শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আমার তোলা কিছু ছবি

আলো আমার আলো
আকাশে আজ রঙের খেলা

জলে আর আকাশে যখন রোদের  আর মেঘের খেলা চলে তখন সেটাকে ক্যামেরাতে বন্দী করে রাখার চেষ্টা করলাম। ভাল লাগ্লে নিশ্চয় জানাবেন।
স্থান -- মুম্বাই
সময় -- সন্ধে সাড়ে ছটা
ক্যামেরা -- সামসুং এস ১০৫০
মেঘের আড়ালে আমি আছি

আমাকে দেখতে পাচ্ছ কি?


শেষ বিচারের ঘোষণা

শেষ বিচারের ঘোষণা

প্রকাশ্য দিবালোক, নেই কোন অন্ধকার
তবুও কেন করতে হবে আর্ত চিৎকার
বাঁচাও, বাঁচাও, কে কোথায় আছ।
কবে শেষ হবে এই অত্যাচার।

এই পুরুষ তান্ত্রিক আধুনিক সমাজ
মাথা উঁচু করে বাঁচতে দেবে না আজ
যতই করি না কেন  প্রতিবাদ আর চিৎকার।

ভোগ্য বস্তু আমরা?
করবে তোমরা আমাদের ভোগ ?
রেখে যাবে তোমাদের কুৎসিত রোগ
দগদগে ঘা ভরে দিয়ে আমার শরীরে
আরও মর্মান্তিক আঘাত মনের গভীরে
রেখে দেবে, চলে যাবে, পালিয়ে যাবে।

না না আর হতে দেব না এই অত্যাচার,
জানি এ নালিশের কোন দিন হবে না বিচার
জানি তোমরা ছারপোকার থেকে বেশি কিছু নও
অন্ধকার খুঁজে নিয়ে লুকিয়ে থেকে কামড়াও।

এখন নিয়েছি লাঠি আমরা হাতে,
গোলাপী ব্রিগেডের সাথে
আর  করবো না চিৎকার, চাইবো না বিচার,
বিচার করবো আমরা, কোথায় পালাবে তোমরা?
এতদিনের অত্যাচারের শাস্তি মাথা পেতে নিতে হবে তোমাদের
মনে রেখ, মা জগদ্ধাত্রী ও কালিকা হয়

পালাও, পালাও, যত দূরে যেতে পার যাও
অপরাধের শাস্তি তোমাদের নিতেই হবে
তাই খুঁজে খুঁজে বার করতে হবে
আর তিলে তিলে পিষে মারতে হবে।
সেটাই হবে তোমাদের শেষ বিচার।।

বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

একটি প্লটের প্রসব গাথা


একটি প্লটের প্রসবগাথা

আমার আজকের কাহিনীর পাত্র পাত্রীদের পরিচয় প্রথমে দেওয়া যাক। নায়ক অনিকেত, ছোট গল্পের খ্যাতনামা লেখক, তার স্ত্রী শর্বরী, অনিকেতের বন্ধু শ্যামল, শ্যামলের স্ত্রী রাণী। স্থান অনিকেতের বাড়ির ড্রয়িং রুম। সময়  ধরা যাক রাত আটটার একটু ওপারেই। অনিকেতের হাতে বিয়ারের গ্লাস। শ্যামল একেবারে টিটোটালার, ও যে কি করে অনিকেতের এত গভীর বন্ধু হতে পারে সেটা ভাববার বিষয়। শর্বরী আর রাণী বিয়ার তেতো লাগে বলে খায় না। আজকে ওরা মকটেল হিসাবে টমাটো জ্যুসের সাথে স্প্রাইট মিশিয়ে  ব্লাডি মেরীর আদলে ব্লাডি পমি বানিয়ে নিয়েছে। ওদের মধ্যে আজকের আলোচনার বিষয়, অনিকেতের নতুন গল্পের প্লট ঠিক করা। আগে লেখকরা তাদের কাহিনীর প্লট নিজের মাথা থেকেই বার করে আনত। আজকাল ট্রেন্ড হচ্ছে একটু আলোচনা করে নিলে সব উদ্ভট কল্পনা গুলো বাদ দেওয়া যেতে পারে। বাইরে রিমঝিম করে বৃষ্টি পড়ছে। একটু ঠান্ডা হাওয়াও দিচ্ছে।
বিয়ারের গ্লাসে একটা সিপ দিয়ে অনিকেত বলল-" আজকের প্লটটা আমি ভাবছি একটু প্রেমের ওপরেই বানাব"।
"উহু, তোমার সেই ভুতুড়ে আবহাওয়াতে ঘোড়ার গাড়িতে যাবার বিষয়টাকেই নিয়ে গল্প বানাও" শর্বরী বাধা দিয়ে বলে উঠল।
"তার চেয়ে ভাল দুটোকে পাঞ্চ করে দে। ভুতুরে প্রেমের গল্প ভাবা যাক" শ্যামলের মন্তব্য।
তোর মাথায় এই সব গাঁজাখুরি প্লটের কথা গজায় কি করে রে। তুই তো মালও টানিস না। আজকাল কি লুকিয়ে লুকিয়ে গাঁজার ঠেকে বসছিস নাকি ভাই" অনিকেত বলল।
"কি কথা। রাণি যেন জানতে পারবে না, পারলেইতো তুলকালাম বাধাবে। তোমার মতন ও সাতারও কাটে না আর ধোয়াও ওড়ায় না।" শর্বরীর গলা।
কেন ভুতেরা কি প্রেম করে না, মানে প্রেমিকরা কি মরে ভুত পেত্নী হয় না? এতক্ষনে রাণীর গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। "পরশুরাম ভুশুন্ডীর মাঠে লেখেন নি।
"আরে বাবা, কোথায় পরশুরাম আর কোথায় এই গয়ারাম। ভুতেদের কি দেখেছি যে তাদের নিয়ে গল্প লিখব? প্রেমিক প্রেমিকা জ্যান্ত থেকে প্রেম করে তা জানি। সেটা লেখা যায়। আমাদের নিজেদের কথাটাই একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে লিখতে পারা যাবে। মড়ার পরে ওরা কোথায় যাবে কে বলতে পারে? আর তা ছাড়া ধর একজন হিন্দু তাকে পোড়ান হবে। আর অন্য জনকে যদি কবর দেওয়া হয় তবে? তারা ভুশন্ডীর মাঠে যাবে কি করে? এমনকি একটাকে নিমতলায় আর একটাকে কাশীতে নিয়ে গিয়ে পোড়ালে, ধোঁয়াগুলোও একসাথে মিশতে পারবে না।" অনিকেতের গলা।
          রাণি তার মতটা নাকচ হচ্ছে দেখে বলল," ঠিক আছে, তা হলে আপনাদের প্রেমের কথাটাকেই গল্প হিসাবে চালান। রিয়াল প্রেম, রিয়ালিটির ছোঁয়া থাকবে। আজকাল তো সবই রিয়ালিটিতে চলছে। নাচ, গান এবার প্রেমের গল্পে  আসল প্রেম।"
          এবার শর্বরীর মুখ লাল। কলেজে পড়ার সময়ের প্রেম। এখন মনে পড়লে গায়ে শিহরন জাগে। শ্যামল আর রাণী না থাকলে পরে ও হয়তো অনিকেতকে জড়িয়েই ধরত। " না না। তুমি সব কথা লিখবে না। আমাদের কথা ফাঁস হয়ে গেলে লজ্জায় পড়তে হবে"মুখ নীচু করে শর্বরী বলল।
          " আরে তোমায় ও সব ভাবতে হবে না। আমি কি বুদ্ধু যে নিজের কথা ঠিকঠাক পয়েন্ট বাই পয়েন্ট কার্বন কপি করব। ওখানে তুমি হবে ষোড়শী থেকে অষ্টাদশীর মধ্যে। স্কুল ফাইনাল দিচ্ছ। আর আমি সবে ভাল করে শেভ করা শুরু করেছি। বেকার, গ্র্যাজুয়েশন করছি, বাপের হোটেলে খাই আর তোমার সাথে প্রেম করি। তোমার সাথে আমার অ্যাকচুয়াল প্রেম শুরু তুমি তখন গ্র্যাজুয়েশনের ফার্স্ট ইয়ারে, আর আমি  এম এ ফাইনাল দিচ্ছি। তাও দেখতে দেখতে পাঁচ সাত বছর পেড়িয়ে গেল"।  আলতো করে পিঠে একটা চাপড় মেরে শর্বরীকে সান্তনা দিয়ে গ্লাসে আর একটা সিপ দিল
"তাহলে শুরু করা যাক। হুররে" একটা সমবেত কোলাহলে রুমটা ভরে গেল।
"প্রথমে প্রেমিকদের দেখা হবে। আমাদের দেখা হয়েছিল ক্যান্টিনে। স্কুলের ছাত্রী ক্যান্টিন কোথায় পাবে? ওদের আলাপ করিয়ে দিই সরস্বতী পুজার প্যান্ডেলে। প্রেমিকার নাম কি দেব? ইচ্ছে তো করছে তোমার নামটাই দেবার কিন্তু লোকে চিনে ফেলবে। ঠিক আছে। ওর নাম থাক পাখী। (এ নামে শর্বরীকে অনিকেত একান্তে ডাকে)"।
"প্রেমিকের নাম দাও সুনু। (এটা অনিকেতের নাম, শর্বরীর দেওয়া) ওকে একই পাড়াতে থাকতে দাও, যাতে তাড়াতাড়ি প্রেমটা জমে ওঠে। আজকাল যা রাস্তাঘাটের অবস্থা। আলাদা জায়গাতে থাকলে সময়ের গন্ডগোল হয়ে যাবে। আমাদের মতন আলাদা আলাদা এসে ভিক্টোরিয়ার পাশে দেখা করতে পারবে না"
"পাখীকে দিয়ে প্যান্ডেলে গানের একটা সিন দে। তখন তোমার একুশ বছর বোধ হয় আমি তখন অষ্টাদশীর ছোঁয়ায়। সাথে সুনুকে প্রথমে বেঞ্চি টানা প্রেমিক বানা। পড়ে আস্তে আস্তে প্রমোশন দিবি। লাভ এট ফার্স্ট সাইট করে শুরু করবি। ফাটাফাটী সিন। সাথে একটু পাখীর বাড়ী থেকে আপত্তিও জুড়ে দিতে পারিস।" শ্যামলের সাজেশন।
"আপত্তি খালি যেন মেয়ের দিক থেকেই আসে? কেন, সুনুর বাপের আপত্তিও তো থাকতে পারে।। তার চেয়ে দুই বাড়ী থেকেই আপত্তি থাকুক। ওরা লুকিয়ে লুকিয় প্রেম করুক। একটু অ্যাডভেঞ্চার মত হবে।" রাণীর বক্তব্য।
"কতদিন ওদের প্রেম চলবে" ?
"মানে"?
"মানে কতদিন বাদে ওরা এক হতে পারবে"?
"এক হতে হবে এর কোন মানে আছে? ট্রাজেডী তো হতে পারে"
"ঠিক আছে। ওদেরকে এক দেড় বছর প্রেম করতে দিই। তার পর পাখীর বিয়ের কথা পেরে দেব। ব্যর্থ প্রেমিক হয়ে সুনুকে দেবদাস বানানো চেষ্টা করব"
"হবে না। তার মানে আমাদেরও কি জীবনটা ট্রাজেডী হবে? এটাকে কমেডী বানাও। টানতে না চাও তো পাখীকে বাড়ী থেকে সুনুর সাথে পালাতে দাও। ওরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করুক"
"আজকালকার ছেলেমেয়েরা বিয়ে করে না। ওরা লিভ ইন থাকে"
"অসভ্য। এদিকে বলছ আমাদের কে মডেল করে গল্প বানাচ্ছ, ওদিকে লিভ ইন। আমরা তো বিয়ে করেছি। ওরাও করবে"
শর্বরী আর অনিকেতের এই খুনশুটিওয়ালা ঝগড়া শ্যামল আর রাণী উপভোগ করতে পারে না  ইনফ্যাক্ট ওরা প্রথমে মাস ছয়েক লিভ ইন ভাবেই ছিল, পরে বিয়ে করে নিয়েছে।
"ঠিক আছে। দেখা হবার বছর দেড়েকের মধ্যে পাখী পালাবে। সুনুকে তার আগে কোথাও কিছু টাকা জোগাড় করে দিতে হবে। আচ্ছা লটারীতে টাকা পাইয়ে দেব"?
"না না। ও সব আনরিয়ালিস্টিক। বরং ওকে দিয়ে ট্রেনে হকারী করিয়ে দে। তাতে বোঝাতে পারবি সুনু প্রেমের জন্যে যে কোন অবস্থা ফেস করতে পারবে। পাখীও বুঝুক কত ধানে কত চাল হয়। প্রেম করলেই হল। হিম্মত না থাকলে প্রেমে সফল হওয়া যায় না। তুই ওকে হয় ট্রেনে হকার নয়তো...  পেয়েছি, পেয়েছি, ওকে টিউশনি করতে দে। পাখীর কম্পিটিটর দাঁড় করিয়ে দে।"
"হ্যাঁএখানে ওখানে প্রেমের দোকান খোলো। কে আছিস রে আমায় প্রেম করতে দে। পাখী ওয়ান অ্যান্ড অনলি ওয়ান। নো কম্পিটিটর। তার পর প্রেমের জন্যে চুলোচুলি, সেটা মোটেই জমবে না। রাণি, শ্যামল কি তোর কোন কম্পিটিটর দাঁড় করিয়াছিল"?
রাণীর মুখ লাল। শ্যমলের জন্য সে সব কিছু ছেড়েছে। তার গানের ক্লাশ, টিউশনি, বাবা মা, আত্মীয় স্বজন। সব ঐ লিভ ইনের জন্য। শ্যামল সেই সময় ভাল রোজগার করত না। অনেকগুলো টিউশনি ছিল আর বেশীর ভাগই ছাত্রী। সেই জন্যই রাণী শ্যামলের কাছে চলে এসেছিল।
প্রত্যেকের গ্লাশ প্রায় খালি। এমন কি শ্যামলের জলের গ্লাশটাও।
অনিকেত বলে উঠল,  "বাস। প্লট রেডী। পাখী আর সুনু। ক্লাস টেন আর গ্রাজুয়েসন।এক পাড়ায় বাড়ী।। সরস্বতী পুজাতে দেখা। প্রথম দেখাতেই প্রেম। দুদিকের বাড়ীতেই আপত্তি। পাখী পালাতে চায়। সুনু ওকে অপেক্ষা করতে বলে। টাকার জন্য টিউশনি নেয়। পাখীর আপত্তিতে সবই ছাত্র, ছাত্রী একটাও না। একটু টাকা জমানোর পরেই পাখী পালাল। বিয়ে করলো। এক বছর বাদে ওদের বাবা মা ঘরে ফেরত নিল। কি রকম"?
"ফাইন। সুপার ফাইন"একসাথে সমবেত আওয়াজ।
আওয়াজ শুনে অনিকেত বুঝল প্লটের নিরাপদে প্রসব হয়ে গেছে।
   

বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আসুন অঙ্ক শিখি - পর্ব ৬


      আসুন অঙ্ক শিখি এই লেখের আগেকার পর্ব গুলিতে আমরা গুন করতে শিখেছি নানান সূত্রের প্রয়োগ করে। প্রত্যেক সূত্রের প্রয়োগের জন্য নির্দিষ্ট অবস্থার প্রয়োজন আছে। আজ আমরা আর দুটি সূত্রের প্রয়োগ শিখব।

এক নুন্যেন সুত্র

যখন কোন সংখ্যা কে ৯৯ বা ৯৯৯ দিয়ে গুন করতে হবে তখন আমরা এই সুত্রের প্রয়োগ করব।
উদাহরণ হিসাবে আমরা দেখছি

৬৪ কে ৯৯ দিয়ে গুন করি
প্রথম ধাপ—৬৪ -১ = ৬৩      (বাদিকে রাখব)
দ্বিতীয় ধাপ – ৯৯ -৬৩ = ৩৬  (ডানদিকে রাখব)
আমদের গুনফল হল ৬৩৩৬ 

আরও একটা উদাহরণ নেওয়া যাক

৩৪৭ কে ৯৯৯ দিয়ে গুন করবো
প্রথমে  ৩৪৭ – ১ = ৩৪৬        (বা দিকে )
দ্বিতীয়তে  ৯৯৯ – ৩৪৬ = ৬৫৩ (ডান দিকে )
আমার উত্তর = ৩৪৬৬৫৩

আরও একটা উদাহরণ

৫৮৯ কে ৯৯৯৯ দিয়ে
(১)  ৫৮৯ থেকে ১ বাদ দিয়ে পেলাম ৫৮৮         (বা দিকে )
(২)  ৯৯৯৯ থেকে ৫৮৮ বাদ দিয়ে পেলাম ৯৪১১  (ডান দিকে )
(৩) আমার উত্তর হল ৫৮৮৯৪১১

এতক্ষন আমরা অন্য সংখ্যাটি  ৯৯ বা ৯৯৯ র থেকে কম নিচ্ছিলাম। যদি ঐ সংখ্যাটি গুনকের থেকে বড় হয় তখন আমাদের পদ্ধতি নীচে দেখালাম

  ১২৩৪ কে  ৯৯ দিয়ে গুন করছি

(ক) ১২৩৪ থেকে ১ বাদ দিয়ে পেলাম ১২৩৩
(খ) ৯৯ থেকে ৩৩ বাদ দিয়ে পেলাম ৬৬       (বা দিকে)
(গ) ১২৩৩ থেকে ১২ বাদ দিয়ে পেলাম ১২২১  (ডান দিকে)
(ঘ) আমার উত্তর হল ১২২১৬৬

