শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১২

পুরন দিনের কথা

আম্মু আগুনের মধ্যে কাঠটাকে ভাল করে গুজে দিয়ে আবার এসে শুয়ে পড়ল। শীতটা বেশ ভাল করেই জাকিয়ে পড়েছে। আর জানয়ারগুলো আগুনের তেজ কমে গেলেই কাছে এসে হামলা করতে চায়। আগুনের শিখার উপর দিয়ে তাদের চোখগুলো যে জলছে তা বেশ ভাল বোঝা যায়। এখন আগুনটা উস্কে দেবার পরে আর জানোয়ার গুলো রাতে আসতে সাহস করবে না। সকাল পর্যন্ত চলে যাবে। ওদিকে ইন্দ্র তার ভালুকের ছালটাকে ভাল করে জড়িয়ে নিয়ে নাক দিয়ে আওয়াজ বার করছে। সন্ধে হবার আগে বুনো শুয়োরটার মাংস ঝলসে নিয়ে খাওয়া হয়েছে। কিছুটা কালকের জন্য পড়ে আছে। এখন আর ক্ষিদে নেই, দরকার শুধু ঘুমের আর উত্তাপের। ইন্দ্রর কাছে সে উত্তাপ পাওয়া যাবে না। আম্মু একটু আগুনের দিকে বেশী এগিয়ে এসে শুল। রাত আসতে আসতে  শেষ হয়ে আসে।  এভাবেই ওদের দিন কাটে। যতদিন ধারে কাছে মাংসওয়ালা জানোয়ার পাওয়া যাবে ততদিন ওরা এই গুহাতেই থাকবে। সন্তান সন্ততি হবে  আবার যখন জায়গাতে কম পড়বে তখন অন্য জায়গার খোঁজে রওয়ানা হবে।

আসুর একটা ফলের ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে চুষছিল। বাইরের খোসাটা তেতো লেগেছে তাই ফেলে দিয়েছে। কিন্তু ভেতরটা বেশ মিষ্টি। আসুরের রোমশ হাতের কনুই পর্যন্ত ফলের রস গড়িয়ে পড়ছিল কিন্তু ফলটাকে সে খুব আরাম করেই খাচ্ছিল। বিকেল বেলায় যখন পাহাড়ে উঠে আসছিল তখন একটা গাছের নীচে ফল গুলো পড়ে থাকতে দেখে দুটো নিয়ে এসেছিল। আগে দেখেছে জানোয়ারে এই ফলটাকে খাচ্ছে তাই জেনেছিল যে ফলটা বিষাক্ত নয়। তস্করী দূর থেকে দেখে এসে ছোঁ মেরে একটা নিয়ে আসুরের মতন করে চুষতে শুরু করে দিল। ভাষাহীন সমাজে আওয়াজ করেই তস্করী বুঝিয়ে দিল তার খুব ভাল লেগেছে এবং আরো চাই। ফলটা খাবার পরে দেখল যে ভেতরে একটা শক্ত কি আছে যাতে কোন রস নেই দুজনেই সেগুলো ছুড়ে পাহাড়ের নীচের দিকে ফেলে দিল, আর  ঐ রস মাখা হাতে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে গুহার দিকে এগিয়ে গেলদিন শেষ হয়ে এল।

বরুন তার দলের ছেলেদের নিয়ে মাঠে শিকার করতে গিয়ে একটা নেকড়ের মতন ছোট জানোয়ারকে দেখতে পেল। সেটা তাদের দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল না কিম্বা তেড়ে এসে আক্রমণ করল না। হাতের কাছে একটুকরো হাড়ের সাথে মাংস ছিল তাই ছুড়ে মারতে বরং সেটাকে কামড়ে নিয়ে খাবার চেষ্টা করতে লাগলো। তার পরে আরও কিছু পাবার অপেক্ষায় থাকল। পরপর কদিন এই রকম দেখার পরে বরুন বুঝতে পারল জানয়ারটা তার কাছে খাবার পাচ্ছে বলে তার অনুগত হয়ে পড়েছে। এখন বরুন শিকারে বেরলে পড়ে সেই জানোয়ারটাও সাথে যায় আর তাড়া খাওয়া জানোয়ারের পালানোর পথ আটকায়। শিকারে খুব সুবিধা হতে লাগলো।

ইতিমধ্যে আম্মু আর ইন্দ্র মারা গেছে। তাদের প্রজন্ম ক্রমশ বেড়েছে। শিকার করে আর আজকাল সবার খাবার জোটে না। আর তাড়া খাওয়া জন্তু গুলোও আক্রমন করলে কেউ না কেউ আঘাতও পায়। সেই ঘায়েল হওয়া সাথীর আর্ত চিৎকার রাতের ঘুমে ব্যঘাত ঘটায়। এই সময়ই আম্মুর প্রজন্মের নজরে পরে মাঠের এক ধরনের দিকে যাতে দানা হয়েছে। কিছু জন্তুও সেই ঘাসগুলো খেতে আসছে। ওরা জন্তু গুলোর মতন সেই দানাগুলোকে খেতে গিয়ে কোন মজাই পেলনা। দলের একজন আগুনের ধারে বসে ঐ দানাওয়ালা ঘাস নিয়ে আগুনের মধ্যে খেলা করছিল। সেই আধপোড়া দানাগুলো মুখে দিয়ে দেখল তার আস্বাদ অনেক ভাল শুরু হল তাদের ঐ ধরনের ঘাসের খোঁজ। খোঁজ করতে গিয়ে দেখল যে দানাগুলো মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, পাখীতে খেয়ে নিচ্ছে আর ঘাসের উপর যখন থাকছে তখন জন্তু জানোয়ারেরা সেই ঘাস গুলো খেয়ে যাচ্ছে। দলের ছেলেদের উপর আদেশ হল যেখানে ঐ ঘাস আছে তার কাছেই কোন গাছের উপর তাদের আস্তানা নিতে। অখান থেকে পাখী বা জন্তুদের তাড়িয়ে দিতে সুবিধা হবে,

 কলেজে পড়ার সময় বনফুলের স্থাবর আর জঙ্গম উপন্যাস দুটি পড়ে খুব ভাল লেগেছিল।তারই এই অক্ষম অনুকরন আপনাদের কি রকম লাগবে জানি না, তবে ছোটবেলায় শুনেছি কচুগাছ কাটতে কাটতে মানুষ কাটায় হাত পাকে। তাই এই প্রচেষ্টা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন