মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

পুজার কথা (৪)


পূজা আর অশোক যতক্ষণ মিনি ধরে লেকটাউনে পৌঁছচ্ছে ততক্ষণে আমরা দেখে নি মিনতি কি করছে। আগে মিনতির পরিচয়টা দিয়ে দিই। মিনতি হল অশোকের মাসতুত বৌদি।
সকাল থেকে মিনতি তার কর্তা, মানে দিলীপ কে অফিস যেতে আটকেছে। বলে আরে তোমার ভাইয়ের বৌ কে হবে দেখে নাও, আর তার পরে কি করতে হবে সেটা পরে বলব।
বাধ্য স্বামী, কাজেই অফিসে একটা ফোন করে একটু করুণ সুরে বলে দিল ভীষণ মাথা ব্যথা করছে, মাইগ্রেন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে,  দশটার পরে ডাক্তার দেখাতে যেতে হবে, তাই অফিসে যেতে পারছি না।
দিলীপ আর মিনতির বিয়েটা ঠিক এরেঞ্জড ম্যারেজ নয়, আবার পুরোপুরি লাভ ম্যারেজ নয়। যখন ওরা প্রেম করছিল, মানে মিনতির দিক থেকেই আগ্রহটা বেশি ছিল, তখন মিনতিদের বাড়ী থেকে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসা হলে দিলীপের মনস্কামনা পূরণ হয়। বিয়েটা নির্বিবাদে হয়ে যাবার পরে অন্যেরা জানত পারে।
লেকটাউনের বাড়ী পৌঁছতে অশোকদের প্রায় ঘন্টাটাক লেগে গেল, রাস্তায় একটু ট্রাফিক জ্যামের মতন ছিল। ঘরে ঢুকতেই মিনতি পূজাকে আলাদা ডেকে তার শোবার ঘরে নিয়ে গেল। অশোককে ছেড়ে গেল দিলীপের জিম্মায়।
দিলীপ জিজ্ঞেস করে কি রে সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিস কি? না পকেটে প্যাকেট আছে? থাকে যদি তাহলে ধরা আর নয়ত চারমিনার খাবি তো  ঐ টেবিলের ড্রয়ারটাতে আছে।
অশোক বলে না আজকাল একেবারে কমিয়ে দিয়েছি। খাবার পর ছাড়া খাই না। তাই আর প্যাকেট কিনি না। আর ক দিন বাদে তো ছাড়তেই হবে, তাই আগে থাকতেই প্র্যাকটিস করে নিচ্ছি।
তুই একটা ভীতুর ডিম, কোথায় পুরুষ সিংহ হয়ে গর্জে উঠে বলবি, আমি খাব, তা না কেউ বলে দিল আমি পছন্দ করি না, আর তুই শা- ছেড়ে দেবার প্ল্যান করেছিস।
অশোক বলে, না সেটা ঠিক নয়। আসল কথা প্রত্যেক বছর তো ট্যাক্স বাড়ছে এর পরে সিগারেটের দামে দেখবি এক দিনের মাইনেই বেড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হয় বোতলও  একদিন একটা প্যাকেটের চেয়ে সস্তা হয়ে যাবে।
হোক বা না হোক, আমি ছাড়ছি না। যাক তোর বৌদি বলছিল তুই নাকি তোর নিজের ইস্ত্রী ঠিক করে ফেলেছিস। মেসো জানে?
ক্ষেপেছিস, বাবা জানবে আর আমি বাড়ীতে থাকতে পারব। এটা কি চাঁদ ধরার মতন হয়ে যাচ্ছে না। আরে সেই জন্যই তো বৌদির শরণাপন্ন হয়েছি। সে যদি কিছু উপায় বার করতে পারে।
ওরে বাবা। ঐ হিটলারকে একমাত্র মাসীই পারে ঠিক করে ম্যানেজ করে নিতে। তুই মাকে বলনা সোজা, যে এ তোমার ছেলের বৌ হবে, পার তো মেনে নাও আর নয়ত আমি বিয়ে করে অন্য জায়গাতে গিয়ে থাকব। মেসো না মানলেও একবার নাতি এলে সব ঠিক মেনে নেবে। ততদিন না হয় ও বাড়িতে যাবি না। দেখা হবে না, কিন্তু তোর বৌদির মারফত খবরাখবর পেয়ে যাবি।
দূর সেটা ঠিক হবে কি? মার তো আবার প্রেসারের প্রবলেম আছে। কিছু না হয়ে যায়?
তাহলে যা দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়া। কি নাম মেয়েটার, কি করে?
এসেছে। এখন বৌদির জিম্মায়, তাঁদের কি শলা পরামর্শ হচ্ছে সেটা আমার জানার নয়। খালি আমাকে কি করতে হবে সেটা জানালেই তদনুযায়ী কার্য সম্পন্ন হইবেক।
কতক্ষণের মেয়াদে এসেছিস।
না সন্ধ্যের আগেই ঘরে পৌঁছতে হবে ওকে। তাই ধর, এখান থেকে তিনটের মধ্যে বেরলেই হয়ে যাবে।
ঠিক আছে। বুদ্ধির গোড়াতে একটু ধূম্রনিষেক করে নিই, তার পরে ভাবা যাবে কি করা যায়।


1 টি মন্তব্য: