হৃদয় কুটির ( সবরমতী বাস ভবন) |
পরের দিন ঘুম ভাঙ্গল সকাল সাতটায়। প্রোগ্রাম তৈরী ছিল সকালে সবরমতী আশ্রম
আর বিকেল অক্ষরধাম মন্দির। হোটেলে খবর
নিয়ে জানা গেল অক্ষরধাম মন্দির আমদাবাদে না বরং গান্ধীনগরে, প্রায় ত্রিশ কিলমিটার
দূরে। অক্ষরধাম মন্দিরে সন্ধের সময় লাইট এন্ড সাউন্ডের এক প্রোগ্রাম হয় সেটা নাকি
অবশ্য দ্রষ্টব্য। কিন্তু তাহলে একটা নিজস্ব গাড়ী (ভাড়ার অবশ্যই, কে দূর থেকে নিজের
গাড়ী নিয়ে যাবে)) চাই। লোকাল ইন্ডিকা গাড়ী এ সি আট ঘন্টার জন্য নেবে ১৩০০ টাকা এর
মধ্যে ৮০ কিলমিটার পর্যন্ত আলাদা মাইলেজ লাগবে না। যদিও একটু টাইট হয়ে বসতে হবে
তবুও বড় গাড়ী পাওয়া গেল না বলে সেটাই নেওয়া হল। দশটার সময় রওয়ানা হওয়া গেলও।
প্রথমে সবরমতী আশ্রম হোটেলের থেকে বেশী দূরে নয়। প্রচুর বাঙ্গালী দর্শকের ভিড়।
দেখবার মধ্যে গান্ধীজীর কিছু ছবির গ্যালারী। সাথে তার ব্যবহৃত কিছু চরখা ইত্যাদি
জিনিষের ডিস্প্লে। মজা হছে সমস্ত গ্যালারীতে তার কলকাতার ছবি দেখলাম না। অবশ্যি
পুর্ব বাংলার দাঙ্গার সময়কার দুটি (মনে হচ্ছে) আছে। এটা ইচ্ছেকৃত কিনা বোঝা গেল
না।গ্যালারী দেখে বার হবার পরে পাশেই হৃদয় কুটীর, ওনার বাসভবন। একটু দূরে
প্রার্থনা করার জায়গা। পাশ দিয়ে সবরমতী নদী বয়ে গেছে। নদীর দুপাশ এখানে বাঁধানো
বলে মনে হয় নদীটা সরু তা ছাড়া গরমকাল বলে এমনিতেই নদীতে এই জায়গাটাতে জল নেই।
নর্মদা বাধের কল্যানে বাধের থেকে নর্মদার জল এখন সুদূর গুজরাটে সবরমতী নদীতে পাঠান
হচ্ছে। গুজরাট সরকার নদীর পাশে বেড়ানর জন্য হাঁটা পথ তৈরী করেছে যাকে এরা প্রমেনেড
বলছেন
হাতীসিঙ্গের জৈন মন্দির (সন্যাম ভাগ)
আমি ইন্টারনেট দেখে আমেদাবাদের দর্শনীয় জায়গা গুলোর একটা লিষ্ট তৈরী করে
নিয়েছিলাম। ট্যাক্সির ড্রাইভারকে দিতে সে বলল যে সে যা যা দেখার আছে তা নিজে থেকেই
দেখিয়ে দেবে, খালি আমার স্ত্রীকে দেখিয়ে বলে দিল যে যেখানে ওনাকে অনেকটা হাঁটতে
হবে সেগুলোকে সে বাদ দিতে চায়। আমাদের তাতে কোন আপত্তি নেই। সবরমতী আশ্রম দেখে
আমাদের গন্তব্য স্থল হল সিদি সৈয়দ মসজিদের দিকে। পথে এক লস্যির দোকান। লোকে লাইন
দিয়ে লস্যি কিনছে আর নিয়ে যাচ্ছে। এক গ্লাস রাজাওয়াবাড়ী লস্যির (অনেকটা মধ্যপ্রদেসের
বা ইন্দোরের ঘমন্ডী লস্যির মতন) দাম ৬০ টাকা। সাথে বাদাম পেস্তা দেওয়া আছে। দোকানের
কাছেই দিল্লী দরয়াজা। আগে যখন আমেদাবাদের চারদিকে দূর্গের মতন দেওয়াল দেওয়া ছিল
তখন শহরে ঢোকার জন্য কতক গুলো দরজা ছিল। এখ দেওয়াল আর নেই, পুরনো নিদর্শন হিসাবে
দরজা গুলো আছে।
জৈন মন্দিরের পিলারে কারুকার্য
এখান থেকে আমরা যাব হাতী সিঙের মন্দির।। শ্বেতাম্বর জৈন সমাজে মন্দির, আবু
পাহাড়ের মন্দিরের আদলে তৈরী। খালি আবুর মন্দির শ্বেত মর্মরের আর এখান দ্বিতীয় বা
তৃতীয় শ্রেণীর মার্বল দিয়ে তৈরী। মন্দিরটিতে জৈন তীর্থঙ্কর ধর্মনাথের নামে তৈরী
করা। ১৮৫০ সালে শেঠ হাতী সিং এটিকে তৈরী করেন। মন্দিরের ভেতরে ছবি তোলা নিষেধ।
কাজেই ভেতরের ছবি তোলা গেলনা। একটি বাইরের সন্যমভাগের ছবি এবং তার পিলারের
কারুকার্যের ছবি দিলাম।
সিদি সৈয়দ মসজিদের জালির কাজ
আমাদের পরবর্তী গন্তবয় স্থল হচ্ছে সিদি সৈয়দের মসজিদ। লাল পাথরের ইপর জালির
কাজ করা অপূর্ব স্থাপত্য কলা। সাথে যে ছবিটা দিলাম সেটী আমেদাবাদের ইন্ডিয়ান
ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের লোগো হিসাবে বিখ্যাত হয়ে আছে। ১৫৭৩ সালে ঝঝর খানের এক
সৈন্য সিদি সৈয়দ এই মসজিদ টি তৈরী করেন। কিন্তু তার প্ল্যান মত করে মসজিদটি
মিঘলদের গুজরাট আক্রমনের আগে শেষ করা যায়নি।রাস্তাতে গাড়ী দাঁড় করানর অসুবিধা ছিল
বলে আর ভেতরের কিছু দেখা হয়নি। আমদের অরিজিনাল প্ল্যান অনুযায়ী এখান থেকে ফিরে
একটু বিশ্রাম নিয়ে বেলা দুটো নাগাদ অক্ষরধাম রওয়ানা হবার কথা কিন্তু ট্যাক্সি
ড্রাইভার এর কথা হল যে মাদের লিস্টে আদালাজের ভাব (বাওলি বাঁ সিঁড়ি দিয়ে নাম্র
কুয়া দেকবার আছে। সেটা প্রায় অক্ষরধাম মদিরের কাছেই কাজে কাজে হোটেলে বিশ্রাম না
নিয়ে বাকী দ্রষ্টব্য জায়গা গুলোকে দেখে শেষ করে আমরা একেবার অক্ষর ধামে গিয়ে খয়া
এবং একটু বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যাকালীন শো দেখতে পারি। কবার সম্মতি পেয়ে গাড়ী রওয়ানা
দিল অক্ষরধামের দিকে। প্রথম দেখবার জায়গা হল ইসকনের মন্দির। বেলা ১ টার সময় মন্দির
বন্ধ হবার কথা। জুতএ স্টলে জুত জমা দিয়ে গরম পাথরের উপরে পাতা মাদুরের উপরে হেঁটে
মন্দিরে ঢকা গেল। ভেতরে কোন রকম আওয়াজ করা বারন এবং ছবি তলাই বারন। কিন্তু এ
ব্যাপারে কোন আইনের একমাত্র গুজরাটি ভাষায় লেখা ছাড়া কোন মানা করার বন্দোবস্ত দেখা
গেল না।। ভেতরের একটা ছবি তুলে নেবার পরে নটিশটা দেখে আর ভেতরের ছবি তুলিনি।বাইরে
বেড়িয়ে মন্দিরের একটা ছবি নিয়েছি কিন্তু সেটা সাধারন ছবির মত হওয়াতে আর সেটাকে
এখানে দিলাম না।
আদালাজের বাওলির ব্যালকনি
এখান থেকে বেড়িয়ে আমারা ধরলাম গান্ধীনগর হাইওয়ে। রাস্তায় পড়ল গুরুদ্বারা।
পরে বিখ্যাত গুরুকুল স্কুল। প্তহে পড়বে আদালাজ গ্রামের ভাও বাঁ বাওলি বাঁ স্টেপ
অয়েল। স্থাপত্য কলার এক অপুর্ব নিদর্শ এই ভাব। ১৪০০ সালে সুলতান মাহমুদ বেগদা ভীর
সিং কে হারিয়ে দেন এবন ত্র স্ত্রী রূপবা কে বিবাহ কতে চান। রাণি রূপবা এ বিয়েতে
রাজী হবার জন্য এক সর্ত দেন যে এক ভাব বাঁ বাওলি তিরি করে দিতে হবে। মাহমুদ এতই
বিয়েত উতসুক ছিলেন যে তিনি রাজী হলে এবং কুয়া তৈরী হল। রাণী রূপবা কুয়ার পুজা
করবার পরে ঐ কুয়াতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণত্যাগ করেন। সুলতান মাহমুদ এই কুয়ার কাজে নিজেই
এত মুগ্ধ ছিলেন যে যাতে আর কেউ এই রকম কুয়া তৈরী করতে না পারে তাই প্রধান ৬ জন
কারিগরকে হত্যা করে তাদের এই কুয়ার পশ্চিম দিকে কবার দিয়ে দেন। কুয়াটি পাচতলা এবং
ভারতীয় বাস্তু শাস্ত্র অনুযায়ী তৈরী পাচতলা যার মধ্যে জমির নীচে চারতলা ধাপে ধাপে
নেমে গেছে।
য়াজ এই পর্যন্ত লিখেছি। বাকীটা আগামী ব্লগে প্রকাশ্য।
.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন