আমরা আজকাল কি কোন কিছু হঠাত করে করতে পারি?
শ্যামবাবু আমাকে রাস্তায় দেখা হওয়াতে জিজ্ঞেস করলেন 'হঠাত আপনি আজকে বাজারে?' আমার
বাজারে যাওয়াটা যদিও রোজকার ব্যপার নয় তবুও সেটা হঠাত বলে কেন গোনা হবে? আমরা কি কোন কিছু হঠাত করি বা করতে পারি?
ছেলের জন্মের আগে থাকতে ছেলের স্কুলে ভর্তি হবার
দরখাস্ত দিতে হয়েছে। কার্যত তার জন্মসময়টাও হিসেব করে ঠিক করা হয়েছে যাতে শুভলগ্নে
সে জন্ম নেয়। মার প্রসব ব্যথা না ওঠাতে তাকে অপারেশন করে ভূমিষ্ঠ
করান হয়। এর জন্য প্রচুর হিসেব অঙ্ক করে সময়টা ঠিক করা হয়েছিল। বাস্তু, ফেং শুই,
তন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। জন্মের পাঁচ বছর পরে তিনি ক্লাস ওয়ানে যাতে যেতে পারেন,
মানে নার্সারীর আগে তিনি দু বছর পূর্ণ করে নিতে পারে সেই দিকটাও খেয়াল রাখতে
হয়েছে। পরে জন্ম নিলে তাকে ভর্তি হবার
জন্য এক বছর অপেক্ষা করতে হত আর আগে জন্ম নিলে প্রবেশিকা পরীক্ষাতে সে এক বছর বুড়ো
হয়ে থাকত।
এখন অবশ্যি ক্লাস পরীক্ষাতে পাশ ফেল উঠে গেছে।, নয়ত
পরীক্ষাতে কোন কোন চ্যাপটার আসতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আগে থাকতে হিসাব করা
দরকার পড়ত। এই অংশটা পর পর দু বছর এসেছে এবার আসবে না তাই বাদ, এটা বেশ কিছুদিন
দেয়নি, তাই আসবে। এবং এটা রেসের মাঠে ঘোড়ার ফোরকাষ্ট করার চেয়ে বেশী এক্যুরেট (নিশ্চিত)
ছিল। কাজেই কোন প্রশ্ন হঠাত আসতে পারত না।
খেলাধুলাতে বিশারদদের আগামী প্রত্যেক বছর কবে কোথায়
থাকবেন সেটা ডোপিং কাউন্সিলে জানাতে হবে যাতে তারা প্রয়োজনে বাসর ঘর থেকে তুলে
নিয়ে ডোপ টেষ্ট করাতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা হাসপাতালে প্রসবকালীন সময়েও হতে
পারে।
বাপ ঠাকুর্দাদের চার মাসের নোটিশ দিয়ে মরতে হবে যাতে আত্মীয়স্বজন
আগাম ট্রেনের রিজার্ভ টিকেট কাটতে পারে। তাছাড়া ট্রেনের টিকিট কাটার আগে রেলের ইউনিয়নদের
প্ল্যান প্রোগ্রাম জানার দরকার কারন ঐ সময় কর্মচারীরদের ধর্মঘট বা অমুক ঠিকাদারকে
কেন ঠিকা দেওয়া হবে তা নিয়ে রেল অবরোধ কর্মসূচী থাকবে না এটাও নিশ্চিত হতে হবে।
এটা একটু কষ্ট সাধ্য ব্যপার কেননা তারা সাধারনত এগুলো করার আগে ঠিক না করে, পরে
ঠিক করে নেন যে কতদিন চলবে (পাহাড় বা জঙ্গলমহল বন্ধের কথা আলাদা। ঐ সব জায়গাতে কবে
থেকে, কতদিন ধরে এসব কাগজে ছেপে করা হয়)।
মাসে মাসে ছেলে মেয়ের স্কুল কলেজের মাইনের জন্য তারা
জন্ম নেওয়ার আগে থাকতে টাকা জমাতে হবে এবং হিসেব করতে হবে আগামী প্রত্যেক বছর
ইনফ্লেশনের দর কত থাকবে এবং বাচ্চারা যখন বড় হবে তখন তাদের পড়ার খরচ কত করে হবে।
অ্যাকসিডেন্ট কথাটার অর্থ হঠাত দুর্ঘটনা। এটার মানে
আজ পালটে গেছে কেননা আমি নিশ্চয়ই কোন কাজে
ওখানে গিয়েছি আর দুর্ঘটনার কার্যকারনও তার নিজের দরকারে ওখানে গিয়েছে, এবং তাহলে
সেটা হঠাত কোন ঘটনা নয়।
লোকে বলে বাঘে খাওয়া বা সাপে কাটা কপালে থাকলে হঠাত
হয়। কিন্তু এটাও কি হঠাত? লোকটা নিশ্চয় বাঘের আড্ডাতে তার সাথে গল্প করতে গিয়েছিল
নয়ত বাঘটা তাকে গায়ের গন্ধে ছাগল বলে ভেবেছিল। সাপটা নিশ্চয় তার চরিত্র বুঝে একটা রাজসাপ ভেবে আক্রমণ করেছিল, কিম্বা সে সাপটাকে
তার প্রতিপক্ষ ভেবেছিল এবং অসম যুদ্ধে নেমেছিল।
লিখতে লিখতে বিদ্যুৎ বাবু চলে গেলেন। গিন্নী বলল, যাঃ
কারেন্ট হঠাত চলে গেল। আমার কথা এটাও হঠাত নয়। যাতে মেশিনের ক্ষতি না হয় তাই
বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা জেনে শুনেই সুইচ বন্ধ করে দিয়েছে। এটা হঠাত নয়।
অবশ্যি একটা জিনিষে হঠাতই হয়েছে। এই লেখনটা আমার
মাথায় কেন জানি না খাবার সময় এসেছে আর খেয়ে উঠে সেটাকে কম্প্যুটার লিখে ফেলছি।
আমার এই লেখাটা আপনাদের কি রকম লাগছে জানাবেন কিন্তু
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন