সোমবার, ২১ জুলাই, ২০১৪

সিসিফাস


রাজা সিসিফাস। গ্রীক পুরানের এক শয়তানী বুদ্ধি ওয়ালা রাজা। থেসালীর রাজা ইয়োলাসের ছেলে। সালমোনাসের ভাই, এমনিতে রাজা মশাই জ্ঞানী গুণী, ব্যবসা আর নৌচালনা সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞান রাখতেন। তার রাজ্য এই দুটো ব্যপারে বেশ উন্নত ছিল। কিন্তু  ভীষন লোভী আর ঠকবাজ ছিলেন। অবশ্যি ব্যবসাতে উন্নতি করতে গেলে সাধারণত এ দুটোর খুব দরকার পড়ে। আর আতিথ্য জিনিষটা কি তা জানতেন না বরং তার কাছে অতিথিদের অনেককেই মরতে হয়েছে।  একজন কঠোর রাজা হিসাবে সিসিফাসের বেশ নামডাক ছিল। এদিকে তার ভাই এর সাথেও বিশেষ বনিবনা না থাকায় কি ভাবে ভাই সালমোনাসকে মেরে ফেলা যায় তার প্ল্যান কষতে ডেলফির জ্যোতিষীদের কাছে মতামত নিতে গেছিলেন।
নদীর দেবতা আসপসের মেয়ে আইজিনাকে জুস কোথায় নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রেখেছিলেন সেটাও তার বাবার কাছে জানিয়ে দিতে ভোলেন নি। তার ফল হল করিন্থের  সভাঘরের মাঝ দিয়ে এক ফোয়ারা উঠে সভাঘরটাকে নষ্ট করে দিল।
মানে তার কীর্তিকলাপে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। জুসের শাস্তি আসবেই। জুস বলে দিলেন থানেটসকে যে চিত্রগুপ্ত হিসাবে কাজ করছিল তাঁকে যে যাও গিয়ে সিসিফাসকে ধরে বেঁধে নিয়ে এস।
সিসিফাস দেখে থানেটস এসে হাজির। ভাবল সাধারণত সংবাদ বাহক  বা পিয়ন হিসাবে তো হারমিস কাজ করে , সে কেন আসে নি। কূটবুদ্ধি তার মাথায় গজগজ করছে। থানেটসকে ভাল মানুষের মত জিজ্ঞেস করে বসল তার চেনটা দিয়ে কি ভাবে কাউকে বাধা হয়। থানেটস ভাল মানুষের মত যেই দেখাতে গেছে অমনি সিসিফাস তাকে ঐ চেন দিয়ে বেঁধে রাখল। চারদিকে হাহাকার, থানেটস পৃথিবীতে আটকা পরে আছে, যতক্ষন না সে যমপূরীতে ফিরে যাবে ততক্ষণ কোন লোক মারা যাবে না। কিন্তু লোক তো জন্মাবে। অর্থাৎ কিছুক্ষণের মধ্যে পৃথিবীতে লোকের ভীড় লেগে যাবে। যুদ্ধের দেবতা শেষ পর্যন্ত তার শত্রুপক্ষের লোকে মরছে না দেখে ক্ষেপে গিয়ে সিসিফাসকেই আটকে রেখে দিলেন। থানেটস মুক্তি পেল। আর সিসিফাসকে নিয়ে যমপূরীর দিকে রওয়ানা দিল।
কিন্তু সিসিফাসের বুদ্ধি কি তাতেই হার মানে।
থানেটস তাঁকে নিয়ে যাবার আগে সে তার স্ত্রীকে বলে দিল যে তার সমস্ত জামাকাপড় খুলে নিয়ে রাস্তার চৌমাথায় দেহটাকে মরে যাবার পরে ছুড়ে ফেলে দিতে। সিসিফাসের স্ত্রীর মাথায় কারণটা ঠিক ঢোকে নি কাজেই সে তাই করল। এইবার সিসিফাসের প্রেতাত্মা ষ্টীক্স নদীর পাড়ে গিয়ে দাড়িয়ে আছে, আগে যাবার হুকুম নেই। যমের জিজ্ঞাসাতে সিসিফাস বলল যে তার অন্তিম সংস্কার এখনো হয়নি। তার স্ত্রী কেন জানিনা কাজ করে নি, কাজেই সে চায় পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে স্ত্রীকে দিয়ে অন্তিম সংস্কার করিয়ে তার পর ফিরে আসবে।  বাধ্য হয়েই পেরসেফণি (যমরাজা) তাঁকে আবার ফেরত গিয়ে তার স্ত্রীকে দিয়ে অন্তিম সৎকার করিয়ে আসতে বলল। আর তাঁকে ফেরত পাঠিয়ে দিল। সিসিফাস খুসী মনে ফিরে এল। তার স্ত্রীকে এল্টু লোকদেখান বকুনী লাগাল। বাস অতটাই। তাঁকে যে অন্তিম সৎকার করিয়ে ফিরে যেতে হবে তার আর হুঁশ নেই।
বাধ্য হয়েই যমরাজ তাঁকে জোর করেই যমপূরীতেই টেনে আনলেন। আর শাস্তি বললেন, তোমার যখন পৃথিবীতে থাকার এতটা সখ তুমি যাও, তোমায় কিন্তু একটা কাজ আগে করতে হবে । ঐ বড় পাথরটাকে গড়িয়ে নিয়ে পাহাড়ের ওপারে ঠেলে ফেলতে হবে। আর ওপারে চলে গেলেই তুমি নর্মাল। কিন্তু পাথরটাকে ওপারে নিয়ে যেতে না পারলে তোমার কাজ শেষ হবে না।
সিসিফাস লাফাতে লাফাতে চলে গেল পাথরটাকে গড়িয়ে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ওপারে নিয়ে যেতে। কিন্তু জুসের সাথে চালাকী? জুস ঐ পাথরটাকে মন্ত্র বলে এমন করে দিলেন যে যখনি পাথরটা পাহাড়ের চূড়াতে পৌছায় তখনই সেটা আবার সিসিফাসের হাত ফস্কে নিচে গড়িয়ে আসে। সিসিফাসকে আবার নীচে এসে ওটাকে উপরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করতে হয়।
এখনো কিন্তু সিসিফাস ঐ কাজটা করে যাচ্ছে। আর মনে হয় কোন দিনই কাজটা শেষ হবে না।  চালাকী দ্বারা মহৎ কাজ হয় না।      


 

1 টি মন্তব্য: