উত্তর কান্ড
মুশা
ভাই আজকাল আর লেখেন না। তার স্ক্রিপ্ট নাকি ইদুর ছাড়া আর কিছুতে কাটে না। যুসশ
কান্ড লেখার সময় ঠিক করে ফেলেছিলেন ব্যস, এখানেই ইতি। সেই অনুযায়ী স্ক্রিপ্ট শেষ
কথে লিখে দিয়েছিলেন কিন্তু লেখএ লেখা ছেড়ে দেবে এটা অষ্টম আশ্চর্য বলে মানা যেতে
পারে তাই একটু রেষ্ট নিয়ে আবার পূর্ণ উদ্দমে লেখা শুরু করলেন।
রাম-রাবণের যুদ্ধে শেষ
হল।চারদিকে যত মরা সৈনিকেরা পড়ে আছে, কিছু বাড়ি ঘর ভাঙ্গা। বিজয়ী দল হিসাবে রামের
অনুগামীরা লাফাঝাপি করতে থাকলেও সেটা একটু সাবডিউড ছিল। রাম বিভীষণকে বলে
শোন ভ্রাতা এখন তোমার অনেক কাজ
যেতে হবে আমাকে এখন, ছেড়ে
যুদ্ধ সাজ
ভ্রাতা ,ভুতূ আমার অযোধ্যাতে
আছে
অনেক দিন কোন খবর নাই কাছে
মন্দোদরী এখনও আছে প্রকৃত
সুন্দরী
লওনা কেন তারে তুমি বিবাহ করি।
সরমা আর মন্দোদরী বনে যাবে ভাল
বলা শক্ত দুজনের কে বেশি কালো।
বানর সেনারা চাহে দেখিতে
অযোধ্যা নগরী
ইচ্ছা নাই যে তাহাদের বারণ করি
কিন্তু আমার কাছে আছে মাত্র
গুটি কয় রথ
এতজনে কি করিয়া যাইবে এত পথ
অর্ডার দাও এখানে যত কারিগরে
বানাইতে বসুক তারা রাতদিন ধরে,
রথ প্রতি চল্লিশ বানর হলে
কতগুলি চাই
হিসাব করিয়া যেন কাঁচামাল
পাই।।
বিভুবাবু
কহিলেন-
তথাস্তু
মেরে বস
ওরা এখানে
থাকলে তো আমারই লস
যা
কিছু শাক-সব্জী এখনও বেঁচে আছে
ফল-পাকুড়
যে কটা আছে গাছে
শেষ
হবে অতি সত্বর
কি
করিব আমি তাহার পর।
এই
বলে চলে গেল অর্ডার দিতে। এতদিনের যুদ্ধে কাচামালের বেশ অভাব ঘটেছে। তার উপর
রাজামশাই প্রয়াত হয়েছেন কাজেই ব্যবসায়ীদের পোয়া বারো। যে যা খুসী দর চাইছে। অনেক
চেষ্টা চরিত্র করে মালের জোগাড় করা গেল। চব্বিশ ঘন্টাতে ত্রিশ ঘন্টা কাজ করে এক
মাসের মধ্যে রথ তৈয়ার।
বিভুবাবু
এসে বললেন-
গাড়ী
তৈরি বস, কবে রওয়ানা হবেন
রাস্তায়
কোথায় কি খাবার খাবেন?
এতজন
সাথে যাবে
সবাই
কি খাবার পাবে?
দুটোদিন
সময় দিলে
লোকজন
সবাই মিলে
খাবারের
ব্যবস্থা করি
রথগুলোকে
দেব ভরি।
সেই
অনুযায়ী দু দিন বাদে রথগুলো রওয়ানা হল। লঙ্কাতে যে কজন রাক্ষস জিন্দা ছিল তাদের
হাড়ে বাতাস লাগল। বিভুকে তার গালিয়ে ভুত ভাগাতে শুরু করলেও এটুকু তারা বুঝতে পেরেছিল
যে রাবণ বেঁচে থাকলে পরে আরও কিছু রাক্ষসের মৃত্যু নিশ্চিত ছিল।
কোথায়
লঙ্কা আর কোথায় অযোধ্যা। মাঝে কিষ্কিন্ধ্যা রাষ্ট্র। এতদুর পর্যন্ত বানর সেনার
পুরো ইউনিট সাথে ছিল। কিস্কিন্ধ্যাতে কিছু হোমসিক বানরদের নামিয়ে দেওয়া হল। তাতে
সুবিধা হল বাকী বানরদের। এতক্ষণ কে কার ঘাড়ে চড়ে ছিল তা বোঝা যাচ্ছিল না। এবার একটু
হাত পা ছড়ান গেল। মনে হল কুম্ভমেলার আগে কোন ট্রেনের জেনারাল ডাব্বা থেকে এসি
স্লিপারে চড়া হল।
দলের
মধ্যে থেকে নতুন ড্রাইভার ঠিক করে তাদের গাড়ী চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হল।
কিস্কিন্ধ্যার বানরেরা আগে কোনদিন অযোধ্যাতে আসেনি। রাস্তাঘাট চেনেনা। সামনে রামের
রথ তার পেছনে অন্য গাড়ী গুলো পরপর চলতে শুরু করে দিল। অ্যাঁকব্যাক রাস্তা, কাজেই
রামের গাড়ী চেনা থাকা স্বত্বেও আস্তে চলতে লাগলো, নয়তো পেছনের গাড়ি ভুল দিকে ঘুরে
মরবে।
দিন
কয়েকের মধ্যে তারা গোদাবরী নদীর পাড়ে পৌঁছে গেল। বর্ডার পোষ্টে রামকে দেখামাত্র
গার্ডেরা খাতা চেক করে নিল যে চোদ্দ বছরের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে কিনা। চেক করে ঠিক
পাওয়া মাত্র রাজধানীতে খবর গেল রামু ভাই ফিরেছেন। ক দিনের মধ্যেই সদলবলে অযোধ্যা
প্রবেশ করবেন।
খবর
পাওয়া মাত্র লোকেদের সাজ সাজ রব। কি করা যায়। বাড়ী ঘর দোর কি রঙ করা যায়, কি ভাবে
আলো লাগানো যায়। ইলেক্ট্রিশিয়ানদের নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। রেট ক্রমশঃ ঊর্ধ্মূখী।
লোকে তাও দিতে রাজী কিন্তু করবার লোক নেই। তড়িঘড়ি করে অন্তত বড় রাস্তার বাড়ীগুলোকে
আলোদিয়ে সাজান গেল।
কোম্পানির
হেড অফিসে তিন মহিলা ডিরেক্টর কি ভাবে পার্টিকে আদর করবে তাই নিয়ে জল্পনা করতে
লাগল। নিজেদের মধ্যে আগের ঝগড়া ভুলে যাওয়া হয়েছে। উর্মিমালা বা উর্মিলা, খুঁজে
পেতে সেই চোদ্দ বছর আগের তোলা শাড়িটা বার করে পড়ে নিল যাতে লখুভাই অন্ততঃ শাড়ী
দেখে চিনতে পারে। কম নয় চোদ্দটা বছর একা থাকতে হয়েছে। মনের মধ্যে তোলপাড় হচ্ছে। আসুক
না, প্রথম আদরের পালা চুকলে পরে দেখে নেব। কি দরকার পড়েছিল হামলে পড়ার। দাদা দাদা,
দাদাই সব, আমি যেন বানের জলে ভেসে এসেছি? দিদির সাথে দাদা ছিলেন। সেজ আর ছুটকির
সাথে তাদের কর্তারা আছে আর আমার সাথে? আমি তো বুড়ি হতে চললাম।
রাস্তার
প্রত্যেক মোড়ে বিরাট বিরাট গেট লাগান হয়েছে। গোটা দুয়েক ব্যান্ডপার্টির বন্দোবস্ত
কোম্পানি থেকে করা হলেও কিছু পার্টি বিনি পয়সাতে বাজানোর জন্য ঝুলোঝুলি করছে। অগত্যা তাদের রাস্তায় গেটের উপরে বসে বাজানর
অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সমস্ত পুলিশ বাহিনীকে বলা হয়েছে রাস্তা কোন গাড়ী যেন না বের
হয়, পুরো পথে খালি রামুর রথ ছাড়া বাকী সবাই পায়ে হেটে যাতায়াত করবে। গেটগুলোর নীচে
কলার কাদির স্টল লাগানো হয়েছে। বানর অতিথি বলে কথা। ওদের জোরেই তো রামু ভাইয়া
যুদ্ধ জিতে এসেছে।
সন্ধ্যে
নাগাদ পার্টী হাজির। তিন ডিরেক্টর প্রথমে রামুকে এবং তার পার্টিকে স্বাগত জানাল।
ম্যানেজিং ডিরেক্টর দাশূ ইতিমধ্যে গত হয়েছেন বলে তার সেজ ছেলে ভুতু অ্যাক্টিং
ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করছে। তাই সে আগামী সকালে অফিসে এদের স্বাগত
জানাবে।
লীগাল
অ্যাডভাইসর বশিষ্ট, পার্টিকে তাদের নির্দিষ্ট ঘরে পাঠিয়ে দিল। বড় গেষ্ট হাউস খুলে
দেওয়া হল যাতে বানর বাহিনী রাত কাটাতে পারে।
পরের
দিন সকালে বশিষ্ট কোম্পানি ল বুক খুলে দেখাল যে চোদ্দ বছরের সাস্পেনশন খতম হয়ে
গেছে তাই এখন ডি জুরর রামু ম্যানেজিং ডিরেক্টর হয়ে গেছে। ভুতুকে চার্জ হ্যান্ডওভার
করতে বলা হল। খাতা পত্র সই সাবুদ করে চেয়ারে বসতে বসতে রামুর বিকেল হয়ে গেল। সীতা
বহুত খুসী। মাঝে চোদ্দ বছর জঙ্গলে কাটাতে হলেও তার আগে বারটা বছর তো এখনে
কাটিয়েছিল। লখু সেই যে উর্মীলা কে নিয়ে, সরি ভুল বললাম,ঠিক উল্টোটা, উর্মীলা লখুকে
নিয়ে সেই যে ঘরে ঢুকেছে এখনও বের হয়নি।
বানরের
দল অযোধ্যা ঘুরতে বেরিয়েছে। মাঝে মাঝে ক্ষিধে পেলে বা স্বভাব দোষে কলার কাঁদি
দেখলেই গোটা কয়েক মুখে পুরে দিচ্ছে। গত কাল ওদের জন্যই ষ্টল খোলা হয়েছিল। নতুনত্ব
একটাই আজকে ষ্টলে সার্ভ করার জন্য কেউ নেই। অতএব আপত্তি করারও কেউ নেই। কেউ কেউ
সরযূ নদীর ধারে প্রাকৃতিক শোভা দেখে মুগ্ধ। কিষ্কিন্ধ্যা পাথুরে জমির সাথে কাল
মাটির দেশ। জঙ্গল। আর অযোধ্যা চারদিকে ধানের ক্ষেত আর নানান ধরনের ফলফলাদির গাছ।
দিন
যায়। যে বানরের দলকে অযোধ্যার লোকে আদর করে কলা খেতে দিয়েছিল তাদের এখন লোকে আর
পছন্দ করছে না। আর বানরের দল সময় পেলে কোম্পানির অফিসবাড়ীর নানান ঘরে ঢুকে এটা
নাড়ে, ঐ চেয়ারে বসে। মাঝে তো ম্যানেজিং ডিরেক্টরের চেয়ারে বসা নিয়ে কি তুমুল ঝগড়া।
রামু গত্যন্তর না দেখা বানরদলকে বলে
প্রিয়
বন্ধুরা আমার
সময়
হয়েছে তোমাদের ফেরত যাবার
যাও
ফিরে দেশে তোমাদের
স্বাভাবিক
জীবন শুরু কর ফের
কিস্কিন্ধ্যার
বানরীরা তোমাদের লাগি
নিদ্রা
হয়তো দিয়াছে ত্যাগি।
সুগু
ভাইয়ের দরকার হলে
তোমরাইতো
পাশে দাড়াবে সকলে।
কথা
শুনে বানরদল বলে
ঠিক
কথা কলেছেন
ফেরত
যাব কিসে সেটা ভেবেছেন
রথগুলো
যদি ফেরত পাই
তাহাতেই
ফিরে যাব আমরা সবাই।।
শুভদিন
দেখে বানরদল কিস্কিন্ধ্যার দিকে রওয়ানা হল। কিন্তু কোন রকম ভিসা চেকিং না থাকায়
কিছু বানর লুকিয়ে অযোধ্যাতে লুকিয়ে থেকে গেল। এত সহজে কোথায় খাবার কিস্কিন্ধ্যাতে
পাওয়া যায়। আজকে আমরা যে বাঁদর হনুমানগুলো দেখতে পাই এরা তাদেরই বংশধর।
রামু
ভায়া আর সীতা বহাল তবিয়তে রাজত্ব শুরু করে দিল। রাবন বধ হয়েছে, কিকিন্ধ্যাতে বন্ধু
সুগু রাজত্ব করছে, কাজেই দক্ষিণ দিক থেকে কোন রকম শত্রুর আক্রমনের আশঙ্কা নেই।
ডিফেন্স অ্যালটমেন্ট কম করে দিয়ে সাবসিডি বাড়িয়ে দেওয়া হল। লোকে প্রচন্ড খুসী,
সবাই বলে রামরাজত্ব। কিছু আইটেমে পুরো সাবসিডি দেওয়াতে সেগুলো একেবারে ফ্রি হয়ে
গেল।
এখন
লোকে যদি কিছু না করে তাদের খাবার দাবার পেতে পারে তবে তাদের মন অন্য রকমের হয়ে
যায়। টাকা রোজগারের চিন্তা নেই। কাজেই অফুরন্ত আড্ডা। দিন রাত ফ্রি মিক্সিং
ফেসবুক। ফলে একদিন কোম্পানির লীগাল উইঙ্গে একজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে কমপ্লেন এল যে
সে তার স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করছে।
বশিষ্টের
অ্যাসিস্ট্যান্ট তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে জানা গেল তার স্ত্রী গত কয়েক দিন আগে
রাতে বাড়ীতে ফেরেনি। তাই লোকটা তাকে বলেছে রামুর কাছে এসব জিনিষ ধর্তব্যের মধ্যে
নয় কিন্তু সে এই জিনিষ সহ্য করবে না। বউ যেন তার বাপের বাড়ী গিয়ে থাকে। বকে ধমক তো
তাকে বোঝান হল যে এমন করে না। দেখ সীতার জন্য রামু যুদ্ধ করতে লেগে গেছিল। লোকটা
বলে রামু রাজা মশাই। তার কাছে এসব জল ভাত। রানী দুচারদিন কারুর বাড়ীতে থেকে এলে
কারুর কিছু বলার ক্ষমতা থাকে না।বড় বাড়ীতে খাবার নানান পদের থাকে। রাজা রাণি তাদের
পছন্দ মতন খেতে পারেন। আমাদের গরীব ঘরে রুটি বেগুনপোড়া রোজই খেতে হয়। মুখ বদলানর
কথা চিন্তা করতে নেই।
খবরটা
রামুর কাছে পৌছনর পরে রামু রেগে কাই। ঠারে ঠোরে সীতাকেই হিন্ট করা হচ্ছে। এতবড় সাহস
কি করে হয়। আবার মনে হয় আমাকে তো সব কর্মচারিদের মন রেখে চলতে হবে। তাদের জন্যই
আমার কোম্পানির এত নামডাক। অনেক ভেবে চিনতে ঠিক করল যে সীতাকে নিয়েই যখন এত গণ্ডগোল
তখন সীতাকে নির্বাসন দেওয়া হোক। না থাকলে বাঁশ, বাজবে না বাঁশী। যেই কথা ভাবে তৎক্ষণাৎ কাজ শুরু। ডেকে পাঠাও
সীতাকে। সীতা হাজির। রামু বলে-
দেখ
সীতা দেবী সামনেতে আসি
কি সব
কথা বলছে রাজ্য বাসী
রাবনের
কোলে চেপে গিয়াছিলে লঙ্কাপুরী
কেন
তুমি যাওনাই তখনই মরি
আমার
জিনিষ বোঝাতে আমি মেরেছি রাবণ
জীবনে
কেউ যেন করেনা কোন বস্তু হরণ
চোরাই
মাল ব্যবহার করা মোটেই নিরাপদ নয়
লোকেদের
মনেতে জাগে তাতে সংশয়
তাই
আমি করিয়াছি ঠিক দিতে নির্বাসন তোমায়
চলে
যাও অযোধ্যা ছাড়ি যে দিকে দু চোখ যায়।
সীতা
শুনে হতবাক। একটু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে-
“আজব কথা কহিতেছ তুমি এখন
কোথায়
ছিলে তুমি বটে রাবণ এসেছিল যখন
শিখি
নাই আগে কভু কারাটের প্যাঁচ
নয়তো
রাবনের গলা করিতাম ঘ্যাঁচ।
প্রজাপালন
কর তুমি? একদম বাজে কথা
নয়তো
নিশ্চয় বুঝিতে আমার মনের কথা
কাগে
কান নিয়ে গেছে শুনেই ডাক্তার ডাকাও
আর
অন্যদের বল আগে আয়নাতে তাকাও
যাচ্ছি
চলে এক বস্ত্রে তোমার কোম্পানি ছাড়ি
আমাদের
সম্পর্কে এতদিনে পরে গেল দাঁড়ি।
এই
বলে সীতা রওয়ানা দিলেন। কিছুদূর যাবার পরে দেখা গেল বাল্মিকী তার স্কুটার নিয়ে
বাড়ির দিকে যাচ্ছে। নগর পেরিয়ে বনের মধ্য তার ঘর।
সীতা
তাকে বলল
আমাকে
একটু লিফট দেবেন।
বাল্মিকী
সুধায়-
কোথায়
যাবেন?
বহুদিন
বাদে এসেছি এদিকে
চিনলাম
না আপনাকে স্মৃতিশক্তি ফিকে।
সীতা
পরিচয় গোপন করে বলে-
স্বামী
পরিত্যক্তা আমি হতভাগ্য নারী
আমার
পরিচয়ের কথা আপাততঃ দিন ছাড়ি
যাচ্ছি
এখন লোকালয় থেকে দূরে সরি
ঠিকানা
মেনেছি আপাততঃ যমপূরী
বাল্মিকী
স্কুটার থামিয়ে সীতাকে পিলিয়নে বসায় আর তার পরে নিজের আশ্রমের দিকে রওয়ানা দ্যায়।
আশ্রম মানে বাল্মিকীর পরিচালনাতে এক নারী নিকেতন চলে যেখানে গৃহহীনা আশ্রয়হীনা
মহিলাদের রাখা হয়। বাল্মিকী সীতাকে গাড়িতে তোলার আগে ভরসা দিল যে গোঘাটের হোমের
মতন এখানে কোন প্রবলেম নেই। তার পুর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্ব আশ্রমের। সীতা খুসী মনে
বাল্মিকীর সাথে চলল।
বাল্মিকির
আশ্রমে সীতার থাকা খাওয়ার জন্য কোন পয়সা লাগে না কিন্তু কিছু ঘর সংসারের কাজ কর্ম
করতে হয়। বনবাসের সময় থেকে ঘরের কাজ করতে হয়েছে, অশোকবনে থাকার সময় রাক্ষসীদের
তৈরী খাবার খেতে প্রবৃত্তি হয় নি তাই নিজেই রান্না করেছে। এখন তার কোন অসুবিধা হল
না।
দিন
যায়। কিছুদিনের মধ্যেই বাল্মিকীর মনে সন্দেহ জাগে সীতা নিশ্চয় সন্তানসম্ভবা। সকালে
ঘুম থেকে উঠতে দেরী, খাবার খেতে অনিচ্ছা। বাল্মিকীর স্ত্রী, যে দিন বাল্মিকী
পুজোতে বসেছিল সেই দিনই তাকে ছেড়ে চলে গেছে। “রহিল তোমার এ ঘর দুয়ার তুমি তোমার ঠাকুর লয়ে থাক”। তাই আশ্রমের হেড মহিলাকে দিয়ে
জিজ্ঞাসা করে জানা গেল সত্যি সীতার সন্তান হবে। আরও বোঝা গেল যমজ সন্তানের মা হতে
চলেছে সীতা।
বছর
পূর্ণ হবার আগেই সীতার দুই ছেলে হল। নাম দেওয়া হল লব আর কূশ। তাদের বাবা কে তা
কিন্তু জানান হল না, কেননা সীতা চায়নি। চার্জশিটের কোন জবাব না নিয়ে যে তাকে
কোম্পানি থেকে বরখাস্ত করতে পারে তাকে তার ছেলেদের বাপ বলে জানাতে কিছুটা সংকোচ
ছিল।
বাল্মিকী
দুটো ছেলেকে সব দিক থেকে ট্রেনিং দিতে শুরু করে দিল। দেখতে দেখতে তারা মারামারিতে
একেবারে এক্সপার্ট হয়ে উঠল।
রামু
ভায়া ওদিকে কাজ কর্ম শেষে জানলার ধারে বসে বিরহের গান গুনগুনায়। অবশ্যি চাপা স্বরে
কেননা কেউ শুনলেই কি থেকে কি হবে হয়তো বলে বসবে সীতাকে নিশ্চয়ই মাঝে মাঝে বাড়িতে
আনা হয়। তার চেয়ে চেয়ারে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছু করার নেই। শরীর ও মন
খারাপ লাগতে শুরু হয়েছে।
একদিন
ঠিক করে ফেলল যে আসে পাশে যে ছোটখাট কোম্পানি গুলো আছে তাদের অধিকার করে নেওয়া
যাক। লখুকে ঠিক করা হল এই কাজের জন্য। লখু একবার বেড়িয়ে ফেরার সময় বাল্মিকীর
আশ্রমের পাশে এসে মনে করল এটা কোন কোম্পানির স্টল। তার উপর কব্জা করা প্রবৃত্তি
জেগে উঠতেই হা রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বলে ডাক তোমাদের বসকে, এসে লিখে দিক যে
আমাদের কাছে কোম্পানী বেচে দিয়েছে।
লব
কুশের কাছে খবর গেল। খবর পাওয়ামাত্র তারা এসে হাজির। গোঁয়ার লখুর এই মারধরের অ্যাটিচুড
কিছুতেই কম হবার নয়। কিন্তু এখানে যেই হম্বি তম্বি দেখাতে শুরু করেছে লব আর কুশ
তাকে এক ফ্লাইং ট্যাকল করে মাটীতে ফেলে দিল আর একটা শেকল দিয়ে স্টলের ঝাঁপ দরজার
সাথে বেঁধে রেখে দিল। তার পরে হাত-পা ঝাড়তে ঝাড়তে সীতার কাছে গিয়ে বলে-
এসেছিল
এক ব্যাটা দেখাতে রোয়াব
কোম্পানি
কিনে নেবে দেখেছিল খোয়াব
দিয়েছি
একখান ফ্লাইং ট্যাকল
তার
পরে নিয়ে এক লম্বা শেকল
বেঁধে
রেখেছি তাকে দরজার সাথে
কালশিটে
ফেলেছি ব্যাটার গায়ে আর হাতে
নানাজী
আশ্রমে নেই তাই তুমিই পার
এসব
লোকের কি রকম বিচার কর
গলা
ধাক্কা দিয়ে এদের ফেরত পাঠাব
না
রসুই ঘরে বসিয়ে বাসন মাজাব
এখন খেতে
দাও, ক্ষিধে পেয়েছে খেয়ে নিয়ে
ঠিক
করা যাবে পরে ওখানেতে গিয়ে।
সীতা
বলে-
থাম্
তোরা থাম
সারা
গায়ে দেখছি লেগে আছে ঘাম
বাধলি
যে তাকে, যদি তোদের বেঁধে দিত
রামের
লোক হলে পরে, নিশ্চয় বিপদ হত।
নে
আগে খেয়ে নে, পরে শুনব সব কথা
হাতে
পায়ে ওষুধ লাগা যেখানে যেখানে লেগেছে ব্যাথা।
লব বলে
ওঠে-
ঠিক
আছে, নিচ্ছি খেয়ে
তার
পরে তুমিই নাহয় দেখবে গিয়ে।
সীতা
বলে ঠিক আছে। খাওয়া শেষ করার পরে আগে লব আর কুশ হাটছে আর পেছনে সীতা চলেছে। দূর
থেকে দেখে সীতা, স্টলের দরজাতে বাধা পরে আছে, আর কেউ নয় তার দেবর লখু ভায়া। দূর
থেকেই সীতা ছেলেদের বলে দিল-
ওরে
করেছিস কি তোরা
ছেড়ে
দে এক্ষুনি ওকে নয়ত কোন দিন যাবি মারা
ও আর
কেউ নয় ও যে রামের ভাই
ওর
কাছে যাবনা আমি বরং ফেরত যাই।
লব আর
কুশ দুজনে লখুর কাছে গিয়ে তাকে বাঁধন থেকে মুক্তি দিল। বলে দিল-
নেহাত
মা বলেছে তাই তুমি আজ ছাড়া পেলে
মজাটা
টের পাবে, আর কোনদিন এদিকে এলে।
লখু
কাচুমাচু মূখে মাথাটা নীচু করে ফেরত গেল। আমি এত বড় বীর, মেঘনাদকে মেরে একটু
অহঙ্কার বেড়েছিল। এই বাচ্চা দুটোর কাছে হেরে গিয়ে তার সব ফট্টাই বেরিয়ে গেল। ফিরে
গিয়ে রামু দাদাকে সব বলতে হবে। রামু শুনে বলে-
কাজ
নেই আর তোর ওদিকেতে গিয়ে
এখন
থাক তুই, তোর ঊর্মীলাকে নিয়ে
তুই
হচ্ছিস একটা আস্ত গোঁয়ার
শূর্পনখার
নাকটা কেটে বাধালি ওয়ার।
মনের
দুঃখ মনেই চেপে রেখে লখু ঘরে গিয়ে বিছানা উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। ঊর্মিলা আসার পরে
বলে-
দাওনাগো
একটু মলম টলম লাগিয়ে
বাচ্চা
দুটো কি শয়তান, দিয়েছে পিটিয়ে
তার
উপরে দাদা দিল আচ্ছা করে বকে
নিশ্চয়
ওর মাথার ঠিক নেই বউদির শোকে
অন্য
সময় হলে সৈন্য সামন্ত যত
ছেলে
দুটোকে ধরে আনতে নিশ্চয় রওয়ানা হত।
উর্মিলার
হাল্কা হাতে মলমের মালিশ যতটা ব্যাথা না কমাল তার চেয়ে অনেক বেশী মনে আরাম দিল।
আস্তে আস্তে লখু ঘুমিয়ে পরল আর স্বপ্ন দেখতে লাগল যে সে ছেলে দুটোকে পিটে কচুম্বার
বানিয়ে দিচ্ছে।
ওদিকে
রামুর চেম্বারে এক গেষ্ট এসে বলে গান শোনাবে। রামুর মেজাজ ভাল ছিল, বলে দিল শোনান।
গেষ্ট ভদ্রলোক গান শোনাতে বসে গেলেন। কিন্তু এ গান তো রামু ভায়ার বায়োডাটা দিয়ে
ভর্তি। একেবারে দুর্বাসার ট্রেনিঙের সময় থেকে শুরু। কোথা থেকে এই গান পেলেন,
জিজ্ঞেস করতে ভদ্রলোক জানালেন এটা তিনি বাল্মিকীর আশ্রমে শুনেছেন। দুটি বাচ্চা
ছেলে, ঠিক শিশু নয়, কিন্তু কিশোর অবস্থার, এই গান গাইছিল। বলেন তো তাদের ডেকে পুরো
গানটা শুনে নিন।
খোঁজ
খবর নিয়ে জানা গেল লখু ভাইয়াকে যে দুজন ছেলে পিটিয়ে দিয়েছিল তারাই এই গান গায়।
তাদের মার কাছ থেকে ট্রেনিং নিয়েছে। ছেলে দুটির বাবার কোন খবর নেই। তারা জানে না
কে তাদের বাবা।
রামু
ভায়ার মনে সন্দেহ জেগে উঠল, যে নিশ্চয় এ সীতার ছেলে। কিন্তু এদের বাবা কে? হিসেব
অনুযায়ী রাবনের ছেলে হতে পারেনা। সীতা কি তবে কোম্পানী ছেড়ে যাবার সময়
সন্তানসম্ভবা ছিল? কি করা যায়? লখু তো সব গ্যান্ডার গুজ করে বসে আছে। এখন ছেলে
দুটো কি এখানে আসবে? তাও চেষ্টা করতে দোষ নেই মনে করে তাদের ডাক পাঠান হল। বেশ
মিনতি করেই, কেননা এসে যদি দেখে লখু এখানে হাজির আছে, তবে গান শোনার বদলে হয়ত গান
চালাতে হতে পারে।
যথা
নিয়মে ছেলে দুটো এল আর গান শোনাতে শুরু করল। সেখানে সীতাকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে
সেখান এসে রামূ তো ভ্যা করে কেঁদে দিল। তাড়াতাড়ি এক রথ পাঠান হল বাল্মিকির ঘর ওরফে
অনাথ আশ্রমে। ছেলে দুটোর মাকে নিয়ে আসতে।
কিছুক্ষনের
মধ্যে সীতা এসে হাজির। রামু ভায়া দেখে তো আনন্দে আটখানা। এইবার পেয়েছি আমার সীতাকে।
সীতাও ভাবল যে এবার হয়ত পার্মানেন্ট ভাবে কোম্পানির হেড অফিসে বসা যাবে। বাল্মিকী
আর লীগাল অ্যাডভাইসার বশিষ্ঠ যে ষ্টেটমেন্ট দিল তাতে দেখা গেল, ছেলে দুটো রামেরই।
কিন্তু
আবার লাফরা এল। এক কর্মচারি বলে প্রমাণ কি যে দুটো ছেলে আপনারই। অন্য কারুর হতে
পারে। রামু বলে ঠিক ঠিক। টেষ্ট দিতে হবে। ডি এন এ টেষ্টিং হবে। সীতা ক্ষেপে গিয়ে
বলে-
তুমি
থাক তোমার টেস্ট মেষ্ট নিয়ে
আমার
কোন দরকার নেই ওসব দিয়ে
চেননা
নিজের ছেলেদের কেমন বাপ হে তুমি
ঘেন্না
হচ্ছে আমার এসব কথা শুনি
আগেই
জানতাম আমি সইতে হবে আবার অপমান
তোমার
কোম্পানিতে নেই স্ত্রীর কোন সম্মান
চললাম
আমি সিধে পাতালপুরী
যেখান
থেকে কেউ আসে না ফিরি
এই
ওয়ান, টুঁ, থিরি।
এই
বলে সীতা ভ্যানিশ। রামু ভায়া কি আর করে। এইবার সে বুঝেছে, বার বার লোকের কথাতে সীতাকে সে অসম্মান করেছে,।
এখন বাকী জীবন তাকে মৃতদার হয়ে কাটাতে হবে। লব আর কুশকে ডেকে দুজনকে দুটো রাজ্য
দিয়ে দেওয়া হল। লবকে দেওয়া হল লাহোর আর কুশ কে কুশীনগর।
আমার
কথাটি ফুরল। ফুড়ুৎ।।
উত্তরমুছুনবাংলায় ভালো ভালো হাঁসির গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় ভূতের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় প্রেমের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন