এই লেখাটি আবার নতুন করে লিখে পোষ্ট করা হচ্ছে। কাজেই পুরাতন লেখা বাতিল করে মুছে দেওয়া হল। পাঠকদের কাছে মার্জনা চাইছি,
বহুকাল আগের কথা। মানুষ গাছ থেকে নীচে নেমে ঘর দোর তৈরী করেছে। সর্দার গোছের,
মানে দাদা টাইপের লোকে, তার মধ্যেই কিছুটা জায়গাতে তার অধিকার ঠিক করে, বলতে শুরু করেছে এটা আমার
রাজ্য।
রাজ্য কি এই রকম একজনই বানাল। উহু, এপাড়া ওপাড়া, সব জায়গাতেই ব্যাঙের ছাতার
মতন রাজ্য গজিয়ে উঠতে শুরু হল। এখনকার মত এক রাজ্যের গায়েই কি অন্য রাজ্য ছিল? তা
নয়, কেননা এই রকম রাজাদের চেয়ে পৃথিবীতে জায়গা ছিল অনেক, তাই তাঁদের মাঝে নো
ম্যান্স ল্যান্ড কিছু পোড়া থাকত। কিন্তু তার প্রত্যেকেই মনে করত যে ওটা তার এলাকা।
রাজ্য স্থির হয়ে গেছে, এর তার কাছাকাছি অন্য আরও দু একটা রাজ্যের রাজাদের
দেখতে পাওয়া গেল একটু মাটীর মানুষ। মানে তাঁদের কোন সৈন্যদল নেই, বেচারারা হয় তার
প্রয়োজন বোধ করে নি, না হলে রাজকোষে পয়সার অভাব হয়েছিল। কোনটা তা ঠিক জানা নেই।
প্রথম সে রাজার কথা দিয়ে আমার লেখাটা শুরু করেছি সেই রাজার নাম ছিল
বীরবিক্রমাদিত্য। রাজ্যের নাম রেখেছিলেন বিক্রমেরঘর। এই বিক্রমেরঘরের পাশেই, ছিল
এর এক রাজা, তার নাম ছিল রাজপ্রতাপাদিত্য। রাজ্যের নাম প্রতাপপুর। এখন বিক্রমেরঘর আর
প্রতাপপুরের মধ্যে বেশ কিছুটা জায়গা ফাঁকা পড়েছিল। অনেকদিন ধরে ঐ জায়গাটার উপরে বীরবিক্রমাদিত্যের
নজর ছিল, কবে ওটাকে নিজের বিক্রমেরঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে নেওয়া যায়।
একদিন সকালে ঠিক করল যে, না আর চিন্তা করে কাজ নেই, একটা পত্র লিখে ঐ
রাজপ্রতাপাদিত্যের কাছ থেকে জায়গাটা নিয়ে নেওয়া যাক। ওর তো আর সৈন্যদল নেই, কাজেই ভয়
পেয়ে দিয়েই দেবে। বসে গেল চিঠি লিখতে।
একটু ইনিয়ে বিনিয়ে চিঠির শুরু না করে সোজা ধাই ধুম মার্কা লেখা। “ওরে
রাজপ্রতাপাদিত্য, তোর রাজ্যের গায়ে যে জমিটা আছে সেটা আমার চাই”। কিন্তু কোন
জমিটা? মহা মুস্কিল। প্রতাপপুরের চার দিকেই তো জমি খালি পড়ে আছে। ডাক
মন্ত্রীমশাইকে। মন্ত্রী মশাই সব কথা শুনে একটু চুলগুলো ধরে টানবার চেষ্টা করতে
লাগলেন। সরি, চুল কোথায়, ভদ্রলোকের মাথা ভর্তি টাক। শেষে রাজ্যে যত পন্ডিত ছিল,
তাঁদের ডাকা হল।
তার তো এসে কি করবে। দিকগুলোর তো নামই নেই। লোকে এর বাড়ী, তার গাছ, নিদেন
পক্ষে বড় মাঠ, ছোট জঙ্গল, এই সব ভাবেই দিক বোঝায়। এদিকে রাজামশাই মানে
বীরবিক্রমাদিত্যের মেজাজ খারাপ হতে শুরু করেছে।
এমন সময় হেডপন্ডিত বৃহদলাঙ্গুল মশাই বললেন কিছুটা তো পেয়েছি। রাজা মশাইয়ের
প্রশ্ন কি পেলেন। বৃহদলাঙ্গুল বললেন, আপনি খান যে জায়গাটা দিয়ে তার নাম কি । রাজার
মশাই কিছু বলার আগেই আবার বললেন, ওটা তো মুখ। তাহলে মুখ যে দিকে সেটা সমুখ। এখন
রোজ সকালে আপনার ঘুম ভাঙ্গে কি ভাবে? রাজামশাই বলে উঠলেন, আরে সুযযি ওঠে, আর তার
দিকে তাকিয়ে চোখে আলো পড়লেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। বৃহদলাঙ্গুল বললেন, রাজা মশাই সবার
আগে তো ঐ কাজটাই করেন। তাহলে ঐ যে দিক থেকে সূর্য ওঠে, সেটাকেই আগের দিক বা
পুর্বের দিক নাম দিলে ঠিক হয় না কি? সবাই বলে উঠল ঠিক ঠিক। এমন কি রাজামশাইয়ের পোষা টিকটিকিটাও
বলে উঠল টিক টিক। সে দিন থেকে সকালে সূর্য ওঠার দিকের নাম হয়ে গেল পুর্ব।
কিন্তু বাকী দিকগুলো? এবার একটু ইতঃস্তত করে পন্ডিত মশাই বলেন, তার পরে
রাজা মশাই আপনি কি করেন। রাজা এবার ক্ষেপে গেছেন। বলে উঠলেন মশাই আমি যা করি সবাই
তাই করে, মানে একটু পেট খোলসা করি। বৃহদলাঙ্গুল পন্ডিত জিজ্ঞেস করলেন কোন দিক
দিয়ে। রাজা তার তরোয়াল বার করে আর কি। পন্ডিত বলে রাজা মশাই থামুন, দেখুন সমূখ
দিয়ে খান, এর পেছন দিয়ে ত্যাগ করেন, তাহলে আপনার ঐ দিকটা মানে পুর্ব দিকের উল্টোটা
হল পশ্চাত বাঁ পশ্চিম।
সাধু সাধু সবাই বলে উঠল, রাজা মশাই এবার তার খাজাঞ্চীকে বলে ফেললেন
বৃহদলাঙ্গুল মশাই যতটা স্বর্ণ হাতে তুলতে পারেন ততটা তাঁকে দেওয়া হোক। তার পরেই
বললেন, বাকী দিক গুলো। বৃহদলাঙ্গুল বললেন, রাজা মশাই, আপনি পুর্ব দিকে মানে সকালের সূর্যের দিকে
তাকিয়েছেন। পেট খোলসা করেছেন মানে পশিম দিয়ে করেছেন। এইবার আপনার পরের কাজ কি?
রাজা মশাই বলেন, আরে কিছু খেতে হবে তো রে বাবা। পন্ডিতমশাই জিজ্ঞেস করলেন কি ভাবে?
রাজা মশাই তার ডান হাতটা দেখিয়ে বললেন, এটা দিয়ে তুলে মুখের ভেতরে পাঠাব। পন্ডিত
মশাই বলেন, আরে তাহলে সকালে পুর্ব দিকে
তাকালে আপনার ডান হাতের দিকটা মানে দক্ষিণ হস্তের দিকটাকে বলুন না দক্ষিণ। এবার এর
সাধু সাধু নয়। হাই হুই হুররে কত রকম আওয়াজ হল যে তার রেকর্ডিং কেউ করেনি।
বাকী তবে রইল বাম হাতের দিকটা। ওটাকে কি তবে বাম বলা হবে? রাণী মা বলে
উঠলেন কেন আমি বা অন্য বামারা কিন্তু তাহলে রেগে যাব। ডান হাত দিয়ে যদি খেতে পার
বলে ঐ দিকটা ডান বা দক্ষিণ হয় তবে বাঁ হাতটা দিয়ে ভদ্রস্থ কিছু করা হয় কি? যাতে
সেটার সাথে দিকের নাম দেওয়া যায়।
সভা সেদিনকার মতন ভঙ্গ হল। লাঙ্গুল
মশাই বাড়ি গেলেন। পরদিন সভাতে আসামাত্র রাজার জিজ্ঞাসা কি পেলেন। বৃহদলাঙ্গুল মশাই
চুপ করে আছেন। রাজা মশাই আবার জিজ্ঞেস করলেন, কি, উত্তর । পন্ডিত মশাই বলেন হুম।
রাজা মশাই আবার জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি উত্তর? পন্ডিত মশাই এবার বলে উঠলেন , রাজা
মশাই, আপনি তো বলেই দিলেন। উত্তর।
সেই থেকে দিক গুলোর নাম হয়ে গেল পুর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ আর উত্তর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন