মুশাভাই আগের স্ক্রিপ্টটা তৈরী করার পরে কেমন
জানি ম্যাদামরা হয়ে গেছিলেন। কিছুদিন আই পি এল এ কেচ্ছা পড়ার পরে আবার মাথায়
প্লটের কথা গজাতে শুরু করল। এবার বনবাসের যাত্রার পরের অংশে এসে গেলেন।
গাড়ী বেশ কিছু দূর আসার পরে , যখন রাত বেশ গভীর
হয়েছে হঠাত গাড়ী হেচকী মেরে থেমে গেল। ড্রাইভার নেমে বনেট তুলে এটা ঠোকে, ওটা
টানে। এই করে বেশ কিছুক্ষন বাদে বললে-
“বড়ে ভাইয়া, এ গাড়ী তো জবাব দিয়ে দিল। আমার নজরে তো কোন কিছু গড়বড় দেখতে পাচ্ছি না। ভাল
মেকানিক ডেকে দেখানোর দরকার। মাইল ছয়েক আগে একটা গ্রামে মেকানিকের দোকান দেখেছিলাম,
আপনারা গাড়ীতে বসে থাকুন, আমি গিয়ে তাঁকে ধরে নিয়ে আসছি।“
রামুর কথা “ যাবি। যা, নইলে কি আর করা যাবে।
কতক্ষন লাগবে?”
“ তা এখন বাজে রাত আটটা, হেটে যাব, মেকানিক কে
ওঠাব। তা প্রায় ঘন্টা চার পাচ লেগে যাবে”।
“যা, আর যত তাড়াতাড়ি পারিস ফিরিস। আমরা নাহয়
ততক্ষন গাড়িতেই বিশ্রাম নিচ্ছি।“
ড্রাইভারের প্রস্থান। ক্রমে সন্ধ্যা হয়ে অন্ধকার
নেমে আসে।
রামু- “ না দেখছি রাতটা গাড়ীতেই কাটাতে হবে”।
সীতা- “ কি মজা। এখানে রাত কাটাব। কিন্তু আমি
ড্রেস ছাড়ব কি করে?”
রামু- “ আমি লখুকে বলে দিচ্ছি ওদিক থেকে একটু ঘুরে
আসতে। তাছাড়া তোমার টয়লেটে যাবার তো দরকার
পড়বে। সেটা এক সাথেই সেরে এস।“
এক এক করে তিন জনই তাদের নাইটড্রেস পরে নিল। আর
পরে ডিকি থেকে খাবারের ডাব্বা বার করে ডিনার সেরে নিল।
রামু- “ সীতা, তুমি গাড়ির পেছনের সীটে লম্বা হয়ে
যাও। সামনের সীটে আমি আর লখু পালা করে রেস্ট করে নেব। যখন আমি শোব লখু জেগে পাহারা
দেবে আর লখু শুলে পরে আমি পাহারা দেব।“
সীতা-“ কেন? আমি কি পাহারা দিতে পারি না।“
লখু- “বাস, ঐটুকুই বাকী আছে। আধ আলোতে গাছের
পাতা নড়ছে দেখে তো ভুত আসছে বলে মনে হবে।“
রামু- “ আর বাহাদুরীতে দরকার নেই। যাও শুয়ে পড়।“
সীতা একবার স্লিপিং ব্যাগে ঢোকার পরে সকালে উঠল।
সারা রাত দুই ভাই নিজের গায়ে থাপ্পড় মেরে মশা তাড়িয়ে সকাল হবার পরে একটু ঝিম
মেরেছে। হঠাত দূরে ব্যান্ড পার্টির আওয়াজ শুনতে পেয়ে চমকে তাকিয়ে দেখে দূরে একটা
গাড়ী সাথে কিছু লোকজন আসছে। একটু বাদে ঠাহর হল যে আসছে সে ভুতু (ভাই ভরত)। ভরত একটু কাব্য করে কথা বলে। আসলে
বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে পালাগান লেখা অভ্যেস করছে।
ভুতু- “দাদা মেজদা, কোথা যাও চলিয়া, কাদিতেছে
অযোধ্যাপুরী ফুলিয়া ফুলিয়া,
যেও নাক পায়ে ধরি, বউদির চেহারা এ কি হেরি।
কোথা গেল সে পাউডার চর্চিত মুখশোভা, এক্ষনে দেখাইতেছে যেন পানা ভরা
ডোবা।
হাসিওনা তোমরা সবে। আমি আসিয়াছি এবে, ফিরাইতে
তোমাদের।“
রামু- “ তা হয় নারে ভাই। হ্যারে মেকানিক এনেছিস
সাথে?”
ভুতু-
মেকানিক আনিয়াছি সাথে, কিন্তু কিবা প্রয়োজন তাহার,
আমার গাড়ী লহ কর ব্যবহার।“
লখু- হ্যাঁরে ভুতু। আসার সময় উর্মীকে বলেছিলাম
মান্তুকে পেটানর সুপারীর বন্দোবস্ত করতে। তার কি হয়েছে জানিস। কেউ কি এসেছিল
পেটাতে?”
সীতা- “ সুপারী বনে কি হবে। পান কে খাবে।”
ড্রাইভার- “বড়ে ভাইয়া, মেকানিক বলছে আর দুঘন্টার
মধ্যে গাড়ি ঠিক করে দেবে। তখন রওয়ানা দিলে পরে দিন থাকতে থাকতে বর্ডারে পৌঁছে যাব।
বেলা পাচটার পরে আর বর্ডার ক্রশ করতে দেয়না।“
রামু- ‘ অতি উত্তম। ভুতু, তুই আমাদের সাথে
বর্ডার পর্যন্ত চল। অযোধ্যার কথা শুনে নেব। অখান থেকে তুই ফিরে আসিস। এ গাড়িটাও তো
ফেরত যাবে।“
ভুতু- “ মেজদা তুমি মন দিয়া শোন, মান্তুকে কেহ
পিটায় নাই এখনও,
তবে মা আর বড়মার সাথে মেজমার কথা নাই, দেখাইতেছে
যেন হইয়াছে ঠাই,ঠাই।”
রামু আর সীতার চোখের কোনে জল।
ভুতু- “ বৌদি, সত্য আমি কহিতেছি শোন। মান্তুকে
রাগের চোটে কেহ পিটায় নাই এখনও।
কিন্তু অবিরত গালির ধারায় ভরিতেছে কান, হয়তো
গিয়া দেখিব সে ত্যজিয়াছে প্রান।
অযোধ্যাতে রাত্রকালে জ্বলে নাই আলো, অন্ধকার,
নিষ্প্রদীপ, কুচকুচে কালো।
সরযুর কুল ছাপি গিয়াছে জলে, এত নয়ন ধারা
বহাইতেছে সকলে।
মেজদা হইয়াছ অতি শ্বার্থপর তুমি, দুঃখের সাথে
ইহা জানাইতেছি আমি।
মেজবউদি আমার, তোমার উর্মিমালা, কাঁদিতে কাঁদিতে
তার ধরে গেছে গলা।
কহিয়াছে মোরে যতক্ষন না ফেরে তোমার মেজদা,
করিবনা কোন প্রসাধন যতই না লাগুক ময়লা কাদা।
যাবার
সময় সে শেষ দেখিয়াছে এই বসনে মোরে, বসন বদলাইলে সে যদি চিনিতে না পারে।
সে ফিরিবে কবে তাহা যদি জানিতাম, তবে এই পরিধান
সেই দিনই পরিতাম।
আর ভেবেছ কি কোম্পানীর সি ও র চেয়ারে কে বসবে,
নাকি কম্পানীটাকে লাটে তুলে দেবে।
দাদা নাহয় এসেছে বাবার কথা শুনে, তুমি ত এসেছ
কোন কাজ বিনে।“
সীতাকে—“বউদি, বলত দশটি রুটী বানাইতে কত জল
লাগে, কি কি মিশাইতে হয় ঢালিবার আগে।
এর আগে কোনদিন করেছ কি রান্না, লঙ্কার ঝাঝ লেগে
পেয়েছে কি কান্না।
এই সন কাজ তোমার দ্বারা নয়, সেই জন্যই তো পাচ্ছি
আমি ভয়।
হাতপা পোড়াবে কোন একদিন, এখানের হস্পিটালে নেইকো
কেবিন।
ফিরে চল কহিতেছি আমি বারংবার, এর পরে কি করিবে
বিচার তোমার।
আসিয়াছিলাম তোমাদের ফিরাইব ঘরে, আমি ফিরিয়া গেলে
পস্তাইও না পরে।
দাদা এক কাজ কর, দাও কিছু চিনহ, চেয়ার শূন্য
থাকিবে তাহা ভিন্ন।
কাজ কর্ম দেখিব আমি চিনহের নাম লইয়া, লোকে তাহা
মানিবে চিনহ দেখিয়া।
রামু- “ নে তবে এটা”। পকেট থেকে তার আই-পড বার
করে দেয়।
ভুতু- “ খুব ভাল চিনহ দাদা,
এটার চেয়ে আউর জাদা,
কি দিতে পার এখন,
বনেতে রয়েছ যখন”।
আই-পড লইয়া ভুতুর প্রত্যাবর্তন। রামু, লখু এবং
সীতার বর্ডারের দিকে গমন।
ভরত মিলাপ সমাপ্ত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন