কলু আর তার ছেলে
(সাওতালী উপকথা)
এক গ্রামে এক কলু তার পাঁচ ছেলেদের নিয়ে থাকত। বাপ মা আর
পাঁচ ছেলেরা, সবাই এক সাথেই থাকত। কিন্তু তার ছেলের বউদের একসাথে থাকার কোন ইচ্ছে ছিল
না। তারা খালি তাঁদের স্বামীদের বিরক্ত করত যে সম্পত্তি ভাগাভাগি করে নাও। আর একলা
আলাদা সংসার পেতে থাক।
বুড়ো তো প্রথমে রাজীই হয় না। শেষে একদিন ছেলেদের ডেকে
বলে “শোন, তোরা তো আলাদা হতে
চাইছিস। তাহলে একটা কাজ কর দেখি আগে। একটা
দু বিঘত লম্বা ডান্ডা নিয়ে আয়”। ছেলেরা ভয়ে ভয়ে ডান্ডা নিয়ে তো এল। তাঁদের ভাবনা এই বুঝি বাবা তাঁদের
পিঠেই ঐ ডান্ডা ভাঙ্গে। কিন্তু বুড়ো সে সব কিছুই করল না। বরঞ্চ বললে, “তোরা কি কেউ এই ডান্ডাটাকে ভাঙ্গতে পারিস”।
ছেলেরা বলে খুব সোজা। একটা কুড়ালী দিয়ে মারলেই ওটাকে দু টুকরো
করা যাবে। বুড়ো বলে, উহু খালি হাতে , কিছুর সাহায্য না নিয়ে ভাঙ্গতে হবে। যদি পারিস,
তবে তোদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিচ্ছি।
এক এক কোরে সবাই চেষ্টা করে কিন্তু কেউই পারে না। তখন
বুড়ো বলে, দেখ তোরা তো পাঁচ জন আছিস আর আমাকে নিয়ে সেটা ছয়। এক কাজ কর। এই
ডান্ডাটাকে ছটা লম্বা টুকরোতে চিড়ে ফেল দেখি। ছেলেরা খুব সহজেই ডান্ডাটাকে ছটা সরু
টুকরোতে চিড়ে ফেলতে পারল। তখন বুড়ো তাঁদের বলে এবার তোরা এক একটা টুকরোকে ভেঙ্গে
দু টুকরো করতে পারিস কিনা দেখ। ছেলেরা বলে খুব সোজা। এই নাও বলে প্রত্যেকে একটা করে
টুকরো নিয়ে পটাপট করে ভেঙ্গে দিল।
বুড়ো তখন বলে, দেখ এই টুকরোগুলো হচ্ছি আমরা। যতক্ষন আমরা
একসাথে আছি, ততক্ষণ কেউ কিছু করতে পারছে না। কিন্তু যেই আমরা আলাদা হয়ে যাব, অমনি
আমাদের ভেঙ্গে আলাদা করতে কারুর অসুবিধা হবে না।
ছেলেরা বলে, ঠিক কথা বলছ। তাহলে আমাদের সম্পত্তি ভাগাভাগী করার দরকার নেই, কিন্তু
আমাদের হাঁড়ি আলাদা করা হোক, যে যার খাবার নিজের মত করে বানিয়ে খাবে। বুড়ো কিন্তু এই কথাতে ভীষন আপত্তি জানাল। সে বললে,
“লোকে তোদের মধ্যে সম্পত্তি
ভাগাভাগি না করে আলাদা করে দিলে তো আমাকেই দোষ দেবে। ছেলেরা একেবারে নাছোড়বান্দা,
তাই শেষ পর্যন্ত সম্পত্তি ভাগ করেই দেওয়া হল।
কিছুদিনের মধ্যে দেখা গেল ছেলেরা খুব অর্থকষ্টের মধ্যে আছে।
রান্নার আনাজের কমি, জামা কাপড়ের ফাটা হাল, এমন কি বুড়ো বাপের পর্যন্ত ঐ একই অবস্থা।
বুড়ো ছেলেদের ডেকে পাঠিয়ে বলে, “তোদের একটা ধাঁধা দিচ্ছি। তার উত্তর দে দেখি। চারটে
কলসীর মধ্যে তিনটে ছোট কলসী খালি আছে আর একটা বড় কলসীতে জল ভর্তি আছে। এখন যদি বড়
কলসী থেকে জল নিয়ে ছোট কলসী তিনটেতে ঢালি, তবে সেগুলো তো ভরে যাবে, আর বড়টাও
একেবারে খালি হবে না। আর যদি বড় কলসী খালি থাকে আর ছোট তিনটে কলসীর জল তাতে ঢেলে
ভরতে যাই তবে বড়টা তো ভরবে না, পরন্তু ছোটগুলোও খালি হয়ে যাবে। এটা কেন হবে বল
দেখি।
ছেলেরা উত্তর দিতে পারেনা। তখন বুড়ো বলে দেখ এই কলসী
গুলোকে মনে কর আমরা। কাজেই আমি তাও সবাইকে কিছুটা হলেও দিতে পারতাম। কিন্তু আলাদা
হয়ে যাবার পরে তোরা তো আমাকে দিতে পারছিস না তার উপরে সেটা করতে গিয়ে তোরাও বিপদে
পড়ছিস।
ছেলেরা এইবার বুঝতে পারল। আর তার পরে তারা আবার এক হয়ে
থাকতে লাগল।
উত্তরমুছুনবাংলায় ভালো ভালো হাঁসির গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় ভূতের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় প্রেমের গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন