বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০১৫

পাঁচফুল রাণী (তৃতীয় খন্ড)

পরের দিন সকালে রাজকুমার দরজা খুলে দেখতে গেছেন যে আগের দিন যে পাখীগুলোকে রঙ করেছিলেন সেগুলো শুখিয়েছে কিনা। আর দরজা খোলার সাথে সাথে ঐ হাজারটা টিয়া পাখী ক্যাঁচর ম্যাঁচর করতে করতে ঘরের ভেতরে ঢুকে এল। সে এক ভীষন হৈ হট্টগোলের ব্যপার,আর চেঁচামেচী শুনে রাজকুমারের বউ,শ্বশুর মশাই আর শ্বাশুড়ী ঠাকরুন জেগে উঠে কান্ড দেখে হতভম্ব।

শ্বাশুড়ী ঠাকরুন বলেন, দেখ বাবা, তোমার ঐ হাজার টিয়াকে খেতে দেবার মত সামর্থ, আমার বা তোমার শ্বশুর মশাইয়ের কাছে নেই। ওরা তো রাক্ষসের মত খায়। তা তুমি যদি ওদের রাখতে চাও তাহলে তোমাকে কিন্তু আলাদা কোথাও থাকতে হবে যে

রাজকুমার বলেন, ঠিক আছে তাই হবেএই বলে রাজকুমার আর তার বৌ, মানে সেই মিস্ত্রীর মেয়ে, গিয়ে উঠলেন এক নতুন ঠিকানায়। আর সাথে রইল সেই হাজার টিয়া। অবশ্যই শ্বাশুড়ী ঠাকরুন তাদের প্রথম কদিন চালানর জন্য কিছু না কিছু আনাজপত্র সাথে দিয়ে দিয়েছিলেন।

এদিকে রাজকুমার কয়েকদিনের মধ্যে বুঝতে পারল যে ঐ টিয়াপাখীর দল তো তার খাবারে ভাগ বসাচ্ছে না। তারা সকাল বেলায় উড়ে চলে যায় নিজেদের খাবারের জোগাড় করতে, আর সন্ধ্যে বেলায় ফেরার সময় ঠোঁটে করে একটা ধানের শিষ বা গমের গুচ্ছ, কি অন্য কিছু ফল বা আনাজ নিয়ে আসে রাজকুমারের জন্য।

অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাজকুমারের অনেক পয়সা হয়ে গেল আর সে হয়ে গেল শহরের এক বিরাট ধনী কাঠের মিস্ত্রী। আর এভাবে কিছু দিন চলার পরে এক রাত্রে রাজকুমার এক স্বপ্ন দেখল। কি সেই স্বপ্ন।

রাজকুমার দেখে, অনেক অনেক দূরে লোহিত সাগর পার হবার পরেও আরও সাতটা সমুদ্রের ওপারে এক রাজ্য আছে। আর সেখানকার রাজার যে মেয়ে, তাঁকে সবাই পাঁচফুল রাণি বলে ডাকে। আর সেই কারণেই তাঁদের রাজ্যের নামও হয়ে গেছে পাঁচফুল রাণীর দেশ।

ঐ যে পাঁচফুল রাণী, সে থাকে রাজ্যের একদম মধ্যিখানে এক প্রাসাদে, যেখানে যেতে গেলে সাতটা চওড়া খাল পার হয়ে তার পরে সাতটা উঁচু উচু বেড়াও পার হতে হবে। পাঁচফুল রাণীকে যদি কেউ দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে, তবে তার ওজন পাঁচটা পদ্মফুলের চেয়ে বেশি হবে না। আর সেই পাঁচফুল রাণী প্রতিজ্ঞা করেছে যে, তাঁকে বিয়ে করার জন্য সেই যোগ্য পাত্র হবে, যে লাফ দিয়ে ঐ সাত সমূদ্র পার হয়ে সাত খাল আর সাত বেড়া পার হয়ে তার কাছে আসতে পারবে।

রাজকুমারের ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে চিন্তা করতে শুরু করে দিল, যে সে যা দেখেছে তা সত্যি কিনা। কেননা এই রকম রাজ্যের নাম তো কেউই শোনে নি। এর মধ্যে তার বৌ উঠে দেখে, রাজকুমার বসে বসে কি সব ভাবছে। জিজ্ঞেস করাতে রাজকুমার তাঁকে সব কথা বললে। আরও বললে যে, এই রকম রাজ্য যে কোথায়, সেটা কিন্তু কেউ জানে বলে মনে হয় নাবৌ বলে, আমি হলে এই টিয়াদের জিজ্ঞেস করতাম, যে তারা এই সম্বন্ধে কিছু জানে কিনা

রাজকুমার ভাবে কথাটা সত্যি বলেছে তার বউ। আর তাই সে ঠিক করল, হাজার টিয়ার মধ্যে যে সব চেয়ে বুড়ো তাঁকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেবে। সন্ধ্যে বেলায় টিয়ারা যখন ঘরে ফিরল, তখন রাজকুমারের জিজ্ঞাসা করলে, বুড়ো টিয়ে বলে হ্যাঁ, তুমি যা দেখেছ তা সত্যি। লোহিত সাগর পেরিয়ে আরও সাতটা সমুদ্র পার হবার পরে সাতটা খাল আর সাতটা বেড়া পার হয়ে তবে তাঁকে পাওয়া যাবে, কিন্তু অনেক বড় বড় লোকেরা চেষ্টা করেও পারেনি, তাই ঐ পাঁচফুল রাণীর এখনও বিয়ে হয়নি।

টিয়া আরও বলে, মেয়েটা তার বাপ মার খুব প্রিয় বলে, তারা রোজ গিয়ে তার ওজন দেখে আর রোজই পায়, যে পাল্লার একদিকে পাঁচটা পদ্মফুল আর অন্য দিকে পাঁচফুল রাণীকে বসালে তাদের সমানই পাওয়া যাবে। রাজকুমার বলে, তাতে কি হয়েছে, আমিও একবার যাব। কিন্তু কি ভাবে ঐ সাতটা সাগর পার হওয়া যাবে?

টিয়া বলে, তার জন্য চিন্তা নেই। আমরা দুজনে পাশাপাশি একসাথে ডানা নেড়ে উড়ে গেলে, তুমি আমাদের ডানার উপরে বসে থাকতে পারবে। আমরা তো খালি বাইরের দিকের ডানা দুটোই নেড়ে যেতে পারব। খালি রোজ সন্ধ্যে বেলায় আমাদের কোন গাছের মাথায় বসতে হবে।, তা তুমি রাতের বেলায় গাছে থেকে যেতে পারবে তো?

রাজকুমার তার বউকে যখন বললে যে সে টিয়ার কাছ থেকে রাস্তা জেনে নিয়েছে আর ঐ পাঁচফুল রাণির দেশে যাবে, তখন তার বউ বলে, যাবে তো যাও, আর গিয়ে ঐ পাঁচফুল রাণিকে বিয়ে করে নিয়ে আসতেও পার। কিন্তু রাস্তাঘাটে মারা পড়ো না। আর বেশি দেরী করবে নাএই সব বলে বউ তাঁর হাতের সোনা রূপোর চুড়িগুলো খুলে একটা গরম কাপড়ের পোঁটলার সাথে বেঁধে দিল। ভাবল এগুলো রাস্তায় যদি কোন টাকা পয়সার দরকার পরে তবে রাজকুমারের কাজে আসবে।

 চলবে--

মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০১৫

পাচফুল রাণী (দ্বিতীয় খন্ড)


লোকটা চলে যাবার পরে মিস্ত্রী ভাবতে বসল, কি করে একজোড়া খড়মের জন্য সে দশটা সোনার মোহর পেতে পারে। এমনিতে তো সে এক এক জোড়া খড়মের জন্য দু তিন টাকার বেশি দাম কোনোদিন পায়না। অন্য খড়মগুলো দেখে আর ভাবে ওটা এত সুন্দর হল কি করে। ভাবতে ভাবতে মেয়েকেও জিজ্ঞেস করলে, মেয়ে বলে, “তবে ঐ খড়মজোড়া নিশ্চয়ই রাজকুমারের বানানো। এই বলে সে তার বাবাকে রাতে খাবার তৈরী করার সময়ে খড়ম জ্বালিয়ে রান্না করার কথা বললে।

মিস্ত্রী মনে মনে ভাবে যে এই রাজকুমার তো তাহলে খুব কাজের লোক। একে অন্য কোথাও কেন যেতে দিই। এই বলে সে রাজকুমারকে বলে, “তুমি কি আমার মেয়েকে বিয়ে করবে”? রাজকুমার ভাবে মিস্ত্রীর মেয়ে তো দেখতে খুব সুন্দরী আর ভাল করে রান্নাবান্নাও জানে। তাই সে আর আপত্তি করল না। বলে দিল, হ্যাঁ করব। যথা নিয়মে বিয়ে হয়েও গেল।

রাজকুমার তো গিয়ে আশ্রয়য় নিল এক খেলনা বানানোর মিস্ত্রীর ঘরে। আর সেখানে একজোড়া খড়ম বানাওয়ে দিল যেটা অনেক চামে রাজার জন্য কিনে নিয়ে গেল। মিস্ত্রী তাঁকে তাঁর সহকারী হিসাবে ঘরে থাকতে দিল।
এদিকে রাজকুমার রোজই কিছু খড়ম বানায় বাজারে বিক্রী করা জন্য। সেগুলো বানাতে তার অল্পই সময় লাগে। আর তার পরে বসে বসে খেলনাপাতি তৈরী করে। কি খেলনা, না টিয়া পাখী বানায়। তার দুটো ডানা, দুটো পা, দুটো চোখ, ধারাল ঠোঁট, ঠিক যেন আসল টিয়া। তার পরে সেগুলোকে রঙ করে বাইরে রোদে শুখোনর জন্য রেখে দিত। একবার রাজকুমার তার তৈরী ঐ পাখিগুলো দিনের শেষেও সুখোয়নি বলে রাতেও বাইরে রেখে দিয়েছিল।
সেই রাতে মহাদেব আর পার্বতী বেড়িয়েছেন, সারা পৃথিবীর কোথায় কি হচ্ছে তাই দেখবার জন্যে। আর ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌছেছেন সেই শহরে, যেখানে আমাদের রাজকুমার আর তার মিস্ত্রী শ্বশুরমশাই থাকেন। মহাদেব আর পার্বতী দেখলেন বাইরে অনেক কাঠের তৈরী টিয়াপাখী পড়ে আছে। সবগুলো একেবারে যেন জীবন্ত পাখী, কিন্তু তাঁদের প্রান নেই, তারা কাঠের তৈরী।

পার্বতী মহাদেবকে বললেন, “দেখ কি মজা হবে যদি ঐ সব পাখীগুলোকে প্রাণ দিয়ে দেওয়া যায়। কাঠের পাখী হাওয়ায় উড়ে বেড়াবে। মহাদেব বললেন, “ভাল মোটেই হয় না, কেননা সেটা যে সাধারণত হয় না। কিন্তু সত্যিই কি তুমি কাঠের টিয়াতে প্রান দেওয়া পছন্দ করবে। পার্বতী বললেন, “ আমি তো স্রেফ মজা দেখার জন্য বলছিলাম। মহাদেব বললেন, “তথাস্তু”, আর তার পরে ওখানে যে হাজারের মত কাঠের টিয়া ছিল, তাঁদের সবগুলোকে প্রাণ দিয়ে দিলেন। আর তার পরে উড়ে চলে গেলেন অন্য কোথাও।

চলবে--