“রা”
|
বহুদিন আগে, যখন
চারদিক অন্ধকারে ভরে ছিল তখন ছিল খালি জল। আর সেই জলের মাঝ থেকে উঠে এলেন এক
জ্যোতির্ময় ডিম। নাম তার রা। তিনি একা, কাজেই তাঁর ক্ষমতা অসীম। আর সেই
ক্ষমতা তাঁর নামে মধ্যে ছিল। সেই কারণেই নামটা গোপন করে রাখা ছিল।
মজা হল তিনি এক একটা
করে নাম নেন আর সেটার সৃষ্টি হয়। খালি তিনি আর নিজের নাম কোন সময় নেন না কেননা
সেটা অন্য কেউ জানলেই তার সমস্ত শক্তি চলে যাবে। এই ভাবে তিনি তার নাম নিলেন ভোর
বেলায় খেপেরা বা ঊষা, দুপুরের নাম হল রা
বা সূর্য, আর বিকেলে নাম নিলেন আটুম বা সন্ধ্যা। নাম দেওয়ার সাথেই এদের সৃষ্টি হল।
এর পরে একে একে তৈরী করলেন
শু বা বাতাস, তেফনুট বা মেঘ, গেব বা পৃথিবীকে।
তার পরে সৃষ্টি করলেন নূট বা আকাশের দেবীকে। যার হাত রইল এক দিগন্তে, আর
অন্য দিগন্তে রইল পা। এই ভাবে নুট পৃথিবীর উপরে নিজেকে জড়িয়ে নিল।তার পরে তৈরী
করলেন হাপী, যিনি নীলে নদ হয়ে মিশরের বুকে বইতে সুরু করলেন।
পরে একে একে সব জিনিষ
পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি করে দিলেন। তারা বাড়তে লাগল।এবার সময় হল মানব জাতি তৈরী করার।
মানব জাতির স্ত্রী আর পুরুষদের তৈরী করে দেবার পরে তাদের মধ্যে এক পুরুষের সৃষ্টি করা
হল যিনি হলে ফারাও। এই ফারাওএরা মিশরের বুকে সহস্র বছর ধরে শাসন করছিলেন। আর রাএর কল্যানে মিশরে কোন কিছুর অভাব রইল না।
লোকে পরে কিছু ভাল হলেই বলত “যেন
রাএর সময়ের মত”।
কিন্তু সবারই বয়স হয়
আর তাঁকে বুড়ো হতে হয়। রাও বুড়ো হল আর তার মিশরের এক দিক থেকে আরেক দিকে যেতে সময়
লাগতে লাগল। লোকেরা ঠাট্টা করতে শুরু করল রা বুড়ো হয়েছে, তার আর পায়ে জোর নেই, কতক্ষন সময় নিচ্ছে আজকাল। আর দেখেছ তা চুলগুলো
কিরকম সাদা ফিনফিনে হয়ে গেছে। রা বোঝে সবই কিন্তু সহ্য করে যায়। কিন্তু সহ্যেরওতো
একটা সীমা হয়।
শেষে একেবারে রেগে গিয়ে রা তার তৈরী শু, গেব, নুট, তেফনুট এদের ডেকে
বললেন, “দেখ, আমি তোমাদের সৃষ্টিকর্তা আর
তোমাদের অধীনের মানুষের সৃষ্টি করেছি আমিই। কিন্তু তারা আর আমাকে মানছে না। আমার আইনকানুন সব কিছু তারা অগ্রাহ্য করছে”। তার পরে পরমপিতা নু কে বললেন, “ দেখুন এরা কি ভাবে আমার কোন আইন মানে
না, সব কিছুই নিজেদের ইচ্ছা মতন করে বেড়াচ্ছে। এদের জন্য কি উপায় আছে। মনে হয়ে
মাঝে মাঝে এদের ধ্বংস করে ফেলি, কিন্তু আপনার আদেশ না পেলে কিছু করব না। বলুন কি
করা যায়”।
নু বললেন, “তোঁমার রক্তচক্ষু এদের দিকে ফেল যাতে
এরা ভয়ে নিজেদের ঠিক করে নেয়। আর পুত্র আমার, তুমি তোমার কন্যা শেখমেত কে পাঠাও
এদের শায়েস্তা করতে”। পরমপিতা নুএর কাছ থেকে আদেশ পাবার পরে সৃষ্টি করলেন
তাঁর কন্যা, এক সিংহিনী, হিংস্র,
রক্তপিপাসু, যার নাম হল শেখমেত। খুঁজে
বেড়াতে লাগলেন তাদের, যারা রাএর আইন মানেনি, আর তাদের হত্যা করে তাদের অক্ত পান
করে নিজের পিপাসা মেটাতে লাগলেন। কোথাও কারুর নিস্কৃতি নেই। কোন আপীল বা ক্ষমা
নেই, একেবার চরম বিচার। নীল নদের জলের রঙ লাল হয়ে গেল মানুষের রক্তে। মিশরের এক
প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে শেখমেতের হুঙ্কার শোনা যায় আর যারা শোনে তারা প্রানের
ভয়ে লুকোতে চায় কোথাও না কোথাও।
এদিকে রা তার পৃথিবীর
দিকে তাকান আর দু:খে তার মন ভরে ওঠে কেননা সারা পৃথিবীর বা মিশরের রঙ তখন লাল।
ওদিকে শেখমেত যতক্ষন না নিজের থেকে থামছেন ততক্ষন রাএর আদেশ আর মানছেন না। বাধ্য
হয়েই রা আদেশ করলেন ঝোড়ো হাওয়ার গতিতে যে দৌড়তে পারে তাঁকে, “যাও নীল নদের উপরদিকএর পাহাড়ী জায়গা থেকে
আমাকে লার রঙের মাটী এনে দাও”।
হুকুম তামিল হতে সময়
লাগলো না। রা এর শহর হেলিওপোলিসে সন্ধ্যে
নাগাদ সেই লাল মাটী এসে হাজির। আর ততক্ষণ ধরে শহরের মেয়েরা লেগে গেছিল মদ তৈরী
করতে। ভাল আঙ্গুর থেকে তৈরী মদ। আর তৈরী করা হল কম নয়, সাত সাত হাজার পিপে ভর্তি।
এবার রা করলেন কি ঐ যে লাল মাটী আনা হয়েছিল সেগুলোকে মদের সাথে মিলিয়ে দিলেন। দেখতে দেখতে সাত হাজার পিপের
মদ দেখে মনে হতে লাগল সাত হাজার পিপে ভর্তি রক্ত।
এবার রা বইল্লেন, “যাও এই মদ নিয়ে গিয়ে সেখমেত যে রাস্তায়
যাতায়াত করে সেই মাঠে ঢেলে দিয়ে এস। লোকেরা সেই কাজ করল। চাঁদের আলোতে সেই মদ দেখে
মনে হতে লাগল মাটীর উপরে এক বিঘত উচু হয়ে মানুষের রক্ত জমে আছে।
সক্কাল বেলায় সেখমেত
বেরলেন মানুষ শিকারে। রাস্তায় ঐ লাল রঙের তরল দেখে ভাবলেন মানুষের রক্ত। আগে খেয়ে
নিই, শুরু করলেন, প্রথমে অল্প করে তার পরে পেট ভর্তি করে খেয়ে নিলেন। কিছুক্ষনের
মধ্যে তার নেশা হয়ে গেল আর মানুষ মারবার
কথা মনেই রইল না। দিনের শেষে শেখমেত একটাও
মানুষ না মারতে পেরে রাএর কাছে ফিরে এলেন। রা তাঁকে শান্ত দেখে আশীর্বাদ করে বললেন
আর তার মানুষ মারার দরকার নেই। আজ থেকে তার নাম হল হাথর। তার স্বভাব বদল হয়ে হল
শান্ত, মিষ্ট। আজ হেলিওপলিসের মদের রঙ নব বর্ষের দিনের জন্য ঐ লাল মাটী মিলিয়ে লাল
করে রাখা হয়।
মানুষের শাস্তি তো শেষ
হল কিন্তু রাএর বৃদ্ধ হওয়া তো বন্ধ হল না। আর তার মাথায় বিচারশক্তি ঠিক করে আসে
না, একজন নতুন লোকের দরকার। কিন্তু কি ভাবে? রাএর আসল নাম না জানতে পারলে তো কারুর
সেই শক্তি আসবে না।
ইতিমধ্যে গেব আর
নুটের ছেলে মেয়ে হয়েছে । অসিরিস , আইসিস, সেত আর নেফদীজ। এদের মধ্যে সবচেয়ে
বুদ্ধিমান ছিল আইসিস। তার মাথায় সব কিছুর জ্ঞান ছিল, স্রেফ রাএর গোপন নামটা ছাড়া।
ঠিক করলেন কোন না কোন ভাবে সেটা জানতেই
হবে।
ওদিকে বুড়ো রাএর
হাটতে চলতে কষ্ট হয়, হাত পা কাপে, একদিন এই ভাবে চলবার সময় তার মুখ থেকে মাটীতে
থুতু ফেলে দিতে সেটা কাদায় পরিনত হল। আইসিস সেটাকে দেখে তার থেকে একটা সাপ বানিয়ে
নিল। নাম হল তার ঊরিয়াস।
আইসিস এইবার সেই
সাপটাকে যে রাস্তায় রা যাতায়াত করে, তার উপরে ফেলে দিল। যার ফলে সেটা সুযোগ পেয়েই রাকে কামড়ে দিল।
বিষ রাএর সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ল। যন্ত্রনাতে রা কাতর। বলে এটা কি কামড়াল যাতে এত
কষ্ট পাচ্ছি, আমি তো এটাকে বানাই নি। এর বিষ আমার কাছে অজানা, কি ভাবে এই জ্বালা কমবে
তা জানি না। এর কি যে প্রতিকার তা তোমরা দেবতারা যদি জান তবে সেটা কর। আমি আর এটা
সহ্য করতে পারছি না।
সমস্ত দেবতারা এসে
হাজির। সাথে আইসিসও। এসে জিজ্ঞেস করে, হে রা, আপনাকে কি সাপে কামড়েছে? রা বলে তিনি তো সাপ তৈরী করেননি, তবে এল কোথা
থেকে। এর বিষও তিনি চেনেন না। কিন্তু এর জ্বালা আর সহ্য হচ্ছে না। আইসিস বলেন,
আপনি আপনার নামের ক্ষমতা আমার যাদুকে দিন, তবেই সে যাদু আপনার এই বিষ তাড়িয়ে দেবে। রা একে একে তার অন্য
সব নাম বলতে থাকেন। বলেন আমি পর্বতের সৃষ্টিকর্তা, তার পরে বলেন নদনদীর সৃষ্টিকর্তা,
আমি আলোক এবং অন্ধকারের সৃষ্টিকর্তা, কিন্তু আসল নাম আর বলেন না। ওদিকে আইসিস ও বুঝতে পারে যে রা তার আসল নাম
বলছেন না। তিনি বলেন যে আপনি কিন্তু যতক্ষণ আপনার আসল নাম না বলবেন ততক্ষন এই বিষ
আপনার সারা দেহে ছড়িয়ে যাবে।
অবশেষে রা সেই বিষের
জ্বালা সহ্য না করতে পেরে বলে উঠলেন, আগে তাহলে আইসিস প্রতিজ্ঞা করুক যে আর কাউকে
এই নাম তিনি বলতে পারবএন না। খালি তার ছেলে হোরাসই এই নাম জানতে পারে। আইসিস সেইরকম
প্রতিজ্ঞা করলে রা বলে উঠলেন, “আমার
গোপন নাম আমার মন থেকে আইসিসের মনে যাক”। আর রাএর গোপন নাম আইসিস জানতে পেরে
গেলেন। আইসিসের যাদুতে রাএর বিষ নেমে গেল।
কিন্তু রাএর শাসনের এই
সাথে অবসান হল। আর তাঁকে মিশরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে হল না। বদলে
তার জায়গা হল আকাশে। সারা দিন তিনি আকাশে থেকে সব দিকে নজর রাখেন পরে রাতের
অন্ধকারে তিনি মৃত্যুপূরীর অন্ধকার পার হয়ে আবার সকালে তার নিজের জায়গা আকাশে আসেন।
আর মৃত্যুপূরী পার হবার সময় সেই সমস্ত আত্মারা , যারা পৃথিবীতে জ্ঞান বিতরণ করতেন
তাদের সাত্থে করে মৃত্যুপূরীর রাস্তার বিপদ পার করিয়ে দিতেন।
এর পরে অসিরিস এবং
আইসিস আর তাঁর পরে হোরাস এর শাসন পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হল।
উত্তরমুছুনবাংলায় ভালো ভালো হাঁসির গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় ভূতের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় প্রেমের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন