ল্যাঙ্ক ভার্স যখন প্রথম লেখা হয়েছিল
তখন তো সবাই তাকে ভুলই বলেছিল।
হেজি পেজী লোক যে আমি, তাই এত কথা
ভাষাবিদের ভগ্নীপতি হলেতো তুলতেন নাকো মাথা
শ্যালক আমার ভাষবিদ নন সেটা কি আমার অপরাধ

তবে কেন সম্পাদক মশাই আমার লেখা যাচ্ছে বাদ।। 

দিন যায়, লেখা ছাপা হয় না। কবি গেলেন রেগে। আমাদের চিন্তা অনুযায়ী এবার তিনি লিখলেন এডিটর কে। সেটা কি তা এবার পড়ুন-

টু দ্য এডিটর

সমাস , ছন্দ, মিল আর যতি
সবই আছে ঠিকঠাক, ভুল নেই এক রতি।
তবে এডিটর মশাই এটা হল কি করে
আমার লেখাটাই রয়ে গেল পড়ে।
ভেবেছেন কি বলুন দেখি
আমি একটা মুখখু ঢেঁকী।
হু হু বাবা বুঝবেন তখন
মামা হাজির হবে যখন।
বাঁচতে হলে শুনে নিন
লেখাটাকে এক্ষুনি দুবার ছাপতে দিন।
একবার অবশ্যই প্রথম পাতায়
আর একবার, সেখানে মন চায়।।

আশা করছি এবার তার লেখা নিশ্চয় প্রকাশিত হবে। আপনারা দুহাত তুলে বলুন সাধু সাধু।

শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৪

পিসীকে


তোর কিসের এত খূসী, যে ভেপু বাঁশি বাজাস বসি ঘরের কোণে
ঐ প্যাঁ প্যাঁ আওয়াজ, বাজছে আজ, ভীষণ ভাবে আমার কানে
থামারে তুই ঐ প্যাঁ প্যাঁ বাঁশী
নয়তো আমি যাচ্ছি কাশী
নিদেনপক্ষে হাতের কাছে সুন্দরবনে
বাঘে খাবে? ভালই হবে
বাব্জবে নাতো বাশী আর এই কানে।

আরে ও পিসী থামাচ্ছি বাঁশী যেওনাক সুন্দরবনে
চাও কি তুমি বাঘটা মরুক বদহজমে ধনে প্রানে
সাতটা বাঘের খাবার তুমি
আগে তাদের ডাকি আমি
তখন তুমি যেতে পার নির্বিবাদে সুন্দরবনে
যদি তোমায় দেখেই হায়
বাঘগুলোই পেছনে পালায়
তখন কি হতে পারে

কেউ কি সেটা জানে? 

শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৪

কলকাতার রেলপথের ইতিহাস- শিয়ালদহ

শেয়ালদহের কথা একটু আলাদা রকমের। ইষ্টার্ণ বেঙ্গল গ্যারান্টীড রেলয়ের পত্তন করা হয় ১৮৬২ সালে। ১৮৮৪ সালে সরকার একে নিয়ে নেবার পরে নাম বদল করে ইষ্টার্ণ বেঙ্গল রেলয়ে রাখা হল  আর নর্থ বেঙ্গল স্টেট রেলয়ে আর সাউথ ইস্টার্ণ রেলয়ের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হল। তার পরে একে আসাম বেঙ্গল রেলয়ের সাথে মিলিয়ে নাম রাখা হল বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম রেলয়ে।


বর্তমান শেয়ালদহ  দক্ষিন ষ্টেশনের নাম আগে ছিল বেলেঘাটা। যেখান থেকে প্রথম গঙ্গার পুর্ব পাড়ের ট্রেন চলে। ট্রেন চলে পোর্ট ক্যানিং। পোর্ট ক্যানিং হচ্ছে বর্তমান ক্যানিং ষ্টেশন , মাতলা নদীর পাড়ে অবস্থিত। এটা হল ১৮৬২ সালের কথা। লাইন তৈরি করলেন ক্যালকাটা অ্যান্ড সাউথ ইষ্টার্ণ রেলয়ে কোম্পানি। এই কোম্পানি তৈরী হয় ১৮৫৯ সালে। কিন্তু পরে গভর্ণমেন্ট এই কোম্পানীকে অধিগ্রহণ করেন। ভারতবর্ষে এই প্রথম কোন কোম্পানীকে সরকার অধিগ্রহন করেছিল। 


সরকারী  কোম্পানি হিসাবে কলকাতা অর্থাৎ বেলেঘাটা থেকে ডায়মন্ড হারবার লাইনের সংযোগ হয় ১৮৮৩ সালেও আর বেলেঘাটা বজবজ ১৮৯০ সালে। লক্ষীকান্তপুরের লাইন অনেক পরে ১৯২৮ সালের কথা।


এখনও কিন্তু আমি শেয়ালদহ থেকে বাংলার উত্তরে এবং বর্তমান বাংলা দেশ আর আসামে লাইন নিয়ে যাবার কথাতে আসিনি। ১৮৫৭ সালে কলকাতার সাথে এই সমস্ত জায়গার যোগাযোগ বানানোর জন্য ইষ্টার্ণ বেঙ্গল রেলয়ে কোম্পানি তৈরী করা হয়েছিল। ১৮৮৪ সাল নাগাদ রানাঘাট এবং বনগার সাথে রেল যোগাযোগ চালু হয়ে গেল।


যেহেতু শেয়ালদহ ষ্টেশনের এলাকা, একটু নীচু কাদায় ভরা জলা জমি থেকে উদ্ধার করা তাই ষ্টেশন তৈরি করতে গিয়ে প্রায় ৫০ ফুট  (প্রায় দশ মানুষের মত) গভীর গর্ত করে ভিত তৈরী করতে হয়েছিল। তা ছাড়া শেয়ালদহ থেকে প্রায় দমদম পর্যন্ত লাইনের জমি চারদিকের জমির থেকে মাটী ফেলে অনেক উচু করে তৈরী করতে হয়েছিল। কারন হচ্ছে পুব-পশ্চিমের রাস্তা এবং জলপথ গুলি।


এখন কিন্তু কলকাতার কাছকাছি গঙ্গার দুই পাড়ের মধ্যে রেলপথের যোগাযোগ করা যায় নি। এই যোগ সম্ভব হল গঙ্গার উপর হুগলীতে জুবিলী ব্রিজ  তৈরি করার পরে।  নৈহাটি আর ব্যান্ডেলের মধ্যে এই ব্রিজ তৈরি ১৮৮৭ সালে।  পরে দক্ষিণেশ্বরের কাছে বিবেকানন্দ সেতু বা উইলিন্ডন ব্রিজ তৈরী করে গঙ্গের উপরে দুই পাড়ের আর একটি যোগসূত্র স্থাপন করা হয় ১৯৩২ সালে।


এদিকে বর্তমান বাংলাদেশের সীমান্ত গেদে-দর্শনা পেড়িয়ে আগে লাইন ছিল উত্তরে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যেখান থেকে টয় ট্রেন যেত দার্জিলিং। পদ্মার উপরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তৈরি হবার আগে পদ্মার উপরে ফেরীর বন্দোবস্ত ছিল। ব্রিজ হয়ে যাবার পরে ট্রেন থেকে আর নেমে ফেরীতে চড়তে হত না। সান্তাহারএর পরে  স্টেশন পার্বতীপুর। এই পার্বতীপুর থেকে মিটার গেজের ট্রেন ছিল আসাম পর্যন্ত। কুচবিহার স্টেট রেলয়ে লাইনটা বাড়ীয়ে বক্সা জয়ন্তী হয়ে মালবাজার পর্যন্ত নিয়ে যান।

আমার রেলপথের বিবরন এখানেই শেষ করলাম। কলকাতা ষ্টেশনের বিবরণ আর দিলাম না কেননা এটা হাওড়া আর শেয়ালদহের তুলনায় অনেক নবীন, এর ইতিহাস তৈরি এখনও শুরু হয়নি।

বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৪

দাদু নাতি সংবাদ

দাদু নাতি সংবাদ
দাদু তোমার নাকি চোখে ছানি কাটা হবে

তারপরেই নাকি তুমি ভাল দেখতে পাবে।

আমি বলি, হ্যাঁরে দাদু, তাইতো ডাক্তার বললেন

কালকে যখন যন্ত্র দিয়ে দুটো চোখই দেখলেন।

আচ্ছা দাদু, ছানিটা এল কোথা থেকে এখন

চোখ কি খুলে রেখেছিলে ঘুমচ্ছিলে যখন

একটুনি ধুলো গেলেই চোখ কড়কড় করে

কাটার মতন ছানি চোখে তোমার এল কি করে?

আমি বলি, আরে নারে, ছানিটা ধুলোবালি নয়

বুড়ো হলে পড়ে এটা নিজের থেকেই হয়।

চোখের ভেতরের দেখার জিনিষটা ঘসে গেছে আমার

ডাক্তারবাবু সেটাকে বদলে দেবেন এবার

তার পরেই দেখতে পাব, তোরা কিসব কি লিখিস


এবার সাবধান থাক, সেটাকে আগেই লুকিয়ে ফেলিস।।

মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৪

কলকাতার রেলপথের ইতিহাস

কলকাতার রেলপথের কথা
 কলকাতার ভাগ্যটাই খারাপ। মুম্বাই থেকে থানের রেলপথ ভারতের প্রথম রেলপথ হবার গর্ব করার সৌভাগ্য পেতে পারতনা যদি দুটি দুর্ঘটনা না ঘটত। প্রথম ইংল্যান্ডের থেকে একটা জাহাজ যাতে রেলের ইঞ্জিন আসছিল সেটা রাস্তা হারিয়ে অষ্ট্রেলিয়ার পশিম উপকুলে গিয়ে হাজির হল আর দ্বিতীয়টা যাত্রী বগী নিয়ে গঙ্গার মোহনাতে ডুবে গেল। আবার সব কিছু নতুন করে সাজানর জন্য যে সময় লেগেছিল তার সুযোগ চলে গেল মুম্বাইএর ভাগ্যে।
১৮৫৩ সালে মুম্বাই তার প্রথম রেল গাড়ি চালাল আর তার ১ বছর পরেই কলকাতা থেকে রেল যাত্রা শুরু হল। প্রথম ট্রেন চলল হাওড়া থেকে হুগলীর মধ্যে, তারিখ ছিল ১৮৫৪ সালের আগষ্ট মাসের ১৫ই। ভাগ্য আমাদের কি রকম, এর ঠিক তিরানব্বই বছর পরে ভারত তার স্বাধীনতা দিবস পালন করল।। হাওড়া তখন এক গ্রাম মাত্র। এক মাটীর তৈরি ষ্টেশন ঘর থেকে একটি ট্রেন সিঙ্গল লাইন ধরে যাত্রা সুরু করেছিল। লাইন পাতা হচ্ছিল প্রথমে রাজমহল পর্যন্ত। এর আগের ইতিহাস আমরা একটু ঘেটে নিই।
রাজ মহলের প্রয়োজন কেন হল। গঙ্গার ধারে এই শহরের উপরে নীল চাষের জন্য বিখ্যাত নীল-কুঠি তৈরী হয়েছিল ১৭৯৬ সালে , আর সিপাহী বিদ্রহের সময় গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের এই শহরটির গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। নদী আর পাহাড়ের মাঝে থাকার জন্য আর সাথে গঙ্গার নাব্যতা থাকার জন্য বৃটিশদের একটা মূল ঘাটি এখানে হয়েছিল।
১৮৫১ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়ান রেলয়ের চীফ ইঞ্জিনিয়ার হাওড়া ষ্টেশনের জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু দেখা যায় যে ষ্টেসনের জন্য পর্যাপ্ত জমির বন্দোবস্ত করা সম্ভব হয়ে উঠছে না,। এদিকে লাইনের জন্য জরীপের কাজ শুরু করা হয়ে গেছে। গঙ্গার উপরে সেতু তৈরির অসুবিধার কথা ভেবে ঠিক হয় আপাতত লাইন পাতার কাজ শুরু হবে হাওড়া থেকে রাণিগঞ্জ পর্যন্ত। বালী খাল, শ্রীরামপুর অঞ্চল তখন ঘন জঙ্গলে ভরা। জরীপের জন্য তাল গাছের মাথায় বাঁশ বেঁধে জরিপের ভাষায় লাইন অফ সাইট নিয়ে লাইন পাতার রাস্তা পরিস্কার পাবার বন্দোবস্ত করতে হল।
লাইন পাতার কাজ তো শুরু হল কিন্তু তখন ভারতে লোহার কারখানা ছিলনা তাই রেললাইন, ব্রিজের জন্য লোহালক্কড় ইত্যাদি সমস্ত কিছুই ইংল্যান্ড থেকে আমদানী করা হল। এমন কি যদিও নেপাল থেকে শাল কাঠ, স্লিপারের জন্য পাওয়া যাচ্ছিল তবুও আমেরিকা থেকে ফার গাছের কাঠ ইংল্যান্ডে আনিয়ে তাতে ক্রিওজোট মাখিয়ে ভারতে পাঠান হতে লাগল। একথা আমরা মনে তাখতে পারি যে সুয়েজ খাল তখন তৈরী হয় নি কাজেই জাহাজকে আফ্রিকা ঘুরে আসতে হত। প্রায় ১৪০০০০ টন লোহার রেল ইত্যাদি এই জন্য ভারতে আনতে হয়েছিল।
১৫ আগষ্ট ১৮৫৪ সালে হাওড়া থেকে হুগলী পর্যন্ত প্রথম ট্রেন চলল। ৩০০০ লোকে প্রথম ট্রেনে চড়বার জন্য দরখাস্ত দেন কিন্তু প্রত্যেকের ভাগ্য সহায় ছিল না।তিনটি প্রথম শ্রেণি, দুটি দ্বিতীয় শ্রেনী আর তিনটে মাল গাড়ীর ফ্ল্যাট তৃতীয় শ্রেণী হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল।তাও সমস্ত লোকে টিকিট পায় নি। হিসাবে দেখা যায় যে প্রথম তিন মাসে কোম্পানীর মোট ৬৮০০ পাউন্ড রোজগার হয়েছিল আর প্রায় ১ লাখ ১০ হাজারের মত যাত্রী পরিবহন করা হয়েছিল।
ধীরে ধীরে রলে লাইনের বিস্তার হতে লাগল। ১৫ দিনের মধ্যে ট্রেন পান্ডুয়া পর্যন্ত যেতে শুরু করল। ৬ মাসের মধ্যে লাইনের বিস্তার বর্ধমান পর্যন্ত হয়ে গেল আর প্রাথমিক লক্ষ রাজমহল পর্যন্ত লাইন চলে গেল পরে চার বছরের মধ্যেই। ১৮৬০ সালের জুলাই মাসে প্রথম রাজমহল পর্যন্ত ট্রেন চালান হল। লাইনটাকে ক্রমশঃ বাড়িয়ে দিল্লী পর্যন্ত নেওয়ার পরিকল্পনা এর মধেই হয়ে গেছিল । ৬২ সালে মধ্যে লাইন কাশী পৌঁছে গেল।।

১৮৬৩র ৫ ফেব্রুয়ারি হাওড়া থেকে লর্ড এলগিন আর চীফ ইঞ্জিনিয়ার টার্নবুল কে নিয়ে বিশেষ ট্রেন বেনারস রওয়ানা হল। প্রথম রাত জামালপুরে কাটিয়ে পরের দিন বেনারস তারা পৌছলেন। ১৮৬৬ তে দিল্লী পর্যন্ত লাইন চলে গেল। ইতিমধ্যে ১৮৬৭ সালে এলাহাবাদ থেকে জব্বলপুর পর্যন্ত লাইন হওয়াতে মুম্বাই আর কলকাতা এলাহাবাদ হয়ে যুক্ত হয় গেল। জুলে ভার্ণের ৮০ দিনে পৃথিবী প্রদক্ষিন লেখা তার আগেই হয়েছে। ১৮৭৯ সালে বৃটিশ সরকার ইষ্ট ইন্ডিয়ান রেলয়ে কিনে নিয়ে আবার কোম্পানীকেই লীজে কাজ চালানর জন্য দেন।

এদিকে ১৮৫৩ সালে মুম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত ট্রেন চলার পরে লাইন ধীরে ধীরে আগে এগোতে সুরু করল। ভূসয়াল থেকে একটা লাইন নাগপুরের দিকে আর একটা জব্বলপুরের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে দিল। ঈষ্ট ইন্ডিয়ান রেলয়ে এলাহাবাদথেকে জব্বলপুরের লাইন সংযোগ করাতে মুম্বাই আর কলকাতা ট্রেন  চলাচলে যুক্ত হয়ে গেল।

ইতিমধ্যে ১৮৭৮ সালের দুর্ভিক্ষে সস্তা শ্রমিক পাবার কল্যানে নাগপুর থেকে রাজনন্দগাঁও পর্যন্ত নাগপুর  ছত্তিশগড় রেলয়ে ১৮৮২ সালের মধ্যে মিটার গেজে ট্রেন চালাতে শুরু করল।

নাগপুর ছত্তিশগড় রেলয়ে ছিল গ্রেট ইন্ডিয়ান রেলয়ের মালিকানায়। ১৮৮৭ সালে বেঙ্গল নাগপুর রেলয়ে তৈরী হয় এবং তারা এই নাগপুর ছত্তিশগড় রেলয়ে কিনে নিয়ে তাকে ব্রড গেজে রূপান্তরিত করেন।

বেঙ্গল নাগপুর রেলয়ের মুল লক্ষ ছিল লাইনটাকে বাড়িয়ে বিলাসপুর হয়ে আসানসোল পর্যন্ত নিয়ে যাবার যাতে, কলকাতা আর মুম্বাইএর মধ্যে একটা কম দূরত্বের লাইন পাওয়া যায়। এই উদ্দেশে কাজ এগোতে লাগল আর ১৮৯১ সালের মধ্যে প্রথম মালগাড়ি আসানসোল থেকে নাগপুর পর্যন্ত চলা সুরু করল। ১৯০০ সালে বেঙ্গল নাগপুর রেলয়ে হাওড়াতে এসে যুক্ত হল। পরের বছর মহানদির উপরে ব্রিজ তৈরী হয়ে যাবার পরে হাওড়া মাদ্রাজ রেল যোগাযোগ সম্পুর্ন হল।

এতদিন ধরে হাওড়া ষ্টেশনের উপর যাত্রীর সংখ্যা যা ছিল,  বেঙ্গল নাগপুর রেলয়ে তাদের ট্রেন চালান শুরু করার পরে তার অনেক বৃদ্ধি পেল। কাজে কাজেই  ভবিষ্যতের কথা  চিন্তা করে ভাবা হল এক নতুন ষ্টেশনে তৈরির কথা।

১৯০১ সালে লন্ডনের আর্কিটেক্ট হ্যালসী রিকার্ডো কে ভার দেওয়া হল হাওড়া ষ্টেশনের নক্সা বানাতে।  সেই অনুযায়ী কাজ শুরে হয়ে ১৯০৫ সালের ১ ডিসেম্বর নতুন হাওড়া ষ্টেশনের  উদ্বোধন হল , যদিও ১৯১১ পর্যন্ত ষ্টেশনের কাজ হয়েছে।, পৃথিবীর যে কোন তৎকালীন ষ্টেশনের সাথে তাল রেখে এই ডিজাইন, আজও কলকাতার যাত্রী পরিবহন করে যাচ্ছে। তখনকার দিনে এই হাওড়া ষ্টেশন তৈরি করতে প্রায় পৌনে  লাখ টাকার মতন খরচ হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৪

২০১৪ এর প্রথম পোষ্ট

কলিকাতার ইতিহাস
কলকাতার ইতিহাস
কলকাতা বলতে আমরা আজকে যে মহানগরীকে বুঝি তার ইতিহাস খুজতে যাওয়া বেশ কঠিন ব্যপার। সব শহরের কেউ না কেউ প্রতিস্থাপনা করেন ,কিছু ইতিহাসবিদ এখনও মানেন যে জব চার্ণক এই শহরের প্রতিস্থাপক। যদিও কলকাতার হাইকোর্ট তার বিচারে রায় দিয়েছেন যে কলকাতার কোন প্রতিষ্ঠাতা নেই এ স্বয়ম্ভূ। আমরা দেখি যে কলকাতার অবস্থান যে জায়গাতে সেখানে আগে তিনটি প্রাচীন গ্রাম ছিল। তারা হচ্ছে যথাক্রমে সুতানুটী; কলিকাতা আর গোবিন্দপুর। সুতানূটী ছিল এখনকার বাগবাজার থেকে প্রায় ক্লাইভ ষ্ট্রীট  গঙ্গার ধারের এলাকা মানে উত্তর কলকাতা। আর গোবিন্দপুর ছিল বর্তমান খিদিরপুর থেকে দক্ষিনে বিস্তীর্ন জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা।এই কারণে বাংলায় দূর দূরান্ত বোঝাতে এখনও ধ্যার ধেড়ে গোবিন্দপুর বলা হয়। মাঝে ছিল কলিকাতা গ্রাম। কিন্তু পঞ্চদশ শতাব্দিতে বিপ্রদাসের লেখা মনসা মঙ্গলে সপ্তগ্রাম থেকে দক্ষিণে যাত্রা করে  গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে বেতড়ের উল্লেখ আছে। বেতড়ের আগেই  উল্লেখ হচ্ছে গঙ্গার পূর্ব পাড়ে, চীৎপুর এবং কলিকাতার। এতে সুতানুটী বা গোবিন্দপুরের কোন উল্লেখ নেই। কালীঘাটের নাম মাত্র উল্লেখ আছে।
সমূদ্র থেকে যে সব পর্তুগীজ জাহাজ আসত সে গুলো আদি গঙ্গা (টালির নালা) ধরে এসে গঙ্গাতে নোঙ্গর করত। এই জায়গাটা হচ্ছে বর্তমান বি এন আর অঞ্চল।মালপত্র ছোট নৌকাতে করে গঙ্গা নদী দিয়ে বর্তমান পথে ধরে হুগলী বন্দর পর্যন্ত যেত। পর্তুগীজেরা ১৫৮০ সালে হুগলী তে তাদের বন্দর বানিয়ে নেয়।কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে সপ্তগ্রামের ব্যবসায়ীদের অন্য বাজারে ব্যবসা করতে বাধ্য করা হলে তাদের বেশ কিছু অংশ হুগলীতে এসে যান। কিন্তু মুকুন্দরাম শেঠ এবং বসাকদের চারজন দেখেন যে বেতড়ে ব্যবসার সুযোগ অনেক বেশী।একে তো সেখানে আগে থাকতেই বাজারের বন্দোবস্ত ছিল তাই তারা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বেতড়ে এসে ব্যবসা করা ঠিক করে বেতড়ের উলটোদিকে গঙ্গার পুর্ব পাড়ে গোবিন্দপুর গ্রামের স্থাপনা করে নেন। গ্রামের উত্তর দিকে রইল  ধী কলিকাতা (অর্থাৎ গ্রাম কলিকাতা) যেখানে কিছুদিন পরেই সুতানুটি হাট গড়ে ওঠে।এই সুতানুটী হাটে কাপড়ের ব্যবসা খুব প্রসিদ্ধ হয়। ১৫৯৬ সালে আকবরের মন্ত্রী আবুল ফজলের বইতে এই সুতানুটি গ্রাম সাতগা বা সপ্তগ্রামের অধীনে একটি জেলা বলে দেখান হয়েছিল।
ঈষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জব চার্ণক তার কাজের সময়  মনে করেন যে তাদের মূল বাণিজ্যের জায়গা এই সুতানুটিতেই হতে পারে। মাদ্রাজে তাদের সদরে নানান লেখালেখির পরে তাকে বলা হয় ঠিক আছে, সুতানুটিতেই ইংরেজদের মূখ্য ব্যবসাকেন্দ্র হোক। কেননা চট্টগ্রামে মগদের জন্য ওখান থেকে ইংরেজরা সরে আসতে চাইছিলেন। ১৬৯০ সালের আগষ্ট মাসে জব চার্ণক এই সুতানুটিতে এসে কোম্পানির কেন্দ্র বসালেন। সুতানুটির সব চেয়ে সুবিধা ছিল পশ্চিমে গঙ্গা নদী, দক্ষিণ আর পুর্ব দিকে বাদা বা জলা জমি (সল্ট লেক অঞ্চল) , কাজেই একমাত্র উত্তর দিক থেকেই আক্রমণের সম্ভাবনা , কাজেই সে দিক রক্ষা করার ব্যবস্থা করলেই হবে। । 
এই তিনটি গ্রাম ছিল বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের  জমিদারী দেখাশুনাতে মুঘল সম্রাটের খাস মহল এলাকা হিসাবে। ১৬৯৮ সালে  ইংরেজ্রা সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের কাছ থেকে জমিদারীর অধিকার কিনে নেন। আর ১৭৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ বা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত রীতিমত মুঘলদের খাজনা দিতেন।
রুডিয়ার্ড কিপলিং কলকাতার উপরে একটা কবিতা লিখেছিলেন তার অনুবাদ (আমার অক্ষম প্রচেষ্টা) দিচ্ছি

খেতে এখানে বসেছিলেন জব চার্ণক দুপুরের খাবার
আর কি দুর্ভাগ্য সেটাই হয়ে গেল এই শহর আমার
পাউরুটিএর গায়ে ছাতার মতন বেড়ে উঠেছে এদিক-ওদিকে
কিছুটা হিসাব মতন আর কিছুটা নিজের খেয়ালের তাগিদে
নাবাল কাদা ভরা বাদা জমির উপর তৈরী হল প্রাসাদ বস্তি আর বাগান
পাশাপাশি  এসে গেল সুখ আর দুঃখ, ঘৃণা আর অভিমান
হায়

কিন্তু তাদের উপরে রইল মৃত্যুর করাল ছায়।

সকল পাঠকদের আমার নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল।