সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০১৫

কলু আর তার ছেলে (সাওতালী উপকথা)

কলু আর তার ছেলে
(সাওতালী উপকথা)

 

এক গ্রামে এক কলু তার পাঁচ ছেলেদের নিয়ে থাকত। বাপ মা আর পাঁচ ছেলেরা, সবাই এক সাথেই থাকত। কিন্তু তার ছেলের বউদের একসাথে থাকার কোন ইচ্ছে ছিল না। তারা খালি তাঁদের স্বামীদের বিরক্ত করত যে সম্পত্তি ভাগাভাগি করে নাও। আর একলা আলাদা সংসার পেতে থাক।

বুড়ো তো প্রথমে রাজীই হয় না। শেষে একদিন ছেলেদের ডেকে বলে শোন, তোরা তো আলাদা হতে চাইছিস। তাহলে একটা কাজ কর দেখি আগে।  একটা দু বিঘত লম্বা ডান্ডা নিয়ে আয়। ছেলেরা ভয়ে ভয়ে ডান্ডা নিয়ে তো এল। তাঁদের ভাবনা এই বুঝি বাবা তাঁদের পিঠেই ঐ ডান্ডা ভাঙ্গে। কিন্তু বুড়ো সে সব কিছুই করল না।  বরঞ্চ বললে, তোরা কি কেউ এই ডান্ডাটাকে ভাঙ্গতে পারিস

ছেলেরা বলে খুব সোজা। একটা কুড়ালী দিয়ে মারলেই ওটাকে দু টুকরো করা যাবে। বুড়ো বলে, উহু খালি হাতে , কিছুর সাহায্য না নিয়ে ভাঙ্গতে হবে। যদি পারিস, তবে তোদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিচ্ছি।

এক এক কোরে সবাই চেষ্টা করে কিন্তু কেউই পারে না। তখন বুড়ো বলে, দেখ তোরা তো পাঁচ জন আছিস আর আমাকে নিয়ে সেটা ছয়। এক কাজ কর। এই ডান্ডাটাকে ছটা লম্বা টুকরোতে চিড়ে ফেল দেখি। ছেলেরা খুব সহজেই ডান্ডাটাকে ছটা সরু টুকরোতে চিড়ে ফেলতে পারল। তখন বুড়ো তাঁদের বলে এবার তোরা এক একটা টুকরোকে ভেঙ্গে দু টুকরো করতে পারিস কিনা দেখ। ছেলেরা বলে খুব সোজা। এই নাও বলে প্রত্যেকে একটা করে টুকরো নিয়ে পটাপট করে ভেঙ্গে দিল।

বুড়ো তখন বলে, দেখ এই টুকরোগুলো হচ্ছি আমরা। যতক্ষন আমরা একসাথে আছি, ততক্ষণ কেউ কিছু করতে পারছে না। কিন্তু যেই আমরা আলাদা হয়ে যাব, অমনি আমাদের ভেঙ্গে আলাদা করতে কারুর অসুবিধা হবে না।

ছেলেরা বলে, ঠিক কথা বলছ। তাহলে  আমাদের সম্পত্তি ভাগাভাগী করার দরকার নেই, কিন্তু আমাদের হাঁড়ি আলাদা করা হোক, যে যার খাবার নিজের মত করে বানিয়ে খাবে।  বুড়ো কিন্তু এই কথাতে ভীষন আপত্তি জানাল। সে বললে, লোকে তোদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগি না করে আলাদা করে দিলে তো আমাকেই দোষ দেবে। ছেলেরা একেবারে নাছোড়বান্দা, তাই শেষ পর্যন্ত সম্পত্তি ভাগ করেই দেওয়া হল।

কিছুদিনের মধ্যে দেখা গেল ছেলেরা খুব অর্থকষ্টের মধ্যে আছে। রান্নার আনাজের কমি, জামা কাপড়ের ফাটা হাল, এমন কি বুড়ো বাপের পর্যন্ত  ঐ একই অবস্থা।

বুড়ো ছেলেদের ডেকে পাঠিয়ে বলে, তোদের একটা ধাঁধা দিচ্ছি। তার উত্তর দে দেখি। চারটে কলসীর মধ্যে তিনটে ছোট কলসী খালি আছে আর একটা বড় কলসীতে জল ভর্তি আছে। এখন যদি বড় কলসী থেকে জল নিয়ে ছোট কলসী তিনটেতে ঢালি, তবে সেগুলো তো ভরে যাবে, আর বড়টাও একেবারে খালি হবে না। আর যদি বড় কলসী খালি থাকে আর ছোট তিনটে কলসীর জল তাতে ঢেলে ভরতে যাই তবে বড়টা তো ভরবে না, পরন্তু ছোটগুলোও খালি হয়ে যাবে। এটা কেন হবে বল দেখি।

ছেলেরা উত্তর দিতে পারেনা। তখন বুড়ো বলে দেখ এই কলসী গুলোকে মনে কর আমরা। কাজেই আমি তাও সবাইকে কিছুটা হলেও দিতে পারতাম। কিন্তু আলাদা হয়ে যাবার পরে তোরা তো আমাকে দিতে পারছিস না তার উপরে সেটা করতে গিয়ে তোরাও বিপদে পড়ছিস।


ছেলেরা এইবার বুঝতে পারল। আর তার পরে তারা আবার এক হয়ে থাকতে লাগল।

বৃহস্পতিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৫

তিন উপদেশ (ইটালীর উপকথা)

(ইটালীর উপকথা)

একবার একজন লোক তার শহর ছেড়ে বিদেশে গেল চাকরী করে কিছু টাকা রোজগার করতে। কাজ পেল সে এক পন্ডিতমশাইয়ের কাছে। মন দিয়ে সে কাজ করতে সুরু করে দিল। তার কাজে পন্ডিতমশাই ভীষণ খুশী ছিল। বেশ কিছুদিন কাজ করার পরে সেই লোকটার ইচ্ছে হল যে সে একবার বাড়ী থেকে ঘুরে আসে।

পন্ডিতমশাইকে বলে, গুরুদেব, আমি অনেকদিন হল ঘরদোর ছেড়েছি। একবার বাড়ির লোকজনকে দেখবার ইচ্ছে হচ্ছে। আমায় একবার দেশে ফিরবার অনুমতি দিন

পন্ডিতমশাই ভেবে দেখলেন সত্যিই অনেকদিন বেচারা ঘর ছাড়া, তাই বললেন, ঠিক আছে তুমি যেতে পার, কিন্তু তোমার মাইনেটা তো তোমাকে দিতে হয়। তা তুমিই বল সেটা কি ভাবে নেবে। হয় মাইনে হিসাবে তিনটে উপদেশ নাও, আর নয়ত তোমায় তিনশ টাকা আমি নগদে দিচ্ছি।

লোকটা বলে, গুরুদেব, আপনার উপদেশ আমার কাছে অনেক দামী মনে হয়। আপনি টাকার বদলে ঐ উপদেশ তিনটি আমাকে বলুন

গুরুদেব তখন তাঁকে বললেন, নাও তবে শোন, আমার প্রথম উপদেশ হচ্ছে তুমি যখন কোন নতুন রাস্তা ধরবে কিনা এই চিন্তায় পড়বে, তখন মনে রাখবে যে তোমার পুরনো রাস্তাই ভাল ছিল

আর দ্বিতীয় উপদেশ হল, তুমি সব সময় দেখবে অনেক কিছু, কিন্তু সে নিয়ে কথা কমই বলবে। আর তৃতীয় উপদেশ হল, যখনই কোন কাজ করতে যাবে, আগে অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করে নেবে যে সেটা করা ঠিক হবে কিনা

এই কথা বলে পন্ডিতমশাই তাঁকে বিদায় জানালেন, আর সাথে একটা রুটীও দিয়ে দিলেন। যাবার আগে তাঁকে বলে দিলেন ,যে এই রুটীটা, সে যখন সত্যি সত্যি, খুব আনন্দে থাকবে, তখনই যেন ভেঙে তার উপযোগ করে।
লোকটি তো পন্ডিতমশাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘরের দিকে রওয়ানা দিল।  রাস্তায় সে জনাতিনেক সঙ্গীও পেয়ে গেল, যারা ঐ একই দিকে যাচ্ছে। সঙ্গীরা কিছুদূর যাবার পরে এক জায়গাতে এসে বলে, ঐ পুরনো রাস্তা দিয়ে পৌছতে বেশী সময় লাগবে আর এদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে। তার চেয়ে চলে আমরা সবাই এই নতুন চওড়া রাস্তা ধরে যাই

লোকটার তক্ষুনি পন্ডিতমশাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল যে পুরনো রাস্তা অনেক ভাল। সে অন্যদের বললে, না ভাই আমি এই পুরনো চেনা রাস্তা দিয়ে যাই। অন্য লোকেরা তাঁকে ছেড়ে দিয়ে নতুন অন্য রাস্তা ধরল। কিছুক্ষন বাদে লোকটা হঠাত বন্দুকের গুলির আওয়াজ পেয়ে ভাবে কি হল। আসলে ডাকাতেরা তার সঙ্গীদের গুলি করে মেরে তাঁদের সব কিছু লুঠ করে নিয়েছিল। লোকটা মনে মনে ভাবে এটা তো আমার সেই মাইনের একশ টাকার চেয়ে দামী উপদেশ ছিল।

এমন সময়ে চলতে চলত ভীষন পরিশ্রান্ত আর ক্ষিধে পেয়েছে দেখে  সে ঢুকে পড়ল এক সরাইখানায়। খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে পড়ল টেবিলে। খাবার এল, রুটি আর মাংস। মাংসের ডিসে কাঁটা দিয়ে খাবারটা নাড়তেই সে একেবারে চমকে উঠল, আরে এটা যে মানুষের মাংস। সরাইখানার মালিককে চেচিয়ে ডাকতে গিয়েও সে চুপ করে গেল, কেননা তার হঠাত পন্ডিতমশাইয়ের দ্বিতীয় উপদেশ মনে পড়ে গেল যে দেখবে বেশী কিন্তু বলবে কম।

সে কিছু না বলে যখন খাবারের দাম মিটিয়ে দিয়ে সরাইখানা ছেড়ে রওয়ানা হচ্ছে, তখন সরাইখানার মালিক বলে, তুমি তো খুব বুদ্ধিমান, কোন চেঁচামেচী না করে তুমি চলে যেতে চাইছ । জান, যারা এর আগে ঐ মাংস দেখে চেঁচামেচী করেছে, তাঁদের সবাইকে মেরে তাঁদের মাংসই রান্না করা হয়েছে। লোকটা ভাবল তাহলে পন্ডিতমশাইয়ের দ্বিতীয় উপদেশও দেখছি আমার আরও একশ টাকার চেয়েও দামী। তাহলে আমার দুশ টাকার চেয়েও বেশী রোজগার হয়ে গেল।

লোকটা চলে আগে। শেষে গিয়ে পৌছাল তার ঘরে। দেখে ঘর খালি, কিন্তু একটা টেবিলে দুজনের মত খাবারদাবার আর সব কিছু সাজান আছে। লোকটা ভাবে দুজন কোথা থেকে হবে।  সে যখন বিদেশে যায় তখন তো একজন মানে তার স্ত্রীই ছিল। তাহলে ব্যপারটা ভাল করে দেখতে হয়।
ঢুকে গেল সে খাটের নীচে, আর সেখান থেকে নজর রাখতে শুরু করল। কিছুক্ষণ বাদে  দেখে তার স্ত্রী বাইরে থেকে এক কলসী জল নিয়ে ঘরে ঢুকছে। আর তার পিছন পিছন এক সুপুরুষ দেখতে পণ্ডিত মশাই, অল্প বয়স্কই হবে,  ঘরে ঢুকে আসছে।
রেগে সে তাঁদের মারবার জন্য খাটের নীচ থেকে যখন বার হবে ভাবছে, তখনই শুনতে পেল যে সেই সুপুরুষ বলছে, তাহলে পুজো শুরু করা যাক। আগে পিতৃপুরুষদের নামে পূজো দিয়ে, তার পরে অন্য সবার মঙ্গল কামনা করার পুজো হবে।

লোকটা এই সব দেখেশুনে  আনন্দে একেবারে আত্মহারা হয়ে গেল আর  খাটের নীচ থেকে বের হয়ে নাচতে শুরু করে দিল। পন্ডিতমশাইয়ের তৃতীয় উপদেশ তাহলে তার কাছে আরও একশ টাকার চেয়ে দামী হল। তাহলে সে বোকামী করেনি যে টাকার বদলে উপদেশ চেয়ে নিয়েছে।

তাহলে এত যখন আনন্দের কথা হচ্ছে তখন গুরুদেবের দেওয়া রুটিটা ভাঙ্গা যাক। রুটিটা ভাঙ্গতেই দেখে তার মধ্যে তার মাইনে তিনশ টাকা রাখা আছে।

তাহলে  দেখলাম উপদেশের দাম কি টাকা দিয়ে মাপা যায়?



মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ, ২০১৫

বুড়ী আর তার খড়ের ষাঁড় (উক্রেইনের উপকথা)


 কোন এক সময়ে এক গাঁয়ে এক বুড়ো আর বুড়ি থাকত। বুড়ি ঘরে বসে চরখাতে সুতো কাটে আর বুড়ো বাইরে ঘুরে ঘুরে ছাদে আলকাতরা লাগান কাজ করে। দুজনের আর কেউ নেই, আর যা কিছু তাঁদের রোজগার হয় তার সমস্তটাই খাবারখরচে চলে যায়।জমা বলে কিছু আর থাকে না। একদিন বুড়ি এই নিয়ে বুড়োর সাথে কিছু কথা হবার পরে তাঁকে বলে, “তুমি একটা কাজ কর, আমাকে একটা ষাঁড় এনে দাও। বুড়ো বলে, “ষাঁড় কোথা থেকে হবে”। বুড়ী বলে, “খড় পাকিয়ে নিয়ে তাই দিয়ে বানিয়ে দাও না। আর তার পরে ওটার গায়ে আলকাতরা লেপে দিও”। “পাগল কোথাকার। খড়ের ষাঁড়ে আলকাতরা মাখিয়ে দিয়ে কি করবে শুনি”, বুড়ো জিজ্ঞেস করে। বুড়ী বলে, “আমি জানি ওটা দিয়ে আমি কি করব, তোমাকে তো কিছু করতে বলছি না। তুমি খালি ওটা আমাকে বানিয়ে দাও”। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে কি হবে, তাই বুড়ো কিছু খড় নিল আর তাই দিয়ে রাতে বসে একটা ষাঁড় বানিয়ে তাতে আলকাতরা লেপে দিল।
 ষাঁড় তৈরী। পরের দিন সকালে বুড়ী উঠে সেই ষাঁড়টাকে নিয়ে বার হল। সাথে তার চরখাটাও নিয়ে মাঠে গেল। আর মাঠে গিয়ে সেই ষাঁড়টাকে ছেড়ে দিয়ে সে সুতো কাটতে বসে গেল। সুতো কাটে আর গান গায়। “ছোট্ট ষাঁড় আমার, সুতো কাটি আমি এবার মাঠে চড়ে বেড়াও তুমি চলে এস ডাকি যখনই”। এই গায় আর সুতো কাটতে থাকে। কাটতে কাটতে বেলা অনেক হল, বুড়ি ঘুমিয়েই পড়ল। এখন কাছেই ছিল একটা ভালুক। সেই ভালুকড়টা এসে ঐ খড়ের ষাঁড়কে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কে হে”। ষাঁড় বলে, “আমি খড়ের ষাঁড়”। ভালুক বলে ওঠে, “আমায় একটু আলকাতরা দিতে পার, আমার সারা গায়ে যে কাটাছেড়া গুলো আছে, সেগুলো তাহলে তাড়াতাড়ি সারতে পারে”। কিন্তু ষাঁড়ের থেকে কোন জবাব এল না। রেগে গিয়ে ভালুক ঠিক করল, যে তাঁকে যখন ষাঁড় দেইনি, তখন সে নিজেই আলকাতরা নিয়ে নেবে। পড়ল ঝাঁপিয়ে আর গেল সেই আলকাতরাতে আটকে । যত নড়াচড়া করে ছাড়াতে চেষ্টা করে, আরও আটকে যায়। বাধ্য হয়ে সে ঐ ষাঁড়কে সাথে করেই বনের দিকে রওয়ানা দিল।
 এদিকে বুড়ী ঘুম ভেঙ্গে দেখে যে তার ষাঁড় সেখানে নেই। ঘরে চলে গেল কি? এই ভাবতে ভাবতে একটু এগোতেই দেখে ষাঁড় আর ভালুক একসাথে আটকে পড়ে আছে। উর্ধশ্বাসে ঘরে পৌঁছে বুড়োকে বলে, “দেখ এসে, আমার ষাঁড় কি রকম ভালুক ধরেছে”। বুড়ো গিয়ে দেখে সত্যি তাই। সে তাদের নিয়ে এসে ভালুক কে ভাঁড়ারঘরে আটকে রেখে দিল। পরের দিন সকালে বুড়ী আবার তার চরখা নিয়ে আর ষাঁড়কে সাথে নিয়ে গেল মাঠে। আবার সেই রকম ঝিমতে ঝিমতে ঘুমিয়ে পড়ল। এবার এল এক নেকড়ে। এসে ষাঁড়কে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কে হে”? ষাঁড় বলে, “আমি আলকাতরা মাখানো খড়ের ষাঁড়”। নেকড়ে ষাঁড়ের কাছে আলকাতরা চাইল এই বলে যে কুকুরের সাথে তার লড়াইয়ে গায়ে নানান জায়গাতে কেটে ছড়ে গেছে। আলকাতরা পেলে সেগুলো তাড়াতাড়ি সেরে যাবে। ষাঁড় যখন বললে নেকড়েকে নিজেই নিয়ে নিতে, তখন নেকড়ে ষাড়ের থেকে আলকাতরা নিতে গিয়ে ঐ আলকাতরাতে গেল আটকে। অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারল না। শেষে তাঁকে নিয়েই নেকড়ে ঘরের দিকে রওয়ানা দিল কিনতু অল্প দূরে গিয়েই শ্রান্ত হয়ে ঝিমিয়ে পড়ল। বুড়ী ঘুম থেকে উঠে দেখে তার ষাঁড় নেই। এদিক ওদিক খুঁজে দেখে নেকড়ে আর ষাঁড় একসাথে পড়ে আছে। এক দৌড়ে ঘরে গিয়ে বুড়োকে সব বলল। বুড়ো এসে দেখে সত্যি নেকড়ে আর ষাঁড় একসাথে পড়ে রয়েছে। তাঁদের ঘরে নিয়ে গিয়ে নেকড়েটাকে আলাদা করে নিয়ে ভাঁড়ার ঘরে বন্দী করে রেখে দিল।
পরের দিন আবার সেই রকম বুড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আর এক শেয়াল এসে আলকাতরা চায়। বলে কুকুরগুলোর সাথে মারামারীতে তার গায়ে অনেক চোট লেগেছে আর আলকাতরা পেলে সেগুলো তাড়াতাড়ি সেরে যাবে। ষাঁড় তাকে বলে নিজে এসে নিয়ে নিতে। আর হল কি। যেই নিতে গেছে অমনি শেয়াল গেল সেই আলকাতরাতে আটকে। কিছুতেই ছাড়াতে পারে না। চললে শেয়াল ষাঁড়কে টানতে টানতে তার আস্তানার দিকে। এদিকে বুড়ী ঘুম ভেঙ্গে দেখে তার ষাঁড় নেই। আর পরে দেখতে পেল যে ষাঁড়ের সাথে শেয়াল আটকা পড়েছে। এক দৌড় ঘরের দিকে। গিয়ে বুড়োকে ডেকে আনল। বুড়ো এসে শেয়াল কে নিয়ে বন্দি করল তার ভাঁড়ার ঘরে।
আর পরের দিন ঠিক এই ভাবেই এসে ধরা পড়ল এক খরগোস।
পরের দিন সকালে উঠে বুড়ো তো তার ছুরীতে বসে বসে শান দিচ্ছে। ভালুক দেখে জিজ্ঞেস করে, “ওটা কি করছ গো”? বুড়ো বলে, “ছুরীটাতে ধার দিচ্ছি। তোমাকে মেরে গাঁয়ের ছালটা দিয়ে আমাদের দুজনের জন্য একটা করে কোট তৈরী হয়ে যাবে। যা ঠান্ডা পড়ছে আজকাল”। ভালুক বলে, “আমাকে মের না। আমাকে ছেড়ে দিলে আমি তোমাকে অনেক অনেক মধু এনে দেব। তাতে তোমার অনেক টাকা হয়ে যাবে”। বুড়ো বলে, “তাহলে ছেড়ে দিচ্ছি, কিন্তু অতি অবশ্যই এনে দিবি”। এই বলে ভালুককে ছেড়ে দিল। আবার ভাঁড়ারের দরজার কাছে বসে বুড়ো ছুরিতে শান দিতে শুরু করল। এবার নেকড়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করে ওটা দিয়ে কি করবে। বুড়ো বলে, “তোমার গায়ের ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে তাই দিয়ে ঠান্ডার জন্য একটা গায়ের চাদর বানাব”। নেকড়ে বলে, “কি সর্বনাশ। আমাকে মারবে, তার চেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলে আমি তোমার জন্য একপাল ভেড়া এনে দেব”। বুড়ো বলে, “ঠিক কথা বলছ তো। তাহলে যাও তোমাকে ছেড়ে দিচ্চি কিন্তু ভেড়ার পাল যেন ঠিক মতন পাই”।
নেকড়ে চলে গেল আর আবার বুড়ো বসে ছুরিতে শান দিতে লাগলে, শেয়াল জিজ্ঞেস করে কি করবে ওটা দিয়ে। বুড়ো বলে, “এটাকে ভাল করে শান দেবার পরে তোমার গায়ের ছালটা ছাড়িয়ে তাই দিয়ে বুড়ির জন্য কোট বানাব। ওতে অনেক ফার আছে। খুব ভাল দেখাবে”। শেয়াল বলে, “লক্ষীটি আমাকে মের না। আমাকে ছেড়ে দাও, তাহলে আমি তোমার জন্য বেশ কিছু হাঁস মুরগী ধরে নিয়ে এসে দিচ্ছি”। বুড়ো বলে, “ঠিক আছে। তাহলে ছেড়ে দিচ্ছি। যাও আর আমার জিনিষ নিয়ে এস”। পড়ে রইল খালি খরগোশ। তাঁকে কাটবার কথা বলার আগেই সে বলে, তোমার জন্য বোতাম আর রিবন এনে দেব। আমাকে ছেড়ে দাও। বুড়ো রাজী হয়ে খরগোসকেও ছেড়ে দিল।
রাত যখন বেশ অনেক হয়েছে, তখন বুড়োবুড়ী হঠাত শোনে দরজাতে ঠক ঠক করে আওয়াজ। কে এত রাতে ডাকে এই ভেবে বুড়ো উঠে দরজা খুলতেই ভালুক এসে একটা বড় দেখে মৌচাক বুড়োকে দিল। বুড়ো সেটাকে রেখে শুতে যাবে, তখনই আবার দরজাতে টোকা। এবার এসেছে নেকড়ে। সাথে একপাল ভেড়া। এমনি করে তার পরে এল শেয়াল সাথে এক পাল হাঁস আর মুরগী নিয়ে। আর একেবারে শেষে এল খরগোস সাথে এক থলে বোতাম আর রিবন নিয়ে। বুড়ো আর বুড়ি খুব খুসী। ভেড়ার পাল বিক্রী করে সে কিনল একজোড়া বলদ তার গাড়ী টানার জন্য, যাতে করে সে গাড়ী ভাড়া দিয়ে পয়সা রোজগার করতে পারে। আর ষাঁড়। তাঁকে বাইড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। রোদের তাপে আসতে আসতে তার সব আলকাতরা গলে পড়ে গেল। বৃষ্টিতে খড়গুলো পচে গেল। আর একদিন সেই খড়ের ষাঁড় ধুলোতে মিলিয়ে গেল।

from Spicydilip http://ift.tt/1wYA6xU

via IFTTT

রবিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৫

বেড়াল কেন ইঁদুর খায় (দক্ষিণ নাইজেরিয়ার উপকথা)

রাজা আনসা গত পঞ্চাশ বছর ধরে কালাবারের রাজা হয়ে রাজত্ব করছেন। গোঁয়ার গোবিন্দ,আর রগচটা রাজা, কিন্তু তার একটা বেড়াল ছিল যাকে তিনি খুব ভাল বাসতেন। বেড়ালটা আবার রাজার ভাঁড়ার আর ঘরদোরের দেখাশুনাও করত। আর ছিল একটা ইঁদুর। সেটা রাজার চাকরের কাজ করত। ইঁদুরটা ছিল কিন্তু খুব গরীব, আর সে যখন রাজামশাইয়ের এক দাসীকে ভালবেসে ফেলল তখন হল মুশকিল, কেননা কিছু দাসীকে উপহার হিসাবে কিছু কিনে দেবার পয়সাও তার কাছে নেই।

কিন্তু পয়সা না থাকলে কি হবে, একটু বুদ্ধি খরচ করে সে ঠিক করে নিল যে রাজামশাইয়ের ভাঁড়ার ঘরের থেকে কিছু নিয়ে উপহার হিসাবে দিলেই ভাল হবে। আর সেই অনুযায়ী ভাড়ারের ছাদে একটা ছোট্ট ফুটো করে ইঁদুর বাবাজী তো ভাঁড়ার ঘরে ঢুকে গেল। আর সেখান থেকে কিছু ভুট্টা আর আতা চুরি করে নিয়ে সেই দাসীকে উপহার হিসাবে দিল।

ওদিকে মাসের শেষে বিড়াল যখন ভাঁড়ারের হিসাব মেলাতে লেগেছে, তখন দেখে যে ভুট্টা আর আতার হিসাবে গন্ডগোল। বেশ কিছু জিনিষ হিসাবে কম পড়ছে।

রাজা মশাই একে রগচটা লোক, তার উপরে এই হিসাবের গরমিল দেখে বিড়ালের উপর বেশ রেগেই গেলেন। বিড়াল কিন্তু ভেবে পায়না কি ভাবে এই চুরী হয়েছে, এমন সময় তার এক বন্ধু এসে বলে যে এসব ইঁদুরের কাজ। ইঁদুর এইসব নিয়ে তার বান্ধবীকে উপহার হিসাবে দিয়েছে।

বেড়াল এসে রাজামশাইকে একথা বলতে, রাজাবশাই তো সেই দাসীকে ডেকে আচ্ছা করে মার লাগালেন।ইঁদুরটাকে বেড়ালের কাছে ছেড়ে দিলেন। আর বেড়াল আর ইদুরকে তাঁদের চাকরী থেকেও তাড়িয়ে দিলেন। বেড়াল গেল ভীষন রেগে, আর তাই ইঁদুরকে জ্যান্ত খেয়ে ফেলল।

সেই থেকে সব বেড়াল ইঁদুর দেখলেই খেয়ে নেয়।
from Spicydilip http://ift.tt/1wYA6xU


via IFTTT

বুধবার, ১১ মার্চ, ২০১৫

ব্যাঙের রাণী (মেক্সিকোর উপকথা)

এক রাজার দুই ছেলে ছিল। আর তাঁদের মধ্যে একজনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছিল। কার সাথে, না এক সুন্দরী রাজকুমারীর সাথে। একদিন ছোট রাজকুমার তার প্রাসাদের বাগানে একটা পুকুরে তার পোষা গাধাকে জল খাওয়াতে নিয়ে গেছিল। ঠিক তখনই তার সাথে দেখা হল এক ব্যাঙ্গের রাণীর। রাণীর তো রাজকুমারকে দেখে খুব পছন্দ। রাণি তাঁকে বলে যে সে রাজকুমারকে বিয়ে করতে চায়। রাজকুমার রাজী বিয়ে করতে।

কিন্তু বিয়ে তো অনেক খরচের ব্যপার, তাই রাজকুমার গেল তার বাবার কাছে। গিয়ে বলে আমি ব্যাঙ্গের রাণিকে বিয়ে করব, আমাকে কিছু টাকা পয়সা দাও। রাজা তো অবাক। এটা কি বলে তার ছেলে। শেষকালে ব্যাঙ্গের রানিকে বিয়ে করবে। কি আর করা যায়। যাকগে তার যাকে ভাল লাগে তাকেই বিয়ে করুক। এই ভেবে দিয়ে তো দিলেন দরকার মতন কিছু টাকা। বিয়ে তো হয়ে গেল দুজনের।

 তখন রাজা মশাই বললেন যে দুই বউইয়ের মাঝে কাকে ভাওল দেখতে তা বিচার করবেন। বলে দিলেন দুজনাকেই ভাল ভাল জামা কাপড় পড়িয়ে তার সামনে হাজির করতে, যাতে তিনি ঠিক করতে পারেন কে বেশী সুন্দর। সেজন্য রাজামশাই তাঁদের দুজনাকেই একটা করে পাখি আর একটা সুন্দর দেখতে কুকুরও উপহার হিসাবে দিলেন। কিন্তু রাজকুমারদের ওখান থেকে আলাদা করে রেখে গেলেন তার ছেলেদের বউদের দেখতে।

দেখা হয়ে যাবার পরে তার পরে সবাই বসলেন খেতে। খাওয়া শেষ হবার পরে রাজামশাইয়ের একটু নাচবার ইচ্ছেও হল। তিনি বললেন তাহলে বড় বউয়ের সাথে প্রথমে নাচা যাক। সুরু হল নাচ। কিন্ত এর মধ্যে ঐ যে ব্যাঙ রাণি ছিল, সে এসে খাবার টেবিল থেকে কিছু হাড় নিয়ে মন্ত্র পড়তে শুরু করে দিলে, বড় বৌ সেটা দেখতে পেয়ে ঠিক করে ফেলল যে সেও তাহলে ছোট বউয়ের নাচের সময় এই মন্ত্র পড়ার কাজটা করবে।

এবার রাজামশাই যখন ব্যাঙের রাণীর সাথে নাচ শুরু করলেন তখন ছোট বৌ তার ঐ মন্ত্র পড়া হাডগুলোকে এক এক করে মাটীতে ফেলতে লাগল, আর ফেলার সাথে সাথেই সেগুলি সোনার হয়ে যেতে লাগল। এই দেখে বড় বৌও তার সেই মন্ত্রপড়া হাড মাটীতে ফেলতে গেলে সেই হাড় গিয়ে লাগল ছোট বউয়ের মাথায়। তার পর ছোট বৌ গেল মরে। ভালই হল, কেন না ছোট বৌ মানে ঐ ব্যাঙের রানী ছিল এক ডাইনী।

from Spicydilip http://ift.tt/1wYA6xU

via IFTTT

সোমবার, ৯ মার্চ, ২০১৫

বাদরের বাঁদরামো (সাওতালী উপকথা)

একটা সময়ের কথা বলছি যখন এক বাগানে অনেক রকমের ফল নিজের থেকেই হত আর জঙ্গলের সমস্ত জন্তু জানোয়ারেরা মনের সুখে সেগুলো খেতে পারত। কিন্তু সেটা তারা পারত একটা শর্তে। তাঁদের গিয়ে ঐ গাছের কাছে নমস্কার করে, মাথা ঝুকিয়ে বলতে হত, “ হে অমুক গাছ, আপনি কি আমাকে দয়া করে আপনার ফলের একটু স্বাদ নিতে দেবেন”। 
খেয়াল রাখতে হত যে, তারা গাছের নাম ঠিক করে বলছে, আর ঐ দয়া করে কথাটা অতি অবশ্যই বলেছে। এটাও মনে রাখতে হত যে হ্যাংলামো করে অনেক ফল পেড়ে নিয়ে নষ্ট যেন না করা হয়। তাঁদের আম খাবার ইচ্ছে হলে আম গাছের কাছে গিয়ে বলতে হত, “ ও ভাই আম গাছে , তুমি কি দয়া করে একটা আম আমাকে খেতে দেবে”। বাস। অমনি আমগাছ থেকে একটা ভাল দেখে পাকা মিষ্টি আম, তার সামনে পড়ত, আর সেটা সে খেতে পারত। 
এখন সেই বাগানের এক পাশে একটা সুন্দর দেখতে গাছ ছিল, আর তাতে সুন্দর সুন্দর দেখতে কিছু ফল হয়েছিল। কিন্তু সেই ফল কেউই খায় নি। কেন না ঐ গাছটার নামই তো কেউ জানত না। আর নাম না জানলে গাছটাকে কি নামে ডাকা হবে। 
ঐ বাগানেরই এক পাশে একটা ছোট্ট কুড়েঘরে এক বুড়ী থাকত। যদি কোন জানোয়ার কোন গাছের নাম না মনে করতে পারত, তবে তার কাছে গিয়ে জেনে আসত। বাগানে যত গাছ ছিল বুড়ী তাঁদের সব গাছগুলোর নাম জানত। এই গাছের নামও বুড়ি জানত। হলে কি হবে, গাছের নামটা এত লম্বা আর খটমট যে জানোয়ারেরা ঐ নামটা শুনে সেই বুড়ির বাড়ি থেকে গাছ পর্যন্ত আসতে আসতেই নাম ভুলে যেত আর গাছের কাছে ফল চাওয়া হত না।  ঐ বাগানে একটা বাঁদর থাকত। সেই বাঁদর আবার গীটার বাজিয়ে গানও গাইত। জন্তু জানোয়ারেরা তার গান শুনতে খুব ভালবাসত। এইবার সেই বাঁদরের ইচ্ছে হল যে ঐ নাম না জানা গাছের ফল খায়। গেল সে বুড়ীর কাছে গীটার বগলে করে। আর বুড়ীর কাছে ঐ গাছটার নামও জেনে নিল, তার পরে সেই নামটাকে নিয়ে একটা গান বানিয়ে ফেলল। গীটার বাজায় আর সেই গানটা গায়, যাতে নামটা না ভুলে যায়। জন্তু জানোয়ারেরা জিজ্ঞেস করে এটা আবার কি গান গাইছে। কিন্তু বাঁদর কোন উত্তর দ্যায় না খালি গেয়ে চলে আর সেই গাছটার দিকে হেটে। 
গিয়ে পৌঁছল সেই গাছের কাছে। কি রকম সুন্দর ফলটা দেখতে। সে কোন রকমে এটুকু মনে রেখেছিল তাঁকে নামটা দুবার বলতে হবে আর দয়া কোরে এই কথাটাও যেন বলা হয়। বাঁদর সে কথা একেবারে ভোলে নি। তাই ঠিক মত বলে দিতেই গাছ তার একটা ফল বাঁদরের সামনে দিয়ে দিল। বাঁদর সেটাকে তুলেই এক কামড়। আর তার পর ওয়াক ওয়াক থু থু।, কি বিচ্ছিরী খেতে রে বাবা। ফলের বাকীটা সে ছুঁড়ে প্রায় বাগানের বাইরে ফেলে ছিল। কিন্তু বাঁদরের বাঁদড়ামো এবার সুরু হল। সে ভাবে একা সে কেন এই বাজে স্বাদের ফল খাবার শাস্তি পায়।
 তার পর থেকে কোন না কোন জানোয়ারকে ধরে তাঁকে ঐ সুন্দর দেখতে ফলটা খাওয়াত। আর তারা যখন সেই বিশ্রী ফলটা খেয়ে মুখ ব্যাঁকাত তখন বাঁদর খুব মজা পেত। সেটাই তার বাঁদরামো ছিল।

from Spicydilip http://ift.tt/1wYA6xU

via IFTTT


রবিবার, ৮ মার্চ, ২০১৫

বাঘের গায়ে দাগ কি করে হল (বর্মা দেশের রূপকথা)


কোন এক সময়ে এক জঙ্গলে এক বিরাট বাঘ থাকত। আর তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিল এক খরগোস। তখন কিন্তু বাঘের গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকত না। সুন্দর একেবারে সোনার রঙ ঝলমল করেছে। এদিকে খরগোস ভায়া ছিল ভীষন দুষ্টু। সবার সাথে ইয়ার্কি মারে। একে ক্ষেপায়, ওকে ক্ষেপায়, মানে একেবারে দুষ্টুর শিরোমণি। আর তাই এই খরগোসের কোন বন্ধু ছিল না। সবাই তাঁকে এড়িয়ে চলে। একা এই বাঘই তাঁকে বন্ধু হিসাবে মেনে নিয়েছিল। তাও যখন দেখে যে বেচারী খরগোসের কোন বন্ধু নেই। আর এমনিতে ভোলাভালা বাঘ, তার পেছনে তাঁকে নিয়ে কেউ মস্করা করছে কিনা, তার খেয়াল রাখত না। এমন সময় একদিন খরগোস এল বাঘের সাথে দেখা করতে। কি ব্যপার? খরগোস বাঘকে বলে, “বন্ধু, কাল আমাকে তুমি একটু সাহায্য করতে পারবে? বর্ষাকাল তো এসেই গেল, আমার ঘরের ছাতটাকে নতুন করে ছাইতে হবে। তাই কিছু খড়ের দরকার। তুমি আমাকে সাহায্য করলে, খড় কাটার পুরো কাজটা একদিনেই হয়ে যাবে”। বাঘ ভায়ার খেয়াল নেই যে খরগোস থাকে তো গর্তে। তার কোন ঘর বানানর কিসের দরকার? সে খুসী মনে বলে দিল, “ঠিক আছে, আমি তোমার সাথে কাজে যাব”। খরগোস বলে, “আমাদের ঐ বড় জঙ্গল পেরিয়ে যেতে হবে, অনেকটা পথ। সক্কাল সক্কাল বেড়িয়ে পরব। সাথে খাবার নিত ভুল করো না যেন”। পরের দিন সক্কাল বেলায় দুজনে রওয়ানা হয়ে গেল। খরগোস চড়ল বাঘের পিঠে। আর হাল্কা হবার জন্য বাঘ বুঝতেও পারল না যে খরগোস তার পিঠে বসে আছে। খরগোসের কাছে দুটো খাবারের প্যাকেট। একটাতে খরগোসের আনা একটা প্যাকেট যাতে আছে কিছুটা গোবর আর বালি মেশান। আর ওদিকে বাঘ ভায়া দুজনের পছন্দ মতন ভাল খাবারই এনেছে। জায়গা মতন পৌছনোর পরে বাঘ তো কাজে নেমে পড়ল। এদিকে খরগোস বললে , সে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে তাই একটু বিশ্রাম না নিয়ে কাজে লাগতে পারছে না। বাঘ ভায়ার কিন্তু খেয়াল এল না যে খরগোস সারাক্ষণ তার পিঠেই চড়ে এসেছে, তাই তার ক্লান্ত হবার কোন সম্ভাবনা নেই। যতক্ষণ বাঘ ভায়া তার কাজ শেষ করছে ততক্ষনে খরগোস বাঘের আনা খাবারটা খেয়ে নিয়ে খালি ঐ গোবর আর বালি মেশান প্যাকেটটা রেখে দিল। বাঘ ভায়া কাজ সেরে এসে খেতে বসলে, খরগোস বলে, “পুরাকালে জ্ঞানী ব্যক্তিরা বলে গেছেন যে যারা ঠিক সময়ে খেতে আসেনা তাঁদের খাবার বালি আর গোবর মেশান হয়ে যায়”। বাঘ তার খাবার খেতে পারল না কিন্তু ভাবতে লাগল সত্যি পুরাকালে লোকেরা কত কি জানত। সন্ধ্যের মধ্যে বাঘ ভায়া দুটো বিরাট বড় খড়ের আঠি কেটে তৈরী করে নিল, যাতে দুটোকে নিয়ে যাওয়া যায়। তার পরে দুটো আটিই বাঘ তার ঘাড়ে তুলে ফেরার জন্য হাঁটা দিল। খরগোসকে অত বড় আটির নীচে দেখা যাচ্ছিল না বলে সে কখন বেরিয়ে এসে কিছু না নিয়েই রওয়ানা হল। রাস্তায় খরগোস হঠাত ফস করে দেশলাই জ্বেলে নিতে বাঘ ভায়া জিজ্ঞেস করে কিসের আওয়াজ হল খরগোস ভায়া।। খরগোস বলে আমার খুব ঠান্ডা লাগছে মনে হচ্ছে সারাদিন রোদে থেকে জ্বর এসেছে। এই বলে সে একটা আঁটিতে আগুন লাগিয়ে নিয়ে লাফ মেরে জঙ্গলের ভেতরে লুকিয়ে পড়ল। বাঘ ভাবে খরগোসের নিশ্চয় খুব জ্বর এসেছে তাই তার ঠান্ডা লাগছে, কিন্তু আমার তো বেশ গরম লাগছে। ইতিমধ্যে তার পিঠে যে আঁটীটা ছিল সেটার আগুনের তাপ তার গায়ের চামড়াতে এসে পৌছলে, সে দেখে তার গায়ের চামড়াতে দাগড়া দাগড়া হয়ে পুড়ে দাগ হয়ে গেছে। সে চিৎকার করে আঁটীটা ফেলে দিয়ে লাফাতে শুরু করে দিল। ঠিক তখনই খরগোস এসে তার সামনে দাড়ালে, বাঘ খুব রেগেমেগে জিজ্ঞেস করে, আমার পিঠের আঁটিটাতে কেন তুমি আগুন লাগালে। খরগোস বলে, “আমি কোথায় আগুন লাগালাম। আমি তোমাকে এই প্রথম দেখছি”। বাঘ বলে, “সকালে আমরা এক সাথে এসেছিলাম, আর তুমি বলছ আমাকে এর আগে দেখইনি”। খরগোস বলে, “আরে ওতো আমার পিসিমার ননদের বৌদির ভাইপো হবে। দেখতে আমাদের প্রায় এক রকমের”। বাঘ আর কি করে। কাছের নদীতে ডুবকী লাগিয়ে তার গায়ের জ্বলুনী থামাল। সেই থেকেই বাঘের গায়ে ডোরা কাটা দাগ হয়ে গেছে।

from Spicydilip http://ift.tt/1wYA6xU

via IFTTT

বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০১৫

নেকড়ে, শেয়াল আর ভেড়ার গল্প (দক্ষিণ আফ্রিকার উপকথা)


এক নেকড়ে একদিন তার শিকার থেকে ফেরার সময় সামনে দেখে এক খামার বাড়ি আর সেখানে কিছু ভেড়ারয়ে গেছে। এই নেকড়ে কিন্তু আগে কোনদিন ভেড়া দেখে নি। কাজেই ভেড়ার মোটাসোটা চেহারা দেখে একটু নরম হয়েই তাঁকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আজ্ঞে সুপ্রভাত মশাই,আপনি কে হে ভাই। আপনার নামটা কি বলুন না”? ভেড়ার গলার আওয়াজ এমনিতেই একটু বেশি মোটা আর সে তার গম্ভীর গলায় বল্লে, “আমার নাম হচ্ছে ভেড়া। আর তোমার নামটা কি”? কিন্তু এই কথাগুলো জিজ্ঞেস করার সময় ভেড়া তার সামনের পা দুটো বেশ একটু উচু করেই রেখে কথা বলছিল, যাতে মনে হয় এইবার মাথা দিয়ে গুঁতিয়েই দেবে, নেকড়ে এই ভেড়ার গম্ভীর গলার আওয়াজ শুনে বেশ একটু ভয় পেয়ে গেল আর নিজের পরিচয় হিসাবে কোন রকমে “আমি নেকড়ে” এই কথাটুকু বলে পড়ি কি মরি করে পালাল। এখন এই নেকড়ে যে জঙ্গলে থাকত, সেখানে এক শেয়ালও থাকত। হাঁফাতে হাঁফাতে নেকড়ে গিয়ে শেয়ালকে বলে, “ও শেয়াল ভায়া, আজ আমি একটা ভয়ানক ধরনের জানোয়ার কে দেখেছি। কি তার গলার আওয়াজ, আমি তো ভাই, ভয়ের চোটে পালিয়ে এসেছি । নাম জিজ্ঞেস করলাম তো বলে আমি ভেড়া”। শেয়াল বলে, “ভায়া তুমি একটা বুদ্ধু, ভেড়ার মাংস তুমি কি আগে খাওনি। ঠিক আছে, কাল আমরা দুজনে গিয়ে ওটাকে মেরে ভাল ভাবে মাংস খাব”। কিন্তু নেকড়ে যেতে ভয় পাচ্ছে দেখে বলে, “ঠিক আছে একটা দড়ি দিয়ে আমরা একে অন্যের সাথে বাঁধা থাকলে তো আর কেউ কাউকে ছেড়ে পালাবে না”। পরের দিন সকালে যখন ভেড়া তার সকালের জলখাবার খাচ্ছে তখন হটাত দেখে দূরে নেকড়ে আর শেয়াল দুজনে মিলে আসছে। ভেড়া তো ভীষণ ভয় পেল আর তার গিন্নী কে বললে, “গিন্নি আজ মনে হচ্ছে আমাদের শেষ দিন। আমাদের খেতে নেকড়ে আর শেয়াল দুজনে মিলে আসছে”। ভেড়া গিন্নী বলে, “চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি সব কিছু ঠিক করছি। তুমি বরঞ্চ এক কাজ কর। আমাদের ছোট বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে একটু বাইরে থেকে ঘুরে হাওয়া খাইয়ে আন। আর হ্যাঁ, আমি তোমাকে ইশারা করলেই তুমি বাচ্চাটার গায়ে খুব জোরে একটা চিমটি কেটে দেবে। যাতে বাচ্চাটা কেঁদে ওঠে”। এদিকে শেয়াল আর বাঘ যখন কাছে এসেছে অমনি ভেড়া গিন্নী ইশারা করতেই ভেড়া তার বাচ্চাটাকে দিয়েছে এক চিমটি। আর বাচ্চাটা কেঁদে উঠেছে। তখন ভেড়াগিন্নী জোরগলায় বলে উঠল, “ঠিক আছে শেয়াল ভায়া। একেবারে ঠিক সময়েই নেকড়েটাকে ধরে এনেছ। দেখনা বাচ্চাটা খাবে বলে কাঁদছে। নিয়ে এস কাছে। বাচ্চাটাকে খেতে দিই”। নেকড়ে এই কথা শুনে ভাবে সত্যি বুঝি শেয়াল তাঁকে ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছে ভেড়ার কাছে খেতে দেবে বলে। আর কি সে থাকে ওখানে। প্রাণপনে পেছন দিকে মারল ছুট। আর শেয়াল তো দড়ি দিয়ে নেকড়ের সাথে বাঁধা আছে। সে মাটিতে আছাড় খেয়ে, ঘষটে গায়ের ছালচামড়া ছিঁড়ে, নেকড়ের বাঁধনের সাথে চলল জঙ্গলের দিকে। একেবারে জঙ্গলের ভেতরে না যাওয়া পর্যন্ত নেকড়ে আর থামে নি। ভেড়া, তার গিন্নী আর বাচ্চা বেঁচে গেল।

from Spicydilip http://ift.tt/1wYA6xU

via IFTTT

সোমবার, ২ মার্চ, ২০১৫

কৃতজ্ঞতা (জাপানী রূপকথা)

 কোন এক সময়ে জাপানের হিতাচীতে নামইকাটা নামে একটা জায়গায় এক পন্ডিতমশাই থাকতেন। বয়স তার ছিল অনেক আর তার কোন ছেলেপিলেও ছিল না যারা তাঁকে খাবার তৈরী করে দেবে। পন্ডিতমশাই তার রান্নাবান্না নিজেই করে নিতেন আর দিন রাত মনদিয়ে প্রার্থনা করতেন, “ নামু আমিদা বুতসু “ মানে হচ্ছে, ওম মনিপদ্মে হুম। কাছের গ্রামের লোকজনেরা তাঁকে খুব শ্রদ্ধা করত আর শাক সব্জী, কলাটা মুলোটা দিয়ে যেত। এমনকি তার ঘরের মেরামতীর দরকার পড়লে তারাই এসে সেটা করে দিত। এক শীতের রাতে যখন বাইরে খুব ঠান্ডা পড়েছে, তখন পন্ডিতমশাই শুনলেন কে যেন তাঁকে বাইরে ডাকছে, “পন্ডিতমশাই, পন্ডিতমশাই”। উঠে দরজা খুলে দেখেন বেজীর মতন একটা জন্তু দরজাতে দাঁড়িয়ে আছে। নাম তার ছিল ব্যাজার। রাতবিরেতে এই রকম একটা জন্তুকে দরজাতে দেখলে লোকে সাধারনত ভয় পাবে, কিন্তু পন্ডিতমশাই ভয় পেলেন না। বরঞ্চ জিজ্ঞেস করলেন কি চাই তার। ব্যাজার বলে, “প্রভু আমি এতদিন পাহাড়ে থাকতাম কিন্তু এখন বয়স হয়েছে ঠান্ডায় বড্ড কষ্ট পাচ্ছি। আপনি যদি দয়া করে আমাকে আপনার ঘরে একটু জায়গা দেন আর আপনার ঘরের একটু আগুন পোহাতে দেন, তবে আমি একটু গরম থাকতে পারি”। পন্ডিতমশাইয়ের দয়া হল, আহারে বেচারা ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে। তাই বললেন, “এটা আর কি এমন কথা। চটপট ঘরে ঢুকে এস, আর আগুনের পাশে বসে যাও”। ব্যাজার ঠিক এই রকম আশা করেনি। তবুও পন্ডিতমশাই বলামাত্র সে ঘরে ঢুকে এল আর আগুনের পাশে বসে গেল। পন্ডিতমশাই দরজা বন্ধ করে লেগে গেলেন আবার প্রার্থনা করতে। ঘন্টা দুয়েক বাদে ব্যাজার যখন বুঝতে পারল যে তার গা বেশ গরম হয়ে গেছে তখন সে পন্ডিতমশাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিল। তার পর থেকে সে রোজই রাতে পন্ডিতমশাইয়ের ঘরে আসতে শুরু করে দিল। আসার সময় ব্যাজার কিছু শুখনো ঘাস পাতা আগুনের জন্য নিয়ে আসত। এটা পন্ডিতমশাইয়ের অভ্যাসে মধ্যে দাঁড়িয়ে গেছিল। যদি কোনদিন ব্যাজারের আসতে দেরী হত তো পন্ডিতমশাই ভাবতে থাকতেন কেন এত দেরী হচ্ছে। শীত চলে গেলে বসন্তকাল এসে পড়ল আর তখন ব্যাজার পন্ডিতমশাইয়ের কাছে আসা বন্ধ করে দিল। কিন্তু আবার ঘুরে শীত পড়তেই ব্যাজার এসে হাজির। আবার সেই আগের মতন ব্যাজার রোজ রাত্রে এসে পন্ডিতমশাইয়ের কাছে থাকে। এভাবে দশ দশটা বছর কেটে গেল। ব্যাজার বলে, “পন্ডিতমশাই আপনার দয়ায় তো আমার শীতগুলোতে কোন কষ্ট হয়নি। কিন্তু আপনার এই উপকারের বদলে আমি কি করতে পারি। আপনি বললে পরে সেটা না হয় আমি চেষ্টা করে দেখব”। পন্ডিতমশাই বলেন, “নারে ভাই, আমার কাছে তুমি বরাবর এই রকম ভাবে প্রতি শীতে আস সেটাই আমার সবচেয়ে ভাল লাগবে”। প্রত্যেক বছরই ব্যাজার পন্ডিতমশাইকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। শেষে এক দিন পন্ডিতমশাই বললেন, “দেখ ভাই। আমি তো সারাদিন প্রার্থনা করেই কাটাই, আর আমার জন্য প্রত্যেক দিনে যা যা দরকার, তা তো গ্রামের লোকেরাই আমাকে দিয়ে যায়। তাই বিশেষ কিছুর দরকার আছে বলে তো মনে হয় না। হ্যাঁ, তবে তুমি যখন এত কথা বলছ, তখন যদি আমাকে তিন রিয়ো সোনা দিতে পার তবে ভাল হয়। মানে আমি তো বুড়ো হয়েছি, যে কোনদিন মারা যেতে পারি। এখন ঐ তিন রিয়ো সোনা আমি যদি কোন মন্দিরে দান করি, তবে তারা আমার নির্বাণের জন্য ভাল করে প্রার্থনা করবে”। পন্ডিতমশাই যতক্ষণ এই কথাগুলো বলছিলেন ততক্ষণ ব্যাজার কে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল। তাই দেখে পন্ডিতমশাই বললেন, “যাকগে, তোমায় এ নিয়ে চিন্তিত হতে হবে না কেননা নির্বাণের পথে যাচ্ছি যখন, তখন আমার হয়ে কেউ প্রার্থনা করে কি না করে তাতে কিছু এসে যায় না”। কিন্তু তার পরে ব্যাজার আর আসে না। পন্ডিত মশাই ভাবেন কি হল রে বাবা, নিশ্চয় টাকা জোগাড় হয়নি বলে আসছে না, আর নয়ত টাকা জোগাড় করতে গিয়ে কিছু দুর্ঘটনা হয়ে বেচারা মারা গেছে। এই ভাবেন আর নিজের উপরে রাগ করেন যে কেন তার ঐ সোনার কথা বলতে গেলেন। আর বেশী করে ব্যাজারের জন্য প্রার্থনা করতে থাকেন। এই রকম ভাবে তিন তিনটে বছর কেটে গেল। হঠাত এক রাতে পন্ডিত মশাই একটা ডাক শুনতে পেলেন, “গুরুদেব, ও গুরুদেব”। গলার আওয়াজ ব্যাজারের মতো লাগছে মনে হল। আনন্দে পন্ডিত মশাই এক লাফে উঠে দরজা খুলেই দেখেন সত্যি তো ব্যাজার দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আনন্দে বলে উঠলেন, “কোথায় ছিলে এত দিন। এদিকে আমি চিন্তায় মরি তোমার কিছু বুঝি হল”। ব্যজার ঘরে ঢুকে বলে, “গুরুদেব, আপনি আমাকে যে সোনার কথা বলেছিলেন সেটা যদি কোন অসৎ কাজের জন্য হত তবে তো আমি যে কোন জায়গা থেকে চুরি করে আনতে পারতাম। কিন্তু যখন আপনি বললেন যে ওটা কোন মন্দিরে দেবেন, তখন আমি ভাবলাম চুরি করে তো কোন মহৎ কাজ হবে না। তাই আমি চলে গেছিলাম সাডো দ্বীপে। সেখানে খনির মজদুরেরা যে সমস্ত মাটী আর বালি খুঁড়ে সোনা নিয়ে বাকিটা ফেলে দ্যায় সেই গুলোকে গালিয়ে তার থেকে কিছু কিছু করে সোনা বার করেছি। সেই জন্যই এত দেরী হয়ে গেল”। এই বলে একটা কাপড়ের পুটুলী খুলে পন্ডিত মশাইকে দেখাল। হ্যাঁ সত্যি তো সোনাই দেখা যাচ্ছে। পন্ডিতমশাই সেটাকে তুলে নিয়ে বললেন, “তাহলে সত্যি তুমি আমার একটা কথার জন্য এত কষ্ট করলে, তোমাকে যে আমি কি বলব তা ভেবে পাচ্ছি না”। ব্যাজার বলে, “গুরুদেব, আমি আমার কর্তব্য করেছি, ওটা তো আমার করা উচিতই ছিল। দয়া করে একথা আপনি আর কাউকে বলবেন না”। পন্ডিত মশাই কথাটা শুনে বললেন, “কিন্তু না বলে তো থাকা যাবে না। কারণ আমার ঘরে এটা রাখলে পরে চোরে চুরি করে নিতে পারে। আর যদি মন্দিরে এখন দিই তবে লোকে ভাববে কোথা থেকে এই পন্ডিত ভিখিরীর এত টাকা হল যে সোনা দান করছে। অবশ্যি আমি বলতে পারি যে আমাকে তুমি দিয়েছ। তাতে একটা বিপদ হতে পারে যে তোমার উপরে লোকে হামলা করবে। তবুও যতদিন আমি বেঁচে আছি, ততদিন তুমি মাঝে মাঝে এসে আমার সাথে দেখা করে যেও”। তার পর থেকে যতদিন পন্ডিতমশাই বেঁচে ছিলেন, ততদিন ব্যাজার প্রতি শীতে তার ঘরে এসে রাত কাটাতেন। কিন্তু তোমরা এর থেকে কি শিখতে পারলে, দেখলে তো একটা জন্তুও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ইচ্ছে আর ক্ষমতা রাখে।

from Spicydilip http://ift.tt/1wYA6xU

via IFTTT

রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫

আমার দেখা সত্তরের দশক (৬)

ইতিমধ্যে আমার আবার ট্রান্সফার হবার সময় এসে গেল। মানে চার বছর এক জায়গাতে রয়ে গেছি আর কি কারুর সহ্য হয়। পাঠান হল আমাকে বিশাখাপত্তনমে বা রেলের ভাষায় ওয়াল্টেয়ারে। সেটা হল ৭৭ সালের মার্চ নাগাদ। গিয়ে দেখি আমার পূর্বসুরী, রেলের চাকরী ছেড়ে বেসরকারী কোম্পানিতে যোগ দিচ্ছেন, আমাকে তার জায়গা নিতে হবে। কাজ হচ্ছে লোহার আকর জাপানে রপ্তানী করার জন্য যে কোত্তাভালাসা-কিরুন্ডুল লাইন তৈরী হয়েছিল সেটার বৈদ্যুতিকরণ।

এই লাইনটার একটা বিশেষত্ব ছিল। পুর্বঘাট পর্বতমালা (অনন্তগিরি রেঞ্জ) পার হয়ে এটা উড়িষ্যার ভেতর দিয়ে মধ্যপ্রদেশের বাস্তার (বর্তমানে ছত্তিশগড়ে) এলাকায় কিরুন্দুলের বৈলাডিলা পাহাড়ের লৌহআকর রপ্তানীর জন্য তৈরী করা হয়েছিল। সাধারণত পাহাড়ী এলাকাতে রেলের লাইন পাতার কাজে ছোট গেজ (ন্যারো) এর প্রয়োগ করা হয়, কিন্তু এখানে বড় সাধারণ (ব্রড) গেজের ব্যবহার করা হয়েছিল কারণ এক সাথে অনেক মাল বহন করা যাবে।

ওয়াল্টেয়ার আর ভিজিয়ানাগ্রামের মাঝামাঝি জায়গা কোত্তাভালাসা থেকে এই লাইনটা পাহাড়ের দিকে ঘুরে গেছে। আর কিছুটা যাবার পরেই আসে শৃঙ্গভরপুকোটা বা রেলের ভাষায় এস কোটা। এখান থেকে আরাকূ পর্যন্ত পাহাড়ী রাস্তা, তার পরে কোরাপুট পর্যন্ত প্রায় সমান জমি। কোরাপুট পার হবার পরে অল্প কিছুটা পাহাড় বেয়ে লাইন নীচে নেমেছে তার পরে মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে জগদলপুর হয়ে দান্তেওয়ারা হয়ে কিরিন্দুল পৌঁছেছে।

আরাকু আসার আগেই রাস্তায় পড়ে বোড়াগুহালু ষ্টেশন। একটু দূরে বোড়া গুহা। এক বিরাট গুহা যাতে উপর থেকে জল চুইয়ে পড়ে চূনাপাথরের স্তম্ভ সৃষ্টি করেছে, নাম বৈজ্ঞানিকদের ভাষায় ষ্ট্যালাকটাইট আর ষ্ট্যালাগমাইট। লোকে শিবলিঙ্গ ভেবে পূজোআচ্চাও করে। পরে পড়বে মাচকুন্ডের বাঁধ, আর তার কাছেই কিছু পুর্ব বাংলার বাস্তুহারাদের কলোনি, কোরাপুটের কাছে সুনাবেড়াতে হিন্দুস্তান এরোনটিক্সের কারখানা। কোরাপুট পার হবার পরে বড় জায়গা আসে জগদলপুর।

জগদলপুরের আগে আসে মালিগুড়া রেঞ্জ ফরেষ্ট। সন্ধ্যের পরে যদি রাস্তা ধরে গাড়ীতে এই জঙ্গল পার হওয়া যায় তবে বাঘ দেখার সম্ভাবনা আছে। আমি বাঘ দেখতে পাই নি কিন্তু নীলগাইকে কিছু হিংস্র জন্তু তাড়া করায় সে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে রাস্তা পার হচ্ছে দেখেছি। রেলের লাইনের আশপাশে তো ভাল্লুকের আনাগোনা লেগেই থাকত। আমি নিজেও ভাল্লুক দেখছি। জগদলপুর পার হবার পরে আসে গিদাম, দান্তেওয়ারা যেখানে সেই অবুঝমারের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এখানে রেলের লোকেরা রাত লাইনে কোন কাজে  (যেমন সিগনালে আলো লাগানো) জানোয়ারের আক্রমণের ভয়ে যেতে চাইত না। বলা হয় এ জায়গা এখন মাওবাদীদের আস্তানা।

যদিও লাইনটা কিরিন্দুল পর্যন্ত গেছে লৌহ আকরের জন্য তবুও এই আকর পাওয়া যেত বাচেলী আর কিরিন্দুলের মাঝ থেকেই। বড় বড় রোটারী এক্সকাভেটর দিয়ে পাথর কাটা হচ্ছে আর তার পর তাকে নদীর জলে ধুয়ে মাটী সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। নদীর জল এই ময়লা নিয়ে লাল হয়ে গেছে, মাছ আর পাওয়া যায় না, কিন্তু তার কোন খেয়াল নেই। বৈদেশিক মুদ্রা রোজগার হচ্ছেত। এই প্রসঙ্গে বলি, আজকাল জাপানে আর আকর রপ্তানী হয় না। সমস্ত আকর ভিশাখাপত্তনমে যে ইস্পাত কারখানা হয়েছে তাতে ব্যবহার করা হয়।

সাধারণত ব্রড গেজের লাইনের ঢাল (গ্রেডিয়েন্ট) প্রতি ১০০ ফুটে ১ ফিটের চেয়ে বেশি করা হয় না, এখানে প্রতি ৪০ ফিটে ১ ফিট ঢালে লাইন পাতা হয়েছে, যার ফলে  ৪০/৪২টা ৯০ টন আকর ভর্তি করার ক্ষমতার খালি ওয়াগনকে টানতে তিনটে ইঞ্জিন কোন রকমে পেরে উঠত। আর যখন মাল ভর্তি করে নামত, তখন ওয়াগনগুলো ঢালের মুখে পড়ে গতি পেলে ঐ তিনটে ইঞ্জিন লাগত তাদের টেনে ব্রেক করে রাখার জন্য।

লাইনে বাঁক ছিল অসংখ্য আর টানেল ছিল মনে হচ্ছে  ছিল ৫৮ টা। এই রকম ইঞ্জিনিয়ারিঙের একটা নিদর্শনে দুর্ঘটনাও হত আকচার। তা ছাড়া পুর্বঘাট পর্বতমালার পাহাড়ে বঙ্গোপসাগরের ঘুর্ণিঝড় প্রায়ই প্রচুর বৃষ্টিপাত করে ধ্বস নামিয়ে দিত, যার ফলে বর্ষাকালে ট্রেন চলাচল অনিয়মিত থাকত।

রেলের একটা নিয়ম আছে য্ত।কোন লাইন যদি ১০০০ মিটার পার করে, তবে তার পরের অংশটাতে যে সমস্ত কর্মচারী কাজ করেন তাঁদের পাহাড়ী ভাতা দিতে হয়। রাস্তায় কিছুদূর যাবার পরে একটা ষ্টেশন আসে শিমিলিগুডা। দেখা গেল লাইনের উচ্চতা হয়ে যাচ্ছে ১০০৪ মিটার।  এই ষ্টেশনের পরে লাইনটা কিন্তু নীচের দিকে নেমে গেছে এবং আগে কোথাও আর ১০০০ মিটারের উচ্চতা পার হয়নি। কিন্তু এই শিমিলিগুডা থেকে যেতে হবে আরও প্রায় ৩৫০ কিলোমিটারের মত।

তবে কি সেই সমস্ত ষ্টেশনের কর্মচারীদের ঐ পাহাড়ী ভাতা দিতে হবে। উপায় একটাই। ঐ শিমিলিগুডা ষ্টেশনের সমস্তটা আর দুপাশে আরও এক কিলোমিটারের মতন জায়গাতে পাহাড় কেটে ১০০০ মিটারের নীচে নামিয়ে আনা হল। ষ্টেশনের বাকী সব জায়গা, যেমন ষ্টেশন বিল্ডিং, ষ্টাফ কোয়ার্টার সব ১০০০ মিটারের বেশী উচুতে। কিন্তু যেহেতু লাইন আছে ৯৯৬ দশমিক কিছু মিটারে, তাই আর ভাতা দেবার দরকার পড়ল না।

আমার আইনত অফিস হল আরাকুতে, মানে ওয়াল্টেয়ার থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে, কিন্তু যেহেতু সমস্ত সমন্বয়ের কাজ ওয়াল্টেয়ারে, তাই আমার অফিসের নাম হল আরাকু এট ওয়াল্টেয়ার, মানে আমি ওয়াল্টেয়ারে থাকব কিন্তু প্রায় একদিন বাদে বাদেই আমাকে লাইনে যেতে হবে। অসুবিধার মধ্যে যাতায়াতের জন্য প্যাসেঞ্জার ট্রেন ছিল দিনে একটি। সকালে ওয়াল্টেয়ার ছাড়ে, আরাকু পৌছতে লাগে পাঁচ থেকে ছ ঘন্টা আর ফেরার ট্রেন আরাকুতে রাত দুটোর সময়। সকাল আটটার পরে এসে ওয়াল্টেয়ারে পৌছবে।

আরাকু জায়গাটা অদ্ভুত, সারা দিনে তিনটে ঋতুকে উপভোগ করা যেতে পারে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভ্যাপ্সা গরম, প্রায় গ্রীষ্ম কাল, বিকেলের দিকে বৃষ্টিতে বর্ষাকালের আনন্দ আর রাত পড়লেই ঠান্ডা, শীতকালের মত। সারা বছর রাতে গরম জামা পড়ে থাকতে হবে। আমার হল মুশকিল, ওয়াল্টেয়ার থেকে যখন বার হই তখন ওখানে বেশ গরম থাকে। অবশ্যি ওয়াল্টেয়ার সমূদ্রের ধারে হবার জন্য একমাত্র বর্ষাকালেই একটু ঠান্ডা বোধ হয়, নইলে বাকী সব সময় গরম। স্নান করে গা মোছা শেষ হতে না হতেই আবার মুছতে হয়, তবে এবার জল নয়, ঘাম।

লোকেদের কথ্য ভাষা তেলেগু। এর আগে শুনিইনি। বাসে নম্বর রোমান অক্ষরে কিন্তু গন্তব্যস্থল তেলেগু ভাষায় লেখা। বাসে কন্ডাক্টরের ভাষা তেলেগু। দোকানে কিছু জিনিষ কিনতে গেলে বিপদ, কি করে জিনিষের নাম বোঝাব? উপায় একটাই স্যাম্পল হাতে নিয়ে বাজারে যাওয়া। কিন্তু সব্জী কেনার বিপদ অনেক,  কায়লু আর পান্ডুর মধ্যে তফাৎ (মানে কাঁচা আর পাকা) বোঝাতে হবে। তবে বাজারে গেলে যেহেতু সব্জী চিনি, তাই কেনার সময় নামটা শুনে মুখস্থ করতে হত। মাছ কেনার সময় বিপদ ছিল, কেননা চপ্পল হল চপলু আর মাছ হল চ্যাপলু। দোকানীকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে কথাটা বলার চেষ্টা করা হত।

পাহাড়ী এলাকা কাঠাল গাছে ভর্তি ছিল, তবুও সাধারণ লোকে এঁচোড় (ওদিকের ভাষাতে পনসকায়) খেতে জানত না। মানে আমাদের মত গাছ পাঁঠা তৈরী করে খাওয়ার মেথডে। ওদের এঁচোড় খাবার মেথড ছিল খোসা বাদ দেবার পরে একেবারে সব শুদ্ধ কুচিকুচি করে কেটে রান্না করা। কলাগাছ থাকলেও থোড় বা মোচা, খাবার হিসাবে গণ্য হত না। আমার সহকর্মী, যে এস কোটাতে থাকত তার কাছে বলা ছিল যে কাঁচাকলার গাছ না হলে থোড় আর মোচা আমাকে পাঠাতে। মাসে এই রকম বার দুয়েক সাপ্লাই এসে যেত। লাউ খাওয়া হবে কিন্তু লাউডগা তো গরুর খাদ্য। 

ভাষা বিভ্রাটের আর একটা উদাহরণ দিচ্ছি। একবার আমার এক খালাসীকে বলেছি বস্তা করে গুল (মানে গুড়ো কয়লার ব্রিকেট, তখনও ওয়াল্টেয়ারে গ্যাসের সাপ্লাই চালু হয়নি) নিয়ে আসতে। এখন বোড়া হিন্দি মানে বস্তা,  কিন্তু তেলেগুতে বোড়া মানে মাথা বা বড়টা। গুল বদলে গেছে তার কাছে গুডলুতে মানে ডিমে। লোকটা অবাক, মাথা ভর্তি ডিম আনতে বলে কেন?

চিন্তা করতে হবে যে আমার অফিসে তখন প্রায় শ চারেকের মত লোক, ফিটার থেকে খালাসী মিলিয়ে ছিল আর তার মধ্যে অন্য ভাষাভাষী কেউ নেই। দোভাষির কাজে আমার দুই সহকারী তেলেগু ষ্টাফ, যারা খড়গপুরে বছর ছয়েক কাটিয়েছে। এরা দুজনে যদিও আরাকুতে থাকত, আর এত সুন্দর বাংলা বলত যে আমার কেন আমার এবং আমার ফ্যামিলির কারুর অসুবিধা হত না।

কিন্তু আমাকে এর রাস্তা খুঁজে বার করতে হল। প্রথমে সিনেমার পোষ্টার দেখে অক্ষর চেনা। তার পরে পেদ্দা শিক্ষা মানে বড়দের জন্য শিক্ষা বইটা জোগাড় করে পড়া, আর লোকেদের হুকুম দেওয়া যে আমাকে তারা তেলেগু ছাড়া অন্য কিছু (সাইন ল্যাঙ্গুয়েজও  না) বোঝানর জন্য ব্যবহার করবে না। ফল দিল। আমি তেলেগু বই পড়তে শিখে গেলাম আর কথাও বলতে। আজ অবশ্যি বছর ত্রিশ পয়ত্রিশ বাদে চর্চার অভাবে পড়তে পারিনা, কিন্তু ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলতে পারি।


এই লাইনটা তৈরী করার সময় প্রজেক্টটা ছিল ডি বি কে (দন্ডকারণ্য, বোলাঙ্গীর কিরিবুরু) প্রজেক্ট নামে। ষ্টাফেদের জন্য একটা কলোনীও তৈরী ছিল। বাড়ীগুলো তৈরী ছিল পাথর দিয়ে, যাকে ইঞ্জিনিয়ারিং ভাষায় বলা হয় র‍্যান্ডম রাবল ম্যাসনারী। ছাদ থেকে জল চুইয়ে আসার সম্ভাবনা খুব থেকে যায়। প্রথমে আমার আস্তানা পাওয়া গেল এই রকম এক কোয়ার্টারে। আমি বিলাসপুর গিয়ে মালপত্র বুক করে এলাম আর বিশেষ খেয়াল রাখা হল যাতে ওয়াগন এসে পৌছয় তিন সাতেকের মধ্যে। মালপত্র পৌছলে তবে ফ্যামিলী নিয়ে আসা হবে। এবার আর মালপত্র এসে পৌঁছতে দেরি হয়নি।

আন তিয়েমের তরমুজ (ভিয়েতনামের রূপকথা)


অনেক দিন আগে ভিয়েতনামে হুং ভং নামে এক দয়ালু রাজা ছিলেন। তার একটাও ছেলে ছিল না। খালি একটাই মেয়ে। কি আর করে, ঠিক করে নিল যে একজন ছেলেকে দত্তক নেবে। দূরদেশ থেকে এক ছেলেকে সে দত্তক নিল। ছেলের নাম ছিল আন তিয়েম। ধীরে ধীরে আন তিয়েম বড় হয় আর সব দিক দিয়ে চৌখস ছেলে হয়ে ওঠে। যেমন বুদ্ধি তেমনি তার বিচার। রাজা মশাই খুব খুশী। কিন্তু তার মেয়েকেও তিনি কাছছাড়া করতে রাজী নন, তাই ঠিক করলেন যে আন তিয়েমের সাথে তার নিজের যে মেয়ে ছিল তার বিয়ে দিয়ে দেবেন। রাজামশাই চেয়েছেন আর বিয়ে হবে না? বিয়ে মহা ধুমধামের সাথে হয়ে গেল, আর তার পরে দুজনে মহা সুখেই দিন কাঁটাতে লাগল। কিন্তু রাজসভাতে কিছু না কিছু বদ লোক থাকবেই। তারা এই দুজনের নামে মিথ্যে মিথ্যে গুজব রটাতে শুরু করে দিল। কেননা তারাতো আর এঁদের ভাল চায় না। ক্রমে রাজামশাই এই সব গুজব শুনতে পেলেন। ভাবতে থাকেন তবে কি এগুলো সত্যি। তার মেয়েই তার বিরুদ্ধে যেতে চাইছে। আর আন তিয়েম, যাকে তিনি নিজের ছেলের মতন করে ভালবেসে ছিলেন সেও ঐ দলে আছে। বিশ্বাস হচ্ছেনা, কিন্তু তবু হলেও হতে পারে। তাহলে কি করা যায়। ঠিক করলেন আন তিয়েমকে নির্বাসন দেওয়া হোক। কোথায়, না বহুদূরের কোন এক নির্জন দ্বীপে। কবে যে নির্বাসনের সাজা মকুব হবে তা কজেউ জানে না।আন তিয়েমও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে সে কোনদিন বেঁচে ফিরতে পারবে। আর ওদিকে আন তিয়েমের স্ত্রী মানে রাজামশাইয়ের মেয়ে যখন দ্বীপে গিয়ে সেই হুহু করে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো হাওয়া দেখল আর তার ঝাপটা গায়ে অনুভব করল, সে তো কেঁদেই ফেলল। কি করে এই রকম জায়গাতে তারা থাকবে। কোন লোকজন নেই সাহায্য করার মতন কাউকে কোথাও পাওয়া যাবে না। ভেবে কি লাভ, যাকগে কি আর করা যাবে। কোন রকমে তার নিজেদের ধীরে ধীরে ওখানে থাকার জন্য তৈরী করে নিতে শুরু করল। একদিন আন তিয়েন সমূদ্রের পাড়ে দেখে কয়েকটা হলুদ রঙের পাখী ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাখীগুলোকে সে চেনে না, তাই ভাল করে দেখবার জন্য সে একটা উচু পাথরের উপর থেকে নজর রাখতে লাগল। দেখতে পেল যে কিছু কাল রঙের বিচি ওখানে পড়ে আছে আর পাখীগুলো তাতে ঠোকর মারছে আর খেয়ে নিচ্ছে। আন তিয়েম ঠিক করে নিল এই বীজগুলো নিয়ে সে কোথাও পুঁতে দেবে। তাতে তার তো ক্ষতি তো কিছু হবে না। আন তিয়েম তার বউকে বলল, “দেখ এই বিচীগুলো পাখী খাচ্ছিল। তারা যদি খেতে পারে তবে এর ফল আমরাও খেতে পারব”। পুঁতে দেবার কিছুদিন বাদেই দেখল যে বীজগুলো থেকে লতার মত গাছ হয়েছে, তাতে প্রথমে কুড়ি এল তার পরে ফুলও এল। আর সব শেষ এল ফল। গোল গোল ফল ক্রমে বড় হয়। দেখতে দেখতে সেই ফলগুলো তাঁদের মাথার মাপের চেয়ে বড় হয়ে উঠল, সবুজ রঙের গা, বেশ হাত বোলালে মসৃণ লাগে। ফলগুলোর থেকে সুন্দর গন্ধ বার হচ্ছে দেখে একদিন আন তিয়েম একটা ফল কেটে নিয়ে খাবার জন্য বাইরের খোলাটা ছাড়াল। ভেতরে লাল রঙ। আর কি মিষ্টি খেতে । ফলটার নাম আন তিয়েম দিল “দুয়া দু”। কিন্তু আন তিয়েমের বৌ বলে, শোন শোন পাখীগুলো কি বলছে। আন তিয়েম পাখীর ডাক শুনে বলল, ওরা তো বলছে “তে কুয়া, তে কুয়া”। দুজনে মিলে ফল গুলোকে খতে লাগল কিন্তু ফলের বীজ গুলোকে তুলে রাখল যাতে নষ্ট না হয়। এই প্রথম তারা ‘তে কুয়া’ মানে তরমুজ খেল। পরের বছর সেই বীজগুলো পুতে আরও তরমুজ হল, এমন করে প্রচুর তরমুজ হলে পরে, আন তিয়েম বুদ্ধি করে দ্বীপের কাছ দিয়ে যে সমস্ত জাহাজ যেত, তাদের নাবিকদের কাছে ঐ তরমুজ বিক্রী করে তার বদলে তাঁদের যা যা দরকার তাই নিতে লাগল। তাঁদের আর কোন কষ্ট রইল না। একদিন আন তিয়েমের মাথায় একটা বুদ্ধি আচমকা এল। সে কিছু তরমুজের গায়ে তার নাম খোদাই করা সমূদ্রের জলে ভাসিয়ে দিল। তরমুজগুলো ভাসতে ভাসতে গিয়ে পৌছল রাজা মশাইয়ের দেশে। সেখান কার লোকেরা নতুন ধরণে কিছু সমূদ্রে ভাসছে দেখে তুলে নিয়ে এসে রাজামশাইয়ের কাছে হাজির। রাজামশাই দেখলেন ফলের গায়ে লেখা আছে আন তিয়েম। রাজামশাই চেচিয়ে উঠলেন আরে এটাতে তো আন তিয়েমের নাম লেখা আছে। তাহলে আন তিয়েম এখনো বেচে আছে। লোক পাঠিয়ে আন তিয়েমকে আর তার বউকে দেশে ফেরত নিয়ে আসা হল। সবাই সুখে থাকতে লাগল।

from Spicydilip http://ift.tt/1wYA6xU

via IFTTT