বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪

নতুন কিছু লেখার তাগিদ

কতগুল জায়গাতে লেখার অনেক দরকার হয়ে পড়ছে। ফেসবুকে আপাতত দিন পনের লিখছি না কিন্তু পেজ স্পাইসি দিলীপে লিখতে তো হবেই। পুজা ার অশোকের কথা এমন একটা জায়গাতে এসে দাড়িয়েছে যে এবার ওদের বাবা-মা কি ক্রবে সেটা স্থির করতে হবে। কিন্তু লোকে কি চাইছে তা বোঝা যাচ্ছে না।
ইংরাজি ব্লগ  সাথে তো আছেই। তবে একটা সুবিধা যে ইংরাজী ব্লগে লেখাগুলো ছোট হলেও চলে যায় গল্পতো আর সেখানে লিখি না।
 পাঠকেরা কিছু পরামর্শ দিন না, যে পুজা ার অশোকে কি করবে? দেখি  কয়েক দিন তার পরে না হয় ওদের বাড়ি ছাড়া করে দেব।

বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

পুজার কথা (৫)


দিলীপ আর অশোক যতক্ষণ কথা বলছে তক্ষণে দিলীপের শোবার ঘরে মিনতি পূজাকে টেনে নিয়ে গিয়ে একেবারে সি আই ডির জেরা শুরু করে দিয়েছে। প্রথমে থতমত খেলেও শেষ পুজা বুঝতে পারল, এটা আর একটা র্যা গিং হচ্ছে। দেখতে ছোটখাট হলেও ধানি লঙ্কার জাত, কাজেই দেখি কে জেতে, কে হারে, ধরে নিয়েই তার উত্তরগুলো হচ্ছে।

মনে একটু ভয় আছে যে উলটো রিপোর্ট না করে, তাই তেড়িয়া হয়ে জবাব নয়, কিন্তু প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল।
প্রায় আধ ঘন্টা ধরে এই রকম প্রশ্নোত্তর চলার পরে দুজনে ঘর থেকে বার হল, আর সোজা দিলীপের কাছে হাজির।

এই যে। এই দেখ তোমার হবু ভাইয়ের বউকে। আমার কাছে পাশ মার্ক পেয়েছে, তুমি যদি চাও তাহলে কথা একটু বলে নাও। তবে সাহস আছে, মেসো না মানলেও এ কিন্তু অশোককে ছাড়বে না। এখন চিন্তা কর কি ভাবে কি করবে। বেশী দেরী করা চলবে না। অশোকের তো হায়দ্রাবাদে জয়েনিঙ্গের সময় এসে গেল। ওখানে গেলে এক বছর তো ছুটি পাবে না। এত আর তিনদিনের ক্যাসুয়াল লীভ নয়। এক মাসের মত লাগবে।

ঠাকুরপো, তোমার চিন্তার কারণ নেই। মাকে দিয়ে মেসোকে ম্যানেজ হয়ে যাবে। মার কোন কথাতে আজ পর্যন্ত না বলে নি। বলে রাখি, অশোকের বাবার একটু শালীবাহন বলে নাম আছে।

দুপুরে ভাত খাবার মধ্যে কিছু একটা করার প্ল্যান দিতে পারব। আর তা না হলেও কিছুদিনের মধ্যেই মা তোমাদের বাড়িতে যাবেন কিছু একটা করতে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিকেলে বাড়ী ফেরার পথে দুজনে নিজেদের মধ্যে ঠিক করে নিল যে হায়দ্রাবাদে গিয়ে একটা থাকার জায়গা জোগাড় হয়ে গেলে পূজাকে খবর পৌছাবে চলে আসার জন্য। তার মধ্যে যদি পূজার বাবা বিয়ের কথা মেনে নেয় তো অশোক কিছু একটা করে চলে এসে বিয়েটা তিন দিনের মধ্যে করে নেবে আর নয়ত ওখানে পূজা গেলে বিয়ে রেজিষ্ট্রী করে হবে।

এদের কথা তো শুনলাম। এবার পূজার বাবা মার কথাও একটু শুনে নিই না, তাঁরা কি ভাবছেন।

চলবে----




মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

পুজার কথা (৪)


পূজা আর অশোক যতক্ষণ মিনি ধরে লেকটাউনে পৌঁছচ্ছে ততক্ষণে আমরা দেখে নি মিনতি কি করছে। আগে মিনতির পরিচয়টা দিয়ে দিই। মিনতি হল অশোকের মাসতুত বৌদি।
সকাল থেকে মিনতি তার কর্তা, মানে দিলীপ কে অফিস যেতে আটকেছে। বলে আরে তোমার ভাইয়ের বৌ কে হবে দেখে নাও, আর তার পরে কি করতে হবে সেটা পরে বলব।
বাধ্য স্বামী, কাজেই অফিসে একটা ফোন করে একটু করুণ সুরে বলে দিল ভীষণ মাথা ব্যথা করছে, মাইগ্রেন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে,  দশটার পরে ডাক্তার দেখাতে যেতে হবে, তাই অফিসে যেতে পারছি না।
দিলীপ আর মিনতির বিয়েটা ঠিক এরেঞ্জড ম্যারেজ নয়, আবার পুরোপুরি লাভ ম্যারেজ নয়। যখন ওরা প্রেম করছিল, মানে মিনতির দিক থেকেই আগ্রহটা বেশি ছিল, তখন মিনতিদের বাড়ী থেকে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসা হলে দিলীপের মনস্কামনা পূরণ হয়। বিয়েটা নির্বিবাদে হয়ে যাবার পরে অন্যেরা জানত পারে।
লেকটাউনের বাড়ী পৌঁছতে অশোকদের প্রায় ঘন্টাটাক লেগে গেল, রাস্তায় একটু ট্রাফিক জ্যামের মতন ছিল। ঘরে ঢুকতেই মিনতি পূজাকে আলাদা ডেকে তার শোবার ঘরে নিয়ে গেল। অশোককে ছেড়ে গেল দিলীপের জিম্মায়।
দিলীপ জিজ্ঞেস করে কি রে সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিস কি? না পকেটে প্যাকেট আছে? থাকে যদি তাহলে ধরা আর নয়ত চারমিনার খাবি তো  ঐ টেবিলের ড্রয়ারটাতে আছে।
অশোক বলে না আজকাল একেবারে কমিয়ে দিয়েছি। খাবার পর ছাড়া খাই না। তাই আর প্যাকেট কিনি না। আর ক দিন বাদে তো ছাড়তেই হবে, তাই আগে থাকতেই প্র্যাকটিস করে নিচ্ছি।
তুই একটা ভীতুর ডিম, কোথায় পুরুষ সিংহ হয়ে গর্জে উঠে বলবি, আমি খাব, তা না কেউ বলে দিল আমি পছন্দ করি না, আর তুই শা- ছেড়ে দেবার প্ল্যান করেছিস।
অশোক বলে, না সেটা ঠিক নয়। আসল কথা প্রত্যেক বছর তো ট্যাক্স বাড়ছে এর পরে সিগারেটের দামে দেখবি এক দিনের মাইনেই বেড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হয় বোতলও  একদিন একটা প্যাকেটের চেয়ে সস্তা হয়ে যাবে।
হোক বা না হোক, আমি ছাড়ছি না। যাক তোর বৌদি বলছিল তুই নাকি তোর নিজের ইস্ত্রী ঠিক করে ফেলেছিস। মেসো জানে?
ক্ষেপেছিস, বাবা জানবে আর আমি বাড়ীতে থাকতে পারব। এটা কি চাঁদ ধরার মতন হয়ে যাচ্ছে না। আরে সেই জন্যই তো বৌদির শরণাপন্ন হয়েছি। সে যদি কিছু উপায় বার করতে পারে।
ওরে বাবা। ঐ হিটলারকে একমাত্র মাসীই পারে ঠিক করে ম্যানেজ করে নিতে। তুই মাকে বলনা সোজা, যে এ তোমার ছেলের বৌ হবে, পার তো মেনে নাও আর নয়ত আমি বিয়ে করে অন্য জায়গাতে গিয়ে থাকব। মেসো না মানলেও একবার নাতি এলে সব ঠিক মেনে নেবে। ততদিন না হয় ও বাড়িতে যাবি না। দেখা হবে না, কিন্তু তোর বৌদির মারফত খবরাখবর পেয়ে যাবি।
দূর সেটা ঠিক হবে কি? মার তো আবার প্রেসারের প্রবলেম আছে। কিছু না হয়ে যায়?
তাহলে যা দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়া। কি নাম মেয়েটার, কি করে?
এসেছে। এখন বৌদির জিম্মায়, তাঁদের কি শলা পরামর্শ হচ্ছে সেটা আমার জানার নয়। খালি আমাকে কি করতে হবে সেটা জানালেই তদনুযায়ী কার্য সম্পন্ন হইবেক।
কতক্ষণের মেয়াদে এসেছিস।
না সন্ধ্যের আগেই ঘরে পৌঁছতে হবে ওকে। তাই ধর, এখান থেকে তিনটের মধ্যে বেরলেই হয়ে যাবে।
ঠিক আছে। বুদ্ধির গোড়াতে একটু ধূম্রনিষেক করে নিই, তার পরে ভাবা যাবে কি করা যায়।


পূজার কথা

ভাবতে ভাবতে অশোক দেখতে পেল দূরে পূজা তার হাতটা উঁচু করে দেখতে দেখতে সাড়ে দশটা বেজে গেল। এতক্ষনে নিশ্চয়ই এসে যাবার কথা। তবে কি আসতে নাড়তে নাড়তে আসছে। ঠিক আসছে না বরং বলা যায় দৌড়চ্ছে। পরনে একটা গাঢ় নীল রঙের উপর জরির কাজ করা কামিজ আর মেরুন রঙের একটা সালোয়ার।
প্রথম কথা হল, সরি, চটীটা বিট্রে করে দিল। আর আটটা ছাব্বিশ লেট করে প্রায় পঞ্চাশে ঢুকেছে। তুমি কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছ?
অশোক মওকা পেয়ে বলে, তা প্রায় এক ঘন্টা।
এত আগে কি করতে এসেছ। অন্য কারুর জন্য এসেছিলে বুঝি? ছদ্ম রাগে পূজার জিজ্ঞাসা।তার পরেই প্রশ্ন, কোথায় যাবার প্ল্যান হয়েছে শুনি। সন্ধ্যের আগেই কিন্তু বাড়ীতে ঢুকতে হবে। মাকে কোন রকমে বুঝিয়ে বাবাকে ম্যানেজ করার কথা বলে এসেছি।
আরে এত ভয় পেলে কি প্রেম করা চলে। ইতনা তো তুম ডরোগী, তুম প্যার ক্যায়সে করোগী।
পুজা বলে, হয়েছে, হয়েছে, আর শারুখ খান হতে হবেনা। বল না কি প্রোগ্রাম।
চল আজকে তোমাকে বৌদির কাছে নিয়ে যাই।
চমকে উঠে পূজা জিজ্ঞেস করে বউদি, কে বৌদি, আমি চিনি কি।
আরে আগে থাকতে চেনার কি দরকার। আমাকে কি আগে চিনতে? তবুও ফর ইয়র ইনফরমেশন, দিস বৌদি ইস মাই মাসতুতো দাদার বৌ, বলতে পার মাই গাইড অন প্রেম।
নিজে তার কর্তাটিকে যে কি সুন্দর ভাবে লটকে নিলেন তা চিন্তাও করতে পারবে না। আমরা ভেবেছিলাম এ প্রেম ভেস্তে যাবে। বাড়ীর আপত্তি দু দিকেই। কিন্তু উইদিন ওয়ান ইয়ার দু পক্ষেই মেনে নিয়েছে। দেখি আমাদের ব্যপারে কি সলা দ্যায়। বলেছে নিয়ে এস, দেখি তার পরে কি করব তা নিয়ে চিন্তা।
পুজা মাথা নীচু করে বলে, আমার কিন্তু ভয় করছে। শেষ কালে যদি বলে দেন যে হবে না, তাহলে কি তুমি আমাকে আর ভালবাসবে না। আমি কিন্তু কিছুতেই মেনে নেব না।
অশোক বলে আমি কি তাই বলেছি নাকি। যদি বৌদি বাড়ীতে কিছু করে ম্যানেজ করতে পারেন। তোমার বাবার থেকে তো না বলেই ধরেই নিয়েছি। আমার এদিকে বাবা রাজী হলেও মার দিক থেকে একটু কিন্তু কিন্তু ভাব আছে।
পুজা বলে। আমার মাকে তো আমি ম্যানেজ করেছি, তোমার ফটো দেখিয়েছি। তুমি পাশ, কিন্তু বাবা ইজ দি ফাইনাল অথরিটী। তাঁর স্যাংশন না হলে হবে না। মাঝখান থেকে টাইম বরবাদ হচ্ছে।
কথা বলতে বলতে দুজনে ষ্টেশনের বাইরে বেড়িয়ে একটা লেকটাউনের মিনি ধরল।
চলবে-----






সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪

পূজা আর অশোকের কথা

পুজার মেজাজটা খুবই খিচড়ে আছে। বাড়ী থেকে বেরোনর সময় কানে ছিল মোবাইলের ইয়ারপ্লাগটা গোঁজা আর চোখটা ছিল স্ক্রীনের উপর। রাস্তার কোণের উঁচু পাথরটার কথা একেবারেই মনে ছিলনা। লাগলো এক হোঁচট। অন্য দিন ওটার কথা খেয়াল থাকে। আজকে মেজাজ ঠিক নেই বলে ওটার কথা মাথা থেকে বেড়িয়েই গেছিল। চটির স্ট্র্যাপটা একেবারে আলগা হয়ে গেছে। অনেক হাটার কথা আছে আজ, কাজে কাজেই এই চটিটা দিয়ে সেটা চলবে না। বাড়ী ফিরে চটিটা বদলাতেই হবে। তার মানে আটটা ছাব্বিশ ধরা যাবে নাতাড়াতাড়ি বাড়ীতে ফিরে চটিটা পালটে প্রায় দৌড়ে খড়ুয়া বাজার। বাসটা ধরে যখন স্টেশনে পৌঁছল তখন আটটা ছাপ্পান্নর গ্যালপিঙ্গটার লাইন হয়ে গেছে। একটু হাফ ছেড়ে বাঁচল।
অশোকের সাথে হাওড়াতে বড় ঘড়িটার নীচে মিট করার প্রোগ্রাম আছে। ওখান থেকে দুজনে জু তার পর ভেবে দেখার কথা। বাবু তো একটু দেরী হলেই ঘন ঘন ঘড়ি দেখেন আর মেজাজের পারাটাকে ক্রমশঃ উঁচু করতে থাকেন। বাড়ী থেকে বেরোনর সময় মাকে বলেছিল তুমি একটু বাবাকে ম্যানেজ করে নিও। আজ একটু ফিরতে দেরী হবে। মা তার ফ্রেন্ড, অশোকের কথাটা পূরোপূরী না হলেও বেশ কিছুটা জানেন আর বাকীটা তো মার গুন যে ঠিক বুঝতে পেরে যায়।
এমনিতে অশোক ভাল ছেলে। আপাততঃ  সল্ট লেকের এক কলসেন্টারে কাজ করছে। হায়দ্রাবাদে একটা ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছে। সিলেক্টেড। দুমাস বাদে জয়েন করতে হবে। চন্দননগরের পাদ্রীপাড়াতে থাকে।যখন অসক হায়দ্রাবাদ চলে যাবে সে সময়টার কথা পুজা এখনও চিন্তা করেনা এখন তার সময় কাটে দিনে কলেজে অশোকের সাথে টেক্সটিং করে। ফাঁক পেলে কথাও বলা যায় কিন্তু তার সময়ের অভাব। কলেজে পড়াওত করতে হবে। ওদিকে রাতে বাড়ীতে যে ফোনে কথা বলবে তার উপায় নেই । সব সময় তাড়া শুয়ে পড়।
ওদিকে কাল রাতে হটাত অশোকের ফোন। এদিক থেকে হা হু ছাড়া কথা বলার উপায় নেই। আর ওদিকে উনি অর্ডার করে বসলেন কলেজ যেতে হবে না। আজ ওনার ছুটি। কলকাতায় একটু ঘুরতে বার হবেন। বেড়ে মজা, ওনার না হয় পড়া নেই কিন্তু আমাকে তো পাশ করতে হবে। ও যেন ধরে নিয়েছে যে এ বাড়ীতে জামাই হয়ে আসছেন এটা কনফার্মড। মাঝে মাঝে গান গায় লে যায়েঙ্গে লে যায়েঙ্গে, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে। নিজেকে শারুখ খান মনে করে। জানে না তো আমার বাবা কাজলের বাবার চেয়েও রাগী।
যতক্ষণ পুজা  ট্রেনে হাওড়া পৌচচ্ছে, ততক্ষণে আমরা দেখে নিই আমাদের শ্রীমান অশোক কি করছেন। পূজার তো হাওড়া পৌছতে এক ঘন্টার মতন লাগবে, অবশ্যি যদি না ট্রেন লেট করে। আজকাল তো কারশেডের সামনে মিনিট পাঁচেক দাড়ান নিয়ম হয়ে গেছে। টাইম টেবলে ওটাকে হাওড়া আর লিলুয়ার মাঝে হালুয়া বলে হল্ট করে দিতে অসুবিধা কোথায়।
অশোক হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে পৌনে দশটা বাজে। কথামত আটটা ছাব্বিশের ট্রেনটা ধরলে এতক্ষণে দেখা দেওয়ার কথা। একগাল হাসির সাথে বত্রিশটা না হলেও সামনের কটা দাঁত বার করে বলে দিত আমি কিন্তু আজ রাইট টাইমে এসেছি। মনে মনে গুন গুন করে গাইতে থাকে আচ্ছা তো হম চলতে হ্যাঁয়। দেখা যাক পরের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ফোন করতে অসুবিধা  আছে কেননা যদি বাড়িতে থাকে তবে বাবার সামনে পড়ার ভয় আছে।
পূজার সাথে আলাপ বা পরিচয়ের শুরুটা ওদের কলেজের ফ্রেশার্স মীটে। একটা পার্পল কালারের সালোয়ার স্যুট পড়ে এসে, ফার্ষ্ট ইয়ারের ছিপছিপে চেহারার মেয়েটা, শ্রীদেবীর মিষ্টার ইন্ডিয়ার টিপ টিপ বরষা পানি গানের সাথে নেচেছিল। পানিমে আগ না লাগালেও অশোকের দিলে আগ তো লাগিয়েই দিয়েছিল। মানে এক কথায় লাভ এট ফার্ষ্ট সাইট।
তার পরে ধীরে ধীরে নোটসএর আদান প্রদান, ক্যান্টিনে চোখের ভাষার  ইঙ্গিত। সব কিছু সিনেমার স্ক্রিপ্টের মাফিক চলে যাচ্ছিল।  দেখতে দেখত তিনটে বছরে তাদের মনের ভাব ঘন হয়ে উঠছিল। সেটা জমে ক্ষীর না হলেও এখনকার অবস্থাটা রাবড়ীর ষ্টেজে পৌঁছেছে। 

এ নিয়ে অশোকের সহপাঠিনীদের মধ্যে একটা রাগ ছিল। তাদের হারিয়ে দিয়ে একটা জুনিয়র কিনা অশোককে কব্জা করে নিল। বছর তিনেক আগে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের অ্যাকসিডেন্টে বাবা মা দুজনেই গত হয়েছেন। তার মনের জ্বালাটা এখনও এত বেশি যে আজো যদি কোন মাওবাদী বা তাদের সহযোগী পিসিপিএ গ্রুপের লোককে কাছে পায় তবে তাকে ও ছিড়ে খেয়ে নেবে। বাবা মার শেষ কাজটাও ওরা করতে পারেনি। বডি সনাক্ত করতে পারা যায়নি। যে কোচে ওনারা ছিলেন তার থেকে একজনও বাঁচে নি।

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪

গঙ্গাসাগর মেলার সূত্রপাত


সূর্যের পুত্র মনু। মনুর ছেলের মধ্যে ছিল এক জন ছিল নাম তার ইক্ষাকু। আর ছিল এক মেয়ে, নাম তার ইলা। এই ইলার সাথে বিয়ে হয় চন্দ্রের ছেলের। হয়ে গেল বিখ্যাত সূর্য বংশ আর চন্দ্র বংশের প্রতিষ্ঠা। দশরথের ছেলে রাম ছিল এই সূর্য বংশের। কিন্তু তার আগে আমরা পাই এই সূর্য বংশে এক সাগর রাজাকে। সাগরের দুই বৌ। প্রভা আর ভানুমতী। দুজনেই সন্তান কামনাতে পূজা আচ্চা করতে লাগলে তাদের জিজ্ঞাসা করা হয় যে তোমাদের কি চাই বল। একজনের ৬০ হাজার ছেলে হবে, যারা করিতকর্মা হবে, আর আর একজনের একটি মাত্র ছেলে হবে কিন্তু তার প্রজন্মের নাম বিশ্ববিদিত হবে।

প্রভা ভেবে দেখল, তার যদি ৬০০০০ ছেলে হয় তবে তার সুবিধাই হচ্ছে কেননা তাঁরা  সব করিতকর্মা হবে বলা হচ্ছে। আর তা না হলে এক ছেলের পরে কোন প্রজন্মের ছেলের নাম সারা বিশ্বে জানবে সেটা কে জানে ।তাই সে  বলে দিলে তার ঐ ষাট হাজার ছেলের মা হওয়া মঞ্জুর। আর ওদিকে ভানুমতির একটাই ছেলে হল, নাম তার অসমঞ্জ। এই অসমঞ্জ ছিল কিন্তু অত্যন্ত অত্যাচারী। তার একটা সখ ছিল নবজাত শিশুদের ধরে নদীতে ছুড়ে ফেলা যাতে তারা ডুবে মারা যায়। এই অসমঞ্জের পরে আমরা যদি সপ্তদশ পুরুষে যাই, তবে আমরা পাব রাজা রাম কে।

সাগর রাজা যখন ঠিক করল, সে অশ্বমেধ যজ্ঞ করবে তখন তার অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া গিয়ে বাঁধা পড়ল কপিল মুনির আশ্রমে। সাগর রেগে কাই, ঘোড়া খুঁজে না বার করলে তো যজ্ঞ শুরুই হবে না। তাই হুকুম দিল তার ছেলেদের, যা খুঁজে আন ঘোড়াটাকে। বাবার হুকুম অমান্য হবে না, তাই ষাট হাজার ছেলে (প্রভার ষাট হাজার ছেলে ছিল। কেউ যমজ না হলে প্রভাকে কতদিন বেঁচে থাকতে হয়েছে সেটা কেউ হিসাব করতে পারবেন কি? আর সেই অনুযায়ী সাগর রাজাও, কেননা তার আর একটি স্ত্রীও ছিল ভানুমতী, যার মাত্র একটি ছেলে হয়েছিল) হারে রে করে বন জঙ্গল পুড়িয়ে দিয়ে দৌড়ল ঘোড়া খুজতে।

এক জায়গাতে গিয়ে দেখে এক বুড়ো বসে তপস্যা করছে। আর তার পাশে একটা খুটীতে ঘোড়াটা বাঁধা আছে। কোন রাজা ধরলে তাও কথা ছিল, কেননা তাঁদের মধ্যে রেষারেষী হতে পারে, যার ফলে ঘোড়াকে আটকে রাখার চিন্তা হলেও হতে পারে। কিন্তু এক সাধু বাবা কেন ঘোড়া বেঁধে রাখবে।  নিশ্চয় ঘোড়াটাকে কিছু ভাবে বশ করে বেধে রেখেছে, যদি বদলে কিছু পাওয়া যায়। কিছু গালাগাল আর হাত পা চালানোর পরে সাধুবাবা তো জেগে উঠলেন আর সাথে সাথে তার রক্ত চক্ষু। তার থেকে বেরিয়ে এল আগুন। অবশ্যি সাধুবাবা কিন্তু ড্রাগন ছিলেন না। নাম  ছিল তার কপিল।
 
গেল সাগর রাজার ষাট হাজার ছেলে পুড়ে ছাই হয়ে। রাজার যজ্ঞ রইল অসমাপ্ত। সাগরের নাতি, অসমঞ্জের ছেলে অংশুমান যখন তার জেষ্ঠতাতদের খুজতে খুজতে গিয়ে কপিলের আশ্রমে হাজির হল, তখন কপিল তাঁকে বলল হ্যাঁরে বাপ, তাঁদের তো আমি ছাই করে ফেলেছি । অংশুমান জিজ্ঞেস করে উপায় কি হবে তবে । কপিল বলে যাও গিয়ে গঙ্গাকে নিয়ে এস। তাহলে তাদের ছাইগুলো ধুয়ে গেলে তোমার জ্যেঠারা মুক্তি পাবে। মানে সোজা ভাষায় তাঁরা আমার আশ্রমে নোংরা করে ফেলেছে, তুমি জল দিয়ে জায়গাটা ধুয়ে পরিস্কার করে দাও। আমি তবে তাঁদের ছেড়ে দেব।  অংশুমান গেল ফেরত, গঙ্গা কোথায় ইত্যাদির খোঁজ খবর নিয়ে তাঁকে নিয়ে আসার বন্দোবস্ত করতে।

কিন্তু গঙ্গাকে নিয়ে আসা কি সোজা কথা। গঙ্গা থাকে আকাশে। তখনকার দিনে আকাশেও থাকার বন্দোবস্ত ছিল নিশ্চয়ই।  তাঁকে পৃথিবীতে নামাতে হবে, আর তার পরে সেই কপিল মুনির আশ্রম পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। চাট্টী খানি কথা নয়। কেউ পারে না। টাকার পর টাকা খরচ হয়ে যায়, আর এক প্রজন্মের পরে আরেক প্রজন্ম আসে, কিন্তু নো সল্যুশন। রাজ্য প্রায় ধ্বংস হবার উপক্রম। কোন রকমে টিকে ছিল কিন্তু গঙ্গাকে কপিল মুনির আশ্রম পর্যন্ত নিয়ে যাবার জেদ তাঁরা ছাড়েনি।

ভগীরথ যখন জন্মাল তখন কোশল রাজার আর বিশেষ কিছু আভিজাত্য নেই। তাছাড়া বাপ মরা ছেলে, মা তাঁকে মানুষ করে তুলেছে। কিন্তু তার মনে আছে যে কোশল রাজ্যের এত টাকা খালি গঙ্গাকে কপিলের আশ্রমে নিয়া যাবার জন্যেই নষ্ট হয়েছে। এঈ কাজটা তাঁকে শেষ করতেই হবে।  শুরু করল হাইড্রলিক্স আর জিওগ্রাফীর পাঠ নিতে। অনেক হিসাব নিকেষ করে দেখা গেল কৈলাস পর্বতের উপরে যদি গঙ্গাকে নামান যায় তবে তার পতনের বেগটা আটকান যাবে। মানে অত উচু থেকে নামলে তো পড়বার ধাক্কাটা তো অনেক জোরেই হবে।

এখন কৈলাস পর্বতে থাকতেন শিব। গাঁজা গুলি ভাঙ্গ খেয়ে, গায়ে  ইমমিউনিটি হয়ে গেছে। তার কাছে নিবেদন করা হল আপনি যদি গঙ্গাকে একটু ধরে বেঁধে রাখতে পারেন তবে আমি তাঁকে নামাতে পারি। নয়তো তাকে  যেখানে নামাব সেখানেই এক পাতাল পর্যন্ত গভীর গর্ত হয় যাবে। শিব রাজী। বলে আমার মাথায় যে জটা আছে  তার উপরে নামাতে পার।

এবার গঙ্গাকে তো এক লাফ তো মারতে হয় ভগীরথের জন্য। আর লাফ মারা মাত্রই পড়ল এসে ঐ জটার মধ্যে। আর পড়া মাত্রই গেল জটার মাঝে আটকে। সেই কবেকার ধুলো আর ছাই দিয়ে সযতনে বানানো জটা। সে এক অন্তহীন ধাঁধার মত জট। শেষকালে গঙ্গা পেল সাতটা রাস্তা। তিনটে পশ্চিম দিক দিয়ে, সেখান দিয়ে বার হবার পরে তাঁদের নাম হল সিন্ধু ইত্যাদি। তিনটে রাস্তা পেল পূর্ব দিক দিয়ে। তাঁরা হল  ব্রহ্মপুত্র ইত্যাদি। আর শেষ কালে বার হল গঙ্গা দক্ষিন দিক দিয়ে।

কিন্তু গঙ্গার দুষ্টুমি বা চপলতা এখনো শেষ হয় নি। নেমেই দেখা গেল সামনে জহ্ণু মুনির আশ্রম। বলে এটাই মনে হচ্ছে কপিলার আশ্রম,  দিই এটাকে ধুয়ে, তাহলে আর আগে এগোতে হয় না। জহ্ণু মুনি ব্যপার দেখে অবাক, বলা নেই কথা নেই এসে সারা আশ্রমে জলে কাদা করে দিচ্ছে। এটাকে তো একটু শিক্ষা দিতে হয়। বলে সেই জলে মারলেন এক চুমুক।  যত জল জটা থেকে নীচে নামে, সব জহ্নুর মুখ দিয়ে পেটের মধ্যে চলে যায়।গঙ্গাকে আর দেখতে পাওয়া যায় না।

ভগীরথ দেখে মহা বিপদ। দু হাত জোড় করে জহ্নু মুনিকে বলে, গুরুদেব। আপনি এত জল একসাথে পান করে গঙ্গাকে আপনার পেটের ভেতরে নিয়ে নিলে, আমার পূর্বপুরুষেরা উদ্ধার পাবে কি করে। এই গঙ্গার জল তো কপিলের আশ্রম পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। কথা শুনে জহ্নু মুনি বলে তাই নাকি। ঠিক আছে। এই বলে পুচুৎ করে গঙ্গাকে বার করে দিলেন।

ভগীরথের কাছে ম্যাপ তৈরী করাই ছিল। সে সেই রাস্তা দেখিয়ে গঙ্গাকে নিয়ে যাওয়া সুরু করলেন। সেই গোমুখ থেকে হরিদ্বার, সেখান থেকে কাশী। তার পরে নবদ্বীপ হয়ে কপিলের আশ্রম। ঠিক জানা নেই কতদিন বা কত ঘন্টা লেগেছিল কপিলমুনির আশ্রমে গঙ্গার পৌছতে। কিন্তু পৌঁছে গেলেন।  আশ্রম ধোয়া হল। প্রভার ছেলেরা এত দিনে মারা গেছে তাই তাঁরা সোজা স্বর্গের দিকে রওয়ানা দিলেন। শেষ পর্যন্ত মনে হয় সাগর রাজার সেই অশ্বমেধ যজ্ঞ আর হয়নি, কিন্তু সেই থেকে প্রত্যেক বছর  কপিল মুনির আশ্রমে গঙ্গাসাগর মেলা হচ্ছে।


বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪

পুর্ব দিকের নাম পুর্ব হল কেন? বা দিক নির্দেশের উপায়

এই লেখাটি আবার নতুন করে লিখে পোষ্ট করা হচ্ছে। কাজেই পুরাতন লেখা বাতিল করে মুছে দেওয়া হল। পাঠকদের কাছে মার্জনা চাইছি, 



বহুকাল আগের কথা। মানুষ গাছ থেকে নীচে নেমে ঘর দোর তৈরী করেছে। সর্দার গোছের, মানে দাদা টাইপের লোকে, তার মধ্যেই কিছুটা জায়গাতে তার  অধিকার ঠিক করে, বলতে শুরু করেছে এটা আমার রাজ্য।
রাজ্য কি এই রকম একজনই বানাল। উহু, এপাড়া ওপাড়া, সব জায়গাতেই ব্যাঙের ছাতার মতন রাজ্য গজিয়ে উঠতে শুরু হল। এখনকার মত এক রাজ্যের গায়েই কি অন্য রাজ্য ছিল? তা নয়, কেননা এই রকম রাজাদের চেয়ে পৃথিবীতে জায়গা ছিল অনেক, তাই তাঁদের মাঝে নো ম্যান্স ল্যান্ড কিছু পোড়া থাকত। কিন্তু তার প্রত্যেকেই মনে করত যে ওটা তার এলাকা।

রাজ্য স্থির হয়ে গেছে, এর তার কাছাকাছি অন্য আরও দু একটা রাজ্যের রাজাদের দেখতে পাওয়া গেল একটু মাটীর মানুষ। মানে তাঁদের কোন সৈন্যদল নেই, বেচারারা হয় তার প্রয়োজন বোধ করে নি, না হলে রাজকোষে পয়সার অভাব হয়েছিল। কোনটা তা ঠিক জানা নেই।

প্রথম সে রাজার কথা দিয়ে আমার লেখাটা শুরু করেছি সেই রাজার নাম ছিল বীরবিক্রমাদিত্য। রাজ্যের নাম রেখেছিলেন বিক্রমেরঘর। এই বিক্রমেরঘরের পাশেই, ছিল এর এক রাজা, তার নাম ছিল রাজপ্রতাপাদিত্য। রাজ্যের নাম প্রতাপপুর। এখন বিক্রমেরঘর আর প্রতাপপুরের মধ্যে বেশ কিছুটা জায়গা ফাঁকা পড়েছিল। অনেকদিন ধরে ঐ জায়গাটার উপরে বীরবিক্রমাদিত্যের নজর ছিল, কবে ওটাকে নিজের বিক্রমেরঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে নেওয়া যায়।

একদিন সকালে ঠিক করল যে, না আর চিন্তা করে কাজ নেই, একটা পত্র লিখে ঐ রাজপ্রতাপাদিত্যের কাছ থেকে জায়গাটা নিয়ে নেওয়া যাক। ওর তো আর সৈন্যদল নেই, কাজেই ভয় পেয়ে দিয়েই দেবে। বসে গেল চিঠি লিখতে।
একটু ইনিয়ে বিনিয়ে চিঠির শুরু না করে সোজা ধাই ধুম মার্কা লেখা। ওরে রাজপ্রতাপাদিত্য, তোর রাজ্যের গায়ে যে জমিটা আছে সেটা আমার চাই। কিন্তু কোন জমিটা? মহা মুস্কিল। প্রতাপপুরের চার দিকেই তো জমি খালি পড়ে আছে। ডাক মন্ত্রীমশাইকে। মন্ত্রী মশাই সব কথা শুনে একটু চুলগুলো ধরে টানবার চেষ্টা করতে লাগলেন। সরি, চুল কোথায়, ভদ্রলোকের মাথা ভর্তি টাক। শেষে রাজ্যে যত পন্ডিত ছিল, তাঁদের ডাকা হল।

তার তো এসে কি করবে। দিকগুলোর তো নামই নেই। লোকে এর বাড়ী, তার গাছ, নিদেন পক্ষে বড় মাঠ, ছোট জঙ্গল, এই সব ভাবেই দিক বোঝায়। এদিকে রাজামশাই মানে বীরবিক্রমাদিত্যের মেজাজ খারাপ হতে শুরু করেছে।
এমন সময় হেডপন্ডিত বৃহদলাঙ্গুল মশাই বললেন কিছুটা তো পেয়েছি। রাজা মশাইয়ের প্রশ্ন কি পেলেন। বৃহদলাঙ্গুল বললেন, আপনি খান যে জায়গাটা দিয়ে তার নাম কি । রাজার মশাই কিছু বলার আগেই আবার বললেন, ওটা তো মুখ। তাহলে মুখ যে দিকে সেটা সমুখ। এখন রোজ সকালে আপনার ঘুম ভাঙ্গে কি ভাবে? রাজামশাই বলে উঠলেন, আরে সুযযি ওঠে, আর তার দিকে তাকিয়ে চোখে আলো পড়লেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। বৃহদলাঙ্গুল বললেন, রাজা মশাই সবার আগে তো ঐ কাজটাই করেন। তাহলে ঐ যে দিক থেকে সূর্য ওঠে, সেটাকেই আগের দিক বা পুর্বের দিক নাম দিলে ঠিক হয় না কি?  সবাই বলে উঠল ঠিক ঠিক। এমন কি রাজামশাইয়ের পোষা টিকটিকিটাও বলে উঠল টিক টিক। সে দিন থেকে সকালে সূর্য ওঠার দিকের নাম হয়ে গেল পুর্ব।

কিন্তু বাকী দিকগুলো? এবার একটু ইতঃস্তত করে পন্ডিত মশাই বলেন, তার পরে রাজা মশাই আপনি কি করেন। রাজা এবার ক্ষেপে গেছেন। বলে উঠলেন মশাই আমি যা করি সবাই তাই করে, মানে একটু পেট খোলসা করি। বৃহদলাঙ্গুল পন্ডিত জিজ্ঞেস করলেন কোন দিক দিয়ে। রাজা তার তরোয়াল বার করে আর কি। পন্ডিত বলে রাজা মশাই থামুন, দেখুন সমূখ দিয়ে খান, এর পেছন দিয়ে ত্যাগ করেন, তাহলে আপনার ঐ দিকটা মানে পুর্ব দিকের উল্টোটা হল পশ্চাত বাঁ পশ্চিম।

সাধু সাধু সবাই বলে উঠল, রাজা মশাই এবার তার খাজাঞ্চীকে বলে ফেললেন বৃহদলাঙ্গুল মশাই যতটা স্বর্ণ হাতে তুলতে পারেন ততটা তাঁকে দেওয়া হোক। তার পরেই বললেন, বাকী দিক গুলো। বৃহদলাঙ্গুল বললেন, রাজা মশাই, আপনি পুর্ব দিকে মানে সকালের সূর্যের দিকে তাকিয়েছেন। পেট খোলসা করেছেন মানে পশিম দিয়ে করেছেন। এইবার আপনার পরের কাজ কি? রাজা মশাই বলেন, আরে কিছু খেতে হবে তো রে বাবা। পন্ডিতমশাই জিজ্ঞেস করলেন কি ভাবে? রাজা মশাই তার ডান হাতটা দেখিয়ে বললেন, এটা দিয়ে তুলে মুখের ভেতরে পাঠাব। পন্ডিত মশাই  বলেন, আরে তাহলে সকালে পুর্ব দিকে তাকালে আপনার ডান হাতের দিকটা মানে দক্ষিণ হস্তের দিকটাকে বলুন না দক্ষিণ। এবার এর সাধু সাধু নয়। হাই হুই হুররে কত রকম আওয়াজ হল যে তার রেকর্ডিং কেউ করেনি।

বাকী তবে রইল বাম হাতের দিকটা। ওটাকে কি তবে বাম বলা হবে? রাণী মা বলে উঠলেন কেন আমি বা অন্য বামারা কিন্তু তাহলে রেগে যাব। ডান হাত দিয়ে যদি খেতে পার বলে ঐ দিকটা ডান বা দক্ষিণ হয় তবে বাঁ হাতটা দিয়ে ভদ্রস্থ কিছু করা হয় কি? যাতে সেটার সাথে দিকের নাম দেওয়া যায়।

 সভা সেদিনকার মতন ভঙ্গ হল। লাঙ্গুল মশাই বাড়ি গেলেন। পরদিন সভাতে আসামাত্র রাজার জিজ্ঞাসা কি পেলেন। বৃহদলাঙ্গুল মশাই চুপ করে আছেন। রাজা মশাই আবার জিজ্ঞেস করলেন, কি, উত্তর । পন্ডিত মশাই বলেন হুম। রাজা মশাই আবার জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি উত্তর? পন্ডিত মশাই এবার বলে উঠলেন , রাজা মশাই, আপনি তো বলেই দিলেন। উত্তর।

সেই থেকে দিক গুলোর নাম হয়ে গেল পুর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ আর উত্তর।