পরের উদাহরণ

৫৮৭৬ কে ৯৯৯ দিয়ে গুন করলে
(ক) ৫৮৭৬ থেকে ১ বাদ দিয়ে পেলাম ৫৮৭৫
(খ) ৯৯৯ থেকে ৮৭৫ বাদ দিয়ে পেলাম ১২৪    (বা দিকে)
(গ) ৫৮৭৫ থেকে ৫ বাদ দিয়ে পেলাম ৫৮৭০    (ডান দিকে)
(ঘ) আমার উত্তর হল ৫৮৭০১২৪

পরের উদাহরণ ৩২৪৭৮ কে ৯৯ দিয়ে

(ক) ৩২৪৭৮ থেকে ১ বাদ দিয়ে পেলাম ৩২৪৭৭
(খ) ৯৯ থেকে ৭৭ বাদ দিয়ে পেলাম ২২             (ডান দিকে)
(গ) ৩২৪৭৭ থেকে ৩২৪ বাদ দিয়ে পেলাম ৩২১৫৩ (বা দিকে)
(ঘ) আমার উত্তর হল ৩২১৫৩২২
  
 এর আগে আমরা ৫ এককের ঘরে থাকলে তার বর্গ বা (স্কোয়ার) করা শিখেছি

এবার আমরা দেখব অন্য সংখ্যার বর্গ করা। আমরা প্রয়োগ করবো যাবদুন্যেন তাবদুনি কৃত্যম সুত্রের। এর প্রয়োগ করবো যখন সংখ্যা আধারের কাছাকাছি থাকবে।

উদাহরণ হিসাবে আমরা নিচ্ছি  ৮ এর বর্গ করা বা ৮ কে ৮ দিয়ে গুন করা।

এখানে আধার = ১০ এবং আধার থেকে পার্থক্য বা বিচলন হচ্ছে ৮ = ১০ – ২ বা
এককের ঘরে আমরা পেয়েছি ২ অতএব X   = ৪
দশকের ঘরে সংখ্যা থেকে বিচলন বাদ দেব বা ৮ -২ = ৬
আমাদের উত্তর হল ৬৪

পরের উদাহরন  ১৩ র বর্গ করা বা ১৩ কে ১৩ দিয়ে গুন করা

আধার = ১০,  ১৩ র বিচলন হচ্ছে +৩ (১০+ ৩)
বিচলনের গুনফল = ৩ X ৩ = ৯
সংখ্যার সায়হে বিচলন যোগ করে পাই ১৩ + ৩ = ১৬
আমাদের উত্তর হল ১৬৯

আর একটি উদাহরণ

৯৯৭ এর বর্গ বা ৯৯৭ X ৯৯৭

এখানে আধার হচ্ছে ১০০০
এবং বিচলন = ১০০০-৯৯৭ = -৩
বিচলনের গুন ফল = গুন = ৯
যেহেতু আধারে তিনটি শূণ্য আছে তাই আমরা ধরব ০০৯
এবার সংখ্যার থেকে বিচলন বাদ দিয়ে আমরা পাই ৯৯৭ -৩ = ৯৯৪
(যেহেতু বিচলন সংখ্যা ঋণাত্মক বা -৩ তাই বাদ দিয়েছি)
আমাদের উত্তর হচ্ছে ৯৯৪০০৯

পরের উদাহরণ ২৬ এর বর্গ বা ২৬ কে ২৬ দিয়ে গুন করা

এখানে আধার =১০ এবং উপাধার =৩ (৩ X ১০ =৩০)
 সংখ্যা =২৬ অতএব বিচলন = ৩০ -২৬ = -৪
বিচলনের গুনফল = -৪ X -৪ = ১৬
সংখ্যার থেকে বিচলন বাদ দিয়ে আমরা পাই ২৬-৪ = ২২
এবের এই সংখ্যাকে উপাধার দিয়ে গুন করে আমরা পাই ৩ X ২২ = ৬৬
আমাদের উত্তর হল ৬৬০+১৬ = ৬৭৬

(আধার ১০ বলে আমরা ৬৬এর পরে ১টি শুন্য লাগিয়েছি)

এই অঙ্কটিকে যদি আমরা উপাধার ২ ধরে করি
২৬ = ২০ + ৬ অতএব বিচলন = +৬
বিচলনের গুনফল ৬ X ৬ = ৩৬
সংখ্যার সাথে বিচলন যোগ করে আমরা পাই ২৬ + ৬ = ৩২
এঁকে উপাধার দিয়ে গুন করে আমরা পাই ৩২  X ২ = ৬৪
আধার ১০ তাই আমরা বিচলনের গুনফল  ৩৬ এর ৩ কে ৬৪ র সাথে যোগ করবো
৬৪ + ৩ =৬৭
আমাদের উত্তর হল ৬৭৬

এ পর্যন্ত আমরা যে কটি সুত্রের প্রয়োগ করেছি তাদের একবার অবস্থা টা দেখা যাক।

(১) নিখিলম আধার সূত্র =        যখন সংখ্যাদুটি আধারের কাছে আছে।
(২) নিখিলম উপাধার সূত্র =      যখন সংখ্যা দুটি উপাধারের কাছে আছে
(৩) একাদিকেন পূর্বেন =          যখন সংখ্যা টির এককে ৫ আছে তার বর্গ করা
(৪) অন্ত্যর্ধদশকেপি =             যখন সংখ্যা দুটির এককের যগফল দশ হবে
(৫) যাব্দুন তাবদুনিকৃত্য =        সংখ্যাটি যদি আধার বা উপাধারের কাছে থাকে তার বর্গ করা

        কিন্তু যদি সংখ্যা দুটি এমন হয় যাতে উপরের কোন অবস্থাই ব্যবহার করা যাচ্ছে না তখন আমাদের ঊর্ধতির্যকভ্যাম সুত্রের প্রয়োগ করতে হবে।এটির সম্বন্ধে পরের পর্ব্র লিখবো।








সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

চাকুরী জীবন - পর্ব - ৩

পুরুলিয়া ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত

১৯৫৯ অক্টোবর থেকে –পর্ব -৩
         
          এই সময়কার একটা অভিজ্ঞতার কথা না বললেই নয়। আমার এক সহকর্মী আসানসোলের এক বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মীর মেয়ের সাথে প্রেম সম্পর্ক চলছিল। এ কথাটা ও বাড়ীতে মেয়ের বাবা মা জানতেন এবং আমার বন্ধুকে হবু জামাই হিসাবে মেনে নিয়ে ছিলেন। মেয়েটি আমাকে দাদা বলে মানত। তার প্রায় সমবয়সী এক মাসী ছিলেন। হঠাত একদিন সন্ধেবেলায় ফিরে খবর পেলাম যে আমার খোঁজে একটি মেয়ে এসেছিল। বয়স প্রায় কুড়ি বাইশ হবে। বলে গেছে কাল আবার আসবে। নাম ধাম কিছু বলে নি। একাই এসেছিল। একটু চিন্তিত হলাম কেননা আমার খোঁজে মেয়ে মানুষ একা, নিশ্চয় ভাববার কথা। আরও একটু বলি, আমাদের কেউই তখন বিবাহিত নই। যথা নিয়মে পরের দিন বিকেল নাগাদ দেখি একটি সুশ্রী মহিলা, বয়স ঐ কুড়িবাইশ হবে, আমার কোয়ার্টারে এলেন। পরিচয় দেবার বদলে খালি একথা সেকথা বলে যাচ্ছেন, আমি তত শঙ্কিত হচ্ছি ,- 'এ আবার কেরে বাবা'। সন্ধের মুখে চা খাইয়ে তাকে নিয়ে রিক্সাতে তুলে দিলাম ষ্টেসনে যাবার জন্য। যাবার সময় নাম হিসাবে বললেন "আমি মাসী"। কার সে সব কিছু না। আমি ভাবতে লাগলাম এটা কি ব্যপার। আমাকে  ফাঁদে ফেলার কিছু নয় তো। বেশ কিছু দিন পরে আমার সেই আসানসোলের হবু জামাইএর সাথে দেখা। তার প্রথম কথা হল 'আমি জিতে গেছি রে'আমাকে পরে বলল যে এসেছিল সে ওর হবুর মাসী। ওর সাথে বাজী ধরেছিল যে আমাকে ঘায়েল করে দেবে আর আমি তার প্রেমে হাবুডুবু খাব। সেটা হলনা দেখে কিন্তু খুবই মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ছিল। আমার সাথে ঐ মাসীর দেখা হবার পরে সেটা প্রকাশ হয়ে ছিল।
সস্রধারা প্রপাত

          একবার ঠিক হল আমরা সবাই মিলে রাচি বেড়াতে যাব। একমাত্র আমি ছাড়া বাকী সবাই আমার আদ্রার বন্ধু। পুরুলিয়ার থেকে সন্ধেবেলায় ছোট গাড়ীতে উঠলাম মাঝ রাতে মুরী। ট্রেনটা ওখানে থেমে থাকবে, ভোর বেলায় রাচী এক্সপ্রেস এলে তার যাত্রী নিয়ে ছাড়বে। আমরা কামরার দরজা ভেতর থেকে লক করে শুয়ে পড়লাম। রাত তিনটে নাগাদ দরজা ঠকঠকাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল বটে কিন্তু কে ওঠেঘুম থেকে আমরা উঠলাম প্রায় রাচির দিকে আধা রাস্তা আসার পর। সোজা রাচিতে না গিয়ে আমরা মাঝপথেই সহস্রধারা ষ্টেসনে নেমে  পড়লাম জোনহা প্রপাত দেখতে যাব বলে। ষ্টেসন থেকে কিছুটা দূরেই প্রপাতটা। এটাকে ঠিক প্রপাত না বলে ঝর্ণা বললে ঠিক হবে। উঁচু থেকে জল পড়ছে বটে কিন্তু তার হাইট অল্পই। যেখানে জল পড়ছে সেখানে আমরা জলে নেমে বেশ কিছুক্ষন মাতামাতি করলাম। জোনহাকে সহস্রধারাও বলে। সাথে একটা ছবি দিলামওখান থেকে বেড়িয়ে রাচিপরের দিন আমরা গেলাম হুন্ড্রু প্রপাত দেখতে। এটা সত্যিই একটা প্রপাত। প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে জল পড়ছে। আমি খুব একটা রিস্ক নিয়ে প্রপাতের ওপাশে গিয়ে জল পড়ার একটা ছবি নিয়েছিলাম। ছবিটা এখানে দিলাম। সাথে নেটের থেকে নেওয়া একটা ছবিতে আমি দাগ দিয়ে দিচ্ছি কোথা থেকে নেওয়া ছবিটা। সমস্ত জায়গাটা জলে ভিজে পেছল হয়ে ছিল, আর হাতে ক্যামেরা থাকায় ধরবার কোন সম্ভাবনাই ছিলনা। দুপুরের দিকে ঠিক হল যে আমরা সবাই নেতারহাট যাব।

হুন্দ্রু প্রপাতের চেহারা

হুন্ড্রু প্রপাতের জলধারা


          নেতারহাট বর্তমান ঝাড়খন্ডের তিন জেলা, পালামউ, হাজারীবাগ, আর রাচির সংযোগ স্থল। পাহাড়ী জায়গা। রাচি থেকে বাসে প্রায় ঘন্টা পাঁচেকের মতন লাগে। থাকার জন্য প্রতি জেলার আলাদা রেস্ট হাউস আছে। সরকারী কর্মচারীরা ডিউটিতে না এলে পরে ট্যুরিষ্টরা থাকতে পারে। সাধারণতঃ তিন জেলার সরকারী কর্মচারিরা একসাথে আসেন না কাজেই আমরা নিশ্চিন্ত ছিলাম যে জায়গা পাওয়া যাবেই। আমাদের এতই কপাল খারাপ, আমরা গিয়ে শুনলাম শ্রী অরবিন্দ নেতাম, যিনি পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন, সদলবলে আসছেন অতএব কোন রেস্ট হাউসেই থাকতে পারা যাবে না। নেতারহাট তখন এমন জায়গা যে বিকেলের যে বাসটা আমাদের নিয়ে সন্ধেবেলায় পৌঁছেছিল সেটাই আবার ভোর বেলায় রাচি ফেরত আসবে। এটা ছাড়া আর কোন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই। নানা রকম ভাবে মিনতি করার পরে তারা এক রেস্ট হাউসের ক্যান্টিনে সতরঞ্চি পেতে বসা/শোয়ার জায়গা দিল। পাহাড়ি জায়গা, রাতে ক্রমশঃ ঠান্ডা বাড়ছে। আমরা যে যার কম্বল গুলো পায়ের উপর চাপিয়ে সিগারেট খেয়ে গা গরম করছি আর নেতামের মুন্ডপাত করছি, যে আর আসার সময় পেলনা। এই করতে করতে ভোর হল আর আমরা কোন রকমে নেতারহাটকে টা টা বাই বাই করে রাচি রওয়ানা হলাম। কাজেকাজেই নেতারহাটে কি দেখেছ জিজ্ঞেস করলে আমাদের উত্তর হত,- ক্যান্টিনের মেঝে, রাতের অন্ধকার, ভীষন ঠান্ডা এই সব। অথচ নেতারহাট থেকে সুর্যোদয় আর সুর্য্যাস্ত একটা দেখবার মত দৃশ্য। আমার পুরুলিয়ার কাজ শেষ হবার পথে তাই আমাকে এবার চক্রধরপুরে বদলী করা হল। আমাদের কাজের কন্ট্রাক্টর ছিল এক জাপানী গ্রুপ তারাও আসতে আসতে ফিরতে শুরু করলো। এক সকালের ট্রেন ধরে আমি চক্রধরপুর রওয়ানা হলাম। সেখানকার কথা পরে লিখবো। একজন ব্যাচিলর হিসাবে পুরুলিয়াকে আমার মনে সবসময়ই মনে থাকবে। আব্রাহাম, কোনার, দিব্যেন্দু বিস্বাদ, এই সব বন্ধুরা আজ কে কোথায় আছে জানিনা। এদের সাথে যতদিন চাকরী করছিলাম কিছুটা যোগাযোগ ছিল। হয়ত কোনদিন রাস্তায় চলতে চলতে এদের কারুর সাথে দেখা হয়ে যাবে। তখন আবার প্রাণ খুলে গল্প করা হবে,সুখ দুঃখের কথা হবে। সেই আশায় থাকছি।



রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

চাকুরী জীবনের কথা - পর্ব ২


১৯৫৯ অক্টোবর থেকে


        এর আগে আমি পুরুলিয়াতে চলে আসার কথা বলেছিলাম।পুরুলিয়া একটা ছোট শহর যদিও জেলার সদর দফতর এখানে। অবশ্যি আমরা পুরুলিয়ার কথা পঞ্চন শতাব্দীর জৈন ভগবতী সুত্রে পাই। পুরুলিয়া জেলা আগে জঙ্গল মহল জেলা বলে জানা যেত। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই জঙ্গলমহল জেলাকে দু ভাগ করে মানভূম জেলার পত্তন করা হয়। ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুর্ণগঠনের সময় মানভূম জেলাকে দুভাগ করে পুরুলিয়া জেলা তৈরী করা হয়। বাকী ভাগটা বিহারের সাথে যোগ করে দেওয়া হয়।

          আসানসোল থেকে টাটানগর যাবার রেলপথে পুরুলিয়া পড়ে। আগে এখান থেকে ছোট লাইনের গাড়ি মুরী হয়ে রাচি যেত। নয়ত হাওড়া থেকে মুরী এসে গাড়ী বদল করে ঐ ছোট লাইনের গাড়ী ধরে রাচি যেতে হত। পুরুলিয়ার কাছেই ছররা স্টেশন, যেখানে যুদ্ধের সময় বিশাল এয়ারবেস তৈরী করা হয়েছিল। আমার কথা বলা সময়ে সেই এয়ারবেসের লম্বা রানওয়ে খালি পড়ে থাকত। এখন কথা হচ্ছে আবার এই রানয়েকে কাজে লাগানোর।

          পুরুলিয়া আর আদ্রার মাঝে পড়ে জয়চন্ডী পাহাড়। একটা উঁচু ন্যাড়া পাহাড় যাতে এখন রক ক্লাইম্বিং শেখান হয়। লোকে বলে আগের দিনে রাজা কাউকে মৃত্যুদন্ড দিলে তাকে এর উপর থেকে ফেলে দেওয়া হত। পাহাড়টার একটা ছবি দিলাম। ছবিটা শ্রী অরবিন্দমনির সৌজন্যে পাওয়া নেটের থেকে।
জয়চন্ডী পাহাড়


          কাসাই বা কংসাবতী নদী পুরুলিয়ার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে। একমাত্র বর্ষাকাল ছাড়া বালির মাঝ দিয়ে একটুকরো ফিতের মত জলের রেখা দেখা যায়। অবশ্যি কাছের অযোধ্যা পাহাড়ের থেকে এর শুরু কাজেই জল ধরার জন্য সে বিশেষ জায়গা এর মধ্যে পায়নি। আমার কোয়ার্টারটার পাশেই ছিল একটা জলের ট্যাঙ্ক। কাসাই থেকে জল পাম্প করে ওতে তোলা হত আর স্টোর করা জল সারা রেল কলোনিতে দেওয়া হত। টিলার উপরে ট্যাঙ্ক থাকাতে আর পাম্প করার দরকার হত না, কেননা বাকী কোয়ার্টারগুলো নীচের লেভেলে ছিল।

