মাছ
আর বাঙ্গালী -
এক থেকে আরেক কে আলাদা করা খুবই শক্ত। এ কথাটা যে সব বাঙ্গালী প্রবাসে বেশ কিছুদিন
কাটিয়ে ফেরেন, তাদের জন্যে বিশেষ করে প্রযোজ্য। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে যে আমরা মাছ খেতে ভুলে যাব কিনা।
আজ
থেকে আমরা যদি ৪০/৫০ বছর পিছিয়ে যাই তবে আমরা দেখব বাজারে বড় রুই, কাতলা, ইলিশের
পাশে ছোট মাছ পুটি,বেলে, গুলে, মৌরলা। আনন্দী, বৈরাগী, আমোদী এই সব মাছ ভালভাবে
জায়গা করে নিয়েছে আর বাঙ্গালির রসনাকে ভালভবেই তৃপ্ত করছে। বাড়ির কর্তাএই সব ছোট
মাছ কিনে নিয়ে গিন্নীর কাছে ফেলে দিচ্ছেন আর তাঁরাও ভালকরে শত কাজের মধ্যেও মৌরলার
টক, বৈরাগীর ঝাল, পুটির কালজিরে দিয়ে ঝোল রান্না করতে পিছপা হচ্ছেন না।
আজকের
দিনে রান্না ঘরে কুকিং প্ল্যাটফর্মের উপর বটি দিয়ে মাছ কাটা সম্ভব নয়, আর হাটুর
প্রব্লেমের জন্য নীচে মাটিতে বসে মাছ কাটাও বাতিলের পর্যায়ের মধ্যের পরে যাচ্ছে।
এর উপর আছে ছাইএর সমস্যা। আজকে রান্না হয় গ্যাসে নয়ত মাইক্রো ওভেনে। কাজেই মাছ
ধরার জন্য ছাই নাই। কোথা পাই ছাই? যে সব বাড়ীতে কর্তারা এই সব মাছের ভক্ত, সেখানে
হয়ত নারকেলের ছোবড়া পুরিয়ে ছাই তৈরী করে প্যাকেটে রাখা থাকে। তাছাড়া এ কাজের জন্য
বটি অতি প্রয়োজনীয় অস্ত্র। কাটিং বোর্ডের উপর ছুরি দিয়ে আর যাই হোক, সেফ মাছ কাটতে
পারলেও, সাধারণ বাঙ্গালী ঘরের মেয়েরা এটা তাদের সাধ্যের বাইরে বলে মনে করবেন।
কাজেই ছোট মাছ খেতে গেলে এখন বাজারের মেছুনী মাসিই ভরসা। তাঁরাও আজকাল সময়এর অভাব
দেখিয়ে এ কাজে উৎসাহী থাকছেন না। অতএব আপনি চান বা না চান বড় মাছই আপনার ভরসা।
সেটা আর কাঁহাতক খাওয়া যেতে পারে। এর পরে আরও একটা বিপদ আছে। অধিকাংশ বাড়ীতে সময়
বাচাতে মাইক্রোওভেন ব্যবহার হচ্ছে। এতে মাছ রান্না করলে তার পরে চেম্বার থেকে
মাছের গন্ধ দূর করতে বেশ বেগ পেতে হবে।
তাই
উপায়? কাচা মাছের গায়ে নুন ঘসে মিউকাসটা সরিয়ে নেওয়া বা চাকুর ধার দিয়ে ঘসে আশ
কিছুটা তুলে দেওয়া। আর তার পর টম্যাটো পিউরী বা সসে তাকে সেদ্ধ করে নিয়ে খাওয়া।
কাচা অবস্থাতেও খাওয়া যায়। প্রথম প্রথম একটু গন্ধ লাগলেও সেটা সহ্য হয়ে যেতে বেশি
সময় লাগে না। সময়, গ্যাস বা বিজলী বাচে। বাড়ীর কর্তা খেয়ে তৃপ্ত হবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন