কলিকাতার ইতিহাস
কলকাতার
ইতিহাস
কলকাতা বলতে আমরা
আজকে যে মহানগরীকে বুঝি তার ইতিহাস খুজতে যাওয়া বেশ কঠিন ব্যপার। সব শহরের কেউ না
কেউ প্রতিস্থাপনা করেন ,কিছু ইতিহাসবিদ এখনও মানেন যে জব চার্ণক এই শহরের প্রতিস্থাপক।
যদিও কলকাতার হাইকোর্ট তার বিচারে রায় দিয়েছেন যে কলকাতার কোন প্রতিষ্ঠাতা নেই এ
স্বয়ম্ভূ। আমরা দেখি যে কলকাতার অবস্থান যে জায়গাতে সেখানে আগে তিনটি প্রাচীন
গ্রাম ছিল। তারা হচ্ছে যথাক্রমে সুতানুটী; কলিকাতা আর গোবিন্দপুর। সুতানূটী ছিল
এখনকার বাগবাজার থেকে প্রায় ক্লাইভ ষ্ট্রীট
গঙ্গার ধারের এলাকা মানে উত্তর কলকাতা। আর গোবিন্দপুর ছিল বর্তমান খিদিরপুর
থেকে দক্ষিনে বিস্তীর্ন জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা।এই কারণে বাংলায় দূর দূরান্ত বোঝাতে
এখনও ধ্যার ধেড়ে গোবিন্দপুর বলা হয়। মাঝে ছিল কলিকাতা গ্রাম। কিন্তু পঞ্চদশ শতাব্দিতে
বিপ্রদাসের লেখা মনসা মঙ্গলে সপ্তগ্রাম থেকে দক্ষিণে যাত্রা করে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে বেতড়ের উল্লেখ আছে। বেতড়ের
আগেই উল্লেখ হচ্ছে গঙ্গার পূর্ব পাড়ে, চীৎপুর
এবং কলিকাতার। এতে সুতানুটী বা গোবিন্দপুরের কোন উল্লেখ নেই। কালীঘাটের নাম মাত্র
উল্লেখ আছে।
সমূদ্র থেকে যে সব
পর্তুগীজ জাহাজ আসত সে গুলো আদি গঙ্গা (টালির নালা) ধরে এসে গঙ্গাতে নোঙ্গর করত।
এই জায়গাটা হচ্ছে বর্তমান বি এন আর অঞ্চল।মালপত্র ছোট নৌকাতে করে গঙ্গা নদী দিয়ে
বর্তমান পথে ধরে হুগলী বন্দর পর্যন্ত যেত। পর্তুগীজেরা ১৫৮০ সালে হুগলী তে তাদের বন্দর
বানিয়ে নেয়।কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে সপ্তগ্রামের ব্যবসায়ীদের অন্য বাজারে ব্যবসা
করতে বাধ্য করা হলে তাদের বেশ কিছু অংশ হুগলীতে এসে যান। কিন্তু মুকুন্দরাম শেঠ
এবং বসাকদের চারজন দেখেন যে বেতড়ে ব্যবসার সুযোগ অনেক বেশী।একে তো সেখানে আগে
থাকতেই বাজারের বন্দোবস্ত ছিল তাই তারা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বেতড়ে এসে ব্যবসা
করা ঠিক করে বেতড়ের উলটোদিকে গঙ্গার পুর্ব পাড়ে গোবিন্দপুর গ্রামের স্থাপনা করে
নেন। গ্রামের উত্তর দিকে রইল ধী কলিকাতা
(অর্থাৎ গ্রাম কলিকাতা) যেখানে কিছুদিন পরেই সুতানুটি হাট গড়ে ওঠে।এই সুতানুটী
হাটে কাপড়ের ব্যবসা খুব প্রসিদ্ধ হয়। ১৫৯৬ সালে আকবরের মন্ত্রী আবুল ফজলের বইতে এই
সুতানুটি গ্রাম সাতগা বা সপ্তগ্রামের অধীনে একটি জেলা বলে দেখান হয়েছিল।
ঈষ্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানির জব চার্ণক তার কাজের সময় মনে
করেন যে তাদের মূল বাণিজ্যের জায়গা এই সুতানুটিতেই হতে পারে। মাদ্রাজে তাদের সদরে
নানান লেখালেখির পরে তাকে বলা হয় ঠিক আছে, সুতানুটিতেই ইংরেজদের মূখ্য
ব্যবসাকেন্দ্র হোক। কেননা চট্টগ্রামে মগদের জন্য ওখান থেকে ইংরেজরা সরে আসতে
চাইছিলেন। ১৬৯০ সালের আগষ্ট মাসে জব চার্ণক এই সুতানুটিতে এসে কোম্পানির কেন্দ্র
বসালেন। সুতানুটির সব চেয়ে সুবিধা ছিল পশ্চিমে গঙ্গা নদী, দক্ষিণ আর পুর্ব দিকে
বাদা বা জলা জমি (সল্ট লেক অঞ্চল) , কাজেই একমাত্র উত্তর দিক থেকেই আক্রমণের
সম্ভাবনা , কাজেই সে দিক রক্ষা করার ব্যবস্থা করলেই হবে। ।
এই তিনটি
গ্রাম ছিল বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের জমিদারী দেখাশুনাতে মুঘল সম্রাটের খাস মহল এলাকা
হিসাবে। ১৬৯৮ সালে ইংরেজ্রা সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের
কাছ থেকে জমিদারীর অধিকার কিনে নেন। আর ১৭৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ বা ভারতের প্রথম
স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত রীতিমত মুঘলদের খাজনা দিতেন।
রুডিয়ার্ড কিপলিং
কলকাতার উপরে একটা কবিতা লিখেছিলেন তার অনুবাদ (আমার অক্ষম প্রচেষ্টা) দিচ্ছি
খেতে এখানে
বসেছিলেন জব চার্ণক দুপুরের খাবার
আর কি দুর্ভাগ্য
সেটাই হয়ে গেল এই শহর আমার
পাউরুটিএর গায়ে
ছাতার মতন বেড়ে উঠেছে এদিক-ওদিকে
কিছুটা হিসাব মতন
আর কিছুটা নিজের খেয়ালের তাগিদে
নাবাল কাদা ভরা
বাদা জমির উপর তৈরী হল প্রাসাদ বস্তি আর বাগান
পাশাপাশি এসে গেল সুখ আর দুঃখ, ঘৃণা আর অভিমান
হায়
কিন্তু তাদের উপরে
রইল মৃত্যুর করাল ছায়।
সকল পাঠকদের আমার নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল।
উত্তরমুছুনবাংলায় ভালো ভালো হাঁসির গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় ভূতের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় প্রেমের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন