সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১২

বাংলা লেখা বাঙ্গালীর পক্ষে সোজা কি ?



বাংলাতে কিছু লেখা অত সোজা বলে মনে হলেও কাজের বেলায় দেখা যাচ্ছে জিনিষটা বেশ কঠিন, বিশেষ করে যদি কোন ব্যাকরণ-বিশারদ আপনাকে সাহায্য করার জন্য উদ্গ্রীব হন। ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা কোন শব্দের আগে উপসর্গ লাগিয়ে নতুন শব্দ তৈরী করি, যদিও কিছু শব্দের আগে কিছু উপসর্গ আমরা দেখতে পাইনা। যেমন আমরা বাদ শব্দের আগে উপসর্গগুলিকে যদি দেখি তবে কি পাব?
পরা +বাদ = ??নি+ বাদ= ??নির+বাদ= ??অভি+বাদ =??উত+বাদ=??।  অতি+বাদ=?? পরি +বাদ= ??অপি +বাদ= ??আ+বাদ =??
অথচ আমরা  পরাভব, নিমন্ত্রন, নিরাপদ, অভিবাদন, উতপত্তি, অতিশয়, পরিণতি, আনত এর মত শব্দ পাই। তাহলে দেখতে পাচ্ছি সব উপসর্গ, যে কোন শব্দের সাথে যাবে না।  ভেবেছিলাম আমার দরকার মতন উপসর্গ লাগিয়ে নিতে পারব। তাহলে অপশক্তি র মত আমি কি অপদেশ লিখতে পারব? ( আদেশ, নির্দেশ, উপদেশ, প্রদেশ, সন্দেশ সব পেয়েছি, অবশ্যি রসগোল্লা পাইনি)   এখানেই আমার মতন লোকেদের বিপদ। কে কার সাথে গাঁটছড়া বাঁধবে তা ঠিক করার মতন ঘটক কোথায় পাব?  আমি ছাতা বগলে নিয়ে ধুতি শার্ট পরে চটি পায়ে চলি না। অতএব আমি ফেল। আবার এই উপসর্গরা যে চিরকাল আইবুড়ো থাকে বা থাকবে তাও নয়। কে কখন কার সাথে জোট বেঁধে বিরাট বাংলা শব্দ সমূদ্রে  যে কোথায় সাঁতার কাটছে তা কে জানে। আর তা ছাড়া এই শব্দের উপসর্গরা, কিন্তু রোগের উপসর্গের চেয়ে কম কিছু নয়। রোগের উপসর্গ তার আবির্ভাব এবং অধিষ্ঠান বুঝতে সাহায্য করে, কিন্তু শব্দের উপসর্গরা এসে যার ঘাড়ে চাপে তার চেহারাটাই বদলে দেয়।
আমার সাহায্যকারী (একে আমরা কি পন্ডিত মশাই বলতে পারি?) মহাশয় আমাকে রোজ অভিধান কিনতে বলেন। আমি বলি, ধান থেকে চাল হয় তাই সেটা কিনতে পারি, কিন্তু অভিধান থেকে কি হয় যে সেটা কিনব? তিনি রাগ করে বলেন তুই চিরকাল মুর্খই থাকবি। আমি ভাবি একটা মুখে খাবার দিতে পারিনা, আবার রেফ যুক্ত মুখকে কি করে খাওয়াব।
শব্দচয়ন এর গণ্ডগোল ছেড়ে এবার দেখি লেখার যন্ত্রপাতির ব্যপারকে। আগে ছিল খাগের কলম। মাদার গাছের ছাল জলে ফুটিয়ে খয়ের মিশিয়ে বা লোহার সাথে নিশাদল মিলিয়ে কালি তৈরী করে শুখনো তালপাতার উপর খাগের কলম দিয়ে লেখা হত। আজকাল জলা জমি বুজিয়ে উঁচু উঁচু বাড়ী উঠছে, খাগ আর পাওয়া যায়না। আমি কি দিয়ে লিখব ভাবতে শুরু করার পরে নাতি হলেন উপদেষ্টা। বলে "ওসব ম্যামথদের আমলের জিনিষ নিয়ে কাজ হবে না। তুমি কম্প্যুটারে লেখ"যখন জিজ্ঞেস করি আমাকে কি ঠেলাগাড়ীতে কম্প্যুটার নিয়ে এখানে ওখানে যেতে হবে। নাতি বলে "তা কেন? ট্যাবলেট দিয়ে লিখবে। আর ভারী তো তুমি এদিক ওদিক যাও"দেখলাম মন্দ কথা নয়। কম্প্যুটারে চাবি টিপে টিপে লেখা যাচ্ছে। বুঝলাম আমার নাতির ছেলে বা নাতিরা কিছু লেখা  মানে কম্প্যুটারে চাবি টেপা ছাড়া আর কিছু জানবে না। ে কার লিখতে উপর থেকে নীচে না নীচের থেকে উপরে হাত ফেরাতে হয় সেটা ওদের অজানাই থেকে যাবে।

আমি কিন্তু আজকে সেই সে দিন কি ভয়ঙ্কর তা ভাবছি। লোকেরা চিঠি লিখছে না। কেউ কিছু কলম পেন্সিল দিয়ে লিখছে না। গাছ কাটা বন্ধ হয়েছে। গাছে গাছে পৃথিবী ঘন ছায়াময় জঙ্গলে বদলে গেছে। আর আমরা হাতে মিনি ট্যাবলেট নিয়ে তাতে বই পড়ছি, কথা বলছি, কিন্তু না লিখে লিখে আঙ্গুলের চেহারা বদলে ফেলেছি। কিছু খুব দরকার হলে প্রচুর কষ্ট করে লিখছি।

কি হবে তখন?  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন