রবিবার, ৯ মার্চ, ২০১৪

প্যারডী লেখার প্রচেষ্টা



(১)
যদি কেউ ছেড়ে দিতে বলে কবিতা লেখা,
সেটাতো আমি ছেড়ে দেব না।
যদি কেউ এসে বলে লিখেছ কি ছাই পাশ
তার কথাতো আমি মেনে নেব না ।
কেননা জানি আমি মানি আমি, এগুলো কতখানি
আমার খুসীকে বাড়ায়,
প্রতিটি পোষ্টের নীচে, লোকে এদিক ওদিক থেকে
লাইক বাটন খুঁজে বেড়ায়
আর আমার আনব্দের সাথে, ঐ সব গুলো পড়াতে
অন্যেরাও যে খুসি হয়।
তাই লিখে যাই খাতার পাতাতে, ফেসবুকেও তার সাথে
যতক্ষণ থাকবে কলমে কালি
তার পরে সব সাদা, আনকোরা সাদা পাতা
দেবে না তো আর কেউ গালি।।

যদি কেউ বলে অটোগ্রাফের প্যারডি

 হয়তো মোবাইলে লেখার জন্য
হয়েছি আমি ভিন্ন
জানি তোমার কি প্রশ্ন
কি করে এটা হল হায়।

যদি পারতেম জানতে
সবারই অজান্তে
অক্ষর গুনতে গুনতে
ডেস্কটপে লিখতাম ভাই।

আমি যখন মোবাইলে মত্ত
মাথাটাও হচ্ছিল তপ্ত
ফোনে লেখা যে এত শক্ত
তা কি জানতাম হায়।।
আহা হা আহা আ  আ   আ।।

তিন ভুবনের পারে গানের প্যারডি

আমি কোন পথে যে চলি
সামনে দুটো গলি
কোন রাস্তা কথায় গেছে
কেমন করে বলি।

ডান দিকেতে ঢুকে গিয়ে মোড়টা ঘুরে দেখি
রাস্তা জুড়ে শুয়ে আছে শিবের বাহন একি
তাইতো আমি ফেরত আসি
আরে বাবা পালিয়ে আসি
হয়তো আগের মোড়টাতে ভুল ঘুরেছি ওরে
গোলকধাঁধায় আমি এখন মরছি কেবল ঘুরে
এখন আমি কাকে ধরি
মানে রাস্তা জিজ্ঞেস করি।

আমি কোন পথে চলি ছদ্মবেশীর গানে প্যারডি
ওরে তরু, শোনরে তরু
তোরা গরুটাকে ধর
ধরতে যদি না পারিস তো
সামনে থেকে সর।
এখুনি দাপিয়ে ওটা ভাংবে সব আমার
বাছুরটাকে  দেনা এনে সামনেতে ওটার
ছানা টাকে দেখলে পরে শান্ত হবে
আর দেরীর কি দরকার।
ওরে তরু শোনরে তরু
তোরা গরুটাকে ধর।

মার ঝাড়ু মর্জিনা আবদাল্লা র গানের প্যারডি


শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০১৪

হ্যয়দ্রাবাদ, অন্ধ্র, তেলেঙ্গানার কথা

দাক্কিণাত্য বলতে আমরা যে জায়গাটাকে বুঝে নিতে পারি তার উত্তর সীমা হচ্ছে নর্মদা এবং মহানদী এবং দক্ষিনে পেরিয়ার নদী এবং নিলগিরি পর্বতমালা। পুর্ব এবং পশ্চিম দিকে পুর্বঘাট এবং পশ্চিনঘাট পর্বতমালা এই জায়গাটাকে প্রায় দুর্ভেদ্য করে রেখেছেএকমাত্র গুজরাটের দিক থেকে একে আক্রমণ করার সুযোগ আছে। এই কারনে পশ্চিমঘাট পর্বতের উপরে অনেক দুর্গ গড়ে উঠেছিল।
অস্মক মহাজনপদের (খৃষ্টপুর্ব সপ্তম থেকে তৃতীয় শতাব্দী) সময় থেকে আমরা অন্ধ্র প্রদেশের লিখিত ইতিহাস দেখতে পাই। অস্মক জনপদের জায়গা নির্ধারন করা হয়েছে নর্মদা এবং গোদাবরীর মাঝে। অন্ধ্রের লোকেদের ঋষি বিশ্যামিত্রের বংশধর বলে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণে এবং জাতক কাহিনীতে বলা হয়েছে।
খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে বর্তমান হায়দ্রাবাদের এলাকাতে মৌর্য্য শাসন ছিল। সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পরে মৌর্য্য সামন্তদের মধ্যে সাতবাহনেরা স্বাধীনতা ঘোষনা করে এবং সাতবাহন রাষ্ট্র বা অন্ধ্র রাষ্ট্রের পত্তন করেন। প্রায় ৪৫০ বছর ধরে এদের শাসন দাক্ষিনাত্য এবং মধ্য ভারতে চলে। সাতবাহনদের শাসনের পরে আসে অন্ধ্রের ইক্ষাকু বংশএদের শাসন চলে প্রায় ১০০ বছর। এদের রাজধানী ছিল বর্তমান নলকোন্ডা জেলার নাগার্জুনকোন্ডাতে
এর পরে আসে চালুক্য রাজাদের কল্যানীরা আর তাদের পরে আসে কাকতীয় বংশ। চালুক্যদের সামন্ত ছিল কাকতীয়েরা। ওয়ারাঙ্গল ঘিরে এদের রাজত্ব ছিল। কাকতীয় রাজত্বের শ্রী এবং সম্পদ দেখে আলাউদ্দিন খিলজীর সেনাপতি মালিক ফকরুদ্দিন ওয়ারাঙ্গল আক্রমন করেন কিন্তু কাকতীয়দের হাতে খিলজির সেনা বাহিনী পরাজিত হয়। ১৩০৯ খৃষ্টাব্দে মালিক কাফুর আবার কাকতীয় সাম্রাজ্যের উপরে আক্রমন করেন। ওয়ারাঙ্গল দূর্গের পতন হয়, হত্যা এবং লুটপাট বন্ধ করার জন্য কাকতীয় রাজা প্রতাপরুদ্র মালিক কাফুরকে প্রচুর ধন সম্পত্তি দিয়ে শান্ত করেন। খিলজী বংশের পতনের সময় রাজা প্রতাপরুদ্র আবার স্বাধীনতা ঘোষনা করেম। ১৩২৩ খৃষ্টাব্দে গিয়াসুদ্দিন তুঘলক তার পুত্র উলুঘ খান কে ওয়ারাঙ্গল আক্রমন করতে পাঠান, কিন্তু পরাজিত হয়ে উলুঘ খান ফিরে যান। এক মাসের মধ্যেই উলুঘ খান আবার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে ওয়ারাঙ্গল আক্রমন করেন। এইবার রাজা রুদ্রপ্রতাপ হেরে যান। লুটপাট হত্যা অত্যাচারে উলুঘ খান তার পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে শুরু করেন । শোনা যায় কোহিনুর মণি এই সময় দাক্ষিনাত্য থেকে দিল্লিতে উপঢৌকন হিসাবে যায়। আরও বলা হয় যে লুঠ এবং উপঢৌকনের জিনিষ দিল্লী নিয়ে যাবার জন্য ২০০০০ ঘোড়া এবং ১০০ হাতীর দরকার হয়েছিল। প্রতাপরুদ্র বা রুদ্রপ্রতাপ বন্দী অবস্থাতে দিল্লীর পথে আত্মহত্যা করেন।
প্রতাপরুদ্রের ৭৫ জন নায়ক বা সর্দার ছিলেন। যদিও এরা একে অন্যের উপরে ইর্ষা বা লোভ প্রতিপালন করতেন তবুও এই আক্রমনের সময় ওয়ারাঙ্গল রক্ষা করতে তার প্রানপন যুদ্ধ করেন। অনেকে বন্দী হবার পরে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে তুঘলক শাসনের হয়ে কাজ করতে থাকেন (হরিহরণ এবং বুক্কা , যারা পরে হাম্পিতে বিজয়নগর রাজ্যের পত্তন করেন, উল্লেখযোগ্য) ।
১৩২৩ খৃষ্টাব্দে সমগ্র দাক্ষিণাত্য (হয়শালা এবং কাম্পিলি সাম্রাজ্য সমেত) দিল্লীর সুলতানের শাসনে আসে। উলুঘ খান, মহম্মদ বিন তুঘলক নামে দিল্লীর সুলতান হন। এই সময় তুঘলকী শাসনের বিরুদ্ধে একজন নায়ক, মুন্সুরী প্রলয়নায়ক বা প্রলানীডু র মত এক খাম্মা বীরের নেতৃত্বে দেবনায়ক, কাম্মানায়ক এবং রাজানায়ক এক সাথে হয়ে তুঘলকী শাসনের অবসান ঘটানোর জন্য নেমে পড়েন। ১৩২৮ সালে ওয়ারাঙ্গল তুঘলকী শাসন মুক্ত হয়। ওয়ারাঙ্গলের মুক্তি দেখে কাম্পিলি, হয়শালা, দ্বারাসমুদ্রম, আরাভিডু ও স্বাধীনতা ঘোষনা করে। সুলতান নিজে এদের দমন করবার জন্য এক বিশাল সৈন্যদল নিয়ে আসেন কিন্তু নায়কদের আক্রমনে ফিরে যান। সমগ্র দাক্ষিনাত্য তুঘলকী শাসন মুক্ত হয়।
১৩৪৫ খৃষ্টাব্দে মহম্মদ বিন তুঘলকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে হাসান গাঙ্গু বাহমণি সান্রাজ্যের পত্তন করেন। আলাউদ্দিন বাহমন শাহ নাম নিয়ে তিনি তার রাজ্যর রাজধানী বিজাপুরে নিয়ে আসেন। তার কিন্তু প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল যে সমগ্র সাক্ষিনাত্য তার শাসনে আসুক।
১৩৫১ খৃষ্টাব্দে মহম্মদ বিন তুঘলকের মৃত্যুর পরে আলাউদ্দিন তেলেঙ্গানা এলাকা দখল করার জন্য আক্রমণ করেন। লুটপাঠ চালানর পরে আবার তিনি গুলবর্গাতে ফিরে যান এবং ১৩৫৯ খৃষ্টাব্দে তার মৃত্যু হয়। ইতিমধ্যে মুন্সুরী নায়কদের মধ্যে কে বড় এবং তাদের শাসনের বিস্তার নিয়ে ঝগড়া লেগে যেতে শুরু হয়েছিল।  রেচেরিয়ার নায়ক সিঙ্গামা ভার্মা রেড্ডীর শাসনের অন্তর্গত আদ্দাঙ্কি আক্রমন করলে কায়াপ্পার কাছে মধ্যস্থতা করা জন্য ভার্মা রেড্ডী আসেন। কায়াপ্পা, সিঙ্গামাকে আক্রমণ বন্ধ করতে হুকুম দেন। যদিও আক্রমন থামে তবুও সিঙ্গামা এটাকে ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেন নি। সিঙ্গামা পরে আলাউদ্দিনকে ওয়ারাঙ্গল আক্রমন করার জন্য আগ্রহান্বিত করেন।
আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পরে মহম্মদ শাহ সুলতান হলে কায়াপ্পা এবং বিজয়নগরের রাজা বুক্কা মহম্মদ শাহের সাথে যুদ্ধে হেরে যান।
কিন্তু কায়াপ্পার মনে মনে তেলেঙ্গানা এলাকা থেকে সুলতানী অধিকার সমাপ্ত করার ইচ্ছে নিয়ে আবার বাহমণি সাম্রাজ্য আক্রমন করেন, এবং  এতে সাথ দেন বিজয়নগরের বুক্কা। বুক্কা ইতিমধ্য মারা গেলে বিজয়নগরের সহায়তা কমে আসে। তাছাড়া রচকন্ডা এবং দেবরকন্ডা নায়করা বাহমণি সুলতানকে সাহায্য করার ফলে যুদ্ধে কায়াপ্পা জিততে পারেন না। শেষ কালে ঠিক হয় যে গোলকোন্ডা হবে দুই রাজ্যের সীমানা, এই সন্ধিতে কায়াপ্পা কে প্রচুর উপঢৌকন এবং ক্ষতিপূরণ মহম্মদ শাহকে দিতে হয়।
ওয়ারাঙ্গলের দুর্বলতা দেখে রেচেরিয়ার সিঙ্গামা নায়ক ওয়ারাঙ্গল দখল করে, কায়াপ্পা যুদ্ধ মারা যান। এর পরে ভুবনগিরির নায়কেরা ওয়ারাঙ্গলের শাসনে আসেন। কিন্তু আসলে তারা বাহমণি সাম্রাজ্যের অধীন ছিলান।
অবশেষে ১৫২২ খৃষ্টাব্দে বিজয় নগরের রাজা কৃষ্ণ দেব রাও বিবদমান কলিঙ্গ এবং রেড্ডীদের নিয়ে সমস্ত অন্ধ্র দেশকে একত্রিত করেন। এদিকে কায়াপ্পার মৃত্যুর পরে আস্তে আস্তে নায়কেরা ওয়ারাঙ্গল ছেড়ে বিজয়নগরে চলে যান এবং তাদের বিজয়নগরে যাওয়ার ফলে বিজয়নগর শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
১৫৮৯ সালে মহম্মদ কুলী কুতব শাহ  কুতব শাহী বংশের পত্তন করেন। বর্তমান হায়দ্রাবাদে তার রাজধানী বানান এবং তার নাম দেন বাঘনগর বা বাঘানগর। বলা হয় যে বাঘমতী নামে এক নর্তকীর প্রেমে পরে কুতব শাহ তাঁকে বিবাহ করেন এবং তার পরে তার নাম হয় হায়দারমহল। তার থেকেই শহরের নাম হয় হায়দ্রাবাদ। কারুর মতে কুলী কুতব শাহের পুত্র হায়দারের নামে হায়দ্রাবাদ শহরের নামকরণ করা হয়। কারুর মতে ফার্সী শব্দ হায়দার (অর্থ বীর) এবং আবাদ (অর্থ শহর) থেকে হায়দরাবাদ বা হায়দ্রাবাদ (বীরের শহর) কথাটি এসেছে। গোলকোন্ডা দূর্গে জায়গার অভাব দেখে সুলতান মুসী নদীর ধারে এক খোলা জায়গা  নির্ণয় করেন যাতে তার শহর তার নক্সা অনুযায়ী বানান যায়। ১৫৯১ সালে চারমিনারের নির্মান করা হয় যাতে শহরের প্রগতির দিকে নজর রাখা যায়, এবং মুসী নদীর বন্যার হাত থেকে সময় মত সঙ্কেত পাওয়া যায়।
ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে হাদ্রাবাদের প্রগতি ছিল দর্শনীয়। প্রত্যেক কুতব শাহী সুলতানেরা ছিলেন বিদ্বান এবং  স্থাপত্যকলার প্রোৎসাহক।   গলকন্ডার থেকে লোকেরা এসে হায়দ্রাবাদে থাকা শুরু করল। বহিরাগতেরা হায়দ্রাবাদকে ইরানের ইস্পাহানের সাথে তুলনা করতে শুরু করল তার কারন ছিল হায়দ্রাবাদের বাগিচা এবং সৌন্দর্য।
ষোড়শ শতাব্দীর সময়ই হায়দ্রাবাদ দিল্লীর সম্রাটের নজরে পড়ে। আউরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যের অভিযানের সময় হায়দ্রাবাদ দখল নেবার মনস্থ করেন, কিন্তু দুর্ভেদ্য গোলকোন্ডা দুর্গের কারনে হায়দ্রাবাদ দখল করা সমীচীন মনে করেন না। তবুও কুলিচ খান আর ফিরোজ জঙ্গ এর নেতৃত্বে ১৬৮৬ সালে গোলকোন্ডা  দুর্গ অবরোধ করেন কিন্তু কোন লাভ হয় না। ব্যার্থ হয়ে ফিরে যাবার কিছু পরে আবার ১৬৮৭ সালে গোলকোন্ডা অবরোধ করলে আবদুল্লা খানের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে দুর্গের পতন হয়। হায়দ্রাবাদ মুঘল শাসনে আসে। কিন্তু চল্লিশ বছরের মধ্যে ১৭০৭ সালে আউরঙ্গজেবের মৃত্যু হলে হায়দ্রাবাদের গভর্ণরেরা প্রায় স্বায়ত্বশাসিত অবস্থায় চলে আসেন। ১৭২৪ সালে কুলিচ খানের পৌত্র মীর কামারউদ্দিন সিদ্দিকী হায়দ্রাবাদের দখল নেন এবং আসফ জাহী বংশের শাসনের প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু মুঘল আমলে মীর সিদ্দিকি, নিজাম-উল-মুল্ক উপাধি পেয়েছিলেন, তাই এই বংশ নিজাম নাম নিয়ে শাসন করতে থাকেন ।
পরপর সাত জন নিজামের শাসন কালে হায়দ্রাবাদ পশ্চিমী উপনিবেশ শক্তি থেকে যদিও সাধারণ ভাবে মুক্ত ছিল তবুও ইংরেজ দের বাৎসরিক কর দিতে হত। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলে তৎকালীন নিজাম ভারতে যোগ না দিয়ে স্বাধীন ভাবে থাকবার ইচ্ছে প্রকাশ করেন এবং সেই সময় রাজাকারেরা নিজামের শাসনের পক্ষে লড়াই শুরু করে দ্যায় কেননা জনসাধারণ চাইছিলেন যে হায়দ্রাবাদের ভারতে অন্তর্ভুক্ত হোক। স্থানীয় জনসাধারন যখন উদ্বাস্তু হয়ে তামিলনাডু এবং অন্ধ্রে চলে আসা সুরু করল তখন ১৯৪৮ সালে ভারতীয় সেনা হায়দ্রাবাদ অভিমুখে কুচ শুরু করে এবং চার দিনের মধ্যে নিজামী সেনা আত্মসমর্পন করে।
১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত হায়দ্রাবাদ এক আলাদা প্রদেশ হিসাবে ভারতে থাকে। ১৯৫৮ সালে সমগ্র ভারতে ভাষার উপরে প্রদেশের শ্রেণি বিন্যাস হলে হায়দ্রাবাদের বিলুপ্তি ঘটে। হায়দ্রাবাদকে ভেঙ্গে অন্ধ্র প্রদেশ তৈরী হয়। নিজামের হায়দ্রাবাদের মারাঠিভাষী অঞ্চল মহারাষ্ট্রে এবং কন্নড় ভাষী অঞ্চল কর্নাটকে সম্মিলিত হয়।

আতি সম্প্রতি অন্ধ্র প্রদেশ আবার ভেঙ্গে তেলেঙ্গানা এবং সীমান্ধ্র দুটি প্রদেশের সৃষ্টি করা হয়াছে।   

শনিবার, ১ মার্চ, ২০১৪

বাংলার ইতিহাস (২য় খন্ড)

গুপ্ত যুগের আগে বাংলা দেশের সম্বন্ধে ঐতিহাসিকদের লেখা বিশেষ কিছু পাওয়া যায় নি। যা পাওয়া গেছে সেগুলো হচ্ছে কিছু কাব্য এবং লোককথার মধ্যে দিয়ে ইতিহাসের টুকরো। দ্বিতীয় সমুদ্রগুপ্তের বাংলা রাজ্য জয়ের সময়ে বাংলা দেশ দুটো রাজ্যে বিভক্ত ছিল। পুস্কর্ণ এবং সমতট। পুস্কর্ণ কে আমরা পাই বর্তমান বাকুড়া জেলায় শুশুনিয়ার উত্তর পুর্বে,  সমতট ছিল পূর্ব বাংলায়। পুস্কর্ণের রাজা সিংহবর্মণ এবং তার ছেলে চন্দ্রবর্মণের সময় তার রাজ্যের পুর্ব সীমা ফরিদপুর জেলা অবধি ছিল। সমতট রাষ্ট্রে খৃষ্টীয় ৫০৫ সাল নাগাদ আমরা পাই যে বৈন্যগুপ্ত স্বাধীন ভাবে সমতটে রাজত্ব করছেন এই সময় যশোহরবর্ধনের আক্রমনে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন হয়।

ষষ্ট শতাব্দীতে মহাসেনগুপ্তের সময় গুপ্ত বংশের পতনের পরে গুপ্ত সাম্রাজ্য  বাংলা দেশে টুকরো টুকরো  হয়ে যায়। বঙ্গ, সমতট, হরিকেলা, গৌড়, বাঙ্গালা  এবং  কর্ণসুবর্ণ ইত্যাদি নামে। আমরা বর্তমান মানচিত্রে যদি এই রাষ্ট্রগুলিকে বসাই তবে তাদের অবস্থান এই ভাবে আমরা পাব যদিও নানান লেখনের এবং পরিব্রাজকদের মতের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য পাওয়া যায়।

গৌড় রাষ্ট্রের স্থান নির্ণয় করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই মৌখরি রাজা ইশানবর্মন গৌড় জয় করার সময় গৌড়ীয়দের সমুদ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেন, এর থেকে আমরা অনুমান করতে পারি গৌড় রাষ্ট্র দক্ষিনে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।আবার সমসাময়িক লেখন বরাহমিহিরের বিরাট সংহিতাতে আমরা গৌড়ের সাথে সমতট, তাম্রলিপ্তি, পৌণ্ড্র রাজ্যের নাম এক সাথে পাই। কিছু কিছু জায়গাতে আমরা আবার বঙ্গ এবং গৌড়ের নাম একসাথে উল্লেখ পাই। ভবিষ্যপুরানে আমরা গৌড়কে দেখতে পাই বর্তমান বর্ধমানের উত্তরে এবং পদ্মা নদীর দক্ষিনে।

ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী  বঙ্গ রাষ্ট্রের সীমানা আর্য সভ্যতার বাইরে ছিল। কালিদাসের কাব্যে বঙ্গ রাষ্ট্রকে গঙ্গার অববাহিকাতে বলা হয়েছে। কিছু জৈন শাস্ত্র অনুযায়ী ভাগীরথির পশ্চিম পারের তাম্রলিপ্তি (বর্তমান তমলুক) বঙ্গ রাষ্ট্রের অন্তর্গত ছিল  যদিও কিছু কিছু জায়গাতে তাম্রলিপ্তিকে এক আলাদা রাষ্ট্র বলা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গ রাষ্ট্রের শাসন সাধারণত গঙ্গার পুর্ব দিকেই ছিল। খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে উপবঙ্গ এলাকা বিস্তার যশহর পর্যন্ত বলে দিগ্বিজয়-প্রকাশেবলা হয়েছে।  কারুর মতে বঙ্গ রাষ্ট্রের বিস্তার  শ্রীহট্ট জেলা পর্যন্ত ছিল।

হুয়েনসাং এর বর্ণনা অনুযায়ী সমতটের স্থান আমরা পাই কামরূপের (আসামের) দক্ষিনে এক নাবাল জমির এলাকা যেটা সমূদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর রাজধানী ছিল কার্মান্তা তে (বর্তমান বাংলাদেসের কুমিল্লা জেলায়)। এর থেকে অনুমান করা হচ্ছে সে সমতট রাষ্ট্র ছিল বাংলা দেশের কুমিল্লার টিপেরা

হরিকেলার স্থান নির্ণয় করা একটু মুশকিলের। যাদব-প্রকাশ গ্রন্থে হরিকেলী এবং বঙ্গ দুটোকে এক সাথে বলা হয়েছে , আবার মঞ্জুরী-মূলকল্প তে গৌড়, বঙ্গ এবং হরিকেলা আলাদা ভাবে বলে হয়েছে। কিছু চৈনিক পরিব্রাজকদের মতে হরিকেলার স্থান বলা হয়েছে সমতট এবং উড়িশ্যার মধ্যে উপকূলবর্তী অঞ্চল। আবার কীর্তিসারের রুদ্রাক্ষ মাহাত্ম তে আমার পাই যে হরিকেলা শ্রীহট্ট দেশে। রূপচিন্তামণি  লেখনের হিসাবেও হরিকেলা র স্থান ছিল বর্তমান শ্রীহট্ট জেলার অঞ্চল।অতএব আমরা ধরে নিতে পারি যে বর্তমান বাংলা দেশের শ্রীহট্ট এবং আসামের কাছাড় এলাকাতে হরিকেলা রাষ্ট্র ছিল।  

এই সাথে আমরা আর একটি নাম পাই চন্দ্রদ্বীপ। ডক্টর পি সি বাগচীর মতে বাংলা দেশের সমস্ত উপকুল এলাকার দ্বীপসমুহকে (সন্দীপ সমেত) চন্দ্রদ্বীপ বলা হত।

আরও দুটি নাম আমরা পাই পুন্ড্র বা পৌণ্ড্র এবং বারেন্দ্র। পুন্ড্র রাষ্ট্রের অবস্থান সম্বন্ধে বলা হচ্ছে এটি কোশি নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে এটুকু বলে নেওয়া দরকার যে কোশী আগে গঙ্গার উপনদীর বদলে ব্রহ্মপুত্রর উপনদী ছিল। অর্থাৎ কোশী উত্তর বঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হত। ক্রমশ এই নদী পশ্চিমদিকে সরে গেছে এবং একন গাঙ্গার সাথে গিয়ে বিহারে মিলিত হয়েছে। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে পুন্ড্র বা পৌণ্ড্র বা পৌন্ড্রবর্ধন রাষ্ট্র উত্তর বঙ্গে গঙ্গা এবং করতোয়া নদীর মাঝখানে ছিল। বারেন্দ্রভূমি বা বারেব্দ্র রাষ্ট্র সম্বন্ধে আমরা একে পৌণ্ড্রবর্ধনের অন্তর্গত পাই কিন্তু আবার একে পুর্ব বাংলার বগুড়া, রাজসাহী এবং ফরিদপুর জেলা জুড়ে অবস্থিত দেখি।

তাম্রলিপ্তির উল্লেখ আমরা মহাভারতের সভাপর্বে পাই যেখানে একে বাংলা এবং সুমা রাষ্ট্রের থেকে আলাদা করে উল্লেখ করা হচ্ছে। আবার পরে একে আমরা বঙ্গ এবং সুমার অন্তর্গত অবস্থাতে পাই। এর স্থান আমরা পাই মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী অঞ্চলে। রাজধানী তাম্রলিপ্ত বা তমলুক ছিল।

এবার আমরা পাচ্ছি একটি রাষ্ট্রের নাম বেঙ্গল বা বেঙ্গালা বা বাঙ্গালা। রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দের সময় থেকেই  এই রাষ্ট্রটি বঙ্গ রাষ্ট্রের সাথে উল্লিখিত হয়েছে। এটা মনে করা হয় পর্তুগীজ নাম বেঙ্গালা বা ইংরাজী নাম বেঙ্গল এই বেঙ্গালা রাষ্ট্রের থেকেই এসেছে।এটাও হতে পারে যে বঙ্গ রাষ্ট্রের থেকে উদ্ভব হয়ে উপবঙ্গ, পরে বেঙ্গালা হয়েছিল। ময়নামতী কাব্যে গোপীচাদে বাঙ্গালার লোকেদের সম্বন্ধে বলা হচ্ছে তাদের লম্বা দাড়ি আছে এবং তারা ভাটীর দেশ থেকে এসেছে। ভাটী বলতে আমরা নদীর ভাটী এলাকা বুঝি এবং তিব্বতীয় লামা তারানাথের মত অনুযায়ী ভাটী হচ্ছে গঙ্গার মোহানার নীচু অঞ্চল, মুলতঃ খুলনা এবং বরিশাল জেলার সুন্দরবন এলাকা। আবুল ফজলের লেখাতে আমরা যে আলের উল্লেখ পাই সেই আল দিয়ে সমূদ্রের জল আটকানো এখনও সুন্দরবন এলাকাতে হয়।

এই খানে একটা কথা বলে নিই, পশ্চিমবঙ্গের লোকে যে পুর্ব বঙ্গের অধিবাসীদের বাঙ্গাল নামে অভিহিত করে সেটার উৎপত্তি খুব সম্ভবত এই বাঙ্গালা দেশের বাঙ্গাল নামের অধিবাসী থেকে।

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পরে রাজা হিসাবে আমরা পাই রাজা শশাঙ্কের নাম। রাজা শশাঙ্ক আবার তার রাজত্বকালে গৌড় এর সাথে বঙ্গ এবং সমতটকে এক করেন। রাজধানী হয় কর্ণ সুবর্ণ ।  কনৌজের রাজা হর্ষবর্ধনের বোন রাজ্যশ্রীর স্বামী গ্রহবর্মনকে মালবার রাজা হত্যা করলে রাজ্যশ্রী বন্দী হন। রাজ্যবর্ধন তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে শশাঙ্কের হাতে নিহত হন। শশাঙ্কের অধীনে কনৌজ আসে। হর্ষবর্ধন শশাঙ্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন এবং কনৌজ দখল করেন। এই সময় কামরুপের রাজা, শশাকের ভয়ে ভীত হয়ে হর্ষবর্ধনের সাথে সন্ধি করে শশাঙ্ককে আক্রমণ করেন রাজা শশাঙ্ক সোজা যুদ্ধে না গিয়ে তার সৈন্যদল নিয়ে পেছনে সরে আসেন। 

রাজা শশাঙ্কের পরাক্রম সম্বন্ধে বলা হয় যে তার সাম্রাজ্য উড়িষ্যা পার হয়ে বর্তমান অন্ধ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। শশাঙ্কের মৃত্যুর পরে হর্ষবর্ধন তার রাজ্য দখল করেন যদিও এটা মানা হয় যে পদ্মানদীর পুর্ব এবং দক্ষিণ অঞ্চলে হর্ষবর্ধনের কোন প্রতিপত্তি ছিল না। হর্ষবর্ধনের সাথে পুলকেশি দ্বিতীয়ের যুদ্ধের পরে হর্ষবর্ধনের রাজ্য দুভাগ হয়ে যায় এবং তার কিছুদিন পরে হর্ষবর্ধনের মৃত্যু হলে বাংলা দেশে বৌদ্ধ ধর্ম এবং ব্রাহ্মন্যবাদের মধ্যে বিবাদ প্রকট হয়

শশাঙ্কের নৃত্যুর পরে আমরা গৌড়ে এক জয়নাগ রাজার নাম পাইতার বংশের বিস্তারিত কিছু না জানা গেলেও তিনি মহারাজাধিরাজ উপাধি গ্রহন করে কর্ণ সুবর্ন জয় করে রাজ্যের বিস্তার করেন। রাজ্যের সীমা সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

শশাঙ্কের মৃত্যুর পরে বঙ্গ দেশ বা বর্তমান পুর্ববঙ্গে কিছু ব্রাহ্মণ রাজাদের শাসনের খবর পাওয়া যায়। শীলভদ্র এই রকম এক ব্রাহ্মণ রাজবংশের ছিলেন, কিন্তু তাদের উপর হিমালয়ের এলাকার এক শৈল বংশীয় রাজার আক্রমনের কথা জানা যায়। যশোবর্মন খৃষ্টীয় ৭২৫ থেকে ৭৩৫ পর্যন্ত গৌড়ের শাসন করার পরে গৌড় কাশ্মীরের রাজা ললিতাদিত্যের অধীনে চলে আসে।এই সময়ে কয়েকজন সামন্ত রাজার নাম আমরা পাই যারা বঙ্গ দেশে শাসন করছিলেন যেমন জীবধরণ, এবং শ্রীধরণএদের সাথে লোকনাথ এবং জয়াতুঙ্গবর্ষ এদের দুজনের নাম পাওয়া যায়, কাজেই মনে হয় সমস্ত রাজ্যের শাসন কারুর একার হাতে না থেকে ছোট ছোট এলাকার শাসন এরা করছিলেন।

সপ্তম শতাব্দী মধ্যভাগ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত এক তিব্বতীয় বর্ণনা অনুযায়ী এক চন্দ্র বংশ বঙ্গ দেশে শাসন করছিলেন, তাদের দুজনের নাম আমরা পেয়েছি,  গোবিন্দচন্দ্র এবং ললিতচন্দ্র। মোটামুটি ভাবে বলা যায় শশাঙ্কের নৃত্যুর পরে গৌড় এবং বঙ্গদেশের শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল এবং ছোট ছোট সামন্তের শাসন চলছিল বা বহিরাগতদের আক্রমণ হচ্ছিল।

খৃষ্টীয় ৭৫০ সালে গোপাল প্রথম নির্বাচিত প্রধান হিসাবে বৌদ্ধ রাজতন্ত্রের বা পাল বংশের পত্তন করেন। তার পরে ধর্মপাল এবং দেবপালের সময় পাল বংশের রাজ্যের বিস্তার ঘটে।  ধর্মপালের সময় বর্তমান বাংলা এবং বিহার তার নিজের শাসনে ছিল, কনৌজে তার আশ্রিত চক্রায়ুধ শাসন করছিলেন। তার পশ্চিমে রাজপুতানা এবং পাঞ্জাবে ধর্মপালের আশ্রিত রাজাদের শাসন ছিল, উত্তরে তার অধীনে নেপাল এসেছিল। 

প্রতিহার রাজা নাগভাট দ্বিতীয়ের সাথে যুদ্ধে ধর্মপাল পরাজিত হলে রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দের সহায়তায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান, ফলে ধর্মপাল গোবিন্দ তৃতীয়ের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। কিছুদিনের মধ্যে গোবিন্দ আবার ধর্মপালকে তার রাজ্য ফেরত দিয়ে দক্ষিনাত্যে ফিরে যান।

ধর্মপালের মৃত্যুর পরে তার পুত্র দেবপাল রাজা হন। দেবপালের সনয় গৌড়ের পাল বংশের রাজ্যসীমা পশ্চিমে আফগানিস্থান, পুর্বে প্রাগজ্যোতিষ এবং দক্ষিণে উতকল পার হয়ে দ্রাবিড় অঞ্চল।  দেবপালের মৃত্যুর পরে কিছুদিন পাল বংশের গরিমা স্থিমিত হয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথা চারা দ্যায়। 

পরবর্তী রাজা প্রথম মহীপাল আবার পাল বংশের রাজ্যের টুকরোগুলিকে একত্রিত করেন, কিন্তু মহীপালের মৃত্যুর পরে আবার পাল রাজ্যের অবনতি শুরু হয় পরে রাজা রামপাল এসে আবার পাল বংশের গরিমার পুনরুদ্ধার করেন।

উতকলের গঙ্গা বংশের রাজা অনঙ্গ ভীমদেবের কাছে রামপালের পরাজয়ের পরে গঙ্গা বংশের রাজ্যের সীমা হুগলী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পাল রাজতন্ত্রের অবনতি হতে থাকে। বর্তমান বাংলা ভাষার আদিম কাব্য চর্যাপদের রচনা এই পাল বংশের সময়ে।

পাল বংশের রাজত্বের সময় আমরা জিমুতবাহনের নাম পাই যিনি ধর্মশাস্ত্রে দায়ভাগ এবং স্ত্রীধনের প্রণয়ন করেন। জীমুতবাহনের অন্য দুটি গ্রন্থের এমটি হল বিচার ব্যবস্থা সম্বন্ধে ব্যবহারমাত্রিকা এবং অন্যটি হচ্ছে ধার্মিক আচার সঙ্ক্রান্ত গ্রন্থ কালবিবেক। দেবপালের মন্ত্রী দর্ভপানী এবং তার পুত্র পৌত্রদের বেদ, আগম , নীতি এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রে পারদর্শি বলে জানা যায়। রাজা ধর্মপালের সময়ে বারেন্দ্র ব্রাহ্মনেরা  শ্রুতি,  স্মৃতি, পুরান, ব্যাকরণ এবং কাব্যে পারদর্শী ছিলেন বলে জানা যায়।

সাহিত্যে সন্ধ্যাকারানন্দির লেখা রামচরিতমানসের উল্লেখ আমরা পাই যেখানে একদিকে রামায়নের বর্ননা করা হয়েছে আর অন্য দিকে তার সাথে রাজা রামপালের গুণকীর্তন করা হয়েছে।

চরক এবং শুশ্রুতের ব্যাখ্যাকার চক্রপাণিদত্ত এবং ভেষজশাস্ত্রে উদ্ভিদ সম্বন্ধীয় গ্রন্থ শব্দ-প্রদীপের লেখক সুরেশ্বর বা সুরপাল , এবং চিকিৎসা-সার-সংগ্রহের লেখক বঙ্গসেনা  এই পাল রাজত্বের সময় ছিলেন।
রাজা ধর্মপালের সময় বাংলা ভাষার আদি রূপ প্রোটো-বেঙ্গলী র উদ্ভব হয় এবং এই ভাষাতেই বৌদ্ধ তান্ত্রিকেরা চর্যাপদের সৃষ্টি করেন।

যদিও সামন্তসেন বর্তমান বর্ধমান জেলায় রাধা রাষ্ট্র জয় করে তার রাজত্বের পত্তন করেন কিন্তু সামন্তসেনের পৌত্র বিজয়সেন আসল সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা। কর্ণাটক থেকে আগত চালুক্য রাজা তৃতীয় বিক্রমাদিত্যের সেনা দলের সামন্তসেন  ব্রহ্ম-ক্ষত্রিয় বলে মনে করা হলেও তিনি ব্রাহ্মন ছিলেন, এবং তার উত্তরাধিকারীরা রাজধর্ম পালনের জন্য ব্রহ্ম-ক্ষত্রিয় বলে পরিচিত হন।

খৃষ্টিয় দ্বাদশ শতাব্দীতে বিজয় সেন, পাল বংশের রাজা মদন পালকে হারি্যে সেন বংশের গরিমার প্রতিষ্ঠা করেন। গৌড়, মিথিলা, কামরূপ এবং কলিঙ্গ জয় করে তার বিশাল সাম্রাজ্যের সৃষ্টি করেন। আবার বাংলা দেশে বৌদ্ধ ধর্মের অবনতি হতে থেকে এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের শক্তি মাথা চারা দ্যায়। রাজা বল্লাল সেন তার রাজধানী গৌড় থেকে তুলে নবদ্বীপে নিয়ে আসেন।  তার রাজ্যের সীমানা সম্বন্ধে জানা যায় যে বঙ্গ, বারেন্দ্র, রাধা, বাগদী এবং মিথিলা তার রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। বর্তমান সুন্দরবন অঞ্চল ছিল বাগদীনামে এবং উত্তর বঙ্গ ছিল বারেন্দ্র নামে।। 

বল্লালসেনের লিখিত দানসাগর  এবং অদ্ভুতসাগর দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ। দানসাগর লেখা হয়েছিল দান দেবার কারণ, উপায়, সামগ্রী  ইত্যাদি সম্বন্ধে এবং অদ্ভুতসাগর নানান সংস্কার এবং তার প্রতিকার সম্বন্ধে। দ্বিতীয় গ্রন্থটি লেখা বল্লালসেন শুরু করলেও শেষ করেন তার পুত্র লক্ষনসেন। বল্লাল সেন বাংলা দেশে বর্ণভেদ প্রথার প্রচলন করেন।  

বল্লাল সেনের পুত্র রাজা লক্ষন সেনের সময় মহম্মদ ঘোরীর সেনাপতি বখতিয়ার খিলজীর আক্রমণ হলে লক্ষনসেন পালিয়ে ঢাকাতে চলে যান। ঢাকার বিক্রমপুর অঞ্চল (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) তার রাজধানী হয়। এই সেন বংশের সময় আবার সংস্কৃত ভাষার  পুনঃপ্রসার ঘটে। লক্ষনসেন কে বাংলা বিক্রমাদিত্য বলা হয়। তার সভাতে গোবর্ধন, সারন, উমাপতি এবং কবিরাজ  এবন জয়দেব পঞ্চরত্ন হিসাবে ছিলেন। গীত গোবিন্দ লেখক কবি জয়দেব রাজা লক্ষণ সেনের সভাকবি ছিলেন। লক্ষনসেনের মন্ত্রী হলায়ুধের লেখা ব্রহ্মণ্য-সর্বস্ব, মীমাংসা-সর্বস্ব, বৈষ্ণব-সর্বস্ব, শৈব-সর্বস্ব, এবং পন্ডিত-সর্বস্ব  উল্লেখযোগ্য।এর মধ্যে একমাত্র ব্রহ্মন্য-সর্বস্ব ছাড়া বাকী গুলি কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। ব্রহ্মন্য-সর্বস্বতে বেদের মন্ত্রগুলি দৈনিক ব্যবহারের ব্যখ্যা করা হয়েছে।

সেন বংশের অস্তিত্ব খৃষ্টীয়  ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি মিলিয়ে যায়। যদিও আমরা পরে এক দেব বংশের কথা এই বিক্রমপুর অঞ্চলে পাই। এদের শাসন পুর্বদিকে চট্টগ্রাম থেকে পশ্চিমে কুমিল্লা অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দেব বংশের শেষ ইতিহাস কিছু পাওয়া যায় নি।

এর পরে বাংলা দেশে মুসলিম শাসনের কথা আসে। সেটা পরের খন্ডে লিখছি।

এই লেখার জন্য শ্রী আর সি মজুমদারের হিস্টোরি অফ এন্সেন্ট বেঙ্গল, এবং  শ্রী শৈলেন সেনের লিখিত এনসেন্ট ইন্ডিয়ান হিস্টরি এন্ড সিভিলাইজেশন এর সাথে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়েছি।