মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আমার পছন্দের লোকগীতি

বাংলার লোকগীতি

বাংলার পল্লীগীতি

                   প্রাচীন কালে মন্ত্রোচ্চারন সুর করে পড়া হত তার থেকে আমরা দেখি এখনকার গ্রামীন পুজার সময় দেব-দেবীর বন্দনা কোন রকমের গান গেয়ে করা হয়, এই বিশ্বাসে যে এই গানে দেবদেবী প্রসন্ন হয়ে বর দান করবেন।গ্রাম বাংলার মানুষ তাদের দৈনন্দীন জীবনের কাজ কর্মের ফাঁকে কায়িক ও মানসিক পরিশ্রম লাঘব করার জন্য গানের আশ্রয় নিয়েছেএ ছাড়া নানান উৎসব অনুষ্ঠান উপলক্ষেও নাচগানের প্রচলন আছে। বাংলা ভাষাভাষী বিস্তৃত অঞ্চলের আচার ও আঞ্চলিক ভাষা আলাদা হওয়াতে পল্লীগীতির ধরণও বিভিন্ন রকমের হয়েছে। আমার এই ছোট্ট প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার কিছু অংশের সাথে আপনাদের পরিচয় করানই আমার উদ্দেশ্য।
              পল্লীগীতিগুলিকে আমরা তাদের প্রকার অনুযায়ী ভাগ করলে সাধারণ ভাবে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী,  বাউল,  টুসু, ভাদু, ঝুমুর পাই। এছাড়া আলকাপ, গম্ভীরা, গাজন, ধামাল, মারফতি, মুর্শিদি, খেমটা, পটুয়া, নাটুয়া, সারি, জারী, রাইবেশে, ঘটু, গোসা, যাত্রা গান, লালন এবং হাসান রাজার গান, মনসা মঙ্গল, ছাদ পেটানর গান, ধান কাটার গান, মাল্লার গান এবং ত্রিপুরা অঞ্চলের কিছু গানও আমরা পাই।  এছাড়া বহু গান এমন আছে এবং তৈরী হচ্ছে যেগুলোর সুর গ্রামীন হলেও কথা  একেবারে আধুনিক জীবনশৈলীর। এদেরকে আমরা আধুনিক বাংলা গান বা জীবনমুখী গান বলতে পারি।
              পল্লীগীতিকে তাদের স্থান হিসাবে ভাগ করলে আমরা দেখি প্রধানত সাতটি অঞ্চলে ফেলা যেতে পারে।এই অঞ্চল গুলি হল –
১) ভাওয়াইয়া – উত্তর বঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) দিনাজপুর এবং রংপুর অঞ্চল।
২) গম্ভীরা –পশ্চিমবঙ্গের মালদহ অঞ্চল।
৩) বাউল – সারা বাংলা, যদিও এর উৎপত্তি রাঢ়বঙ্গ অঞ্চল
৪) ভাটিয়ালী- পুর্ব বাংলার ময়মনসিং ও ঢাকা অঞ্চল।
৫) টুসূ – পুরুলিয়া, বীরভুম অঞ্চল ।
৬) ভাদু –মেদিনীপুর, বর্ধমান বাঁকুড়া অঞ্চল।
৭) ঝুমুর –রাঢ় বাংলা অঞ্চল।


আমরা এবার এই সব গানের থেকে গুটিকয়েক কে শুনি। প্রথমে আমরা শুনব আলকাপ

,আলকাপ  মুর্শিদাবাদ, মালদহ। রাজসাহী জেলায় এই গান গাওয়া হয়। কাপ কথাটি কাব্য ব কবিতা থেকে এসেছে। আল তার অংশ বিশেষ বোঝায়।  এটি এক ধরনের সমূহ গান, যাতে গুরু, গায়েন, ছোকরা আর দোহাররা থাকেন। সাথে যন্ত্র শিল্পীরা। গ্রাম্য জীবন এবং তার আর্থিক অবস্থা নিয়ে এই গানের পাচটি অংশ (আসর বন্দনা, ছড়া, কাপ, বৈঠকি গান এবং খেমটা পালা) গাওয়া হয়।






                             উপরের গান দুটি মাহুল ব্যান্ড গোষ্টির গাওয়া
 এবার আমরা শুনব ঝুমুর গান।

ঝুমুর গান  সাঁওতাল আদিবাসীদের গান সাধারণতঃ উত্তর বাংলার চ্য বাগানে আর পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর এলাকাতে এই গান শুনতে পাওয়া যায়। মেয়েরা দল বেধে নাচের সাথে গান গায় আর পুরুষ সাথী মাদল মাজিয়ে সাথ দেয়।
                                       
                            


এবার আমরা শুনব ভাটিয়ালী গান



ভাটিয়ালি—  ভাটিয়ালি কথাটি এসেছে নদীর ভাঁটা থেকে। প্রধানত এই গান গুলি মাঝি মাল্লার উদ্দেশে বা তাদের দ্বারা গাওয়া হয়। নদী, জল, জোয়ার ভাঁটা, নৌকা এইসব এ গানের কথায় প্রাধান্য পায়।




এবার আমরা শুনব বাউল গান।

বাউল –            আমরা 'বাউলশব্দে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ এর কয়েকটি গোষ্ঠীকে বুঝি যাদের বিশ্বাসে একমাত্র মনুষ্য দেহই উপলব্ধির ও জ্ঞানের একমাত্র উপায় (দেহ-তত্ব)এই বিশ্বাসধারায় যাঁদের আমরা বাউল নামে ডাকি তাঁরা অন্যান্য নানা ধারার শরীরসাধনায় ব্যাপৃত সাধক বর্গের সমগোত্রীয বৈষ্ণব ও সুফি ধারার আনুষঙ্গিক অনুশাসনগুলিকে বর্জন করে বাউলরা তাঁদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক সাধনে চেষ্টিত থাকেন ও জাতিভেদ প্রথাও বর্জন করেন | প্রিয়কে  সাঁই, গুরু, বাঁ মুর্শীদ বলে জানে। বাউল সঙ্গীত বঙ্গসংস্কৃতির এক গূঢ় অন্তর্নিহিত সত্য | বাউল সঙ্গীতের একটা ভাগ কে আমরা মুর্শিদী গান হিসাবে জানি।
         
                                উপরের গানটি পূর্ণ দাস বাউলের গাওয়া।
                          উপরের গানটি বিপদ তারণ দাসের গাওয়া   
                             

 এই পর্বে এতদূর পর্যন্ত থাক। পরের পর্বে অন্যান্য লোকগীতির উদাহরণ দেবার চেষ্টা করব।
আপনাদের কেমন লাগে জানাবেন






                             







                               















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন