বাংলাতে কথা বলি, বাংলা পড়ি, তাই বাংলাতে লিখব। যা মনে আসে। চেষ্টা করব আপনাদের আনন্দ দিতে।পড়ে নীচে কমেন্ট দিতে ভুল করবেন না প্লীজ।
বুধবার, ১২ জুন, ২০১৩
আমার আমেদাবাদ ভ্রমণ তৃতীয় ভাগ
আমাদের পরের
দ্রষ্টব্য স্থল হল বৈষনোদেবীর মন্দির। আসল বৈষনোদেবীর মন্দিরে আদলে প্রায় তাকে কপি
করে এই মন্দির টি বানান হয়েছে। সাধারন , কিন্তু আসল মন্দিরের চেহারাটা কিছু আন্দাজ
করা যায়। দুপুরের রোদ চরচরে হয়ে উঠেছে কাজেই এবার সোজা অক্ষরধাম মন্দিরে দিকে এগন
গেলও।
হাইওয়ে থেকে এক
চৌমাথাতে আমরা বেকে মন্দিরের সামনে দাঁড়ালাম,। এইবার শুরু হল মজা। দুপুর রোদ, গরম,
সাথে বিসলেরীর বোতল। লাইনে দাড়িয়ে শোনা গেল বাইরের খাবার বাইরেই থাকবে ভেতরে যাবে
না। আপনার পকেটে চকলেট থাকলেও সেটার ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। আমার পকেটে এমার্জেন্সী
হিসাবে সর্বিট্রেট থাকে সেটাতেও আপত্তি। কোমরের বেল্ট, মানি ব্যাগ কিছুই লাইনে নিয়ে
ঢোকা যাবে না। গেটে মন্দিরের পাহারাদার পকেটের জিনিষ হাতে নিয়ে দেখে বুঝতে পারলে আপনাকে ফেরত দেবে নয়তো আবার ফিরে ক্লোক রুমে জমা দিন। বোঝা গেল না যে পাহারাদাররা
কোথা থেকে ট্রেইন্ড যে চোখে দেখে ওষুধ বুঝতে পারে কিন্তু বিসলেরীর বোতল বুঝতে পারে
না। কোন রকম ইলেক্ট্রনিক মেশিন যথা, মোবাইল্ ক্যামেরার প্রবেশ নিষিদ্ধ। ওগুলো কে
জমা রাখতে হবে। সবার চেয়ে মজার জিনিষ হচ্ছে মাল থাকবে ওদের কাছে কিন্তু জিম্মেদারী
আপনার।। আমাদেরই এর জন্য ভুগতে হয়েছে। আমরা একসাথে চারটে, আমার দুটো। মেয়ের
জামাইয়ের একটা করে জমা দিয়ে টোকেন নিয়ে ছিলাম ফিরে পাওয়া গেল তিনটা ফেরত। মেয়েরটা
নেই। যে জমা নিয়েছিল তার সাফ উত্তর জমা দেননি। আমরা নাছয়ড়বান্দা হওয়াতে আবার শুনলাম
আপনার মিথ্যুক। তখন পুলিশে যে জমা নিয়েছে তার নামেই ডায়রী করার ভয় দেখানতে র্যাক
থেকেই ওটা বেরল। আমি যখন লোকটির ছবি তুলে রাখতে গেলাম তখন সে ঐ ঘরের ভেতরে লুকিয়ে
পড়ল। তার আগে একবার বলে আপনার হোটেলে
ফেলে এসেছেন। আবার বলে আপনার লাস্ট শো শেষ হওয়া পর্যন্ত অপক্ষা করুন। সবার মোবাইল
নেওয়া হয়ে গেলে যদি আপনারা সত্যি জমা দিয়ে থাকেন তবে পাওয়া যাবে। এটা ধর নেওয়া
যেতে পারে দৈনিক হাজার দশেকের মতন মোবাইল জমা পড়ে তার মধ্যে একটা দুটো কি এরকম
ভাবে নিয়ে নিতে কোন অসুবিধা নেই। এটা দেখে বোঝা যায় যে কে প্রবাসী লোক। সংস্থার
পয়সার অন্ত নেই তারা চুরি করে না কিন্তু তাদের রাখা এই কর্মচারীরাই চুরি করার জন্য
মুখিয়ে থাকে।
ভেতরে খাবার জিনিষ সব
কিছুই পাওয়া যায়। আপনি যেহেতু আপনার ছোট বাচ্চার দুধের বোতল বাইরে জমা দিয়েছেন তাই
আপনাকে ওদের দেওয়া দুধ (ভাল, মন্দ স্বাস্থ্যকর বা অস্বাস্থ্যকর) তাই নিতে আপনি
বাধ্য।গরমের দিনে আইস্ক্রীম বাইরের থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে।
মন্দিরের কথায় আসা
যাক। আয়তনে বিশাল জায়গা জুরে এর বিস্তৃতি, শোনা গেল প্রায় ২২/২৩ একর জায়গা জুড়ে। প্রমুখ স্বামীমহারাজ (BAPS এর গুরু) অক্ষরধাম মন্দিরের নির্মাতা। মন্দিরে ৭ ফুট উচু সোনার পাতে মোড়া
স্বামীনারায়নের মুর্তি আছে। মন্দির চত্বরে তিনটি হল আছে যেখানে স্বামীনারায়নের
সম্বন্ধে এবং উপনিষদ, রামায়ন এবং মহাভারত সম্বন্ধে কিছু দ্রষ্টব্য বস্তু আছে।
সন্ধাতে পৌনে এক ঘন্টা ধরে আলো, আগুন এবং জলের সাথে লেসারের আলোর খেলা দিয়ে নচিকেতা
এবং যমের গল্প দেখান হয়। ৪০০০ ফোয়ারা, ২০০ লাইট আর এক ডজন ফ্লেম থ্রোয়ার এর
সাহায্য একটা ভাল গল্পের দৃশ্য দেখান হয় সাথে দুজন অভিনেতাও অভিনয় করে দেখান।
টিকিট কাটার জন্য লম্বা লাইন বাচ্চা বুড়ো, ফিট আনফিট সবাইকে এই লম্বা লাইন দিয়ে কম
করে ৫০০ থেকে ৭০০ মিটার হেঁটে ঢুকতে হবে। কিন্তু অন্য ব্যবস্থা আছে। আপনাকে এদের
কর্তাদের কারুর সাথে লিঙ্ক রাখতে হবে তাহলেই এটা ১৫ থেকে কুড়ি মিটারে এসে দাঁড়াবে
অর্থাৎ আপনাকে নির্গম পথ দিয়ে আগমণ করান হবে। বসে থাকত থাকেই দেখলাম বেশ কিছু
লোকেদের এই কর্তারা বসিয়ে দিয়ে গেলেন।
শোতে আরও মজা লাগলো এটা দেখে যে স্বামীনারায়ন এনং যমকে একই
বলার চেষ্টা দেখে। নচিকেতার প্রশ্নের জবাবে যম তাকে নিজের শান্ত রূপ দেখালেন যেটা
স্বামীনারায়নের রূপ। এখন দেখি স্বামী নারায়ন কে?
স্বামী নারায়ন উত্তর প্রদেশের ছাপাইয়া তে ১৭৮১ তে জন্মান
এবং ১৭৯৯ নাগাদ গুজরাটে এসে বসেন। গুরু রামানন্দ স্বামীর কাছে শিক্ষা নিয়ে নিজের নাম
নেন সহজানন্দ স্বামী। তিনি ১৮০০ তে উদ্ধব সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করেন যেটিকে স্বামীনারায়ন
সম্প্রদায় নামে জানা যায়। তিনি ১ জুন ১৮৩০ তে মারা যান। মারা যাবার সময় তার ভাগ্নে
দের সম্প্রদায়ের দুই ভাগের কতৃত্ত দিয়ে যান।
১৯০৭ সালে শাস্ত্রীজি মহারাজ ভাদতাল গদি ছেড়ে বোচাসন্যাসী
শ্রী অক্ষরধাম পুরুষোত্তম স্বামী নারায়ন সংস্থার সৃষ্টি করেন তার পরে এর ভার নেন যোগীজি মহারাজ এবং এখন আছেন প্রমুখ স্বামীজি মহারাজ এর কর্তা।১৯৯২ সালে
নভেম্বর মাসে মন্দিরটির উদ্বোধন হয়।
স্বামীনারায়ন
মন্দির
স্বামীনারায়ন
মন্দিরের হয়েছে খুব নাম,
অনেকেই বলে
তাকে অক্ষরধাম।
মন্দিরের
নিয়মনীতি চলে তাদের হিসেব মতো,
নিক্তি ধরে
মেপে নিয়ে তবে ভেতরে ঢোক
ঢোকার আগে
তোমার কাছে যা কিছু আছে সবই দেখাও,
এমনকি
পকেটের ওষুধ আর খুচরো পয়সাটাও।
ওদের ইচ্ছে
মতন তখন হয়তো কিছু ফেরত পাবে
বাকি যা
কিছু ছিল টোকেন নিয়ে জমা দিতে হবে।
উপরেতে লেখা
আছে, মালের জিম্মেদারী যে যার নিজেই
ওদের কাছে
যে জমা দিলেন তারও কোন প্রমান নেই।
দুটো মোবাইল
জমা দিলে হয়তো একটা পাবেন আপনি
জিজ্ঞেস
করলে সাফ উত্তর, "জমাতো আপনি দেননি।“
আর ভাগ্যে
থাকলে শুনবেন, আপনি মশাই মিথ্যুক।
সত্যের
মন্দিরের এটাই আসল স্বরূপ।
লিঙ্ক থাকলে
হবে আপনার ব্যাকডোর দিয়ে প্রবেশ
আম জনতার
জন্য লাইনের নেই শেষ
বাইরের
যাকিছু (খাবার) বাইরেই থাক
নাহলে বেশি
দাম দিয়ে কিনবে কার বাপ।
এর পরেও যদি
মনে ইচ্ছে থাকে ওখানেতে যাবার
পকেটেতে
রেখো খালি নোটের পাহাড়
তার পরে
মেরে দিতে পার চক্ষু মুদে এক ঝাঁপ
কিছু হলে
পরে জেনো ওদের সাতখূন মাপ।
.
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন