(ইটালীর উপকথা)
একবার একজন লোক তার শহর
ছেড়ে বিদেশে গেল চাকরী করে কিছু টাকা রোজগার করতে। কাজ পেল সে এক পন্ডিতমশাইয়ের
কাছে। মন দিয়ে সে কাজ করতে সুরু করে দিল। তার কাজে পন্ডিতমশাই ভীষণ খুশী ছিল। বেশ
কিছুদিন কাজ করার পরে সেই লোকটার ইচ্ছে হল যে সে একবার বাড়ী থেকে ঘুরে আসে।
পন্ডিতমশাইকে বলে, “গুরুদেব, আমি অনেকদিন হল
ঘরদোর ছেড়েছি। একবার বাড়ির লোকজনকে দেখবার ইচ্ছে হচ্ছে। আমায় একবার দেশে ফিরবার
অনুমতি দিন”।
পন্ডিতমশাই ভেবে দেখলেন
সত্যিই অনেকদিন বেচারা ঘর ছাড়া, তাই বললেন, “ঠিক আছে তুমি যেতে পার,
কিন্তু তোমার মাইনেটা তো তোমাকে দিতে হয়। তা তুমিই বল সেটা কি ভাবে নেবে। হয় মাইনে
হিসাবে তিনটে উপদেশ নাও, আর নয়ত তোমায় তিনশ টাকা আমি নগদে দিচ্ছি।
লোকটা বলে, “গুরুদেব, আপনার উপদেশ
আমার কাছে অনেক দামী মনে হয়। আপনি টাকার বদলে ঐ উপদেশ তিনটি আমাকে বলুন”।
গুরুদেব তখন তাঁকে বললেন,
“নাও তবে শোন, আমার প্রথম উপদেশ হচ্ছে তুমি যখন কোন নতুন রাস্তা
ধরবে কিনা এই চিন্তায় পড়বে, তখন মনে রাখবে যে তোমার পুরনো রাস্তাই ভাল ছিল”।
আর দ্বিতীয় উপদেশ হল, “ তুমি সব সময় দেখবে অনেক
কিছু, কিন্তু সে নিয়ে কথা কমই বলবে। আর তৃতীয় উপদেশ হল, যখনই কোন কাজ করতে যাবে,
আগে অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করে নেবে যে সেটা করা ঠিক হবে কিনা”।
এই কথা বলে পন্ডিতমশাই
তাঁকে বিদায় জানালেন, আর সাথে একটা রুটীও দিয়ে দিলেন। যাবার আগে তাঁকে বলে দিলেন ,যে
এই রুটীটা, সে যখন সত্যি সত্যি, খুব আনন্দে থাকবে, তখনই যেন ভেঙে তার উপযোগ করে।
লোকটি তো পন্ডিতমশাইয়ের
কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘরের দিকে রওয়ানা দিল।
রাস্তায় সে জনাতিনেক সঙ্গীও পেয়ে গেল, যারা ঐ একই দিকে যাচ্ছে। সঙ্গীরা
কিছুদূর যাবার পরে এক জায়গাতে এসে বলে, “ঐ পুরনো রাস্তা দিয়ে
পৌছতে বেশী সময় লাগবে আর এদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে। তার চেয়ে চলে আমরা সবাই এই নতুন
চওড়া রাস্তা ধরে যাই”।
লোকটার তক্ষুনি পন্ডিতমশাইয়ের
কথা মনে পড়ে গেল যে পুরনো রাস্তা অনেক ভাল। সে অন্যদের বললে, “না ভাই আমি এই পুরনো চেনা
রাস্তা দিয়ে যাই”। অন্য লোকেরা তাঁকে ছেড়ে দিয়ে নতুন অন্য রাস্তা ধরল।
কিছুক্ষন বাদে লোকটা হঠাত বন্দুকের গুলির আওয়াজ পেয়ে ভাবে কি হল। আসলে ডাকাতেরা
তার সঙ্গীদের গুলি করে মেরে তাঁদের সব কিছু লুঠ করে নিয়েছিল। লোকটা মনে মনে ভাবে
এটা তো আমার সেই মাইনের একশ টাকার চেয়ে দামী উপদেশ ছিল।
এমন সময়ে চলতে চলত ভীষন
পরিশ্রান্ত আর ক্ষিধে পেয়েছে দেখে সে ঢুকে
পড়ল এক সরাইখানায়। খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে পড়ল টেবিলে। খাবার এল, রুটি আর মাংস।
মাংসের ডিসে কাঁটা দিয়ে খাবারটা নাড়তেই সে একেবারে চমকে উঠল, “আরে এটা যে মানুষের মাংস”। সরাইখানার মালিককে চেচিয়ে
ডাকতে গিয়েও সে চুপ করে গেল, কেননা তার হঠাত পন্ডিতমশাইয়ের দ্বিতীয় উপদেশ মনে পড়ে
গেল যে দেখবে বেশী কিন্তু বলবে কম।
সে কিছু না বলে যখন খাবারের
দাম মিটিয়ে দিয়ে সরাইখানা ছেড়ে রওয়ানা হচ্ছে, তখন সরাইখানার মালিক বলে, “তুমি তো খুব বুদ্ধিমান, কোন
চেঁচামেচী না করে তুমি চলে যেতে চাইছ । জান, যারা এর আগে ঐ মাংস দেখে চেঁচামেচী করেছে,
তাঁদের সবাইকে মেরে তাঁদের মাংসই রান্না করা হয়েছে। লোকটা ভাবল তাহলে
পন্ডিতমশাইয়ের দ্বিতীয় উপদেশও দেখছি আমার আরও একশ টাকার চেয়েও দামী। তাহলে আমার
দুশ টাকার চেয়েও বেশী রোজগার হয়ে গেল।
লোকটা চলে আগে। শেষে
গিয়ে পৌছাল তার ঘরে। দেখে ঘর খালি, কিন্তু একটা টেবিলে দুজনের মত খাবারদাবার আর সব
কিছু সাজান আছে। লোকটা ভাবে দুজন কোথা থেকে হবে।
সে যখন বিদেশে যায় তখন তো একজন মানে তার স্ত্রীই ছিল। তাহলে ব্যপারটা ভাল
করে দেখতে হয়।
ঢুকে গেল সে খাটের নীচে,
আর সেখান থেকে নজর রাখতে শুরু করল। কিছুক্ষণ বাদে দেখে তার স্ত্রী বাইরে থেকে এক কলসী জল নিয়ে ঘরে
ঢুকছে। আর তার পিছন পিছন এক সুপুরুষ দেখতে পণ্ডিত মশাই, অল্প বয়স্কই হবে, ঘরে ঢুকে আসছে।
রেগে সে তাঁদের মারবার
জন্য খাটের নীচ থেকে যখন বার হবে ভাবছে, তখনই শুনতে পেল যে সেই সুপুরুষ বলছে, “তাহলে পুজো শুরু করা
যাক। আগে পিতৃপুরুষদের নামে পূজো দিয়ে, তার পরে অন্য সবার মঙ্গল কামনা করার পুজো
হবে।
লোকটা এই সব দেখেশুনে আনন্দে একেবারে আত্মহারা হয়ে গেল আর খাটের নীচ থেকে বের হয়ে নাচতে শুরু করে দিল। পন্ডিতমশাইয়ের
তৃতীয় উপদেশ তাহলে তার কাছে আরও একশ টাকার চেয়ে দামী হল। তাহলে সে বোকামী করেনি যে
টাকার বদলে উপদেশ চেয়ে নিয়েছে।
তাহলে এত যখন আনন্দের
কথা হচ্ছে তখন গুরুদেবের দেওয়া রুটিটা ভাঙ্গা যাক। রুটিটা ভাঙ্গতেই দেখে তার মধ্যে
তার মাইনে তিনশ টাকা রাখা আছে।
তাহলে দেখলাম উপদেশের দাম কি টাকা দিয়ে মাপা যায়?
উত্তরমুছুনবাংলায় ভালো ভালো হাঁসির গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় ভূতের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় প্রেমের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন