গরমের জন্য বোধহয় আমার মাথায় কিছু গণ্ডগোল হয়েছিল, নয়তো যখন মেয়ে জামাই এসে
বলল যে আমেদাবাদের প্রোগ্রাম করে ওরা একেবারে কনফার্ম টিকিট এনেছে তখন আমি বিশেষ আপত্তি
করিনি। তাছাড়া যখন আরও বলল যে, টিকিট এ সি চেয়ারে আর হোটেলেও এ সি রুম বুক করা
টাকা পাঠান হয়ে গেছে তখন আর আমার আপত্তির কোন রাস্তাই রইল না। কিন্তু তখন এ কথা
মাথায় আসে নি যে ট্রেনে এ সি; হোটেলে এ সি; ট্যাক্সিতে এ সি হলেও সাথে তো পর্টেবল
এ সি মেশিন নিয়ে যাবনা কাজেই বেড়াতে বেড়িয়ে যখন এ সি চেম্বারের বাইরে যাব তখন গরম
হাওয়ার ঝাপটা খেতেই হবে। বিশেষত যখন সাথে বেষ্ট হাফের চলতে বেশ কষ্ট হয়।
অতএব রওয়ানা হলাম। পার্টীতে আমরা ছজন। মেয়ে জামাই, দুই নাতি এবং সস্ত্রীক
আমি। বাড়ী থেকে শুরু করলাম বেলা দশটায়। লোকাল ট্রেনে পানভেল থেকে সি এস টি;তার পরে
ট্যাক্সি নিয়ে সেন্ট্রাল; তার পরে ট্রেন। দুপুরের লাঞ্চটা সেন্ট্রাল ষ্টেশনে সেরে
নিয়ে ট্রেনে উঠলাম। গাড়ী ছাড়ল ডট আড়াইটে। ডবল ডেকার ট্রেন। আমাদের দুজন সিনিয়র
সিটিজেন লোকের সিট সিঁড়ি দিয়ে নেমে নীচের ডেকে। বাকী ওদের দরজার লেভেলে মিডল ডেকে।
টয়লেট, ওয়াশিং বেসিন মিডল লেভেলে। ইতিমধ্যে রওয়ানা হবার পরে দেখা গেল আমাদের দুজন
সিনিয়রের আইডেন্টিটি প্রুফ সাথে আনা হয়নি। মাঝ রাস্তায় জামাই নেমে ফেরত গিয়ে
ওগুলোকে আবার নিয়ে এল।
ট্রেনে আমার সিট নম্বর হল ৭, স্ত্রীর ৮। ৭ নম্বর সিটে গিয়ে দেখা গেল জানলার
ধারে সিঙ্গল সিট, পশ্চিম দিকে এবং সাদা কাচের জানলাতে কোন পর্দা নেই। ইতিমধ্যে
মেয়ে এসে তার মাকে ওদের ওখানে নিয়ে গেল এবং নাতি এসে তার দিদুর জায়গাটা নিল।
কিন্তু কিছুক্ষন বাদ থেকেই গালে রোদের তীব্র তেজ জ্বালা ধরাতে শুরু করল। এসব
ক্ষেত্রে গাড়ীত একজন আটেন্ডেন্ট থাকে । তাকে বা টি টি ই কাউকেই ঘন্টা দেড়েক
পর্যন্ত দেখা পাওয়া গেল না। বেলা সাড়ে চারটের পরে তাকে দেখে বলার পর তিনি মৌখিক
সহানুভূতি ছাড়া আর কিছুই করলেন না। অবশ্যি কিছু করার ছিল না। পর্দাটা মিসিং।
ট্রেনটা সকালে আমেদাবাদ ছাড়ে, বেলা দেড়টাতে মুম্বাই পৌছয় আবার আড়াইটেতে ছেড়ে রাতে
আমেদাবাদ পৌছয়। যা কিছু ঠিকঠাক করার তা আমেদাবাদেই হবে। রোদের তেজ কমার পরে বেশ
ভালই লাগছিল। যেহেতু এই লাইনে আমি প্রচুর যাতায়াত করেছি তাই জানলার সিটের থেকে
বাইরের দৃশ্য দেখার কাজটা নাতির আর কিছুটা রানিং কমেন্ট্রী করার কাজ আমার। ইতিমধ্যে
ছা খাবার দরকার পড়লেও সেটা মুলতুবী রাখতে হয়েছিল। কেননা যদিও ট্রেনে প্যান্ট্রী
আছে, আর সার্ভিস আই আর সি টি সি র, কিন্তু চা পটে নয় এবং তাতে এলাচ, লবং ইত্যাদি
দিয়ে সেটাকে পাচন বানাতে এরা খুব পারদর্শী। ঐ মশলা চা ছাড়া লোকে এখান অন্য চা খায়
না। রাত আটটার সময় রেডীমেড কফি পেয়ে শরীর কিছু চাঙ্গা হল। ট্রেন পৌছনোর কথা রাত
সয়া নটায়। নটাতে ট্রেন আমেদাবাদ ষ্টেশনের বাইরে এসে দাঁড়িয়ে গেল। আমরা যখন
প্ল্যাটফর্মে পৌঁছলাম তখন রাত সাড়ে দশটা। গাড়ী এল সাত নম্বর প্ল্যাটফর্মে। বেরোনোর
রাস্তা এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে। কোন লিফটের বন্দোবস্ত নেই বললে ভুল হবে।
প্রত্যেক প্ল্যাটফর্মে একটা করে লাগেজএর জন্য লিফট আছে। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য ,
সাত নম্বর প্ল্যাটফর্মের লিফটে দরজা বন্দ। কোন লফট ম্যান নেই। অতএব কোমর ভাঙ্গা
স্ত্রী এবং হৃদরোগী আমাকে হেঁটেই সিঁড়ি ওটা নামা করতে হল। বাইরে অটো স্ট্যান্ডে
পৌঁছলাম তখন প্রায় এগারোটা।
অটো নিয়ে গন্তব্য হোটেল নীলকন্ঠ ব্লিস, যেখানে রুম ঠিক করা আছে। মজা হল ওখানে
গিয়ে শুনলাম বুকিং ওরা ডাইভার্ট করেছে ওদের আর একটা হোটেল নীলকন্ঠ সাহারাতে। একটু
কড়া ভাবে কথা বলার পর ওরাই আবার অটো করে এই হোটেলে পৌঁছে দিল। যদিও লেখা আছে ২৪
ঘন্টা রুম সার্ভিস তবুও রাতে কিছুই পাওয়া গেল না। আবার জামাই বেড়িয়ে বান আর অমলেট
রাস্তার স্টল থেকে নিয়ে আসার পর খেয়ে নিদ্রার কোলে পড়া গেল। কাল সকাল থেকে ট্যুর
শুরু। তার বিবরন কালকের ব্লগে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন