শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১২

প্রেমের পাঠশালা


আমি যখন প্রেমের পাঠশালার ক্লাস ওয়ানে পড়ি, তখন আমার অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। কলেজে যাবার পথে তোমাকে বাসে উঠতে দেখলে দৌড়ে গিয়ে সেই বাসটাতে উঠে পড়তাম। কন্ডাক্টার এসে টিকিট চাইলে একটা দশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিয়ে মাথাটা নেড়ে বুঝিয়ে দিতাম যে শেষ টার্মিনাস পর্যন্ত টিকিট দিতে। কেননা জানি না তুমি কোথায় নামবে। আর যেই দেখতাম তুমি নামছ অমনি লোকেদের কনুইএর গুঁতো মেরে নেমে গিয়েছি আর তোমার পেছনে দূর থেকে অনুসরণ করেছি। তোমার স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখে রজনীকান্তের স্টাইলে সিগারেটটা  টুস্কি মেরে ফেলে দিয়েছি। সব সময় নজর থাকতো আমার দিকে তুমি তাকিয়েছ কিনা। যদি দেখতাম তোমার নজর আর কারও দিকে পড়েছে, অমনি মনে হত তাকে চিবিয়ে খাই। রোগা পটকা চেহারাতে সেটা সম্ভব নয় তাই রাত শুয়ে চিন্তা করতাম সেই লোকটার কি ভাবে মৃত্যু হবে। আর যদি দেখতাম তুমি আমার দিকে তাকিয়েছ তবে চিন্তা শুরু হয়ে যেত আবার কাল তুমি তাকাবে কিনা।
এ ক্লাস থেকে প্রোমোশন পাবার পরে তোমার জন্যে কোচিঙের ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে নোটস জোগাড় করে তোমাকে সাপ্লাই করা, পুজা প্যান্ডেলে তোমাকে অন্য কারুর ধাক্কা থেকে বাচানো, অবশ্যি তোমাকে জানতে না দিয়ে। আর কখনোবা উপরের ক্লাসের ছাত্রদের মতন তোমার সাথে পার্কে বসে বাদাম ভাজা খাওয়া। এ কাজটা আমাকে লুকিয়ে করতে হত কেননা আমার পাঠশালাতে এর পারমিশন প্রোমোশন পাবার পরে পাওয়া যেত।
যত প্রোমোশন পেয়েছি তত কঠিন কঠিন কাজ করতে হয়েছে। তোমার সাথে তোমার বান্ধবীদের ফুচকা খাওয়ান, ময়দানে তোমার হাত ধরে সন্ধ্যের পরে দূরের গাড়ির আলোয় হাঁটা, অন্ধকার সিনেমা হলে হাতে হাত দিয়ে বসে সিনেমা দেখা এই ধরণের সব।
সামনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা। ভীষণ টেনশন হচ্ছে। পাস করতে পারলে তুমি আমার হবে। তোমাদের বাড়ীতে প্যান্ডেল বাঁধা হবে। আমি যাব আর তোমাকে নিয়ে আসব। আর ফেল করলে? তখনও প্যান্ডেল বাঁধা হবে। আমি যাব শুধু পরিবেশন করতে। তুমি অন্য কারুর সাথে গাড়িতে চেপে চলে যাবে। আমি হব দেবদাস, শুধু হাহুতাশ আর দীর্ঘশ্বাস। সবাইকে অবিশ্বাস।
তার পর? আর তো কিছু নেই। ফেল করা ছাত্রদের আর তো রিঅ্যাডমিশন হয় না। তোমরা কি কেউ আমাকে টিউশন দেবে?

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন