শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

শেয়ালের বুদ্ধি

বহুকাল আগে এক বনে এক হরিণী ছিল। নধর চেহারা। এক শেয়াল তার মাংস খাবার জন্য খুব ইচ্ছুক ছিল। কিন্তু কি ভাবে হরিণীকে মারা যায়। সে খুব জোরে দৌড়তে পারে, এমন কি সিংহও তাকে সহজে মারতে পারে না। অনেক চিন্তা করে সে এক ইদুরের সাথে সখ্যতা পাতাল। আগেই সিংহের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। তিনজনে মিলে প্ল্যান কষতে লাগল। সাথে বাঘ আর বেজীও এসে হাজির।

 শেয়াল বলে সিংহ হরিণীকে তাড়া করুক যাতে সে দৌড়ে দৌড়ে পরিশ্রান্ত হয়ে পরে। তখন নিশ্চয় হরিণী বিশ্রাম নেবার জন্য শুয়ে পড়বে। এবার ইদুর ভায়া গিয়ে দূর থেকে মাটির তলা দিয়ে হরিনীর পায়ের কাছে পৌছবে। পৌঁছানর পরে ইদুর ভায়ার কাজ হচ্ছে হরিণীর পায়ের শিরাতে কামড়ে একটা ক্ষত তৈরী করে দেওয়া। এইবার সিংহ আবার তাঁকে সহজেই তাড়া করে মেরে ফেলতে পারবে।

কথা অনুযায়ী কাজ হল। ইদুর গিয়ে গর্ত থাকে বেরিয়ে হরিণীর পায়ে কামড়ে দিল আর তার পরে সিংহ হরিণীকে সহজেই মেরে ফেলতে পারল। কিন্তু এদিকে শেয়াল মনে মনে ভাবছে কি করে কাউকে ভাগ না দিয়ে সমস্ত মাংস একাই খাওয়া যায়।

সে সবাইকে বলল, দেখ ভাই তোমরা। সাধারণতঃ হরিণীর এই ভাবে মরাটা ঠিক দৈবের প্রভাব ছাড়া হয় না। তাই তোমরা সবাই গিয়ে আগে স্নান করে শুচি হয়ে এস। আমি ততক্ষন এখানে বসে মাংসটাকে পাহারা দিচ্ছি। সবাই কথাটা ঠিক মেনে স্নানে চলে গেল।

সিংহ সব চেয়ে আগে এসে দ্যাখে শেয়াল খুব চিন্তিত অবস্থাতে মাংসের সামনে বসে আছে। সিংহ জিজ্ঞেস করে, কি ব্যাপার? শেয়াল বল্‌ কি বলব ভাই। তুমি যখন স্নান করতে গেছ তখন ইদুর এসেছিল। সে কি তার কথা। বলে, সে হরিণীর পায়ে কেটে আহত না করে দিলে তুমি কি হরিণীকে মারতে পারতে? সিংহ বলে, দুত্তোর,  ইদুরের সাহায্য। আমি সিংহ। আমাকে সবাই ভয় করে। আর ব্যাটা ইদুরের এত আস্পর্ধা ! চাইনা আমি ইদুরের সাহায্য। একাই আমার খাবার জোগাড় করে নিতে পারব। এই মাংসের কনা মাত্র আমার মুখে রুচবে না। আমি চললাম। রেগে সিংহ তো চলে গেল।

এবার স্নান করে এল বাঘ। আসার পরেই শেয়াল তাকে কাছে ডেকে চুপি চুপি বলে,  কি বলব বাঘ ভাই। তুমি কিন্তু একটু সাবধান থেক। সিংহ তোমায় খুঁজে বেরাচ্ছে। বলে আসুক একবার সামনে। দেখিয়ে দেব মজা। আমার সাথে চালাকি। আজ বাঘের একদিন কি আমার একদিন। বলে ঐ দিকে কোথায় তোমাকে খুজতে গেল। বাঘ ভাবে হতেও পারে বা। কিছু বোধ হয় আমার কথাবার্তায় ভুল হয়েছে। তাই এত রাগ। যাকগে আমি তো এখন পালাই। নয়তো মাংস খাবার জন্যে আমার প্রাণ নিয়ে টানাটানি হতে পারে। এই বলে বাঘও মাংস ছেড়ে পালিয়ে গেল


এবার এল ইদুর। ইদুরকে দেখে শেয়াল কাঁদতে শুরু করে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বলে দেখ বেজী তো আমাদের সাথে ছিল। সে ইতিমধ্যে  এক সাপের সাথে যুদ্ধ করে হেরে গেছে। আর তার পরে সাপের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়েছে। দুজনে মিলে এখানে এসেছিল। বলে তুমি এলে তোমাকে ধরে রাখতে। কি জানি কেন? এস, কাছে এস, তোমাকে ধরে রাখি। ইদুর ভাবে সাপ তাকে পেলেই তো খেয়ে নেবে। তার চেয়ে মাংস পরে কোন দিন খাওয়া যাবে। আপাততঃ পালাই, তবেই প্রাণটা বাচবে। এই বলে ইদুরও পালিয়ে গেল।

এবার শেষ কালে এল বেজী। আসতেই শেয়াল তাঁকে বলে, এস লড়াই হয়ে যাক। আমাকে হারাতে পারলে সব মাংসটা তোমার। এই মাত্র তিন জন, সিংহ, বাঘ আর ইদুরকে আমি হারিয়ে দিয়েছি। তারা সব পালিয়েছে , এবার তোমার পালা। বেজী ভাবে আশ্চর্য ব্যপার। তিন তিনজন এত বড় বড় প্রাণিকে শেয়াল হারিয়ে দিতে পারলে আমি তো কোন ছার। আমাকে তো এমনিতেই মেরে ফেলবে। তার চেয়ে বাবা আমি পালাই। বেজিও পালাল। মাংসের আর কোন দাবীদার রইল না। একা শেয়াল সমস্ত মাংসের অধিকার পেয়ে গেল।


 সারমর্মঃ  বুদ্ধি প্রয়োগ করতে পারলে সব কিছুই সম্ভব। শত্রু যদি দুর্বল হয় তবে তাকে দয়া করা আর যখন সে শক্তিশালী, তখন  তাকে যুদ্ধে আহবান করা ঠিক নয়। শত্রু যখন পরাক্রমশালী তখন তাকে বিনয় দেখান উচিত আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকা উচিত যাতে কোন এক সময়ে তাকে আঘাত করা যেতে পারে।  


1 টি মন্তব্য: