মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ, ২০১৫

বুড়ী আর তার খড়ের ষাঁড় (উক্রেইনের উপকথা)


 কোন এক সময়ে এক গাঁয়ে এক বুড়ো আর বুড়ি থাকত। বুড়ি ঘরে বসে চরখাতে সুতো কাটে আর বুড়ো বাইরে ঘুরে ঘুরে ছাদে আলকাতরা লাগান কাজ করে। দুজনের আর কেউ নেই, আর যা কিছু তাঁদের রোজগার হয় তার সমস্তটাই খাবারখরচে চলে যায়।জমা বলে কিছু আর থাকে না। একদিন বুড়ি এই নিয়ে বুড়োর সাথে কিছু কথা হবার পরে তাঁকে বলে, “তুমি একটা কাজ কর, আমাকে একটা ষাঁড় এনে দাও। বুড়ো বলে, “ষাঁড় কোথা থেকে হবে”। বুড়ী বলে, “খড় পাকিয়ে নিয়ে তাই দিয়ে বানিয়ে দাও না। আর তার পরে ওটার গায়ে আলকাতরা লেপে দিও”। “পাগল কোথাকার। খড়ের ষাঁড়ে আলকাতরা মাখিয়ে দিয়ে কি করবে শুনি”, বুড়ো জিজ্ঞেস করে। বুড়ী বলে, “আমি জানি ওটা দিয়ে আমি কি করব, তোমাকে তো কিছু করতে বলছি না। তুমি খালি ওটা আমাকে বানিয়ে দাও”। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে কি হবে, তাই বুড়ো কিছু খড় নিল আর তাই দিয়ে রাতে বসে একটা ষাঁড় বানিয়ে তাতে আলকাতরা লেপে দিল।
 ষাঁড় তৈরী। পরের দিন সকালে বুড়ী উঠে সেই ষাঁড়টাকে নিয়ে বার হল। সাথে তার চরখাটাও নিয়ে মাঠে গেল। আর মাঠে গিয়ে সেই ষাঁড়টাকে ছেড়ে দিয়ে সে সুতো কাটতে বসে গেল। সুতো কাটে আর গান গায়। “ছোট্ট ষাঁড় আমার, সুতো কাটি আমি এবার মাঠে চড়ে বেড়াও তুমি চলে এস ডাকি যখনই”। এই গায় আর সুতো কাটতে থাকে। কাটতে কাটতে বেলা অনেক হল, বুড়ি ঘুমিয়েই পড়ল। এখন কাছেই ছিল একটা ভালুক। সেই ভালুকড়টা এসে ঐ খড়ের ষাঁড়কে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কে হে”। ষাঁড় বলে, “আমি খড়ের ষাঁড়”। ভালুক বলে ওঠে, “আমায় একটু আলকাতরা দিতে পার, আমার সারা গায়ে যে কাটাছেড়া গুলো আছে, সেগুলো তাহলে তাড়াতাড়ি সারতে পারে”। কিন্তু ষাঁড়ের থেকে কোন জবাব এল না। রেগে গিয়ে ভালুক ঠিক করল, যে তাঁকে যখন ষাঁড় দেইনি, তখন সে নিজেই আলকাতরা নিয়ে নেবে। পড়ল ঝাঁপিয়ে আর গেল সেই আলকাতরাতে আটকে । যত নড়াচড়া করে ছাড়াতে চেষ্টা করে, আরও আটকে যায়। বাধ্য হয়ে সে ঐ ষাঁড়কে সাথে করেই বনের দিকে রওয়ানা দিল।
 এদিকে বুড়ী ঘুম ভেঙ্গে দেখে যে তার ষাঁড় সেখানে নেই। ঘরে চলে গেল কি? এই ভাবতে ভাবতে একটু এগোতেই দেখে ষাঁড় আর ভালুক একসাথে আটকে পড়ে আছে। উর্ধশ্বাসে ঘরে পৌঁছে বুড়োকে বলে, “দেখ এসে, আমার ষাঁড় কি রকম ভালুক ধরেছে”। বুড়ো গিয়ে দেখে সত্যি তাই। সে তাদের নিয়ে এসে ভালুক কে ভাঁড়ারঘরে আটকে রেখে দিল। পরের দিন সকালে বুড়ী আবার তার চরখা নিয়ে আর ষাঁড়কে সাথে নিয়ে গেল মাঠে। আবার সেই রকম ঝিমতে ঝিমতে ঘুমিয়ে পড়ল। এবার এল এক নেকড়ে। এসে ষাঁড়কে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কে হে”? ষাঁড় বলে, “আমি আলকাতরা মাখানো খড়ের ষাঁড়”। নেকড়ে ষাঁড়ের কাছে আলকাতরা চাইল এই বলে যে কুকুরের সাথে তার লড়াইয়ে গায়ে নানান জায়গাতে কেটে ছড়ে গেছে। আলকাতরা পেলে সেগুলো তাড়াতাড়ি সেরে যাবে। ষাঁড় যখন বললে নেকড়েকে নিজেই নিয়ে নিতে, তখন নেকড়ে ষাড়ের থেকে আলকাতরা নিতে গিয়ে ঐ আলকাতরাতে গেল আটকে। অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারল না। শেষে তাঁকে নিয়েই নেকড়ে ঘরের দিকে রওয়ানা দিল কিনতু অল্প দূরে গিয়েই শ্রান্ত হয়ে ঝিমিয়ে পড়ল। বুড়ী ঘুম থেকে উঠে দেখে তার ষাঁড় নেই। এদিক ওদিক খুঁজে দেখে নেকড়ে আর ষাঁড় একসাথে পড়ে আছে। এক দৌড়ে ঘরে গিয়ে বুড়োকে সব বলল। বুড়ো এসে দেখে সত্যি নেকড়ে আর ষাঁড় একসাথে পড়ে রয়েছে। তাঁদের ঘরে নিয়ে গিয়ে নেকড়েটাকে আলাদা করে নিয়ে ভাঁড়ার ঘরে বন্দী করে রেখে দিল।
পরের দিন আবার সেই রকম বুড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আর এক শেয়াল এসে আলকাতরা চায়। বলে কুকুরগুলোর সাথে মারামারীতে তার গায়ে অনেক চোট লেগেছে আর আলকাতরা পেলে সেগুলো তাড়াতাড়ি সেরে যাবে। ষাঁড় তাকে বলে নিজে এসে নিয়ে নিতে। আর হল কি। যেই নিতে গেছে অমনি শেয়াল গেল সেই আলকাতরাতে আটকে। কিছুতেই ছাড়াতে পারে না। চললে শেয়াল ষাঁড়কে টানতে টানতে তার আস্তানার দিকে। এদিকে বুড়ী ঘুম ভেঙ্গে দেখে তার ষাঁড় নেই। আর পরে দেখতে পেল যে ষাঁড়ের সাথে শেয়াল আটকা পড়েছে। এক দৌড় ঘরের দিকে। গিয়ে বুড়োকে ডেকে আনল। বুড়ো এসে শেয়াল কে নিয়ে বন্দি করল তার ভাঁড়ার ঘরে।
আর পরের দিন ঠিক এই ভাবেই এসে ধরা পড়ল এক খরগোস।
পরের দিন সকালে উঠে বুড়ো তো তার ছুরীতে বসে বসে শান দিচ্ছে। ভালুক দেখে জিজ্ঞেস করে, “ওটা কি করছ গো”? বুড়ো বলে, “ছুরীটাতে ধার দিচ্ছি। তোমাকে মেরে গাঁয়ের ছালটা দিয়ে আমাদের দুজনের জন্য একটা করে কোট তৈরী হয়ে যাবে। যা ঠান্ডা পড়ছে আজকাল”। ভালুক বলে, “আমাকে মের না। আমাকে ছেড়ে দিলে আমি তোমাকে অনেক অনেক মধু এনে দেব। তাতে তোমার অনেক টাকা হয়ে যাবে”। বুড়ো বলে, “তাহলে ছেড়ে দিচ্ছি, কিন্তু অতি অবশ্যই এনে দিবি”। এই বলে ভালুককে ছেড়ে দিল। আবার ভাঁড়ারের দরজার কাছে বসে বুড়ো ছুরিতে শান দিতে শুরু করল। এবার নেকড়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করে ওটা দিয়ে কি করবে। বুড়ো বলে, “তোমার গায়ের ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে তাই দিয়ে ঠান্ডার জন্য একটা গায়ের চাদর বানাব”। নেকড়ে বলে, “কি সর্বনাশ। আমাকে মারবে, তার চেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলে আমি তোমার জন্য একপাল ভেড়া এনে দেব”। বুড়ো বলে, “ঠিক কথা বলছ তো। তাহলে যাও তোমাকে ছেড়ে দিচ্চি কিন্তু ভেড়ার পাল যেন ঠিক মতন পাই”।
নেকড়ে চলে গেল আর আবার বুড়ো বসে ছুরিতে শান দিতে লাগলে, শেয়াল জিজ্ঞেস করে কি করবে ওটা দিয়ে। বুড়ো বলে, “এটাকে ভাল করে শান দেবার পরে তোমার গায়ের ছালটা ছাড়িয়ে তাই দিয়ে বুড়ির জন্য কোট বানাব। ওতে অনেক ফার আছে। খুব ভাল দেখাবে”। শেয়াল বলে, “লক্ষীটি আমাকে মের না। আমাকে ছেড়ে দাও, তাহলে আমি তোমার জন্য বেশ কিছু হাঁস মুরগী ধরে নিয়ে এসে দিচ্ছি”। বুড়ো বলে, “ঠিক আছে। তাহলে ছেড়ে দিচ্ছি। যাও আর আমার জিনিষ নিয়ে এস”। পড়ে রইল খালি খরগোশ। তাঁকে কাটবার কথা বলার আগেই সে বলে, তোমার জন্য বোতাম আর রিবন এনে দেব। আমাকে ছেড়ে দাও। বুড়ো রাজী হয়ে খরগোসকেও ছেড়ে দিল।
রাত যখন বেশ অনেক হয়েছে, তখন বুড়োবুড়ী হঠাত শোনে দরজাতে ঠক ঠক করে আওয়াজ। কে এত রাতে ডাকে এই ভেবে বুড়ো উঠে দরজা খুলতেই ভালুক এসে একটা বড় দেখে মৌচাক বুড়োকে দিল। বুড়ো সেটাকে রেখে শুতে যাবে, তখনই আবার দরজাতে টোকা। এবার এসেছে নেকড়ে। সাথে একপাল ভেড়া। এমনি করে তার পরে এল শেয়াল সাথে এক পাল হাঁস আর মুরগী নিয়ে। আর একেবারে শেষে এল খরগোস সাথে এক থলে বোতাম আর রিবন নিয়ে। বুড়ো আর বুড়ি খুব খুসী। ভেড়ার পাল বিক্রী করে সে কিনল একজোড়া বলদ তার গাড়ী টানার জন্য, যাতে করে সে গাড়ী ভাড়া দিয়ে পয়সা রোজগার করতে পারে। আর ষাঁড়। তাঁকে বাইড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। রোদের তাপে আসতে আসতে তার সব আলকাতরা গলে পড়ে গেল। বৃষ্টিতে খড়গুলো পচে গেল। আর একদিন সেই খড়ের ষাঁড় ধুলোতে মিলিয়ে গেল।

from Spicydilip http://ift.tt/1wYA6xU

via IFTTT

1 টি মন্তব্য: