বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১২

ভাবনা - পর্ব ৪

                              শীলা ও দিলীপের ভাবনা


দিলীপ আর শীলা বিয়ে করেছে আজ বছর পঞ্চাশের মত আগে। ওদের মনের মিল দেখে লোকে ঠাট্টা করে ওদের নাম দিলীপকুমার-সায়রাবাণু দিয়েছিল। চিরটা কাল দিলীপ বাইরে বাইরে চাকরী করে কাটিয়েছে। না দিলীপের বাড়ির কেউ, না শীলার বাড়ীর কেউ কলকাতার বাইরে গিয়ে থেকেছেন। থাকলেও, সেটা খুব বেশি হলে এক দেড় সপ্তাহের জন্য আর একা একাই। সপরিবার চাটিবাটী নিয়ে কলকাতার বাইরে গিয়ে সংসার পাতা দুজনের কাছেই একটা অ্যাডভেঞ্চার এর মত ছিল। ক্রমে জাগতিক নিয়মে তাদের সংসার বেড়েছে, দায়িত্ব বেড়েছে। তাদের ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, বিয়ে শাদী করেছে, যে যার নিজের কাজের সুবিধা অনুযায়ী স্ত্রীপুত্রকন্যা নিয়ে অন্য জায়গাতে ডেরা বানিয়ে নিয়েছে। আর দেখতে দেখতে দিলীপ আর শীলা বুঝতেই পারেনি যে পঞ্চাশটা বছর তারা একসাথে কাটিয়ে দিয়েছে।
       আজ থেকে প্রায় বছর পনের আগে শিলা তার জীবনের প্রথম ধাক্কা খেল যখন তার ছেলে তাকে বলে যে সে একজনকে পছন্দ করেছে আর তাকেই বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছে। বিশেষ করে আরও যখন জানতে পারল যে মেয়েটি অবাঙ্গালী এবং নিরামিষাশী। (শীলা মাছ খেতে এবং রান্না করতে খুব ভালবাসে)। সে নিজে এদিকে একটি বাঙ্গালি সুন্দরী মেয়েকে পছন্দ করে তাদের বাবামার সাথে কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছে। যথা নিয়মে বাবা আর মার আপত্তি সত্ত্বেও ছেলে বিয়ে করলো, আর শীলা যা হবার তা হয়ে গেছে ভেবে তাকে মেনে নেবার চেষ্টা করতে লাগলো
       দ্বিতীয় ধাক্কা এল আবার অন্য ছেলের কাছ থেকে। সে কাউকে না জানিয়ে আর এক অবাঙ্গালী বিয়ে করলো যখন। মনে তার ক্ষোভ জমতে শুরু করলো আমার বাঙ্গালি ঘরের পুজো আচ্চা এই সব কি ভাবে হবে। দুই বউএর কেউইতো বানাগালী নয়। বাংলার বাইরে থেকে থেকে তার নিজের ছেলেমেয়েরা বাঙলা বলতে ও পড়তে পারলেও লিখতে অসুবিধায় পড়ে। ইতিমধ্যে সে তার মেয়ের বিয়েও দিয়ে দিয়েছে।  পছন্দ মতন জামাই হয়েছে। কিন্তু শীলার মনে শান্তি নেই। তার মন চায় সবসময় ছেলে আর নাতিদের নিয়ে খেলতে। শরীর সাথ না দিলেও ওদের নামে পূজো তুলে রেখে সময় মতন গিয়ে কালীবাড়ীতে পুজো দিয়ে আসতে।

       ছেলে, ছেলেরবউ আর নাতিদের কাছে না পেয়ে মন যখন প্রায় ভেঙ্গে যেতে শুরু করেছে তখন মেয়ের কাছে গিয়ে একটু আনন্দ করআর জন্য মেয়ে জামাই শীলাকে কাছে ডেকে নিল। ওখানে যাবার পরে ছোট্ট নাতিকে নিয়ে শীলা ঠিকই করে উঠতে পারত না যে কি করবে।

       দিন যায়। শীলার বয়স বাড়ে, শরীর ক্রমশঃ অশক্ত হতে থাকে। সে চায় কেউ যদি তাকে সাহায্য করতে তার কাছে আসত। কিন্তু এটাও জানে যে তাদের পক্ষে শীলার কাছে এসে থাকা অসম্ভব। দিলীপ দেখে আর ভেবে পায়না যে কি করে শীলাকে বোঝায় যে তাকে এইভাবেই থাকতে হবে। দিলীপ তো পারেনি তার বাবা মার কাছে এসে থাকতে।

       শীলার মেয়ে জামাই চায় যে শীলা তাদের কাছে এসে থাকুক। আলাদা সংসার তুলে দিক। শীলা ভাবে জামাইএর সংসারে শ্বাশুড়ি কতদিন থাকবে। মেয়ে ভাবে তার মা তার কাছে থাকলে ছোট খাট কাজে মা হাত লাগাতে পারবে। মা ভাবে তার নিজের তো একটা সংসার আছে তার জন্য আলাদা বাড়ী ভাড়া ইত্যাদি শুধু শুধু গুনব কেন। তার চেয়ে ওখানে থাকি। দিলীপ ভাবে মেয়ের কাছে শিলা থাকবে ভাল শীলা ভাবে ওখানে সে যখন খুসী তার কাজ করতে পারে। জামাই ভাবে শ্বশুর শ্বাশুড়ি যা করবেন তাতে তার কিছু বলার নেই। নাতিরা ভাবে দাদু দিদু যেখানেই থাক তাদের কিছু যায় আসেনা কেননা ইচ্ছে হলেইত তাদের কাছে যাওয়া যায় আর দাদুর কাছে বায়না করা যায়।

এই নানান  ভাবনা একসাথে করে কি দাঁড়াবে তা বুঝতে পারছি না একটা উত্তর বা সল্যুশনে পৌছনো যাবে কি?

       পুনশ্চঃ এই শীলা এবং দিলীপ কাল্পনিক, আসল চরিত্র নয় এই দিলীপ আমার নিজের নাম হলেও আমি নই। চরিত্রের নাম ঠিক করার আগেই কেন জানিনা এই নামগুলোই মনে এল আর তাদের বসিয়ে দিলাম। ঘটনাক্রম ও কাল্পনিক।

1 টি মন্তব্য:

  1. Kichu bolar nei. Amar mote purono ke pechone fele egiya jaoi amader kaaj o dharmo kajei purono jinis sritite thakai bhalo ebong natun ke mene niye tar sathe cholai bhalo.

    উত্তরমুছুন