ওপরের ছবিটা ১৯৪৮ সালে জশিডিতে তোলা। বাবা, মা আর ছোট বোন। ক্যামেরা বেবী ব্রাউনি এফ ৮ লেন্স। ফিক্সড শাটার স্পীড
১৯৪৯-৫৪
১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হবার কথা চিন্তা হল। মেট্রপলিটান স্কুল থেকে পাশ করাতে পাশেই বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হতে কোন অসুবিধা হলনা। অবশ্যি আজকের মতম ৯০-৯৫% নম্বর পেয়েও কলেজে সিট না পাওয়ার অবস্থা তখন ছিলনা। থার্ড ডিভিসনে পাশ করেও লোকেরা স্বচ্ছন্দে কলেজে দাখিলা পেয়েছে। আমার বরাবরের ইচ্ছে ছিল হয় ডাক্তার নয় ইঞ্জিনিয়ার হব তাই সায়েন্স গ্রুপ নিলাম। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি আর ম্যাথামেটিক্স। মজার কথা আমার হাইট তখন ৪ ফুট ১০ ইঞ্চির নীচে, পরনে হাফ প্যান্ট আর হাফ সার্ট, অতএব গেটের দারোয়ান আমাকে স্কুলের ছাত্র ভেবে ঢুকতে দিতে চায়না। এ অবস্থা যে শুধু আমার হয়েছিল, তা নয় আমার মতন বেশ কিছু ছাত্র ছিল যারা হাফ প্যান্ট পড়ত আর তাদের গোঁফের রেখা ভাল করে ওঠেনি। এখানে বলে রাখা ভাল যে তখন স্কুল কলেজে ইউনিফর্ম চালু হয়নি। যে যার মতন পোশাক পড়ে আসতে পারত।
বাবা তখন রিটায়ার করেছেন। অতএব কলেজের সমস্ত বই কেনা হয়নি। বাবার এক বন্ধু নারায়ণ ব্যানার্জী (আমাদের নারাণ জ্যাঠামশাই) তার পুরনো বইএর ব্যবসা থেকে কিছু বই দিলেন। সেগুলি প্রধানত গ্র্যাজুয়েশন লেভেলের ছিল। তখনকার দিনে সাধারণত ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে সিলেবাসের বাইরে থেকে কিছু (তা ঠিক থাকলেও) লিখলে নম্বর পাওয়া যেত না। অতএব আমার জ্ঞান বাড়লেও নম্বর তোলার ভয় ছিল। কেমিস্ট্রি বইএ দেখলাম গান কটন সেলুলোজকে নাইট্রিক আর সালফিউরিক এসিডে ট্রীট করে তৈরী হয়। তাই বাড়ী থেকে সেলুলোজের বদলে তুলো নিয়ে কলেজের ল্যাবরেটরী থেকে ডাইলুট এসিড নিয়ে ডুবিয়ে দিলাম। পিরিয়ড শেষ হওয়াতে সেটাকে তুলে নিয়ে খাতার মধ্যে রেখে চলে এলাম। পড়ে ওটা শুকোলে রাস্তার পানের দোকানে বিড়ি ধরানোর আগুনে জ্বালানোর চেষ্টা করেও সেটা জ্বললও না, মাঝ থেকে আমার খাতায় একটা বিরাট ফুটো হয়ে গেল
১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হবার কথা চিন্তা হল। মেট্রপলিটান স্কুল থেকে পাশ করাতে পাশেই বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হতে কোন অসুবিধা হলনা। অবশ্যি আজকের মতম ৯০-৯৫% নম্বর পেয়েও কলেজে সিট না পাওয়ার অবস্থা তখন ছিলনা। থার্ড ডিভিসনে পাশ করেও লোকেরা স্বচ্ছন্দে কলেজে দাখিলা পেয়েছে। আমার বরাবরের ইচ্ছে ছিল হয় ডাক্তার নয় ইঞ্জিনিয়ার হব তাই সায়েন্স গ্রুপ নিলাম। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি আর ম্যাথামেটিক্স। মজার কথা আমার হাইট তখন ৪ ফুট ১০ ইঞ্চির নীচে, পরনে হাফ প্যান্ট আর হাফ সার্ট, অতএব গেটের দারোয়ান আমাকে স্কুলের ছাত্র ভেবে ঢুকতে দিতে চায়না। এ অবস্থা যে শুধু আমার হয়েছিল, তা নয় আমার মতন বেশ কিছু ছাত্র ছিল যারা হাফ প্যান্ট পড়ত আর তাদের গোঁফের রেখা ভাল করে ওঠেনি। এখানে বলে রাখা ভাল যে তখন স্কুল কলেজে ইউনিফর্ম চালু হয়নি। যে যার মতন পোশাক পড়ে আসতে পারত।
বাবা তখন রিটায়ার করেছেন। অতএব কলেজের সমস্ত বই কেনা হয়নি। বাবার এক বন্ধু নারায়ণ ব্যানার্জী (আমাদের নারাণ জ্যাঠামশাই) তার পুরনো বইএর ব্যবসা থেকে কিছু বই দিলেন। সেগুলি প্রধানত গ্র্যাজুয়েশন লেভেলের ছিল। তখনকার দিনে সাধারণত ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে সিলেবাসের বাইরে থেকে কিছু (তা ঠিক থাকলেও) লিখলে নম্বর পাওয়া যেত না। অতএব আমার জ্ঞান বাড়লেও নম্বর তোলার ভয় ছিল। কেমিস্ট্রি বইএ দেখলাম গান কটন সেলুলোজকে নাইট্রিক আর সালফিউরিক এসিডে ট্রীট করে তৈরী হয়। তাই বাড়ী থেকে সেলুলোজের বদলে তুলো নিয়ে কলেজের ল্যাবরেটরী থেকে ডাইলুট এসিড নিয়ে ডুবিয়ে দিলাম। পিরিয়ড শেষ হওয়াতে সেটাকে তুলে নিয়ে খাতার মধ্যে রেখে চলে এলাম। পড়ে ওটা শুকোলে রাস্তার পানের দোকানে বিড়ি ধরানোর আগুনে জ্বালানোর চেষ্টা করেও সেটা জ্বললও না, মাঝ থেকে আমার খাতায় একটা বিরাট ফুটো হয়ে গেল
নারাণ জ্যাঠামশাইর কাছ থেকে একটা বেবী ব্রাউনিং ক্যামেরা
পেয়েছিলাম।তাতে 127 সিরিজের সাদাকালো ফিল্মে ছবি আসতো। সুরু
হয়ে গেল আমার ছবি তোলার হবি। অবশ্যি ক্যামেরাটা পেয়েছিলাম স্কুলে পড়ার সময়ই।
আর তার প্রথম প্রয়োগ করা হয় ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে দাদার টাইফয়েড থেকে উঠে
হাওয়া বদলাতে জসিডি (বাংলা-বিহার বর্ডারের কাছে) গিয়ে। ওখানে তোলা ছবি গুলো খুজে
এখানে দেবার ইচ্ছে আছে। ক্যামেরাতে ফ্লাশবাল্বের ব্যবস্থা ছিলনা, তাই ফ্ল্যাশ পাউডার তৈরী করার চেষ্টা হল। ফ্লাশ পাউডারে ম্যাগনেসিয়াম
পাউদার লাগে। সেটা বাজারে কিনতে পাওয়া যাবে না তাই বদলে এলুমিনিয়াম পাউডার
(রংমশাল তৈরির জন্য পাওয়া যেত) প্রয়োগ করে একটা ডিশে সোরা (পটাশিয়াম নাইট্রেট)
আর এলুমিনিয়াম পাউডার মিশিয়ে রাখা হত। ক্যামেরা রেডী করে ঐ পাউডারে আগুন লাগাতেই
অনেক আলো পাওয়া যেত, তখন শাটার টিপে ছবি তোলা হত। পড়ে
অবশ্যি একটা গেভাবক্স ক্যামেরা কেনা হয়েছিল যাত ফ্লাশ গান লাগানর সুবিধা ছিল।
কিন্তু তখন একমাত্র সিলভানিয়া কোম্পানির ফ্লাশ বাল্ব পাওয়া যেত যার দাম ছিল
তখনকার দিনে ১২ আনা করে। মানে একটা বাল্বের দামে দু ডজন ডিম কিনতে পারা যেত। কাজেই
একমাত্র বাইরে ছবি তুলতে না হলে আমি ফ্লাশ পাউডার ব্যবহার করতাম।
ছবি তোলার সাথে সাথে ফিলাটেলী বা ডাকটিকিট জমানো পুরো দমে চলতে লাগলো। আমার বড়মামার কাছ থেকে তার টিকিট শুদ্ধ এ্যালবাম আমার দখলে এসেছিল তাঁকে বাড়ানোর প্রচেষ্টা ভাল ভাবে শুরু করলাম। বিদেশী টিকিটের জন্য সব চেয়ে সোজা উপায় হল পত্রমৈত্রী বা পেনফ্রেন্ড জোগাড় করা। তখন ইলাস্ট্রেটেড উইকলি তে নানান পেনফ্রেন্ডদের ঠিকানা আর তাদের হবি বা সখের কথা লেখা থাকত। এর থেকে বেছে নিতে হল। এর মানে এই নয় যে যাকে আমি লিখছি সে আমার সাথে মৈত্রী পাতাবে, সেটা তার ইচ্ছের উপর।
আমার দুটি বন্ধু ছিল। প্রথমটি চেকস্লোভাকিয়ার, মার্শেলা প্রিকরিলোভা, একটি মেয়ে আমার বয়সী,
বাড়িতে তার মা ও ঠাকুমা। ওদের ওখানে ভাষা চেক, আর আমার ভাষা বাঙলা। যোগসূত্র হল ইংরাজী। আমি তাও ইংরাজী পড়েছি কাজে চিঠি
লিখতে পারি। ওকে দোভাষীর সাহায্য নিতে হত। এই চিঠির আদানপ্রদান চলেছিল '৫০ থেকে '৫৩ সাল পর্যন্ত তার পরে ওরা অন্য সহরে সিফট
করাতে আর দোভাষীর সাহায্য পায়নি। শেষ চিঠি ছিল চেক ভাষায় আর তাতে এই কথা জেনেছি।
চিঠিটা আমি কলকাতায় বাটা কোম্পানিতে কাজ করতেন এক চেক নাগরিককে দিয়ে অনুবাদ করে
নিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে আমাদের সম্পর্কটা প্রায় প্রেমের পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
দ্বিতীয় বন্ধুর নাম নুরুল আকবর, ঢাকার ছেলে, অবশ্যি তার বাবা চট্টগ্রামে থেকে কাজ করতেন। আজকে আর তার ঠিকানা ও ছবি খুজে পাচ্ছিনা। আমাদের কলকাতার বাসায় সে এসেছিল। যতদূর জানি তার বাবার সাথে সেও পরে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যায়। '৫৪ সালে আমার কর্মজীবন শুরু হবার পরে এই বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে।
ফটোগ্রাফি, ফিলাটেলী আর কমন রুমে টেবল টেনিস খেলা এর অবশ্যম্ভাবী ফল ,৫১ তে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাতে পাওয়া গেল। ইংরাজীতে পাশ মার্ক আসেনি অতএব কম্পার্টমেন্টাল পরীক্ষা দিতে হবে। আমার তাতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই কেননা কম্পার্টমেন্টাল এর রেসাল্ট বেরবে মেন পরীক্ষার ৬ মাস বাদে আর ততদিন আমার জন্য কলেজ কোন বিষয়ে অপেক্ষা করবেনা। কিন্তু ঘরের চাপে না তৈরী হয়ে পরীক্ষা দিলাম আর যথানিয়মে ফেল করলাম। অতএব আগামী সেশনের জন্য অপেক্ষা।
ইতিমধ্যে মামার কাছে খবর পাওয়া গেল বাটা কোম্পানিতে তিন মাসের জন্য
ক্লার্ক নেওয়া হবে। মার ছোটমামা কোম্পানিতে পার্সনেল অফিসার অতএব আমার চাকরী হয়ে
গেল। পুরো '৫২ সাল চাকরী করার পরে '৫৩
তে আবার কলেজে ভর্তি হলাম। এবার আমাকে দিতে হবে নন-কলেজিয়েট হিসাবে তাই খালি
প্র্যাক্টিকাল করতে কলেজে যেতে হত। সেটা ছিল মর্নিং সেশনে যখন আমাদের ক'জন ছাড়া সারা কলেজই মেয়েদের জন্য। কিন্তু মজার কথা যে ইংরাজী এডাল্ট
ফিল্ম যেমন পিটন প্লেস, ফর হূম দি বেল টোলস, বা ডুয়েল ইন দা সান দেখার অভ্যেস থাকলেও কলেজের মেয়েদের সাথে কোন রকম
কথাবার্তা হত না। সকালে উঠে কলেজ, সেখান থেকে অফিসে, সন্ধে বেলা বাড়ী ফিরে কিছুটা রেস্ট তাঁর পর রাত ৯টার পরে প্র্যাক্টিকাল
খাতা তৈরী করা। জানুয়ারী মাস থেকে আর অফিস গেলাম না। দিনে প্রায় ১৮ ঘন্টার মতন
পড়তাম। তাঁর ফলও পেলাম। একমাত্র অঙ্ক বাদে অন্য সব বিষয়ে ৮০% মার্ক। বলে রাখা
ভাল তখন ৬০% উপরে মার্ক্স পেত খুব অল্প ছেলেরাই।
মা বলছে এটা ১৯৪৯ এর ঘটনা।
উত্তরমুছুন