          আমার পাশের ইউনিটটাতে থাকত এম পি আব্রাহান, আর একদিকেরটাতে থাকত অসিত কোনার। কোনার আমার সহকর্মী। আব্রাহাম আসিস্ট্যান্ট ব্রিজ ইন্সপেক্টর। ওর অফিসটা ছিল কোয়ার্টারের পাশেই। লাইনে যাতায়াতের জন্য আমাদের প্রত্যেকের কাছে পাচজন ট্রলীম্যান থাকত, যাদের কাজ ছিল ট্রলী ঠেলা। এ কাজটা চারজনেই হয়ে যেত বলে একজন আমাদের ঘরদোর সামলানোর কাজে লেগে যেত। প্রধানতঃ রান্নার ভার নিয়ে নিত। আর তাতে আমরা খুব খুসী থাকতাম। তবে বিপদ একটা ছিল। যেদিন আমাদের লাইনে যেতে হত না সেদিন রান্নাঘরে পাচজনের উপস্থিতি, হয় নুন নয় লঙ্কার পরিমানে গড়বড় করে দিত, আর খাওয়াটা মাঝপথেই থামিয়ে দিতে হত। তার উপর আমি আর আব্রাহাম একসাথে মেসের মতন করে ছিলাম অতএব সময় সময় আমাদের রান্নাঘরে দশজন রাধুনী যে কি করত তা কল্পনা করে নিতে হবে। বাধ্য হয়ে আমাদের ফরমান জারী করতে হয়েছিল যে রান্নাঘর খালি একজনই ঢুকবে। এর পরে খাবার গুলো খাওয়ার যোগ্য হত। আমরা নিজেদের নামগুলকে একটু ছোট করে নিয়েছিলাম। আমার ব্যানার্জী থেকে ব্যান আর আব্রাহামের জন্য আবু থেকে বু। বিপদ হল আন্য সহকর্মীরা আমাদের ব্যানবু বা ব্যাম্বু বলে ডাকতো।

          একবার সখ হল পাখী পুষতে হবে। দুজনে দুটো টিয়া ধরে তার ডানা ছেটে খাচায় পুরে রাখা হল। দুই সিগারেটখোরের পোষ্যদেরও সিগারেট চাই অতএব কয়েকদিন পরেই আমাদের সিগারেটের ধোঁয়া নাক দিয়ে পাখী দুটো নেওয়া শুরু করলো। আমারটার নাম দেওয়া হয়ছিল গ্লুটন আর আবুরটা গ্র্যান্ড। ওদের ঐ নামে ডাকা হলে ওরাও গুটি গুটি এসে কাধের উপর চড়ে বসত আর মজাসে ধূম্রপান করত। প্রথম প্রথম ওদের খাচাতে রাখা হলেও পরে  ওরা দরজার পাল্লার উপরেই রাত কাটাত।এই সময় আমাকে প্রায় প্রতি সপ্তাহে চক্রধরপুরে যেতে হত আর দুতিন দিন থাকতে হত। একবার আমি এইরকম যাওয়ার পরে তিন দিন বাদে ফিরেছি। আবু আমাকে দেখেই বলল, দেখ তো গ্লুটন দুদিন ধরে কিছু খাচ্ছেনা। আমি ডাকতেই এসে আমার কাধে চড়ে বসে অভ্যাস মতন আমার কানের পাতাটাকে ঠোট দিয়ে চুলকোতে শুরু করলো। একটু বাদে নেমে এসে হাতের উপর বসলো। পিঠের উপর হাতটা রাখার পর হঠাত অসাড় হয়ে পড়ে রইল। বুঝলাম আমাকে ছেড়ে আমার গ্লুটন চলে গেছে। সেই রাতেই বাড়ীর পাশে একটা নিম গাছের গোড়ায় ওকে পুতে দিলাম। আবু তার গ্র্যান্ডকেও আকাশে উড়িয়ে দিল। মজার কথা এতদিন কিন্তু গ্লুটন আর গ্র্যান্ড কেউই খাচায় থাকত না কিন্তু উড়ে যাবার চেষ্টা করেনি। আমি এর পরে আর কোন পাখী পুষবোনা বলে ঠিক করে ফেললাম।

          আমাদের সময় কাটত সকাল আটটা থেকে বিকেল পাচটা পর্যন্ত লাইনের কাজে ার তার পরে সন্ধে বেলায় ইন্সটিটিউটে গিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলে। গরমের দিনে আর খেলা যেত না তখন শহরের রাস্তায় একটু টহল মারা বা সিনেমা দেখা। সিনেমা বলতে তখন একটাই মাত্র হল ছিল। রিক্সাতে মাইক লাগিয়ে কি সিনেমা চলছে তা জানান দিয়ে যেত। দাদার তখন সবেমাত্র বিয়ে হয়েছিল। আমি বাবার পুরনো ঘিড়িটা ব্যবহার করছিলাম। সেটা গল্ড কেসের সাইমা ঘড়ি কিন্তু পুরনো কাজেই কেসটাতে এক্টা ফুটো হয়েগিয়েছিল। দাদা একথে জানতেই তার হাত থেকে বিয়ের ঘড়িটা খুলে আমায় দিয়ে দিল। বলল কলকাতাতে ঘড়ির প্রয়োজন হয় না। রাস্তাঘাটে ঘড়িই ঘড়ি। একদিন ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে র‍্যাকেটে লেগে ঘড়িটা চুরমার হয়ে গেল। সযতনে তার পার্টস তুলে দেশলাইএর বাক্সে ভরে কলকাতায় নিয়ে এসে সারাই করানর পরে দাদা জানতে পারে।

          পুরুলিয়ার লোকেদের অর্থনৈতিক অবস্থা তখন খুব খারাপ ছিল। একে পাথুরে লালমাটী তার উপরে বৃষ্টির অভাব। কোনরকমে একটাই ফসল হত। কাজেই শহুরে বাবুরা এদের খুবই বঞ্চনা করত। আমি দেখেছি দু টাকার বদলে একজন স্ত্রী তার ইজ্জত বেচে দিচ্ছে। একজন পুরুষ দুটাকার বদলে একবস্তা চাল সাইকেলে করে ৫০ মাইল দূরে পৌঁছে দিয়ে আসছে। তখন একজন মজুরের দিনের মাইনে ছিল একটাকা চার আনা (পাঁচ সেন্টের মতন)। একবেলা খাবার জন্য খুব বেশী হলে এক সেন্টের মতন খরচ হত। আমার সংসার (মেস), দিনে পাঁচ প্যাকেট ক্যাপষ্টান সিগারেট, ইম্পোর্টেড কেম্ব্রিকের শার্ট ইত্যাদিতে খুব বেশী হলে মাসে পঞ্চাশ টাকা ( দু ডলারের মতন) খরচ হত। কিন্তু সাধারণ লোকেরা অত্যন্ত সৎ ছিল। একবার আমার মাইনের টাকাটা বাড়ীতে মনিঅর্ডার করবো বলে বাইরে রেখে কথা বলতে বলতে আমি আদ্রার জন্য রওয়ানা হয়ে গেছি। দু দিন বাদে ফেরার পরে আমার খালাসী আমাকে ডেকে টাকা গুলো কাগজের তলা থেকে বার করে গুনে নিতে বলল। সে যদি টাকা নিয়ে পালিয়ে যেত তবে আমি কিছুই করতে পারতাম না      
                                                                                 --- ---     পরের পর্বে চলবে
    


আমার ভাবনা



আমার ভাবনা


-- ঘুমিয়ে পড়লে ?
-- না। ভাবছি।
-- কিছু উপায় পেলে ?
-- না। ভাবতে দাওনা। খালি প্যাচর প্যাচর।
-- ঠিক আছে। আমি আর কিছু বলব না। তোমার ব্যপার তুমি সামলাবে।
-- হুম।
বুলি ওপাশ ফিরে শুল। আমার চোখে ঘুম নেই।
কাল রন্টু ফোন করে জানিয়েছিল ওরা দুদিনের জন্য আসছে। তাতে আমার একটু রাগ ও প্রকাশ পেয়ে ছিল
পেন্সনের টাকার প্রায় সবটাই খরচ কারে ফেলেছি। হাতে আর বিশেষ কিছুই নেই। বড় নাতির আবার চিকেন চাই। ছোটটার চাই মাছ। দুইয়েরই জোগাড় করতে হবে।
বুলিকে ডাকতেও পারছি না। সারা দিন খাটাখাটির পরে ও যে কিছু আমাকে জিজ্ঞেস করতে পেরেছে তাই অনেক।
বেশ কিছুক্ষণ বাদে ওকে জোর করে আমার দিকে ফেরাতেই বুঝতে পারলাম ও গুমরে গুমরে কাঁদছে।
আসছে কাল বিকেলে রন্টুর আসার কথা। এলে পরেই বেশ কিছু খরচ। সাথে নন্দিনী আর নাতিরাও আসবে। অনেক দিন পরে ওরা আসছে। কোথায় আমাদের আনন্দ হবার কথা, তা নয় মনে মনে ভাবছি মাসের শেষে না এলেই ভাল হত। হাতে যে কটা টাকা আছে তা দিয়ে মাসের শেষ পর্যন্ত চালানোই বেশ কষ্টেরওদের পেছনে খরচ করে হাত ফক্কা করলে কি ভাবে চলবে। বুলি সেটা বুঝতে পারছে। তার মন একদিকে চাইছে রন্টু আর নাতিদের কাছে পেতে, দেখতে, আবার ভয়ও পাচ্ছে চলে যাবার পর সংসারটা চালাবে কি করে।
--'তুমি কাদবে না। আমি কিছু একটা করে নেব। হাতে যা আছে তা দিয়ে ওরা চলে যাওয়া হয়ে যাবে'
--'হু। বুঝেছি। আবার কারুর কাছে হাত পাততে হবে'ফোঁপাতে ফোঁপাতে বুলি বলল।
--'না হয় পাতব। পরে দেখা যাবে। এখন আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোওতো'
বুলি নিশ্চিন্ত মনে আমাকে জড়িয়ে ধরল। ওর সমস্ত ভরসার জায়গাটা এই বুকের মাঝখানেআমি জানি আমার ক্ষমতা কতটুকু, কিন্তু ওর এই বিশ্বাসটা কোন দিনই ভেঙ্গে যেতে দেব না।
সারা রাত এপাশ ওপাশ করতে করতে সকাল হয়ে গেল।
চা খেয়ে বাজার করতে যাব হঠাত মোবাইলটা বেজে উঠল।
তুলে বললাম হ্যালো। শুনলাম নন্দিনী বলছে-
 ' প্রনাম বাবা, মাকে একটু দিন না'
হাত বাড়িয়ে বুলিকে মোবাইলটা দিয়ে বললাম -'নন্দিনীর  ফোন'
ফোনটা নিয়ে খুব খুসী মনে বুলি বলল – 'বল'
আস্তে আস্তে দেখলাম ওর মুখটা কি রকম হয়ে যাচ্ছে।
'ঠিক আছেআর কি করা যাবে'।' বলে ফোনটা রেখে দিতেই জিজ্ঞেস করলাম 'কি ব্যপার'?
আস্তে আস্তে বুলি বলল 'রিন্টুকে ষ্টেসন লিভিং পারমিশন দেয়নি।এখন আসতে পারছে না। পরে জানাবে কবে আসবে।'
আমার বুকের উপর থেকে একটা পাথর নেবে গেল।
 আর আমাকে ধার করতে , হাত পাততে যেতে হবে না। 

 

শনিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

হে সুন্দরী

হে সুন্দরী

বসে আছি পথ চেয়ে, কবে যাবে সিড়ি দিয়ে

দেখব তোমাকে এক পলক,

কি শাড়ী পড়েছ আজ, করেছ কিবা  সাজ

দেখাবে তার ঝলক।

সেন্ট পাউডারের গন্ধে, এখন থেকে সন্ধে

ভরে থাকবে এ চাতাল,

হে সুন্দরী, কেন তব এ সাজ

কেন তুমি সবাইকে করছ মাতাল

তুমি হেঁটে গেলে, পাড়ার সব ছেলে

তাকিয়ে থাকে পেছনে,

গাড়ীটা চলে গেলে, তারা ফিরে আসে

করুণ দৃষ্টি থাকে নয়নে

একা আমি হতে চাই তোমার প্রেমিক,

হয়ত আর থাকবনা কাল

প্রতিযোগী ভেবে ওরা সব রেগে

তুলে দেবে পিঠের ছাল

তাই বলি শোন, কি দরকার এখনও

এত করে তোমার সাজগোজ

এমনিই চলে গেলে, তোমাকে দেখতে পেলে

হবেই ধোলাই মগজ।।