আটলান্টা।
আটলান্টা, আমেরিকার এক শহর,যেখানে কিছুদিন আগেই অলিম্পিকের খেলকুদ
হয়ে গেছে। কিন্তু আটলান্টা নামটা জড়িয়ে আছে এক বিখ্যাত দৌড়বিদ মহিলার নামের সাথে।
এনাকে অবশ্যি মানবী শরীরে দেখা যায় নি। ইনি ছিলেন গ্রীক পুরানের এক চরিত্র। চরিত্র
এই জন্য বললাম যে এনাকে কিন্তু অমর বা দেবদেবীদের পর্যায়ে ফেলা হয় নি। ইনি ছিলেন
রাজা আয়াসাসের মেয়ে। মার নাম ক্লিমেনী।
আজকের ভারতীয় সমাজের মত মেয়ে হিসাবে জন্মেছিলেন বলে তার বাবা তাঁকে
কাছে চাননি। জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসতে হুকুম করেছিলেন। সেই অনুযায়ী তাঁকে ফেলে দিয়ে
আসা হল জঙ্গলে। কিন্তু ঠান্ডা লেগে মরে যাবার আগেই এক মা-ভল্লুক তাঁকে নিজের
বাচ্চার মত পালতে লাগল। আমরা বেশ কিছুদিন
আগে ওড়িষাতে এক নেকড়ে মানুষের কথা কাগজে
পড়েছিলাম, তার মতন ব্যপারটা। এই ভল্লুকীটাকে পাঠিয়েছিলেন আর্টেমিস, আটলান্টাকে বাচিয়ে
রাখবার জন্য। ঐ ভাল্লুক মার কাছে আটলান্টা বড় হল আর শিকারীর দলে মিশে গেল। আসলে
যদিও আটলান্টা ভাল্লুকের কাছে বড় হয়েছিল তবুও জঙ্গলে থাকার সময় সে শিকার করতে শিখে
গেছিল।
ইতিমধ্যে ক্যালিডনের রাজা ইনিয়াস একবার তার বাৎসরিক ফসল তোলার
পুজোতে আর্টেমিসকে পুজা দিতে ভুলে যান। বাস আর্টেমিসের মেজাজ গরম। শাস্তি হিসাবে
পাঠালেন এক বিশালকায় শূকরকে । সে এসে ক্যালিডনের ক্ষেত খামার, মানুষের সম্পত্তি
নষ্ট করতে শুরু করে দিল। লোকে ভয়ে ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিল। শহরের বাজারে
ফসলের কম পড়তে শুরু হয়ে গেল। ইনিয়াস ডেকে পাঠালেন দেশের সমস্ত শিকারীদের যাতে তারা
এসে শূকরটাকে মারতে পারে। যে মারতে পারবে তাকে প্রাইজ হিসাবে শূকরটার মাথা আর
চামড়াটা দেওয়া হবে।
মারার জন্য যে সমস্ত শিকারী এসে হাজির হলেন তার মধ্যে ছিল এই
আটলান্টা আর ইনিয়াসের ছেলে মেলিয়াজর। কিন্তু আটলান্টাকে মেয়ে দেখে কিফফেস আর
আঙ্কিয়স নামের দুজন শিকারী তার সাথে শিকারে যেতে রাজী হল না। বাধ্য হয়ে মেলিয়াজর
তাদের কোনরকমে রাজী করাল।
আবার শিকারের সময় দুজন থেসালীর অর্ধ মানব, হাইলিয়াস আর রিকাস,
আটলান্টাকে মেয়েছেলে দেখে অত্যাচার করার ইচ্ছে নিয়ে জোর করতে গেলে আটলান্টা তার
তীর চালিয়ে দুজনকেই মেরে ফেলেন। শিকার, শূকরের রক্তের বদলে ঐ অর্ধ মানবদের রক্ত
দিয়ে সুত্রপাত হল। শেষ পর্যন্ত সেই শূকরটাকে প্রথম তীর মারতে পারল আটলান্টাই। মেলিয়াজর
এসে সেটাকে তলোয়ারের আঘাতে শেষ করে দিল।
আটলাণ্টাকে দেখে মেলিয়াজরের মনে একটু ভালবাসা আর শ্রদ্ধার উদয়
হয়েছিল তাই প্রথম আঘাত করার অজুহাতে প্রাইজ যেটা দেওয়া হবে বলা হয়েছিল সেটা আটলান্টাকেই
দেবার জন্য বলে দিল। কিন্তু থেশটিয়সের ছেলেরা আটলান্টার কাছ থেকে সেই প্রাইজ
ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করলে মেলিয়াজর তাদের মেরে ফেলেন আর আবার সেই প্রাইজ
আটলান্টাকে দিয়ে দেন।
এরা সম্পর্কে মেলিয়াজরের মামা ছিলেন। আগেই ভবিষ্যতবাণী হয়েছিল
যে কুন্ডের কাঠ পুরে ছাই হলেই মেলিয়াজর
মারা যাবে। সেই জন্য মেলিয়াজরের মা অ্যালথিয়া কুন্ড থেকে আধপোড়া কাঠটাকে নিয়ে
লুকিয়ে রেখেছিলেন।ভাইদের মৃত্যু দেখে অ্যালথিয়া রেগে গিয়ে সেই কুন্ডের কাঠটাকে বার
করে আগুনে ছুড়ে ফেলে দেন। যা হবার তাই হল, মেলিয়াজরের মার ছোঁড়া কাঠটা
পুরে ছাই হয়ে গেল আর মেলিয়াজর মারা গেল।
এইবার আটলান্টা বীর হিসাবে সব জায়গাতে দ্বীকৃতি পাওয়াতে তার বাবাও
তাঁকে নিজের বলে স্বীকার করে নিলেন। আটলান্টা তার বাবার কাছে এলেন। এখন তিনি
রাজপুত্রী, সাধারণ শিকারী নন। তার বাবা তাঁকে বিয়ে করানোর ইচ্ছে করলে আটলান্টা এবার আর না করল না।
কিন্তু তার মনে তো বিয়ের কোন ইচ্ছেই ছিল না। সোজাসুজি না বললে বাবা তাঁকে শাস্তি
দিতে পারে তাই সে এক শর্ত রাখল।
তাঁকে যে দৌড়ে হারাতে পারবে সেই তাঁকে বিয়ে করতে পারবে। কিন্তু যদি
আটলান্টা জিতে যায় তবে পরাজিতের তাদের প্রাণ হারাবে,কারণ আটলান্টাকে দৌড়ে তো কেউ হারাতে
পারবে না তাই তার বিয়েও হবে না। লোকে আসে আর হেরে গিয়ে প্রাণ দ্যায়।
এদিকে আর্কাডিয়ার মেলানিওন আটলান্টাকে খুব ভালবেসেছিল। সে তাঁকে
বিয়ে করবার মন করলে এক চিন্তা তো তাঁকে পেয়ে বসে। কি করে দৌড়ে আটলান্টাকে হারান
যেতে পারে। সে ধরে পরল আফ্রাদাইতিকে। প্রেমের দেবী আফ্রাদাইতী, তাঁকে এক প্ল্যান
দিলেন আর তিনটে সুন্দর সোনার আপেল দিলেন। কিন্তু সাথে বলে দিলেন যে জিতে
আটলান্টাকে পেলে পরে দুজনে মিলে তার পূজা দিতে হবে। মেলানিয়ন রাজী।
এবার মেলানিয়ন এসে আটলান্টাকে বলল আমি রাজী তোমার সাথে দৌড় প্রতিযোগীতাতে,
আটলান্টা বলে, তুমি জান যে হেরে গেলে তোমার প্রাণ যাবে। মেলানিয়ন বলে আগে হারি তো।
দৌড় শুরু হল। বেশ কিছুদূর যাবার পরে যেমনি আটলান্টা আগে এগোচ্ছে অমনি মেলানিয়ন তার
হাত থেকে একটা আপেল সামনের দিকে রাস্তায় গড়িয়ে দিল। আটলান্টা দাঁড়িয়ে ওটা তুলে
নিয়ে দেখতে দেখতে মেলানিয়ন আবার এগিয়ে গেল।
আটলান্টা আপেলটাকে ফেলে দিয়ে আবার দৌড় শুরু করল। আবার যখন প্রায়
কাছাকাছি এসে গেছে তখন মেলানিয়ন তার দ্বিতীয় আপেলটাকে রাস্তার পাশের দিকে এমন ভাবে
ছুড়ে দিল যে সেটা তুলতে গেল একটু রাস্তার বাইরের দিকে নামতে হবে। তাই হল আটলান্টা
তোর কৌতূহল মেটাতে রাস্তা ছেড়ে গিয়ে আপেলটা তুলে নিয়ে দেখতে শুরু করল, ইতিমধ্যে
মেলানিয়ন আবার অনেকটা এগিয়ে গেল।
আটলান্টা আবার দৌড় সুরু করল, এইবার আবার মেলানিয়ন তার শেষ আপেলটাকে
রাস্তায় গড়িয়ে দিতে, আটলান্টার পক্ষে লোভ সামলান সম্ভব হল না। সে থেমে ওটাকে তুলে
দেখে আবার দৌড় শুরু করে সীমানাতে পৌঁছানোর আগেই মেলানিয়ন সীমারেখা পার করে গেছে।
আটলান্টাকে হারতে হল।
বেশি ধুমধামের সাথে দুজনের বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু তারা এতই আনন্দে
মশগুল যে আফ্রাদাইতীকে যে পূজা দেবার কথা দেওয়া আছে তার ব্যপারে একদম ভুলে মেরে
দিল। আফ্রাদাইতীর রাগ। সে রেগে গিয়ে দুজনকেই সিংহ বানিয়ে দিল।
এখানে একটা কথা । আটলান্টা তো সিংহ হয়ে গেল কিন্তু তার একটা ছেলে
হয়েছিল নাম পার্থেনপাস। সেও পরে বড় হয়ে বিরাট বীর হয়েছিল।
উত্তরমুছুনবাংলায় ভালো ভালো হাঁসির গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় ভূতের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় প্রেমের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন