শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৪

আমাতেরাসুর গল্প

 সুর্যের দেবী ছিলেন আমাতেরাসু। তাঁর সৌন্দর্যের কথা শুধু জাপান নয় সারা বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল।  আর ওদিকে ঝড়ের দেবতা ছিলেন তাঁর ভাই সুসানো-ও। কোনকিছু নড়াতে হলে তাঁর কোন জুড়ি ছিল না। তাড়াহুড়ো করে সবকিছু ভন্ডুল করে দিতেও তাঁর কোন জুড়ি ছিল না।

এই সুসানো-ও একদিন তাঁর বোনের সাথে দেখা করতে গেলেন স্বর্গের রাজ্যে। আসলে তাঁর যাবার কথা ছিল তাঁর মার সাথে দেখা করবার, মৃত্যুপূরীতে গিয়ে, কিন্তু রাস্তায় অনেক ভয়ের কথা শুনে তাঁর মনে একটু ভয় হয়ে গেছিল। তাই সে ভেবেছিল যে তাঁর এই জ্ঞানী বোনের সাথে কিছু  সময় কাটিয়ে নিলে তাঁর মনের সাহস বেড়ে যাবে।
কিন্তু সুসানো-ওর ব্যপার তো। তাড়াহুড়ো  করে যেতে গিয়ে সে আকাশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত বিদ্যুতের রেখা টেনে মেঘের গর্জনে সবাইকে কাপিয়ে, (এমনকি পাহাড়পর্বত পর্যন্ত কেপে ঊঠেছিল), ভয় পাইয়ে দিলেন। এই ভাবে সুসানো-ও গিয়ে পৌছালেন আমা বা আমাতেরাসুর কাছে। আমাতেরাসু  পর্যন্ত ভয় পেয়ে গেছিলেন।

নিজেকে শক্ত করে আমাতেরাসু হাতে একটা ধনুক আর কাঁধে তীর ভর্তি তূনীর নিয়ে সুসানো-ওর সাথে দেখা করার জন্য বেড়িয়ে এলেন। চোখে মুখে বেশ রাগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল আমাতেরাসুর। বলে উঠলেন, কি ব্যপার। সবাইকে চমকে দিয়ে ভয় পাইয়ে এটা কি হচ্ছে তোমার

যদিও সুসানো-ওর এই ধরনের অভ্যর্থনা ভাল লাগেনি, তবুও তিনি হাসিমুখে বলে উঠলেন, সুন্দরী বোন আমাতেরাসু। তোমাদের কাউকে ভয় দেখাতে আমি চাই নি। তোমার সাথে একটু দেখা করে যাবার ইচ্ছেই মনে আছে, আসলে আমি তো  মার সাথে দেখা করার জন্য পাতালপূরীতে যাচ্ছি তাই তাঁর আগে তোমার সাথে একটু দেখা করতে এলাম

কথাটা আমাতেরাসুর মনে ধরলেও সে সুসানো-ওকে একটু যাচাই করে দেখতে চাইল। কিন্তু এর মধ্যেই সুসানো-ও বলে উঠলেন, জাপানের এই পূণ্যভুমিতে ভাল ভাবে শাসন করবার জন্য আমাদের গোটাকয়েক দেব দেবী তৈরী করা হলে ভাল হয় না কি? আর তাঁর জন্য তাহলে আমাকে এখানে কিছুদিন থেকে যেতে হয়।  আসলে সুসানো-ওর মনে পাতালপূরীতে যাবার ভয়টা কিছুতেই কাটছিল না।

আমাতেরাসু রাজী হয়ে গেলেন। আর তখন সুসানো-ওর তলোয়ারটাকে নিয়ে তিন টুকরোতে ভেঙ্গে ফেললেন। আর তাঁর পরে সেই টুকরোগুলোকে মুখে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে একেবারে গুঁড়ো করে ফুঁ দিয়ে এক কুয়াশার সৃষ্টি করে দিলেন। সেই কুয়াশার থেকে তৈরী হল আরও তিন সুন্দরী দেবীর। সুন্দরী মানে একমাত্র আমাতেরাসু ছাড়া বাকী অন্য সবার চেয়ে সুন্দরী।

এইভাবে সুসানো-ও তাঁর বোনের কাছ থেকে পাঁচটা মণি চেয়ে নিয়ে তাঁকে মুখে পুরে চিবিয়ে গুঁড়ো করে ফুঁ দিলেন। আর ঠিক আমাতেরাসুর তৈরি তিন দেবীর মত সুসানো-ওর ফুঁ থেকে তৈরী হল পাঁচ দেবতা। এরা প্রচন্ড শক্তিশালী হলেন তবে সুসানো-ওর মতন নয়।

নিজের কৃতিত্বে সুসানো-ও আত্মহারা হয়ে লাফাতে শুরু করে দিলেন আর বলতে শুরু করলেন যে সবাই দেখুক যে কি ভাবে সুসানো-ও দেবতাদের সৃষ্টি করেছে। আমাতেরাসু একটু রেগেই বললেন, ওগুলো তো আমার দেওয়া মণির থেকে তৈরী হয়েছে। সুসানো-ও রেগে কাই।   অন্য কিছু করা গেলেও হত। কিন্তু রাগের মাথা সুসানো-ও ঝড় বৃষ্টি এনে আমাতেরাসুর সমস্ত ক্ষেতখামার ভাসিয়ে দিল। বানের জলে মন্দির গুলো ভেঙ্গে গেল। আর জঞ্জালে চারদিক ভরে গেল।

 যদিও আমাতেরাসু তাঁর ভাইএর কাছ থেকে এইরকম কিছু হতে পারে বলে ভেবেছিল কিন্তু তাঁর চিন্তায় ছিল না যে সুসানো-ও এত কিছু নষ্ট করে ফেলবে। এটা অবশ্যি তাঁর জানা ছিল যে সুসানো-ও একটা গোঁয়ার গোবিন্দ ছেলে তবুও। মনে মনে তিনি ভাবলেন, যাক এবার সুসানো-ওর রাগ হয়ত একটুঁ কমেছে আর এই সব ঠিক করার কাজে ও একটু হাত লাগাবে।


কিন্তু কোথায় কি, বরঞ্চ সুসানো-ও আরও কি ভাবে আমাতেরাসুর সাথে দুর্ব্যবহার করা যায় তাঁর দিকেই নজর দিতে শুরু করলেন। ওদিকে আমাতেরাসুও  ভাবতে লাগলেন কি সে এত অন্যায় করেছে সে তাঁকে এই রকম একটা গোঁয়ার ভাইএর দুর্ব্যবহার সহ্য করতে হচ্ছে।

একদিন আমাতেরাসু তাঁর নিজের পূজার ঘরে বসে পুজার জন্য কাপড় গোছগাছ করছিলেন ঠিক সেই সময়েই সুসানো-ওর মনে হল যে তাঁর বোনের এই সব কিছু অগ্রাহ্য করে যাওয়া আর তাঁর পছন্দ নয়। এইবার একটা কিছু করার দরকার যাতে হয় আমাতেরাসু তাঁর সাথে লডাইএ নামবে নয়তো হেরে গিয়ে তাঁর অধীনতা স্বীকার করবে। সে একটা ঘোড়াকে আচ্ছা করে চাবকিয়ে সেই আমাতেরাসুর পূজাঘরের ছাদ দিয়ে নীচে ফেলে দিলেন। ঘোড়াটা তো পড়ে মরে গেল, কিন্তু তাঁর জীনে একটা কাগজে কিছু লেখা দেখতে পাওয়া গেল। লেখাটা অবশ্যি সুসানো-ওর আর আমাতেরাসুকে লেখা। তাতে লেখা আছে, পৃথিবীতে সব কিছুই, এই ঘোড়ার গাঁয়ের রঙের মত সাদা কালো আলাদা ছোপে ছোপে নয় তাঁর মধ্যে কিছুটা মেলানো রঙও থাকে

ব্যপারটা আর আমাতেরাসুর সহ্য হল না কারণ ভয়ের চোটে ঐ ঘোড়াটার পড়ে গিয়ে মরে যাওয়ার সময় আমাতেরাসুর এক খুব নিকট বন্ধুও ভয় পেয়ে মারা যান। আমাতেরাসু ঠিক করলেন যে আর নয়, এবার সব কিছু ছেড়ে পালাতে হবে। মানে এক দূর জায়গাতে যেখানে কেউ তাঁকে আর বিরক্ত করতে না পারে।

আমাতেরাসু দৌড় লাগালেন দূর পাহাড়ের দিকে। আর গিয়ে আশ্রয় নিলেন এক গভীর গুহার মধ্যে, সুধু আশ্রয় নেওয়া নয়, একটা পাথর টেনে গুহার মুখটাও বন্ধ করে নিলেন।   তাতে আমাতেরাসুকে গুহার ভেতরের অন্ধকারের মধ্যে থাকতে হল বটে,  কিন্তু গুহার বাইরের অবস্থাটা খুবই খারাপ। বাইরের লোকেদের কাছে আর সেই আমাতেরাসুর জ্যোতির আলো নেই, তাঁরা ঘন মিশকালো অন্ধকারে পরে রইল।

এদিকে দেব আর দেবীদের প্রায় আটশ জনের এক জোট একটা নদীর শুখা বুকে বসে  ঠিক করতে শুরু করলেন  কি ভাবে আমাতেরাসুকে গুহার বাইরে আনা যায়। জ্ঞানী বুড়া দেবতা ধরা হল। তিনি বললেন যেখানে যত রাজ্যের মোরগ আছে, তাদের একসাথে করা হোক। আর আমাতেরাসুর সেই গুহার সামনে একটা গাছে বেশ কিছু আয়না টাঙ্গানো হোক।

এই সময় আর এক দেবী, আমা নো উজুমে এসে এই পরিকল্পনাতে আরও একটু কিছু যোগ করে দিলেন। তিনি তাঁর সাধারণ বেশ ছেড়ে খালি কিছু লতাপাতা দিয়ে তৈরী পোষাক পরে একটা বড় বাল্টীকে উলটো করে তাঁর উপরে নাচতে শুরু করে দিলেন। সে এক উদ্দাম নাচ। ওখানে যত দেবদেবীরা ছিল তারা হেঁসে গড়িয়ে পড়ে আর হাততালি আর সিটির বহর পড়তে থাকে। আর ঐ সব দেবদেবীরা যে সব মশাল জ্বেলে নাচ দেখছিলেন সেই মশালের আলোতে দিন হয়ে গেছে ভেবে মোরগগুলো একসাথে চেঁচাতে শুরু করে দিল।

সে এক বিরাট হই চই ব্যপার। আমাতেরাসু গুহার ভেতর থেকে বাইরের গন্ডগোলের আওয়াজ পাচ্ছিলেন কিন্তু কি ব্যপার বুঝতে পারছিলেন না। তাঁর অবর্তমানে অন্য দেবদেবীরা হাসিঠাট্টা করে সময় কাটাচ্ছেন, এটা তিনি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। অতএব দেখতে হয় কি ব্যপার হচ্ছে বাইরে।

বাইরেও সবাই এই জিনিষটা হবে বলে ভেবে রেখে শক্তির দেবতাকে গুহার মুখের কাছেই রেখে দিয়েছিলন, যাতে আমতেরাসু বের হলেই তাঁকে টেনে একেবারে বাইরে নিয়ে আসা যায়। কিন্তু তাঁর আর দরকার পড়ল না। আমাতেরাসু গুহার বাইরে তাকিয়ে প্রথমে তাঁর নিজের ছায়াই আয়নাগুলোতে দেখতে পেলেন আর তাঁর পরেই দেখতে পেলেন যে বাইরে তাঁকে পাবার জন্য সমস্ত দেবদেবীরা কি ভাবে অপেক্ষা করছেন।  তাঁর ভয় আর রাগ মিলিয়ে গেল।

আমাতেরাসু তাঁর নিজের প্রাসাসে ফিরে গেলেন। পৃথিবী তাঁর জ্যোতির থেকে বঞ্চিত হল না, ওদিকে সুসানো-ও কেও তিনি তাঁর কাজের জন্য ক্ষমা করলেন।



রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৪

সৃষ্টির আদিম অবস্থা (মিশরীয় মতে) বা “রা”

রা


বহুদিন আগে, যখন চারদিক অন্ধকারে ভরে ছিল তখন ছিল খালি জল। আর সেই জলের মাঝ থেকে উঠে এলেন এক জ্যোতির্ময় ডিম। নাম তার  রা।  তিনি একা, কাজেই তাঁর ক্ষমতা অসীম। আর সেই ক্ষমতা তাঁর নামে মধ্যে ছিল। সেই কারণেই নামটা গোপন করে রাখা ছিল।

মজা হল তিনি এক একটা করে নাম নেন আর সেটার সৃষ্টি হয়। খালি তিনি আর নিজের নাম কোন সময় নেন না কেননা সেটা অন্য কেউ জানলেই তার সমস্ত শক্তি চলে যাবে। এই ভাবে তিনি তার নাম নিলেন ভোর বেলায় খেপেরা বা ঊষা, দুপুরের নাম হল  রা বা সূর্য, আর বিকেলে নাম নিলেন আটুম বা সন্ধ্যা। নাম দেওয়ার সাথেই এদের সৃষ্টি হল।

এর পরে একে একে তৈরী করলেন শু বা বাতাস, তেফনুট বা মেঘ, গেব বা পৃথিবীকে।  তার পরে সৃষ্টি করলেন নূট বা আকাশের দেবীকে। যার হাত রইল এক দিগন্তে, আর অন্য দিগন্তে রইল পা। এই ভাবে নুট পৃথিবীর উপরে নিজেকে জড়িয়ে নিল।তার পরে তৈরী করলেন হাপী, যিনি নীলে নদ হয়ে মিশরের বুকে বইতে সুরু করলেন।

পরে একে একে সব জিনিষ পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি করে দিলেন। তারা বাড়তে লাগল।এবার সময় হল মানব জাতি তৈরী করার। মানব জাতির স্ত্রী আর পুরুষদের তৈরী করে দেবার পরে তাদের মধ্যে এক পুরুষের সৃষ্টি করা হল যিনি হলে ফারাও। এই ফারাওএরা মিশরের বুকে সহস্র বছর ধরে শাসন করছিলেন।  আর রাএর কল্যানে মিশরে কোন কিছুর অভাব রইল না। লোকে পরে কিছু ভাল হলেই বলত যেন রাএর সময়ের মত

কিন্তু সবারই বয়স হয় আর তাঁকে বুড়ো হতে হয়। রাও বুড়ো হল আর তার মিশরের এক দিক থেকে আরেক দিকে যেতে সময় লাগতে লাগল। লোকেরা ঠাট্টা করতে শুরু করল রা বুড়ো হয়েছে,  তার আর পায়ে জোর নেই,  কতক্ষন সময় নিচ্ছে আজকাল। আর দেখেছ তা চুলগুলো কিরকম সাদা ফিনফিনে হয়ে গেছে। রা বোঝে সবই কিন্তু সহ্য করে যায়। কিন্তু সহ্যেরওতো একটা সীমা হয়। 

শেষে একেবারে রেগে গিয়ে রা তার তৈরী শু, গেব, নুট, তেফনুট এদের ডেকে বললেন,  দেখ, আমি তোমাদের সৃষ্টিকর্তা আর তোমাদের অধীনের মানুষের সৃষ্টি করেছি আমিই। কিন্তু তারা আর আমাকে মানছে না।  আমার আইনকানুন সব কিছু তারা অগ্রাহ্য করছে। তার পরে পরমপিতা নু কে বললেন, দেখুন এরা কি ভাবে আমার কোন আইন মানে না, সব কিছুই নিজেদের ইচ্ছা মতন করে বেড়াচ্ছে। এদের জন্য কি উপায় আছে। মনে হয়ে মাঝে মাঝে এদের ধ্বংস করে ফেলি, কিন্তু আপনার আদেশ না পেলে কিছু করব না। বলুন কি করা যায়

নু বললেন, তোঁমার রক্তচক্ষু এদের দিকে ফেল যাতে এরা ভয়ে নিজেদের ঠিক করে নেয়। আর পুত্র আমার, তুমি তোমার কন্যা শেখমেত কে পাঠাও এদের শায়েস্তা করতে।  পরমপিতা নুএর কাছ থেকে আদেশ পাবার পরে সৃষ্টি করলেন তাঁর কন্যা, এক সিংহিনী,  হিংস্র, রক্তপিপাসু, যার নাম হল শেখমেত।  খুঁজে বেড়াতে লাগলেন তাদের, যারা রাএর আইন মানেনি, আর তাদের হত্যা করে তাদের অক্ত পান করে নিজের পিপাসা মেটাতে লাগলেন। কোথাও কারুর নিস্কৃতি নেই। কোন আপীল বা ক্ষমা নেই, একেবার চরম বিচার। নীল নদের জলের রঙ লাল হয়ে গেল মানুষের রক্তে। মিশরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে শেখমেতের হুঙ্কার শোনা যায় আর যারা শোনে তারা প্রানের ভয়ে লুকোতে চায় কোথাও না কোথাও।

এদিকে রা তার পৃথিবীর দিকে তাকান আর দু:খে তার মন ভরে ওঠে কেননা সারা পৃথিবীর বা মিশরের রঙ তখন লাল। ওদিকে শেখমেত যতক্ষন না নিজের থেকে থামছেন ততক্ষন রাএর আদেশ আর মানছেন না। বাধ্য হয়েই রা আদেশ করলেন ঝোড়ো হাওয়ার গতিতে যে দৌড়তে পারে তাঁকে, যাও নীল নদের উপরদিকএর পাহাড়ী জায়গা থেকে আমাকে লার রঙের মাটী এনে দাও

হুকুম তামিল হতে সময় লাগলো না। রা এর শহর হেলিওপোলিসে  সন্ধ্যে নাগাদ সেই লাল মাটী এসে হাজির। আর ততক্ষণ ধরে শহরের মেয়েরা লেগে গেছিল মদ তৈরী করতে। ভাল আঙ্গুর থেকে তৈরী মদ। আর তৈরী করা হল কম নয়, সাত সাত হাজার পিপে ভর্তি। এবার রা করলেন কি ঐ যে লাল মাটী আনা হয়েছিল সেগুলোকে  মদের  সাথে মিলিয়ে দিলেন। দেখতে দেখতে সাত হাজার পিপের মদ দেখে মনে হতে লাগল সাত হাজার পিপে ভর্তি রক্ত।
এবার রা বইল্লেন, যাও এই মদ নিয়ে গিয়ে সেখমেত যে রাস্তায় যাতায়াত করে সেই মাঠে ঢেলে দিয়ে এস। লোকেরা সেই কাজ করল। চাঁদের আলোতে সেই মদ দেখে মনে হতে লাগল মাটীর উপরে এক বিঘত উচু হয়ে মানুষের রক্ত জমে আছে।

সক্কাল বেলায় সেখমেত বেরলেন মানুষ শিকারে। রাস্তায় ঐ লাল রঙের তরল দেখে ভাবলেন মানুষের রক্ত। আগে খেয়ে নিই, শুরু করলেন, প্রথমে অল্প করে তার পরে পেট ভর্তি করে খেয়ে নিলেন। কিছুক্ষনের মধ্যে তার নেশা হয়ে  গেল আর মানুষ মারবার কথা মনেই রইল না।  দিনের শেষে শেখমেত একটাও মানুষ না মারতে পেরে রাএর কাছে ফিরে এলেন। রা তাঁকে শান্ত দেখে আশীর্বাদ করে বললেন আর তার মানুষ মারার দরকার নেই। আজ থেকে তার নাম হল হাথর। তার স্বভাব বদল হয়ে হল শান্ত, মিষ্ট। আজ হেলিওপলিসের মদের রঙ নব বর্ষের দিনের জন্য ঐ লাল মাটী মিলিয়ে লাল করে রাখা হয়।

মানুষের শাস্তি তো শেষ হল কিন্তু রাএর বৃদ্ধ হওয়া তো বন্ধ হল না। আর তার মাথায় বিচারশক্তি ঠিক করে আসে না, একজন নতুন লোকের দরকার। কিন্তু কি ভাবে? রাএর আসল নাম না জানতে পারলে তো কারুর সেই শক্তি আসবে না।

ইতিমধ্যে গেব আর নুটের ছেলে মেয়ে হয়েছে । অসিরিস , আইসিস, সেত আর নেফদীজ। এদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছিল আইসিস। তার মাথায় সব কিছুর জ্ঞান ছিল, স্রেফ রাএর গোপন নামটা ছাড়া। ঠিক করলেন কোন না কোন ভাবে সেটা  জানতেই হবে।

ওদিকে বুড়ো রাএর হাটতে চলতে কষ্ট হয়, হাত পা কাপে, একদিন এই ভাবে চলবার সময় তার মুখ থেকে মাটীতে থুতু ফেলে দিতে সেটা কাদায় পরিনত হল। আইসিস সেটাকে দেখে তার থেকে একটা সাপ বানিয়ে নিল। নাম হল তার ঊরিয়াস।  

আইসিস এইবার সেই সাপটাকে যে রাস্তায় রা যাতায়াত করে, তার উপরে ফেলে  দিল। যার ফলে সেটা সুযোগ পেয়েই রাকে কামড়ে দিল। বিষ রাএর সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ল। যন্ত্রনাতে রা কাতর। বলে এটা কি কামড়াল যাতে এত কষ্ট পাচ্ছি, আমি তো এটাকে বানাই নি। এর বিষ আমার কাছে অজানা, কি ভাবে এই জ্বালা কমবে তা জানি না। এর কি যে প্রতিকার তা তোমরা দেবতারা যদি জান তবে সেটা কর। আমি আর এটা সহ্য করতে পারছি না।

সমস্ত দেবতারা এসে হাজির। সাথে আইসিসও। এসে জিজ্ঞেস করে, হে রা, আপনাকে কি সাপে কামড়েছে?  রা বলে তিনি তো সাপ তৈরী করেননি, তবে এল কোথা থেকে। এর বিষও তিনি চেনেন না। কিন্তু এর জ্বালা আর সহ্য হচ্ছে না। আইসিস বলেন, আপনি আপনার নামের ক্ষমতা আমার যাদুকে দিন, তবেই সে যাদু  আপনার এই বিষ তাড়িয়ে দেবে। রা একে একে তার অন্য সব নাম বলতে থাকেন। বলেন আমি পর্বতের সৃষ্টিকর্তা, তার পরে বলেন নদনদীর সৃষ্টিকর্তা, আমি আলোক এবং অন্ধকারের সৃষ্টিকর্তা, কিন্তু আসল নাম আর বলেন না।  ওদিকে আইসিস ও বুঝতে পারে যে রা তার আসল নাম বলছেন না। তিনি বলেন যে আপনি কিন্তু যতক্ষণ আপনার আসল নাম না বলবেন ততক্ষন এই বিষ আপনার সারা দেহে ছড়িয়ে যাবে। 
  
অবশেষে রা সেই বিষের জ্বালা সহ্য না করতে পেরে বলে উঠলেন, আগে তাহলে আইসিস প্রতিজ্ঞা করুক যে আর কাউকে এই নাম তিনি বলতে পারবএন না। খালি তার ছেলে হোরাসই এই নাম জানতে পারে। আইসিস সেইরকম প্রতিজ্ঞা করলে রা বলে উঠলেন, আমার গোপন নাম  আমার মন থেকে আইসিসের মনে যাক। আর রাএর গোপন নাম আইসিস জানতে পেরে গেলেন। আইসিসের যাদুতে রাএর বিষ নেমে গেল।

কিন্তু রাএর শাসনের এই সাথে অবসান হল। আর তাঁকে মিশরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে হল না। বদলে তার জায়গা হল আকাশে। সারা দিন তিনি আকাশে থেকে সব দিকে নজর রাখেন পরে রাতের অন্ধকারে তিনি মৃত্যুপূরীর অন্ধকার পার হয়ে আবার সকালে তার নিজের জায়গা আকাশে আসেন। আর মৃত্যুপূরী পার হবার সময় সেই সমস্ত আত্মারা , যারা পৃথিবীতে জ্ঞান বিতরণ করতেন তাদের সাত্থে করে মৃত্যুপূরীর রাস্তার বিপদ পার করিয়ে দিতেন।
এর পরে অসিরিস এবং আইসিস আর তাঁর পরে হোরাস এর শাসন পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হল।

                   

  

বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৪

অসিরিস আর আইসিসের গল্প

                                   অসিরিস আর আইসিস

বহুদিন আগের কথা।  রা মানে সুর্যদেব যখন বেশ বুড়ো হয়ে পড়েছিলেন তখন শুনলেন যে একবার যদি আকাশের দেবী নুটের ছেলেপিলে হয় তবে কিন্তু তার রাজত্ব খতম। সেই ছেলেরাই রাজপাট সব নিয়ে নেবে। এদিকে নুট আর পৃথিবীর দেবতা গেবের বিয়ে প্রায় ঠিক । কি করা যাবে। অনেক ভেবে ঠিক করলেন যে নূটকে যদি শাপ দিই যে তোর  বাচ্চাকাচ্চা হবে না তবেই ঠিক হয়। অতএব যা ভাবা তাই করে দিলেন। মনের দুঃখে নুট গেলেন থোটের কাছে। কে এই থোট? থোট হলেন রাএর ছেলে, জ্ঞানের দেবতা। তাঁকে একটা উপায় তো বার করতেই হয়।  বুদ্ধি করে থোট গেলেন চাঁদের দেবতা সিলেনের কাছে।

এ কথা সে কথার পরে বললেন, এস আমার সাথে একটু বাজী ধরে খেলা যাক। কি খেলা হবে, না পাশা খেলা। একটার পরে একটা দান খেলা হচ্ছে, আর সিলেনে  হেরে যাচ্ছে।  শেষকালে সিলেনে তার আলো, মানে চাঁদের আলোর কিছু অংশ বাজী ধরে বসল। আর যথা নিয়মে হেরেও গেল। সেই থেকে চাদের আলো সূর্যের আলোর থেকে কমজোর। কিন্তু আর তো বাজী ধরার মত কিছু নেই। অতএব খেলা খতম। থোট তখন তার জেতা আলো গুলো নিয়ে বানালেন পাঁচটা বাড়তি দিন।

আগে বছর হত তিনশ ষাট দিনে । এখন থেকে আরও পাচদিন বেড়ে হল তিনশ পয়ষট্টি দিন। এইবার তো আর রাএর অভিশাপ কাজে আসবে না। সে অভিশাপ ছিল বছরের তিনশ ষাট দিনের উপরে এখন তো তার অভিশাপের বাইরে আরও পাচটা দিন এসে গেছে।

এই পাচদিনের প্রথন দিনে জন্ম নিল অসিরিস, নুটের বড় ছেলে। তার পরের দিনটাকে সরিয়ে রাখা হল হোরাসের জন্মের জন্য, মানে নুটের নাতির জন্মানর জন্যে। তৃতীয় দিনে জন্ম নিলে নুটের দ্বিতীয় ছেলে , কালোকুলটি রঙের সেত।   চতুর্থ দিনে জন্ম নিল আইসিস আর পঞ্চম দিনে নেফদীজ।  মজা হল এই যে সূর্যদেবের অভিশাপকে পাশ কাটিয়ে নুটের সন্তানেরা হল।  আর সেই সময়ের প্রথা অনুযায়ী অসিরিস আর আইসিসের মধ্যে, আর সেত আর নেফদীজের মধ্যে পরে বিয়ে হয়েছিল।

অসিরিস যখন জন্মালেন তখম থেবেসের মন্দির থেকে ভবিষ্যৎবাণী হয়েছিল যে এই ছেলে সমস্ত বিশ্বে শান্তি আর আনন্দের উৎস হবে। আর ওদিকে সেত হলেন অন্ধকারের মৃত্যুপূরীর দেবতা।  আইসিস রাএর আসল নাম জেনে ফেলার পরে সমগ্র বিশ্বের রাজপাট চলে গেল তার এবং অসিরিসের হাতে।

অসিরিসের কাছ থেকে মিশরের লোকেরা শিখল কি করে নীলে নদের বন্যার জল সরে গেলে চাষবাস করতে হয়, কিভাবে কাঁচা মাংস খাবার বদলে রান্না করে খাবার তৈরী করা হয়। তার পরে অসিরিস শেখালেন তাদের আইন, সমাজ, আচরণ। মিশরের লোকে হয়ে উঠল সভ্য। এবার অসিরিসের কাজ হল সারা বিশ্বে তার শিক্ষা কে ছড়িয়ে দেবার। এই সব করার জন্য লোকে অসিরিসের ভক্ত হয়ে পড়েছিল আর সেটাই সেত এর হিংসার কারণ হচ্ছিল। 

ওদিকে অসিরিস যখন বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এল তখন সেতই প্রথম তাকে সাদরে বরণ করে নিল। এটা কিন্তু ছিল ছল। সেতএর বাহাত্তর জন সহকারী মিলে ঠিক করে নিয়েছিল যে অসিরিসকে মারতেই হবে। সেত রাগে দুঃখে পাগল, ভাবে কি করে অসিরিসের মৃত্যু হবে। ভেবে চিন্তা করে এক উপায় বার করল।

ঠিক অসিরিসের দেহের মাপ অনুযায়ী একটা সুন্দর কাঠের কারুকার্য করা বাক্স বানান হল। আর তার পরে অসিরিসকে এক ভোজসভার নিমন্ত্রণে ডাকা হল। খাওয়ার পরে সেই বাক্স এনে হাজির করা হলে সেত বলে আমি জানিনা যে এটা কোন সৌভাগ্যবানের মাপের হবে, কিন্তু যারই হক না কেন এটা তারই হবে।  সেতএর লোকেরা একের পর একে হুড়োহুড়ি করে চেষ্টা করতে লাগল। কারুরই ঠিক মাপে হয় না। শেষে কৌতুহলের বশে অসিরিস বলে উঠল, আমি দেখি। এই বলে সে বাক্সটার মধ্যে ঢুকতেই দেখা গেল একেবারে ঠিক মাপের। অসিরিস বলে তাহলে এটা আমার।  সেত বলে নিশ্চয়ই সারা জীবনের জন্য। এই বলে বাক্সটাকে পেরেক মেরে বন্ধ করে দিয়ে সীসের চাদরে মুড়ে নীল নদের জলে ফেলে দিল। নীল নদের দেবী হাপী, সেই বাক্সটাকে নিয়ে গেলেন সমূদ্র পারে ফিনিসিয়ার উপকূলে।

 অসিরিসের মৃত্যু হল, কিন্তু না তা নয়। তার আত্মা বেচে রইল। ওদিকে অসিরিসের দেহ নিয়ে বাক্সটা বিবলসের উপকূলের একটা গাছের গোড়ায় গিয়ে পড়ল, গাছটাও পরম মমতার সাথে সেই বাক্সটাকে তার নিজের ভেতরে লুকিয়ে নিল যাতে সেত তার কোন খবর না পায়।

ইতিমধ্যে ফিনিসিয়ার বিবলসের রাজা সস্ত্রীক একবার ঐ উপকূলে এসে গাছটাকে দেখে খুব মুগ্ধ হন আর বলেন এটাকে কেটে আমার প্রাসাদে নিয়ে এস যাতে এটা দিয়ে আমার প্রাসাদের ছাতের জন্য একটা সুন্দর স্তম্ভ বানান যায়। তাই করা হল। ইতিমধ্যে আইসিস তার শিশু পুত্র হোরাস কে নিয়ে কেঁদে কেঁদে সারা বিশ্ব অসিরিসের জন্য পাখী হয়ে খুঁজে বেড়াতে লাগলেন। তার সেই কান্না সাহারার সিমূম ঝড়ের হাওয়ার আওয়াজের মত হয়ে ঘুরতে লাগল। শেষে সেতের ভয়ে তিনি গিয়ে বুটো দেবীর বাসস্থান এক দ্বীপে আশ্রয় নিলেন, আর তার হাতে হোরাসের দায়ীত্ব সঁপে দিলেন। আরও নিরাপত্তার জন্য সেই দ্বীপটাকে তার মূল থেকে আলাদা করে দিলেন যাতে সেটা সমূদ্রে ভাসতে থাকে আর কেউ তার ঠিকানা জানতে না পারে।
   
 তার পরে শুরু হল অসিরিদের দেহটাকে আরও ভাল করে খোঁজা। অনেক এদিক ওদিক খোঁজার পরে দুটি শিশু আইসিসকে খোজ দিলে যে ঐ রকম একটা বাক্সকে তারা নদীরে জলে ভেসে যেতে দেখেছে। আইসিস গেলেন নদী ধরে সমূদ্রের পারে, সেখানে অনেক খোঁজ করার পরে আবার দুটি শিশু তাকে খবর দিলেন বাক্সটা কোন দিকে গেছে। আইসিস খুসী হয়ে বলে দিলেন যে শিশুরা এর পর থেকে সত্যি কথাই বলবে।

আইসিস অসিরিসের দেহ খুজতে খুজতে গিয়ে বিবলসে হাজির হলেন। এক ঝর্ণার ধারে  বসে ভাবছেন কোথায় খোঁজ পাওয়া যায়, এর মধ্যেই বিবলসের রানীর চাকরাণিরা এক দিন ঐ ঝর্নাতে স্নান করতে এলে আইসিস তাদের চুলে ভাল করে বিনুনী করে সাজিয়ে দিলেন। তারা রাজপ্রাসাদে পৌছালে রাণি তাদের বিনুনী দেখে এবং গায়ে সুগন্ধ পেয়ে সব জিজ্ঞেস করলে তারা সব কথা বলে। রাণিমা গিয়ে আইসিসকে প্রাসাদে নিয়ে আসেন। আর তার ছোট ছেলে ডিক্টিসকে দেখভাল করার কাজ দিয়ে দেন।
ছোট্ট ডিক্টিসকে আইসিসের খুব পছন্দ হয়ে গেছিল। তাই তাকে তিনি অমর করে দিতে চাইছিলেন। সেই হিসাবে রোজ রাত্রে ডিক্টিসের শরীরে আগুন লাগিয়ে তার নশ্বর দেহটাকে একটু একটু করে পুড়িয়ে দিতে লাগছিলেন। কিন্তু রাণীমা একদিন দেখে ফেলায় ঘরে ঢুকে পড়েন আর আইসিসের দেবীচেহারা দেখে ফেলেন। ডিক্টিজকে অমর করার এই কাজ আর সমাপ্ত হয় না। ইতিমধ্যে আইসিস রাণীমার কাছে সেই স্তম্ভটা চান। রাণিমা খুসীমনে সেটা তাঁকে দিয়ে দেন।

স্তম্ভ থেকে অসিরিসের দেহ ভর্তি বাক্সটা বার করে নিয়ে  স্তম্ভটা আইসিস রাণিমাকে ফেরত দিয়ে দিলেন যাতে তার প্রাসাদের ছাতের কোন ক্ষতি না হয়।। আর বাক্সটা নিয়ে আইসিস মিশরের দিকে রওয়ানা দিলেন। নিশরে পৌঁছে দেখেন তার অবর্তমানে তখন সেত রাজত্ব করছে। তাই সেই বাক্সটাকে এক ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রেখে  হোরাসকে আনতে বুটোর কাছে চলে গেলেন। 
ওদিকে সেত একদিন শূয়োর মারার জন্য তার লোকজন দলবল নিয়ে ঐখানেই এসে পড়ল। কুকুরেরা ঝোপের ভেতর থেকে সেই বাক্সটাকে আবিস্কার করলে, সেত রাগে লাল হয়ে উঠল। ক্ষেপে গিয়ে কুড়ুল দিয়ে অসিরিসের শরীরটাকে বিয়াল্লিশ টুকরো করে নীল নদে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল যাতে নদের কুমিরেরা তার দেহটাকে খেয়ে নেয়। কিন্তু কুমীরেরা কি বুঝে সেটা আর খায়নি। খালি সেহের একটা টুকরো এক মাছে খেয়ে নিয়েছিল। সেই থেকে মিশরের লোকেরা সেই মাছটা আর খায় না।

আইসিস আবায় কষ্ট করে অসিরিসের দেহের টুকরোগুলো জোগাড় করে তাকে কাপড় জড়িয়ে আসল চেহারার মত করে লুকিয়ে রেখে দিল।যদিও দেহের সমস্ত টুকরো গুলো পাওয়া যায় নি তবুও আইসিস তার যাদু ক্ষমাতার বলে সেটাও তৈরী করে নিলেন।এদিকে সেত গর্ব করে বলে বেড়াতে লাগল যে ভগবানের মৃত্যু হয় না, কিন্তু আমি অসিরিস ভগবানের দেহটাকে টুকরো টুকরো করে তাঁকে মেরেছি। কিন্তু এবার তার স্ত্রী নেফদীজ আর সেতের সংগ দিল না, সে চলে গেল অসিরিসের দলে। এবং আইসিসের খোঁজার ব্যপারে আইসিসকে সাহায্য করতে লেগেছিল। আর অসিরিসের দেহটা আবার জোড়া দিয়ে তৈরী করার পরে তার আত্মা চলে গেল মৃতদের রাজত্বে। অপেক্ষা রইল সেই দিনের যে দিন হোরাস আর সেতের লড়াইএ হোরাসের জয় হবে।

হোরাস বড় হয় আর তাঁকে অসিরিসের আত্মা এসে নানান ভাবে জ্ঞান দ্যায়। একবার এই রকম জিজ্ঞেস করা হল যে পৃথিবীতে সবচেয়ে মহান কাজ কি। হোরাসের উত্তর ছিল যে বাপ-মার প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধ লড়ে তার প্রতিকার করা। আবার জিজ্ঞাসা করা হল যে তাতে সবচেয়ে কোন জন্তুর দরকার পড়তে পারে, হোরাসের উত্তর ছিল ঘোড়ার, কিন্তু কেন সিংহ নয় প্রশ্ন করা হলে হোরাস বলে যে সিংহ তো সাহায্যের দরকার হলে কাজে আসবে, কিন্তু ঘোড়া শত্রুকে ধাওয়া করে তাকে ধরতে কাজে লাগবে।  অসিরিস বুঝলেন সময় হয়েছে সেতের বিরুদ্ধে হোরাসের লড়াইতে যাবার।

লড়াই শুরু হল। সেত এক বিশাল বুনো শূয়োরের চেহারা ধরে এসে হোরাসকে আক্রমন করল, কেননা অসিরিস আর রাএর দেওয়া জ্ঞানের মধ্য এই ব্যপারে হোরাসকে কিছু বলা ছিল না। হোরাস তার চোখে আঘাত পেয়ে যন্ত্রণাতে কাতর হলে সূর্যদেব রা তার আলো কমিয়ে অন্ধকার করে দেন আর হরাসের যন্ত্রনা উপশম হয়। কিন্তু ততক্ষনে সেত যুদ্ধ ছেড়ে পালিয়েছে।

এই রকম ভাবে দফায় দফায় যুদ্ধ হতে থাকে কিন্তু কেউই শেষ পর্যন্ত জেতে না। অসিরিস তার দিনের অপেক্ষায় থাকে যেদিন সেত একেবারেই পরাজিত হবে আর সে আবার গিয়ে মিশরের লোকেদের সুখ শান্তির বৃদ্ধি করবে।

আমরাও সেই দিনের অপেক্ষায় থাকি যে দিন ন্যায় আন্যায়ের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে অন্যায়কে পৃথিবীর বুক থেকে একেবার সরিয়ে দিতে পারবে।