সোমবার, ১৭ জুন, ২০১৩

আমার আমেদাবাদ ভ্রমণ তৃতীয় ভাগ


পরের দিন আমার এবং স্ত্রীর কোন প্রোগ্রাম নেই বিকেলের দিকে কাঙ্কারিয়া লেক দেখার প্রোগ্রাম আছে। বেশ কিছু হয়তো হাঁটতে হতে পারে বলে বিছানায় শুয়ে রেষ্ট নেওয়া গেল। নাতিরা তাদের বাবা মা কে নিয়ে মার্কেটিং করবার জন্য বার হল। দুপুরে ওরা ফেরার পরে বেলা সাড়ে তিনটের সময় রেডী হয়ে নেওয়া গেল। প্রথমেই লেকের গেটে গিয়ে গাড়ী থেকে নামা হল। টিকিট কেটে ভেতরে ঢোকা গেল। লেকের ধারে অটল এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে আছে। ডিজেল এঞ্জিনে টানা তিনটে কোচে লোকে বসবে। প্রতি কোচে ৫০ জনের মত ধরে। টিকিটের জন্য বিরাট লম্বা লাইন। ট্রেনটা পুরো লেকের চারদিকে একটা চক্কর মেরে আসে। দেখা গেল এই দুটি রকম ট্রেন চলছে। কিন্তু তার আগেই নাতিদের আনন্দ দেখবার মত, ওদের জন্য কি নেই। দু চাকার সেগা ইলেকট্রিক বাইক, স্পীড বোট, জলে বাবলের মধ্যে হাটা, নাগিনা মহল আর তা ছাড়া যত রকমের সম্ভব স্ন্যাক্স। পয়সা ফেকো তামাশা দেখো। তারা লেগে গেল নতুন যা দেখেছে অর্থাৎ সেগা চালান, তার পরে মটর বোট চালান। সেগা চালানোর পরে বড় নাতির প্রশ্ন এগুলোর দাম কত সস্তা হলে কিনে নেওয়া যাবে সহজেই স্কুলে যাওয়া যাবে। দাম পরে জানা গেল  প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। মন্তব্য হল বড্ড বেশী দাম এর চেয়ে কার সস্তাজিনিষটা আগে অস্ট্রেলিয়াতে ক্রিকেট মাঠে দেখেছে। পাশেই হট এয়ার বেলুন নীচে গন্ডোলা তাতে চড়ে লোক উপরে কিছু চক্কর মেরে আসে। তবে আমরা থাকতে থাকতে ওটাতে কাউকে চড়তে দেখা গেলনা। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হয়ে এল। লেকের চারদিক বাঁধানো তার উপরে নানান রঙ্গের আলো দিয়ে সাজানপ্রত্যেকটা স্টলে লোকের ভিড়, দাম অবশ্যি নর্মালের চেয়ে বেশী। তবুও এটা একটা জায়গা যেখানে বাচ্চারা এসে মজা করতে পারে। গাড়ী বাইরে পার্কিং করা ছিল। আমরা বেড়িয়ে ড্রাইভারকে ফোন করে ডাকলে সে গাড়ী নিয়ে আসে। গেটের দুদিকেই অটোর ভিড় কাজে গাড়িকে একটু রাস্তার উপর দ্বিতীয় লাইমে দাঁড়াতে হল। অমনি পুলিশের ডান্ডাবাজী, কিন্তু অটো ড্রাইভারদের উপর এসব হম্বি তম্বি চুপ। তারা তাদের মর্জি দাঁড়িয়ে লোক নামাচ্ছে কিম্বা তুলছে। কোন রকমে গাড়ীতে উঠে আমরা ফিরে এলাম

আমেদাবাদ শহরে যে জিনিষ আমাকে ইম্প্রেস করেছে সেটা হচ্ছে সহরটা দুভাগে ভাগ করা আছে। নদীর পশ্চিম দিক মডার্ণ, আর পূর্ব দিকে পুরনো গায়ে গায়ে লাগান পুরনো বিল্ডিং, রাস্তা সরু। নতুন দিকে বাসের জন্য রাস্তার মাঝখান দিয়ে ডেডীকেটেড বাস চলার জায়গা এবং তার মডার্ণ ষ্টেশনে মত করে স্টপ। । যদিও এছাড়া সাধারন বাস চলে। বেশীর ভাগ বাস যে এন ইউ আর এম ফান্ডে কেনা। দ্বিতীয় হচ্ছে যেখানে আন্ডারপাশ তৈরী করা হয়েছে তার দু দিকে ফুটপাথের পাশে এমেচার আর্টিস্ট দিতে নানাণ ধরণের ছবি আকানো হয়েছে যাতে গ্রাফিটি একে দেওয়াল নষ্ট না করা হয়।

কাঙ্কারিয়া লেক দেখে ফেরবার পরে হোটেলে বলে দেওয়া হল যে আগামী কাল আমরা ভোর পাচটার আগেই বেড়িয়ে যাবঅতএব আমাদের বিল ইত্যাদি যেন তৈরী করে রাখে। ইতিমধ্যে ঘরের টয়লেটের দরজা নিজের থেকেই লক হয়ে যাওয়াতে হোটেলের লোকেরা সেটাকে ঠিক করে উঠতে পারল না, এবং আমাদের বাধ্য হয়েই পাশের অন্য ঘরে ট্রান্সফার করতে হল। সকাল বা ভোররাত চারটের সময় ম্যানেজার কে ডাকতঁে হল কেননা বা্থরুমে জল নেই, টেলিফোন করে কোন সাড়া পাইনি বাধ্য হয়ে ডেস্কে গিয়ে দেখি ডিউটি বাবু পাশে কোচে শুয়ে দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘুমচ্ছেন। কানের কাছে জোরে ডাক দেওয়াতে তিনি উঠে তার বেয়ারাকে পাঠালেন পাম্প চালাতে। সাথে বললেন মিনিট পাচেকের মধ্যে জল এসে যাবে। হায় আমার কপাল। পাচটার সময় আমি যখন হোটেল ছাড়ছি তখনও কলে ওনারা জল দিতে পারেন নি। আর এই হোটেল মেক মাই ট্রিপ গ্রুপ রেকমেন্ড করে।  হোটেলের রেন্ট কম কিন্তু তাই বলে এরকম  অব্যবস্থা চিন্তা করা যায়না।

এবার আবার সেই এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে সাত নম্বরে যাওয়া। এবার অবশ্যি ইনভ্যালিড চেয়ারের বন্দোবস্ত করাতে ওরাই লিফট খোলানো ইত্যাদি কাজ করে নিল। প্ল্যাটফর্মে এত ভিড় যে কুলিরা না থাকলে পড়ে ট্রেনে ওঠা সম্ভব ছিল না। বেলা দেড়টার সময় মুম্বাই পৌঁছলাম। পথে আবার সেই মশলা চা, জৈন খাবার। পশ্চিম রেলপথ কি ভাবে যে তাদের জনে অন্য কেউ চড়ে না? এ ব্যাপারে আমার ই-মেল ফেরত এসেছে কেননা আমি নাকি ঠিকানা ভুল দিয়েছি। ঠিকানা আমি রেলের নিজস্ব সাইট রেলনেট থেকে নিয়েছি। যাকগে আমার ঘোরা সমাপ্ত হয়েছে এই ভাল। এখানেই আমার লেখনের সমাপ্তি।



 



 

 

আমার আমেদাবাদ ভ্রমণ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন