বিশৃঙ্খলার মধ্যে যখন
বিশ্বের আদি পর্ব চলছে তখন আকাশ, সমুদ্র আর পৃথিবী আলাদা হবার পরে দেবতারা ঠিক
করলেন যখন সমস্ত দেবদেবীর সাথে টাইটানদের যুদ্ধে টাইটানেরা জয়ী হয়েছেন তখন মানুষের
সৃষ্টি করা যাক। এখন তাদের বসবাস করের জন্য জমির সৃষ্টি হয়েছে। আরা এই
মানুষেরাই তো দেবদেবীদের পুজা অর্চনা করবে।
অতএব মানুষ তৈরী করার ভার দেওয়া হল প্রমিথিয়াসকে আর সাথে তার ভাই
এপিমিথিয়াসকে।
লেগে পড়লেন দুজনেই
তাদের কাজে। এপিমিথিয়াস হঠকারী গোঁয়ার,
বুদ্ধিবিবেচনা একটু কম। পিছনের অভিজ্ঞতা
তার সব কাজেই সে লাগাতে চায়, কোন কিছুতে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চায়না। আর সে
জায়গাতে প্রমিথিয়াস ধীর স্থির, বুদ্ধিমান এবং যথেষ্ট বুদ্ধি সম্পন্ন, প্রচুর
দুরদৃষ্টির অধিকারী।
এপিমিথিয়াস চটপট কিছু
প্রাণীর সৃষ্টি করলেন যারা কেউ জঙ্গলে থাকবে, কেউ আকাশে উড়বে, আবার কেউ জলেও চলে
বেড়াবে। মানে জানোয়ার, পাখী, মাছ ইত্যাদি তৈরী হয়ে গেল। ওদিকে প্রমিথিয়াস ধীরে
ধীরে মাটী দিয়ে দেবতাদের আদলে মানুষ তৈরির কাজে লেগে রইলেন। তিনি চাইলেন যে
মানুষেরা যেন উপর দিকে তাকিয়ে ভগবানকে দেখতে পারে। তার সৃষ্টি সম্পুর্ণ হতে অনেক
সময় লেগে গেল।
তার মধ্যে এপিমিথিয়াস তার তৈরী করে প্রাণীদের কাউকে দিলেন গতি,
কাউকে দিলেন ধারাল নখ আক্রমণ করার জন্য, কাউকে বা শক্তি। ওদিকে প্রমিথিয়াসের মানুষ
সৃষ্টি শেষ হলে দেখা গেল ভগবানের দেওয়া গুণ গুলোর প্রায় সবই এপিমিথিয়াস তার তৈরী
প্রানীদের কাজে লাগিয়ে ফেলেছে। মানুষের জন্য কিছুই পড়ে নেই। মানুষ নিজেকে নিজে
রক্ষা করার মত কোন কিছুর অধিকারী হতে পারেনি। সে এক উলঙ্গ শিশুর মত সহায়সম্বলহীন
হয়ে রয়েছে।
প্রমিথিয়াস খুব মুশড়ে
পড়লেন। কি করা যায়। দিন রাত মানুষদের জন্য চিন্তা করে অলিম্পাস পাহাড়ে আর তার
থাকতে ভাল লাগে না, চলে এলেন তিনি মানুষদের সাথে থেকে যদি তাদের কোন কিছু সুবিধা
করে দিতে পারেন। এদিকে মানুষেরা তো দেবদেবীদের পূজা করবে আর তাদের অর্ঘ্য দেবেই।
প্রমিথিয়াস দেখলেন যে সমস্তটাই তো দেবতারা নেন না, এদিক ওদিক থেকে নিয়ে বাকীটা
ছেড়ে দেন। তিনি জুসের কাছে আর্জি করলেন যে বলির পশুর একটা নির্দিষ্ট ভাগ আপানি
নিয়ে বাকীটা মানুষদের জন্য ছেড়ে দিন। জুস বললেন,
আমি তো ঠিক করব কোন ভাগটা আমি নেব। প্রমিথিয়াস বললেন এটা কিন্তু বরাবরের জন্য, আজ
এই ভাগ, কাল ঐ ভাগ করলে মানুষদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে , জুস বললেন তথাস্তু।
প্রমিথিয়াস করলেন কি একটা
পশু মেরে এক ভাগে তার মাংসটাকে ছাল দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখলেন, আর অন্য ভাগে মাথাটা,
থানাথানা চর্বিওয়ালা হাড়ের টুকরো রাখা হল। জুসকে এবার ডেকে তার ভাগটা বেছে নিতে
বলা হল। জুস দেখে এক দিকে অল্প কিছু মাংস পশুর ছাল দিয়ে ঢাকা আছে। আর অন্য দিকে
বিরাট মাথাটা আর চরবি সমেত বড় বড় হাড়ের টুকরো রাখা আছে, দেখতে অনেকখানি। জুস ঠিক
করে নিলেন এই বেশী জিনিষের ভাগটাই নেবেন।
সেই থেকে মানুষেরা জানোয়ার মেরে তার মাথা আর হাড় পুজার জন্য ছেড়ে নিজেরা
মাংসের ভাগ পেতে লাগল। জুস দেখল যে সে ঠকে গেছে, কিন্তু নিরুপায়।
তার পরে প্রমিথিয়াস
দেখলেন মানুষেরা ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে, কাঁচা মাংস তাদের খেতে হচ্ছে। ভাবলেন যদি
এদের আগুন জ্বালানোর ক্ষমতা দেওয়া যেত তবে এরা নিজেদের রক্ষা করতে পারত,। কিন্তু
আগুন তো খালি দেবরাজ জুসের কাছেই অলিম্পাস
পাহাড়ে আছে। জুস কি তার থেকে কিছুটা মানুষদের জন্য দেবেন?
প্রমিথিয়াস গেলেন
আর্জি নিয়ে জুসের কাছে, একটু আগুন যদি আপনি দেন তবে আমার তৈরী মানুষেরা নিজেদের
রক্ষা করতে , শীতে গুহার ভেতরে কষ্ট না পেয়ে থাকতে পারে। জুস এমনিতে বেশ হঠকারী
দেবতা, সোজা বলে দিলেন এক্কেবারেই না। কোন মতেই মানুষদের আগুনের ভাগ দেওয়া হবে না।
জুসের স্ত্রী হেরা,
বরাবরি জুসের সাথে বিরোধে থাকতেন। তিনি প্রমিথিয়াসকে বলে দিলেন আমি তোমাকে সাহায্য
করব। তুমি কিছু উপায় চিন্তা কর। প্রমিথিয়াস এক সময় দেখলেন, মৌরী গাছের ডালগুলো
ফাপা কিন্তু তার ভেতরের অংশটা একটু ভিজে ভিজে থাকে, বাস পেয়ে গেছি। এইবার সোজা জুসের দরবারে গিয়ে
একটু সুযোগ বুঝে ঐ মৌরী গাছের ডালের ডগাতে বজ্রের একটু স্ফুলিং নিয়ে নিতেই সে আগুন
ভেতেরের ভিজে অংশে চলে গিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে লাগল। প্রমিথিয়াস সেই আগুন ওয়ালা
ডালটা নিয়ে সোজা এক দৌড়ে মানুষদের গুহাতে, লোকদের ডেকে সেই আগুন কে বাচিয়ে রাখার
ব্যবস্থা করা হল। লোকেরা আলো তাপ সব পেয়ে সুখে রইল।
ইতিমধ্যে একদিন জুস
অলিম্পাস পাহাড় থেকে দেখলেন যে নীচে আলো, তার মানে আগুন। কোথা থেকে পেল, একটু খোঁজ
করতেই জানা গেল প্রমিথিয়াস সেই আগুন জুসের বজ্রের থেকে চুরি করে মানুষদের দিয়েছে।
বাস তাহলে শাস্তি দিতে হয়। চুরি মহাঅন্যায় আর যখন জুস আগুন দিতে মানা করেছিলেন তখন
পরমিথিয়াস সেটা চুরি করে ভীষণ অন্যায় করেছে,। তার আগে বার বার জিজ্ঞাসা করা
সত্ত্বেও প্রমিথিয়াস জুসকে বলেন নি যে তার কোন ছেলে তাঁকে রাজ্যচ্যুত করবে তার
মানে প্রমিথিয়াস জুসের বিরোধী পক্ষ।
প্রমিথিয়াসকে ধরে আনা
হল। তাঁকে ককেশাস পাহাড়ে শেকল দিয়ে বেঁধে আটকে রাখা হল। রোজ জুস একটা ঈগল পাখীকে
পাঠাতেন প্রমিথিয়াসের পেটের থেকে মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে । আর রোজ রাত্রে
প্রমিথিয়াস অমর বলে তার ক্ষত নিরাময় হয়ে যেত। এই শাস্তি চলল বহুদিন। জুস বলে
দিয়েছিলেন প্রমিথিয়াসের বদলে কারুর প্রান
চাই, এবং কোন মর্তবাসী এসে ঈগল্টাকে মেরে প্রমিথিয়াসকে শেকল থেকে মুক্ত করতে হবে।
আর নয়তো তার কোন ছেলে জুসের রাজয়্ব নিয়ে নেবে সেটা তাঁকে জানাতে হবে। আর না হলে
বাধা থেকে থেকে প্রমিথিয়াস পাহারের একটা অংশই হয়ে যাবে। শেষে হেরাক্লেস এসে ঐ ঈগলটাকে
মেরে ফেললেন আর চিরান এবং সেন্টর , দুজনে প্রমিথিয়াসের বদলে মরবার জন্য রাজী হয়ে
গেলে প্রমিথিয়াস ফিরে এলেন।
উত্তরমুছুনবাংলায় ভালো ভালো হাঁসির গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় ভূতের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় প্রেমের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন